আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪২০, ৭, ১৩, ৬৬৬ এবং ৭৮৬ রহস্য

একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় ৪২০ ভারতীয় উপমহাদেশে চোর, বাটপার, ফটকাবাজদের ৪২০বলা হয়। এর অবশ্য কারণ আছে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবদেশেই যদি কোন চোর বাটপার ধরা হয় তাহলে তাকে যে ধারায় শাস্তি দেয়া হয় সেটি পেনাল কোডের ৪২০ নং ধারায় বর্ণীত। তাই যদিও কারণ আছে তবুও অনেকে না বুঝেই বলে। যারা বলেন যে বিভিন্ন বর্ণের অবস্থানগত মান যোগ করে ঐ শব্দের প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যা বের করেছেন, তাদের আমি সমর্থন করি না। ৭ লাকি সেভেন নিয়া অনেকের ধারণা, ইহুদী খৃষ্টানরা 7 কে লাকি বলে থাকে।

কারণ G ইংরেজী বর্ণমালার ৭তম বর্ণ। তাদের God এর G-এর সাথে সম্পৃক্ত। কোরআন-হাদিস মুসলমানদের নিকট কোন সংখ্যাই আলাদা ভাবে লাকি যেমন বলা হয়নি, তেমনি কোন সংখ্যাকে আনলাকিও বলা হয়নি। সূর্যের আলোর বা রংধনু সাতটি রঙের সমাহার কে (‘বেনীআসহকলা’) ইংরেজিতে বলে ‘VIBGYOR’। এখানে ৭ সংখ্যাটি তাৎপর্যপূর্ণ।

সেই প্রাচীন কাল থেকেই সাত দিনে সপ্তাহের হিসাব চালু হয়েছে। আমরা আরও জানি, বিশ্বের ‘সপ্ত আশ্চর্য’-এর কথা। তা ছাড়া, সাত সমুদ্র, সাত মহাদেশ এগুলো সবই ৭-এর মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। প্রাচীন কাল থেকে মানুষের ধারণায় ৭ সংখ্যাটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে চিহ্নিত হয়েছে বলেই হয়তো এতগুলো ঘটনায় বারবার ৭ সংখ্যাটির আবির্ভাব ঘটেছে। ঠিক কী কারণে ৭ সংখ্যাটি সৌভাগ্যের প্রতীক বলে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে, তা বলা কঠিন।

লুডু খেলার ছক্কা-গুটিতে যে সংখ্যাগুলো থাকে, তার মধ্যে একটি ছন্দ আছে। দুই বিপরীত পাশের অঙ্কগুলো যোগ করলে সবসময় ৭ হয়। এভাবেই হয়তো লাকি সেভেন কথাটির চল হয়েছে। অনেকের মতে এটিও একটি প্রাচীন গ্রীক মিথ। গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাসের (খ্রি.পূর্বাব্দ ৫৭০—৪৯৫) অনুসারীদের মতে, ৭ একটি সম্পূর্ণ বা নিখুঁত সংখ্যা (পারফেক্ট নাম্বার), কারণ ৩ ও ৪ এর যোগফল ৭।

তাদের হিসাবে ত্রিভুজ ও বর্গক্ষেত্র হলো নিখুঁত জ্যামিতিক চিত্র এবং তাদের বাহুর সংখ্যা ওই ৩ ও ৪। হয়তো প্রাচীন এই ধারণা থেকে ৭ সংখ্যাটি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে চালু হয়ে গেছে। ১৩ আনলাকি থার্টিন সম্পর্কে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত। আবার অনেকের ধারনা, ইহুদী খৃষ্টানরা ১৩ কে আনলাকি বলে থাকে কারণ ইংরেজীতে “MUHAMMAD” নাম মুবারকের আদ্যক্ষর হল M, যা ইংরেজী বর্ণমালার ১৩ তম অক্ষর। তাই ইহুদী খৃষ্টানরা বিদ্বেষবশতঃ ১৩ কে অশুভ বা আনলাকি বলে থাকে।

আবার অনেকে মনে করে থাকেন আনলাকি ১৩, মুসলমানদের জন্য লাকি। কিন্তু মুসলমানদের কোন গ্রন্থে ১৩ কে লাকি বা অন্য কোন নাম্বারকে লাকি বলা হয় নি। শুধু হযরত মোহাম্মদ (স বেজোড় সংখ্যা পছন্দ করতেন । সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত প্রতীক বা চিহ্ন ১ ও ৩ পাশাপাশি বসে “১৩” সংখ্যাটি গঠিত। এটি মৌলিক সংখ্যা।

কারন 13 আর 1 ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে এটা নিঃশেষে বিভাজ্য না। এটিকে উল্টালে পাওয়া যায় 31 যা একটি মৌলিক সংখ্যা। ইহা একটি Fibonacci numbers কারন এই সিরিজে আছে 0 1 1 2 3 5 8 13 21… Happy number কারন 13=1*1+3*3=1+9=10=1*1+0*0=1. মূলত গণনা এবং হিসাব-নিকাশের কাজের জন্য সংখ্যা পদ্ধতির আবিষ্কার হলেও ১৩ সংখ্যাটিকে আনলাকি বা দুর্ভাগ্য সূচক বলে ধারণা পোষণ করা হয়। খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে নানা সন্দেহ রয়েছে । কেননা যিশুখ্রিষ্টের শেষ নৈশভোজে তার ১২ জন অনুসারী উপস্থিত ছিলেন।

তিনিসহ ওই নৈশভোজে মোট সদস্য হয়েছিলেন ১৩ জন। এরপর তার মৃত্যু হয় বলে ১৩ সংখ্যাটিকে অমঙ্গলজনক মনে করা হয়। এ ব্যাপারে কেউ কেউ গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর ভালহল্লা ভোজ উৎসবের কথাও তুলে ধরেন। ঐ ভোজউৎসবে ১২ দেবতাকে নিমন্ত্রণ করা হয়। বিবাদ, শত্রুতা ও অমঙ্গলের প্রতিভূ "লোকি" ঐ ভোজ সভায় জোর করে প্রবেশ করে মোট সংখ্যাকে ১৩ তে উন্নীত করে।

কিন্তু দেখা যায়, সেখানে ওই দেবতাদের প্রিয় পাত্র বেলডার নিহত হন। হয়তো বা ১২ জন সেখানে উপস্থিত থাকলে মৃত্যু ঘটতো না কোন দেবতার। ৬৬৬ খৃস্টানরা ৬৬৬ অশুভ শক্তির সংখ্যা বলে বিশ্বাস করে কারণ বাইবেলে ৬৬৬ কে শয়তানের সংখ্যা বলা হয়েছেঃ "Also it causes all, both small and great, both rich and poor, both free and slave, to be marked on the right hand or the forehead, so that no one can buy or sell unless he has the mark, that is, the name of the beast or the number of its name. This calls for wisdom: let him who has understanding reckon the number of the beast, for it is a human number, its number is six hundred and sixty-six." -New Testament, the Book of Revelation (13:17-18) বিস্তারিতঃ What Does The "666" Mean? ৬৬৬ নিয়ে গানিতিক ব্যখ্যা ডেকুন পগলা জগাই এর পোস্ট টিতে আশ্চর্য! একটি সংখ্যা ৬৬৬...... আর কয়েটি মজার লিংকঃ ৬৬৬ এর ধারক বিল গেটস ৯৯৯ এ্যান্টি-বিষ্ট নাম্বার ৭৮৬ আরবী অক্ষরের (হরফের) গণিতের মান দিয়ে কোড নম্বর লিখার পদ্ধতিটির আবিষ্কারক হচ্ছেন গ্রিসের প্রখ্যাত গণিত-বিশারদ (জ্যামিতিক) পিথাগোরাস। তিনি ছিলেন ইয়াহুদী। মুসলিমের প্রকাশ্য শত্রু।

আরবি অক্ষরের মানের হিসাব কষে বিধর্মী কর্তৃক “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর যে সংখ্যা বা মান নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো ৭৮৬। রাসূল (সাঃ) তার জীবদ্দশায় “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর সংখ্যা নির্ণয়ক কোন মান বলে যাননি। এ ছারা তিনি তার সাহাবীগণকেও লিখতে অনুমোদনও দেননি। সুতরাং “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর পরিবর্তে ৭৮৬ সংখ্যাটির ব্যবহার করা নি:সন্দেহে একটি বিদ‘আত। এবার আসুন, লক্ষ্য করি যে, কেন ৭৮৬ লেখা হচ্ছে।

পিথাগোরাসের প্রবর্তিত অক্ষরের মান তথা ‘আবজাদ’ মান বসিয়ে দেখা যাক بِّسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর মান কত হয়? ب س م ا ل ل ه ا ل ر ح ৮ ২০০ ৩০ ১ ৫ ৩০ ৩০ ১ ৪০ ৬০ ২ م ن ا ل ر ح ى م ৪০ ১০ ৮ ২০০ ৩০ ১ ৫০ ৪০ অর্থাৎ ২+৬০+৪০+১+৩০+৩০+৫+১+৩০+২০০+৮+৪০+৫০+১+৩০+২০০+৮+১০+৪০=৭৮৬ পিথাগোরাসের আবিষ্কৃত আরবি অক্ষরের গাণিতিক মান বসিয়ে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” এর কোড নম্বর পাওয়া গেল ৭৮৬ । আবার আপনারা আরবিতে “হরে কৃষ্ণা” هرىكرشنا লিখে উহার আবজাদ মান প্রয়োগ করুন। দেখতে পাবেন যে, এর কোড নম্বর বা আবজাদ মান দাড়াচ্ছে ৭৮৬। ه ر ى ك ر ش ن ا ১ ৫০ ৩০০ ২০০ ২০ ১০ ২০০ ৫ =৭৮৬ অর্থাৎ ৫+২০০+১০+২০+২০০+৩০০+৫০+১=৭৮৬ এবার চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহকে স্মরণ করতে গিয়ে না বুঝে বিধর্মীদের সবক নেয়া “আবজাদ” মান ব্যবহার করে আমরা নিজেদের অজান্তে কত বড় পাপের কাজ করে যাচ্ছি। অতএব সাবধান থাকুন এবং যাছাই-বাছাই না করে সংখ্যা তত্ত্বের হিসাব না জেনে দ্বীনি ব্যাপারে সংখ্যার ব্যবহার করবেন না, বরং আরবি শব্দ ব্যবহার করুন নতুবা নিজ ভাষায় লিখুন।

মনে রাখবেন, রসূল (সঃ) বলেছেন- সাওয়াবের উদ্দেশে দ্বীনের মধ্যে সংযোজিত প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদ‘আত, প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা এবং প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (মুসলিম, মিশকাত-১৪১, নাসাঈ-১৫৭৭) এই একই বিষয় সম্পর্কে ডা. জাকির নায়েকের উত্তরটিও নিচে দেখতে পারেন- •► প্রশ্ন: অনেকেই “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” না লিখে “৭৮৬” লিখে থাকে। এটা কি ঠিক? •► উত্তর: ডা. জাকির নায়েক: প্রশ্নটি হচ্ছে অনেক মুসলিম “বিসমিল্লাহ” পুরোপুরি না লিখে ৭৮৬ লিখে থাকে। এটা ঠিক কিনা। কিছু লোক আছে যারা আরবী বর্ণমালাগুলোকে নির্দিষ্ট মান দিয়ে যোগফল বের করে ঐ সংখ্যা দিয়ে আয়াত বা দোয়া বা কোনো নাম নির্দেশ করার চেষ্টা করে।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”-এর ‘বা’, ‘আলিফ’, ‘সিন’ এ বর্ণমালাগুলোর মান বসিয়ে তার বের করেছেন ৭৮৬ আবার ৯২ দিয়ে বুঝান মুহাম্মাদ (সঃ) এভাবে আরো অনেক কিছু। কিন্তু এমন ব্যবহার কোরআন বা সহীহ হাদীসের কোথাও পাওয়া যায় না। কিছু লোক তর্ক করে যে, আমরা যখন আরবি বর্ণমালা না পাই, তখন দাওয়াতপত্র ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি ছাপাতে সংখ্যাগুলো লিখি। কিন্তু আমার কথা হলো, আপনি আরবী শব্দটি ইংরেজিতে বানান করে লিখেন। আর যদি মনে করেন সবাই বুঝবেনা তাহলে অনুবাদ লিখতে পারেন।

যেমন “পরম করুনাময় দাতা ও দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে”. এত সহজ উপায় থাকতে এমন কঠিন ও বিদঘুটে পদ্ধতির প্রয়োজন কি? আসলে বিভিন্ন সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ধারনা আমাদের সমাজে দেখা যায়। যেমন পশ্চিমা সমাজে ১৩ সংখ্যাটিকে অপয়া ভাবা হয়। তারা বলে ‘আনলাকি থার্টিন’. আবার তারা ৬৬৬ দ্বারা বুঝায় শয়তান। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে চোর, বাটপার, ফটকাবাজদের ৪২০বলা হয়। এর অবশ্য কারণ আছে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবদেশেই যদি কোন চোর বাটপার ধরা হয় তাহলে তাকে যে ধারায় শাস্তি দেয়া হয় সেটি পেনাল কোডের ৪২০ নং ধারায় বর্ণীত।

তাই যদিও কারণ আছে তবুও অনেকে না বুঝেই বলে। যারা বলেন যে বিভিন্ন বর্ণের অবস্থানগত মান যোগ করে ঐ শব্দের প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যা বের করেছেন, তাদের আমি সমর্থন করি না। কারন, একই মান দিতে পারে এমন সংখ্যা দুটি শব্দের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। যার একটি ভালো অন্যটি খারাপ। সে ক্ষেত্রে আপনি কোনটি গ্রহন করেবেন? উদাহরণ দেই, যদি বলি ইংরেজি বর্ণ B এর মান ১ এবং A এর মান৭ আর ধরুন D এর মান ৪/ এখন যোগ করলে আমরা পাই ১২/ অর্থাৎ BAD (খারাপ)এর সংখ্যাগত মান পেলাম ১২/ এখন G এর মান ২, O এর মান ৩, D এর মান ৪ ধরলে GOOD এর মান কত?দেখুন ২+৩+৩+৪=১২. অর্থাৎ (GOOD)ভালো এর সংখ্যাগত মান পেলাম ১২ ।

এখন আমি ১২ কে ভালো বা মন্দ কোনটা নির্দেশক বলব? যদি প্রথমটি মেনে বলি ১২ একটি মন্দ নির্দেশক তখন পরে আবার দেখলাম সংখ্যাটি যে মান ধরে নেয়া হয়েছে তা ভালকেও নির্দেশ করে। তাই যারা ‘বিসমিল্লাহ্‌’ কে ৭৮৬ দ্বারা প্রকাশ করেন তাদেরকে বলি, এমন অনেক শব্দ পাবেন যেগুলোর বর্ণের মান যোগ করলে ৭৮৬ পাওয়া যাবে। সেশব্দ বা বাক্যগুলোর কিছু হতে পারে ভালো আবার কিছু হতে পারে খারাপ নির্দেশক। তাই কোনো মুসলমানকেই সমর্থন করিনা যখন সে ৭৮৬ দ্বারা বিসমিল্লাহ প্রকাশ করে। আশাকরি সবাই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।