আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হবু প্রকৌশলীদের লড়াই

বরফের শহর মিনিয়াপলিস। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এটি। সকাল থেকে সন্ধ্যা বেশির ভাগ সময়ই এখানে চলে তুষারপাত। এ সময়ে ভাগ্য নেহাত ভালো না হলে সূর্যের মুখ দেখা যায় না। এই হাড়কাঁপুনে ঠান্ডার মধ্যেই আমরা মিনিয়াপলিস কনভেনশন সেন্টারে পৌঁছাই।

‘এসিআই স্প্রিং ২০১৩ কনভেনশন’-এ এখানে শুরু হবে ‘মর্টার ওয়ার্কেবিলিটি টেস্ট’ নামের প্রতিযোগিতা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে তখন সবাই ব্যস্ত। আমরা আনুষ্ঠানিক রেজিস্ট্রেশন করি। ফ্রন্ট ডেস্কে আমাদের কথা হয় মারিয়ার সঙ্গে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করছেন তিনি।

আমাদের দলটিতে পাঁচজন মেয়ে দেখে প্রথমেই তিনি তো মহা খুশি। এরপর ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর জ্যানেট সবকিছু আমাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন।
এ প্রতিযোগিতায় আমাদের সঙ্গে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো আর গুয়াতেমালা থেকে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি ক্যানসাস সিটি, পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি, টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি, আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়িসকনসিন মিলাওয়াওকি, ইউনিভার্সিটি অব অটোনমা দো নুয়েভো লিওন ও বাংলাদেশের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)।
এমআইএসটির পুরকৌশল বিভাগ থেকে আমরা দুটি দলে ভাগ হয়ে অংশগ্রহণ করি।

টিম-ভাইব ও টিম স্টর্ম। তাহমিদা হোসেন, শম্পা আক্তার ও সঙ্গীতা ভট্টাচার্যের সমন্বয়ে গড়া হয়েছিল টিম-ভাইব। আর টিম স্টর্মে ছিলেন তনয় দত্ত চৌধুরী, ইরফান চৌধুরী, রুবাইয়াত ইসলাম ও রাফা তাসনিম। আমাদের দুটি দলেরই তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এমআইএসটির পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ফুয়াদ ইয়াসিন হুদা।
১৪ এপ্রিল ছিল মূল প্রতিযোগিতা।

মর্টার বানানোর উপকরণ—সিমেন্ট, বালু ও অ্যাডমিক্সচার নিয়ে আমরা দুটি দলই সকাল সকাল কনভেনশন সেন্টারে পৌঁছে যাই। আমরা তিনজন শেষবারের মতো টিম প্ল্যানটা দ্রুত আলোচনা করে নিলাম। শুরু হলো প্রতিযোগিতা। এক এক করে সবাই নিজেদের প্রজেক্ট ও কার্যক্রম উপস্থাপন করল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটা টিমকে তাদের সঙ্গে আনা উপকরণ এক এক করে মিক্সচার মেশিনে দিয়ে মর্টার তৈরি করে বিচারকদের হাতে তুলে দিতে হবে—এই ছিল মূল কাজ।

বিচারকেরা মর্টারটিকে প্রথমে এসিআই খোদাই করা ছাঁচে ঢেলে তা পূরণ হওয়ার সময় ধারণ করবেন। এরপর এই মিক্সের স্টেবিলিটি পরীক্ষা করা হবে। সময় পার হওয়ার পর বিচারকেরা যখন আমাদের মিক্সটিকে মোল্ডে ঢাললেন, কেবল ৩ দশমিক ৭ সেকেন্ডে তা পার হয়ে এল। আমাদের হুল্লোড়ে তখন চারপাশে রমরমে অবস্থা। বিচারকেরা পিঠ চাপড়ে আমাদের উৎসাহিত করলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিযোগী এগিয়ে এসে বললেন, এক কম সময়, মাত্র ৩ দশমিক ৭ সেকেন্ড! অন্য দেশের প্রতিযোগীরা আমাদের সঙ্গে ছবি তুললেন। আমরাও অনেকের সঙ্গে ছবি তুললাম। বাকি দিনটা বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী আর প্রকৌশলীদের সঙ্গে জানতে আর শিখতে চমৎকার কেটে গেল।
১৫ এপ্রিল ছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রীতিভোজ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। একে একে নাম ঘোষণা হচ্ছিল।

ঘোষণায় ভেসে এল, অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমরা চতুর্থ স্থান লাভ করেছি। প্রত্যাশিত ফল না পেলেও এ অর্জনে আমরা খুশি হলাম। এসিআই শিক্ষার্থী কার্যক্রমের প্রধান ওয়াল্টার এইচ ফ্লাড জানান, আমাদের টাইমিংটা বেশ ভালো ছিল, কিন্তু রিপোর্টের কিছু সমস্যার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ি। তিনি আমাদের উৎসাহিত করলেন, পরের বার অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন।
পরদিন আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম মিনিয়াপলিসের বিখ্যাত মল অব আমেরিকায়।

ট্রেনে করে যেতে যেতে চোখে পড়ল স্বপ্নের মতো সাজানো শহরটির অলিগলি। তুষারআবৃত ছিমছাম শান্ত একটি শহর। গন্তব্যে পৌঁছে সবারই চোখ কপালে উঠে গেল। কয়েক একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত শপিং মল পুরোটা ঘুরতেও আমাদের কয়েক দিন লেগে যাবে! ওখানে আছে একাধিক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, যাতে আছে মজার মজার সব রাইড, আরও আছে মাছের এক বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম। পরদিন আমরা দেশের উদ্দেশে রওনা দিলাম।


এমআইএসটি দলের তত্ত্বাবধায়ক পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ফুয়াদ ইয়াসিন হুদা জানান, ‘বাংলাদেশ থেকে একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পক্ষে এই সাফল্য বয়ে আনা সম্ভব হয়েছে এমআইএসটি কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহায়তায়, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দেশের বাইরে নিয়মিতভাবে প্রতিনিধি দল পাঠানো গেলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা আরও ভালো ফল করতে পারবে বলে আশা করি। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।