আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দে দৌড় হালমু আইলো...

একজন নির্বোধের বয়ান চোখের সামনে একটা ব্যানার খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি, কারণ ইংরেজিতে লেখা, ‘STOP BSF BRUTALITY’ ‘নির্বোধ মিয়া এই ব্যানার কার?’ আমার একান্ত সহচরের কাছে জানতে চাইলাম। ‘এই ব্যানার কার তা আপনি বুঝতি পারতিছেন না ভাইজান? এইডা আমার ব্যানার। ’ একটু চড়া গলায় বলল কথাগুলো। বুঝলাম কোন একটা কারণে ক্ষীপ্ত হয়ে আছে বেচারা। আগের দিনই আমাকে বলেছিল, ভারত বনাম বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যাবে।

কিন্তু এখনো তো খেলা শেষ হয়নি। মাঠের গ্যালারী ছেড়ে বাসায় চলে আসার কারণ জানতে চাইলে জানায়, ‘আমি তো ভাইজান সহালেই মিরপুর চইলে গেছি খেলা দেখতি। আমার ব্যানার দেহে আমারে সবাই ধন্যবাদ দিছে। তারপর ব্যানার নিয়ে সবাই একসাথে লাফালাফি কইরেছে। আরো কয়েকজন দেহি ‘দৌড়া বাঘ আইলো’ ব্যানার নিয়ে মাঠে আইছে।

কিন্তু কিছু সময় পরে ঠোলা মামুরা আইসে আমারে ধমকাইতে শুরু করল। আমি নাকি দেশের সুনাম নষ্ট করতিছি। পাশের দাদাদের সাথে শত্র“তা করাচ্ছি। ক্রিকেট খেলার মধ্যি রাজনীতি টাইনে আনতিছি। শেষে ঠোলারা বলল, ‘এই তোর ব্যানার-ট্যানার সরা।

’ আমি বললাম, ক্যান ব্যানার সরাতি হবি ক্যান? ‘ব্যানার না সরালে তুই খেলা দেখতে পারবি না। মাঠ থেকে বের করে দেবো। ’ শেষে আমি বললাম, ‘ব্যানার না রাখতি পারবি আমিও আর এই মাঠে নাই। ’ নির্বোধ মিয়ার কথা শূনে বলি, ‘রাগ করে তাই তুমি মাঠ ছেড়ে চলে এলে নির্বোধ মিয়া?’ ‘হ ভাইজান, এছাড়া আমি আর কী করতি পারতাম কন?’ ‘ভাল করেছো। দালালদের সাথে কোন তর্ক চলে না।

তুমি টিভিতে খেলা দেখছো না কেন?’ ‘মেজাজটা একটু ঠান্ডা হলি পরে খেলা দেখতি বসপো ভাইজান। ’ ‘তোমার কী মনে হয় শচীন আজ সেঞ্চুরী করতে পারবে?’ ‘মনে হচ্ছে তো পারবি। যেহানে আম্পায়ারা আছে, সেহানে না করতি পারার কিছু নাই। দেখলেন না, কোহলিরে আউট দিলো না। পানির মত পরিষ্কার লেগ বিফোর দিল না।

সব আম্পায়ার শালারা ভারতরে ভয় পায়। তাগো চামচামী করে। ভাইজান আমি একটা বিষয় দেহিছি, আপম্পায়রা সব সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে আঙ্গুল তুইলে ফালায়। আমাগে ক্রিকেটারা আউট না হলি পরেও আঙ্গুল তুইলে জানায়ে দেয় আউট। আর আমাগে বোলাররা পরিষ্কার আউট করলিও আবেদনে সাড়া দেয় না।

দিনে দুপুরে ডাকাতি। ’ এক নাগাড়ে কথাগুলো আমাকে শুনাতে পেরে নির্বোধ মিয়াকে একটু খুশি বলে মনে হল। ওকে খুশি রাখতে ওর কথায় আমাকে সায় দিয়ে যেতে হল। আসলে বেচারার প্রতিটি কথাই তো সত্যি। খেলার এখন মধ্য বিরতি চলছে।

ভারত ২৮৯ রান করেছে। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, শচীন ৩৩তম ম্যাচ পরে শতকের দেখা পেল। এই শতকই তার সেঞ্চুরীর সেঞ্চুরী। যা বেচারা করতে সক্ষম হল ঢাকার মাঠে। নির্বোধ মিয়ার কাছে এই সম্পর্কে জানতে চাইলে একটু আচ্ছিলের সুরে বলল, ‘আমাগে বোলাররা একটু নরম-শরম মনের তো, তাই শচীন ১০০ করতি পারিছে।

আমরাই ওরে বাাঁচাইছি। পোলাডা অনেকদিন ধইরে টেনশনে মইরে যাতিলো। ’ বিটিভি’র টকশোতে চৌধুরী জাফর উল্লাহ শারাফাতের কথা শূনে মনে হল, বাংলাদেশের বিপক্ষে শচীনের সেঞ্চুরীতে তিনি বেশি খুশি হয়েছেন। ‘গাধার বাচ্চা বলতি পারতো, ‘সেঞ্চুরীটা ঢাকার মাঠে অন্য দেশের বিপক্ষে হয়েই ভাল হইত। ’ এই কথাটা আমার না, নির্বোধ মিয়া টিভির পর্দায় চোখ রেখে বলল।

সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ আশরাফুল আজকের খেলা সম্পর্কে বেশ পজিটিভ মনে হল। তিঁনি জানালেন, ‘ইনশআল্লাহ বাংলাদেশ জয় লাভ করবে বলে আমার মনে হচ্ছে। আমার নিজেরও মনের মধ্যেও একই সুর বেঁজে গেছে সারাদিন। ’ বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু হয়েছে। আমি আর নির্বোধ মিয়া খেলা দেখছি।

খেলার শেষ দিকে সাকিবের আউটটি দেখে নির্বোধ মিয়া বলে উঠল, ‘ভাইজান বলিছিলাম না, ‘আম্পায়ারা ভারতের দালাল। সাকিবরে আউটটা অন্যায় ভাবে দিয়া দিল। ইসসিরে জেতা খেলা হারায়ে দিচ্ছে। ’ ‘খেলা দেখ চুপ করে, মনে হচ্ছে এখনো আমাদের সুযোগ আছে। ’ টিভির পর্দা থেকে চোখ না সরিয়ে বললাম।

ধোনিকে সে মুহূর্তে টিভি পর্দায় দেখে মায়া লাগছে আমার। মনে হচ্ছে, ধোনি থেকে আস্ত একটা ফকিরে পরিনত হয়ে গেছে ভারতের অধিনায়ক। বোলারের সাথে কত শলাপরামর্শ করছে ফকিরটা। কিন্তু কোন লাভ হলো না। উল্টো বোলার ধোনির বকর বকর শুনে এলোমেলো হয়ে গেল।

মুশফিক ছয়-চার মেরে দিল ইরফানের বলে। শেষে পাঁচ উককেটে বাংলাদেশ জিতে গেল। ‘চিকার দিয়ে নির্বোধ মিয়া বলতে লাগল, ‘বাংলার বাঘেরা সীমান্তে ফালায়ে কামড়ায় না, মাঠে আইন মাইনে কামড়ায়। ইস ভাইজান অহন যদি মাঠে যাইয়ে শ্রীলংঙ্কার ঐ থার্ড আম্পায়ারের কানে একটা কামড় দিয়ে আসতি পারলি বুকের মধ্যি সুখ পাতাম। আহারে শচীন সেঞ্চুরী করে আর ভারত হারে।

বেচারার সেঞ্চুরীর কোন দাম থাকলো না। আমাগে সাকিবের ৪৯ এর মূল্য শচীনের সেঞ্চুরীর চাইতেও বেশি। ’ ‘ওহ্ নির্বোধ মিয়া তোমার আল্লার দোহাই লাগে, তুমি একটু চুপ কর। তোমার কারণে দেখছি এই বাসা ছেড়ে জেলে গিয়ে থাকতে হবে। ’ নির্বোধ মিয়াকে কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম আমাদের নিরাপত্তার জন্য।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।