আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

◘ "হেফাজতে ইসলাম ও গণজাগরণ মঞ্চ" নিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর জিনিয়া জাহিদের একটি চমৎকার লেখা শেয়ার করলাম ◘

শহীদের খুন লেগে, কিশোর তোমার দুই হাতে দুই, সূর্য উঠেছে জেগে। -------হাসান হাফিজ ► কিছু ব্লগারের ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর লেখালেখির কারণসহ বেশ কিছু দাবিতে বৃহত্তর মুসলিম এ দেশের একটি সংগঠন "হেফাজতে ইসলাম" ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করার ঘোষণা দিয়েছে। গণমাধ্যমের খবর মতে, যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে রাজধানীর নয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রায় ২০ হাজার পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির প্রায় ১৪ হাজার পোশাকধারী ফোর্স ও এক হাজার রিজার্ভ ফোর্সসহ প্রায় ১৬ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের প্রায় দু`হাজার সদস্য টহলে থাকবে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে বিজিবির সদস্যদের।

দাঙ্গা ফোর্সের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সোয়াত টিম ও বোম ডিস্পোজাল টিম শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ‘ওয়ার্মআপে’ থাকবে বলে সরকারি মুখপাত্র নিশ্চিত করেছে। হেফাজতে ইসলাম সুষ্ঠুভাবে কোনরকম বাধা ছাড়া লংমার্চ করে ঘরে ফিরে যাক এটাই এখন দেশবাসীর কামনা। কারণ কোনরকম বাধার সম্মুখীন হলেই তারা দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করবে। কাজেই সহিংসতা এড়িয়ে হেফাজতের লংমার্চ বিনা বাধায় শেষ হোক, এটাই ধর্মভীরু আর শান্তিপ্রিয় জনগণ প্রত্যাশা করছে। ► কিন্তু এরই মাঝে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইমরান এইচ সরকার কেন এই লংমার্চ প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন তা বোধগম্য নয়।

যেখানে সরকারসহ বিরোধীদল সবাই চাইছে ওদের লংমার্চ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়ে আপাতত রাজনৈতিক এই সংকট কেটে যাক সেখানে ইমরান এইচ সরকার হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ঠেকাতে ২২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি কেন ঘোষণা করলেন? একইভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ব্যতিক্রমী হরতাল ডেকেছে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। কেন শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধ চলবে? হরতালই বা কেন? কেন প্রাণ ও দেশের সম্পদ নাশের সমূহ সম্ভাবনা আছে জেনেও সব পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে এই অবরোধ কর্মসূচি সফল করার? কেন সব বাস মালিক-শ্রমিক, রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, লঞ্চের মালিক-শ্রমিকদের প্রতি বিনীত আহ্বান জানিয়ে সব বন্ধ থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে? গণজাগরণ মঞ্চ তো কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তবে কেন তারা অবরোধ দিয়ে দেশকে অচল করার কর্মসূচি দিচ্ছে? ২২ ঘন্টার এই অবরোধে শুধু লংমার্চ ঠেকানোর জন্য দেয়া হলেও সাধারণ জনগণ কি এই ২২ ঘন্টায় অতি প্রয়োজনীয় কাজেও ঢাকা অভিমুখে আসতে পারবে না? হেফাজতে ইসলাম ছাড়াও তো দেশের খেটেখাওয়া মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিত্সা, প্লেনের ফ্লাইট কতরকম কাজই তো থাকতে পারে। তারা কেন অবরুদ্ধ হয়ে ঘরে বসে থাকবে? ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ অন্যদের ডাকা হরতাল আর গণজাগরণ মঞ্চের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা না হলে রোববার থেকে হেফাজতে ইসলাম লাগাতার হরতাল শুরু করবে বলে এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছে। আমরা তো এই প্রিয় দেশ অচল হয়ে যাক চাইনা।

হেফাজতের আপাত লক্ষ্য তো ইসলামকে হেফাজত করা বলেই তারা দাবি করছে, তবে কেন আমরা আগ বাড়িয়ে সন্দেহের বেড়াজালে ওদেরকে ক্ষিপ্ত করে সহিংসতার পথে এগুচ্ছি? গণজাগরণ মঞ্চের মূল উদ্দেশ্য তো তা নয়!! হেফাজতে ইসলামকে বাধা দেওয়া তো আমাদের কাজ নয়, গুটিকয়েক নাস্তিক ব্লগারদের রক্ষা করার মিশনেও তো আমরা গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করিনি। জায়গায় জায়গায় লংমার্চ ঠেকানো তো আমাদের কাজ নয়। এর জন্য সরকার আছে, আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনী আছে। আমরা কেন পিকেটারদের মত বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে লংমার্চ ঠেকাব? তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমাদের আদৌ কি কোনো পার্থক্য থাকে? এভাবে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান আমাদের কাজ নয়। এর জন্য দেশে যদি কোনো অনিবার্য সংঘর্ষ হয়, সে দায় কিন্তু আমরা এড়াতে পারব না।

গণজাগরণ মঞ্চই কি শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে? ইসলামের চেতনার সাথে কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আলাদা করা হচ্ছে? আমরা কেন ইসলাম আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পরস্পর বিরোধী চেতনা মনে করছি? বৃহত্তর এই মুসলিম দেশে ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবশ্যই যুথবদ্ধ চেতনা। ব্লগে লিখলেই যেমন সবাই নাস্তিক হয়ে যায় না, তেমনি ধর্ম পালনকারী মাত্রই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়ে যায় না। আমরা গণজাগরণ মঞ্চ গড়েছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে। সেটা ঠিক মত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করাই তো আমাদের মূল উদ্দেশ্য। লক্ষ্য যেহেতু যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সোনারবাংলা গড়া, সেই লক্ষেই আমাদের দৃঢ়সংকল্প হতে হবে।

এভাবে রাজনৈতিক দলের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ করে নয়। দেশে চরম রাজনৈতিক এই সংকট মোকাবেলা করতে হলে, সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এড়াতে হলে আমাদের সহিস্ষ্ণু হতে হবে। আমাদের আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধিমত্তার সাথে কর্মসূচি দিতে হবে। তবেই আমরা সফল হব। (সংক্ষেপিত) ░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░ শাহবাগ আন্দোলনে আমার নৈতিক অবস্থান যেখানে ░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░ মূল লেখক জিনিয়া জাহিদ: বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

নরওয়ে থেকে "ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্স ইকনমিক্স" এ এমএস শেষ করে বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি করছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের "খাদ্য নীতি"নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ═══ஜ۩۞۩ஜ═════ஜ۩۞۩ஜ═════ஜ۩۞۩ஜ═══ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।