মন তুই করলি এ কী ইতরপনা।
দুগ্ধেতে যেমনরে তোর
মিশলো চোনা । ।
শুদ্ধ রাগে থাকতে যদি
হাতে পেতে অটল নিধি
বলি মন তাই নিরবধি
বাগ মানে না। ।
কী বৈদিকে ঘিরল হৃদয়
হল না সুরাগের উদয়
নয়ন থাকতে সদাই
হলি কানা । ।
বাপের ধন তোর খেল সর্পে
জ্ঞানচক্ষু নাই দেখবি কবে
লালন বলে হিসাবকালে
যাবে জানা। ।
বাউল টুনটুন শাহের কন্ঠে গানটা শোনা যাক
দুগ্ধের উপমা লালনের গানে অনেকবার এসেছে।
দুগ্ধ আদর্শ খাবার, শুধুমাত্র দুগ্ধ পান করেই মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু দুধে যেমন পানির মিশেল থাকে, তেমনি মানুষ সংসারে যত আচ্ছন্ন হবে তত তার সত্ত্বগুণ কমতে থাকবে, দুধে পানির পরিমাণ বাড়বে।
লালন অন্য একটা গানে বলেছেন, "দুগ্ধে জলে মিশাইলে বেছে খায় রাজহংস হলে, কারও সাধ যদি যায় সাধন বলে হয় সে হংস রাজের ন্যায়। " অর্থাৎ রাজহাঁস যখন দুধ খায় তখন বেছে বেছে শুধু সারবস্তুটুকু খায়, তেমনি জ্ঞানী যারা তারা সংসার থেকে শুধুমাত্র ভালটুকু নেয়। যেমন একই ফুলে মৌমাছি যায় মধু খেতে, অপরদিকে মাকড়সা খায় বিষ।
কিন্তু সংসারে থেকে সবদিক রক্ষা করা খুবই কঠিন, কারণ দুধে খুব সহজে পানি মেশে। পানি মেশাটা তবু মন্দের ভাল, যদি চোনা বা গোমূত্র মিশে তাহলে সেটা ফেলে দেয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। প্রকৃতি ত্রিগুণাত্বক, সত্ত্বঃ, রজঃ এবং তমঃ। সত্ত্বগুণ সবচেয়ে ভাল যেমন জ্ঞানার্জন,পরোপকার এরপরে রজোগুণ যেমন ধন-সম্পদ, প্রতিষ্ঠা লাভ ইত্যাদি, সবচেয়ে খারাপ তমোগুণ যেমন কাম, লোভ, হতাশা, আলস্য ইত্যাদি। মানুষের স্বভাবে যখন তমোগুণের প্রাধান্য হয় সেটাকেই লালন বলছেন 'দুধে চোনা মিশানো'।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, "কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলে দুটো কাঁটাই ফেলে দিতে হবে। " মানে হল রজোগুণ দিয়ে তমোগুণকে সরাতে হবে, তারপরে সত্ত্বগুণ দিয়ে রজোগুণকে সরাতে হবে। এরপরে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে সত্ত্বগুণকেও পরিত্যাগ করতে হবে, না হলে সাত্ত্বিক অহংকার থেকে যাবে। এ কাজ বড় কঠিন,বৈদিক যাগযজ্ঞে এ সাধন সম্ভব নয়। প্রাথমিক অবস্থায় মনকে নিয়ন্ত্রণ করা, 'বাগ মানানো' খুব কঠিন, কিন্তু দুধকে যেমন ঘন করে মাখনে পরিণত করা যায় তখন সে আর পানিতে মেশে না ভাসতে থাকে।
মনকেও তেমনভাবে প্রস্তুত করলে তখন সে আর সংসারে তেমন বিচলিত হয় না। এ জন্যে অনেক যত্নের দরকার, যেমন চারাগাছকে পানি, সার দিয়ে বেড়া বেঁধে যত্ন এবং পশুপাখির থেকে রক্ষা করতে হয়, কিন্তু সেই গাছ বড় হলে তাতে বড় পশুও বেঁধে রাখা যায়। মন প্রস্তুত হলে মানুষও তেমন অটল হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।