আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নই। এটাই কি আমার সবচেয়ে বড় দোষ!!!!

প্রথমেই বলে নেই এই লেখাটি কাউকে উদ্দেশ্য করে নয় বা কোন বিশেষ গোষ্ঠিকে উস্কানি প্রদানের জন্য নয়। বিষয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের বহুল চর্চিত চর্বন একটি বিষয়। তারপরও আমার মত যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সন্ততি নয় তাদের কষ্টের কথা জানাতেই আমার এই লেখা। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ অন্য সকলের মত আমারও গর্বের বিষয়। স্বাধীন বাংলার স্বাধীন বাতাস আমার মনকেও আন্দলিত করে।

আমি সবসময় শ্রদ্ধাবনত থাকি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। আমি বাংলাদেশের একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতোকোত্তর শেষ পর্যায়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন দিনগুলো শেষ করে চাকুরী যুদ্ধে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সময়টা এমনিতেই কেমন যেন হতাশার। কিন্তু তারমধ্যে আরও হতাশ লাগে যখন দেখি সরকার একটি বিশেষ গোষ্ঠিকে অকল্পনীয় সুযোগ সুবিধা দেয়।

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এ কথা মানতে আমার কোন দ্বিধা নেই। তাই বলে তাদের সন্তান সন্ততি ও নাতি পুতিরা যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হবে এবং সুবিধা পাবে তা মানতে আমি নারাজ। আমরা ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাই ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, আইরিশ বিপ্লবের মত বিশ্বের বড় বড় যত বিপ্লব আছে তার পেছনের অন্যতম প্রধান কারন কোন বিশেষ গোষ্ঠিকে সরকার কতৃক সুবিধা প্রদান। এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘাটলেও লক্ষ্য করা যায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারন সরকার কতৃক পশ্চিম পাকিস্তানিদের বেশি সুবিধা প্রদান। একটু গভীরভাবে যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে আমরা লক্ষ্য করি আমাদের দেশের সরকারও বর্তমানে ঠিক একই কাজ করছে কোটা ব্যবস্থার আড়ালে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন সাধারন পাকিস্তানির প্রতি আমাদের ক্ষোভ ছিল ঐ সময়কার সরকারের কারনে। কারন সরকারই সাধারন মানুষদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করে দেয়। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সাথে আমাদের মত সাধারন মানুষদের সন্তাদের বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বৈষম্য চলতে থাকলে আর কিছুদিনের মধ্যেই শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতিই নয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও সন্মান চলে যাওয়া অস্বাভাবিক হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের যেমন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারী কোন চাকুরী লাভের আশা ছিল স্বপ্নের মত , এখন ঠিক একই রকম ভাবে সাধারন ঘরের ছেলেদের সর্বোচ্চ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে একটি ভাল সরকারী চাকুরী শুধুই স্বপ্ন।

সরকারী চাকুরীর সব জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা। তাও আবার সন্তান সন্ততি সহ নাতি পুতি। তারপর আছে অনান্য কোটা ও সরকারী দলীয় কর্মী। এত প্রতিদ্বন্দীর পরও যদি কোন সাধারন ছেলে কোন সরকারী চাকুরীর ভাইবা পর্যন্ত যায় তাহলে চাকুরী পেতে হয় তাকে টাকা ঢালেত হবে , নয় তার মামা , খালুর জোড় থাকতে হবে। সরকার সব বিসিএস এ মুক্তিযোদ্ধা কোটা তো রাখেই , মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আলাদা বিসিএস এর ব্যবস্থা করে।

মোট কথা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি পুতিদের চাকুরী মুখে তুলে না দিলে সরকারের পেটের ভাত যেন হজম হবে না। তাদের জন্য বিসিএস এ ৩০% সহ অনান্য কোটা মিলিয়ে প্রায় ৫৫% কোটা। এত কোটা থাকলে সাধারন ছেলেদের জন্য সরকার ঘোষনা দিক কোন সরকারী চাকুরীতে সাধারন ছেলে আবেদন করতে পারবে না। তাতে অন্তত ৫০০ টাকা বাচঁবে। আবার উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে কোটা সুবিধা এটি নিয়ে দুটি কথা না বললেই নয়।

শুধু কোটা ব্যবস্থা থাকার ফলে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মেধা সম্পন্ন ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার যেখানে কোটা সুবিধা দিয়ে একদিকে যেমন অপেক্ষাকৃত কম মেধা সম্পন্ন ছাত্র ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে অন্য দিকে চরম প্রতিকূল পরিবেশ থেকে আসা যোগ্যতাসম্পন্ন মাদ্রাসার ছেলেদের বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তির সুযোগই দেয়া হচ্ছে না। সরকার তাহলে ঘোষণা করতে পারে উচ্চশিক্ষা শুধু মুক্তিযোদ্ধাও অনান্য কোটাভুক্তদের অধিকার। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও অনান্য সুবিধা তো দিচ্ছেই তার উপর মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য অযোগ্য সন্তানদের মুখে ভাত তুলে খাওয়ানোর রীতি গ্রহন করেছে। সবচেয়ে কষ্টের আরেকটি জায়গা হল আজকর যারা মুক্তিযোদ্ধার দাবিদার তারা অর্ধেকর বেশী ভুয়া।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ৩ লাখের মত সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়া রেজিস্টার্ড মুক্তিযোদ্ধা ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেয়া হয় প্রায় ৮ লক্ষের মত যা পরবর্তীতে আরও কয়েকলাখে উন্নীত হয়। আবার আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার কোন সুনির্দিষ্ট সং্গা নেই । যারা যুদ্ধের সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে নি তারা যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তা বলা যাবে না। তারা নানা ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছে।

সে হিসেবে তৎকালীন সময়ের বেশির ভাগ মানুষই মুক্তিযোদ্ধা। সাধারন মানুষের সহযোগিতা না থাকলে মুক্তিযোদ্ধাদের একার পক্ষে যুদ্ধ জয় অসম্ভব হত। কিন্তু বর্তমান সরকারের আচরন দেখলে মনে হয় যুদ্ধের সময় ৩লাখ মুক্তিযোদ্ধা যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে তারাই শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছে আর বাকী ৬ কোটি ৯৭লাখ মানুষ স্বাধীনতা চায় নি। যেহেতু সরকার কোটা ব্যবস্থা রাখবেই তাই সরকারের কাছে আবেদন সরকার কোটাভুক্তদের উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা কোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করুক এবং সরকারী চাকুরীর বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ভাগ করে দিক। এটি করলে সাধারন চাকুরী ছেলে মেয়েদের কিছুটা হলেও উপকার হবে।

আমার এই লেখা পড়ে কেউ যদি আঘাত পান তাহলে সেটি আমার দোষ নয়, সেটি আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার দোষ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.