আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবাসিক ভবনে গ্যাস সংযোগ সম্পর্কে

দেশে বর্তমান চাহিদার বিপরীতে গ্যাস উত্পাদন ও সরবরাহ কম থাকায় সরকার আবাসিক ভবনে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নতুন কোনো গ্যাস সংযোগ প্রদান না করার যে সিদ্ধান্ত বছরখানেক আগে গ্রহণ করেছিলেন তা বলবত্ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ। পাশাপাশি বাসাবাড়ির কাজে গ্যাসের অপচয় কমাতে বোতলজাত এলপি গ্যাসের নতুন কয়েকটি প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং এতদসংক্রান্ত সামগ্রীর খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে এর মূল্য কমিয়ে আনা হবে বলে জানা গেছে। পক্ষান্তরে, বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের বর্তমান প্রচলিত মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে এলপি গ্যাসের দামের সঙ্গে যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে তা দূর করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যেসব শহর এলাকায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ সুবিধা ভোগের সুযোগ ছিল সেখানকার নতুন বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি দুঃসংবাদ। অবশ্য এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে এমন আশা সুদূর পরাহত।

কারণ গ্যাসের অপচয় রোধের ক্ষেত্রে গৃহস্থালি কাজে নতুন সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা অথবা এর মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সমস্যাটির কোনো সমাধানের সুযোগ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লস কমানো, অবৈধ সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা এবং প্রতিটি গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ মিটার ব্যবহার পদ্ধতি চালু নিশ্চিত করা সম্ভব না হবে ততদিন পর্যন্ত গ্যাসের অপচয় কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। অন্যদিকে আমাদের দেশে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা বড় তিক্ত। কারণ অতীতে কখনো সিলিন্ডার গ্যাসে সরবরাহ মসৃণ ছিল না এবং গ্রাহকগণ নির্ধারিত মূল্যে কিনতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে সিলিন্ডার গ্যাসের চাহিদা বাড়লে সারাদেশে এ দুর্ভোগ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

গ্যাস সংযোগযুক্ত এবং গ্যাস সংযোগবিহীন বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এলপি গ্যাসের উত্পাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি এবং শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে এর মূল্য কমিয়ে আনার যত উদ্যোগই গ্রহণ করা হোক না কেন একশ্রেণীর অসাধু ডিলার/ব্যবসায়ীর কারণে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি এবং বাড়তি মূল্য প্রদানের হাত থেকে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হব বলে মনে হয় না। কারণ উপযুক্ত সরকারি ব্যবস্থায় অভাব এবং দুর্বল তদারকির কারণে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ক্ষেত্রে জনগণের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ/উপদেশ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের আহ্বানও তেমন কোনো কাজে আসেনি। এখন জনদুর্ভোগের তালিকায় ‘সিলিন্ডার গ্যাস’ একটি নতুন আইটেম হিসেবে যুক্ত হবে এমনটি ধারণা করা হয়।

তাছাড়া বর্তমানে বাসাবাড়িতে ব্যবহার্য যে আকার ও ওজনের সিলিন্ডার প্রচলিত আছে, রাজধানী শহরে অনেক এলাকায় সেগুলো ডিলারের কাছ থেকে কিনে পরিবহন এবং বহুতল বিশিষ্ট ভবনে ওঠানো-নামানো বেশ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হবে। তাই বর্তমানে প্রচলিত গ্যাস-সিলিন্ডারের পাশাপাশি বহনযোগ্য ছোট আকারের সিলিন্ডার সরবরাহ এবং প্রতিটি এলাকায় তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। সর্বোপরি, বিদ্যুত্ উত্পাদনে গ্যাসের নির্ভরতা কমিয়ে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি, সরকারিভাবে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলন, বিদেশী কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাসসহ যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে যে কোনো ভুলত্রুটি, দুর্বলতা ও বিতর্ক কাটিয়ে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ এবং ফলপ্রসূ চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা ছাড়া গ্যাস সমস্যার প্রকৃত সমাধান এবং সৃষ্ট জনদুর্ভোগ কমানোর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.