পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/
ছোট বেলার কথা, অসময়ে ক্রিকেট খেলা দেখলে আব্বা কান ধরে বাসায় নিয়ে আসতেন আর বলতেন পড়া লেখা বাদ দিয়ে এই সব বন্ধ না করলে এইটা করব সেইটা করব, তবু বাদ দিতাম না।
জামানার পরিবর্তন হলো...
গুরুত্বপুর্ণ ভারত পাকিস্তানের ম্যাচ হলে আব্বাও আমাদের থেকে খুঁজ-খবর নিতেন, উত্তেজনার মূহুর্তগুলোতে জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন, কাউকে চিনতেন না তবুও বলতেন ঐ লম্বা চুল ওয়ালা (ওয়াসিম আকরাম) প্লেয়ারটাকে খুব ভাল লাগে...
জামানার আরো পরিবর্তন হলো....
আক্রাম, বুলবুল, দূর্জয়, নান্নু, শান্ত, পাইলট এদের ভাল লাগা শুরু হলো। তারাও ম্যাচ জীততে শিখল। আব্বা তখন রেডিওতে খেলা শুনতে লাগলেন।
ধীরে ধীরে আশরাফুল, তামিম, সাকিবদের জামানা চলে আসল। জাদুর মোহকেও যেন হার মানাল এরা। এখন বিদেশ থেকে শুনি যে, খেলার দিন আব্বা নাকী বাহিরেই জান না। শুধু নামাজের ওয়াক্তে জান এবং দ্রুত চলে আসেন। অথচ আমার আব্বা অনেক কনজারভেটিভ মানুষ।
সত্যিই ক্রিকেটের একটি মোহ আছে। যা অনেক কিছুর সীমানাই ভেংগে ফেলে।
এক দৃষ্টিতে আমিও মানতে পারি না যে, আমাদের এই গরিব দেশেও কি করে একজন অশিক্ষিত খেলোয়াড়কে একটা চারের জন্য লক্ষ টাকা দেয়া হয়, একজন খেলোয়াড়ের পেছনে কেন মন্ত্রী মিনিস্টাররাও দৌড়ায়, আবার অপর দৃষ্টিতে দেখি যে, বিসৃঙ্খল এই জাতিকে এক কাতারে আনতে সক্ষম কেবল এই ক্রিকেটই। এক মুহুর্তের জন্য হলেও সকল ভেদাভেদ ভুলে এক কন্ঠে কন্ঠ মেলাতে সক্ষম কেবল এই ক্রিকেটই।
আধুনিক বিশ্বে পাল্লা দিয়ে চলার মত আমাদের আছে কেবল ঐ তামিম আর সাকিব।
কাজেই ক্রিকেট কেবল বিনোদনের মাঝেই সিমাবদ্ধ নেই। এতে মিশে আছে আবেগ, ভালবাসা, আশা, মর্যাদা ও লক্ষ তরুণের ভবিষ্যত। এই ক্রিকেটের সাথে অর্থনীতিও জড়িয়ে গেছে অনকেটাই।
আসন্ন বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরকে অনেকেই ঐতিহাসিক সফর বলে মনে করছেন। কিন্তু আমি তা মনে করছি না।
এই সফর তখনই ঐতিহাসিক হবে যদি সেখানে কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটে। আর, যদি কোন অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে তবে এতে বাংলাদেশকে নিয়ে মানুষ হাসবে। কারণ, বাংলাদেশ সেখানে খেলে আসল আর কোন অঘটন ঘটল না, তার মানে এই না যে কালই অস্ট্রলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত গিয়েও সেখানে খেলে আসবে।
বাংলাদেশ গিয়ে খেলে আসলেই কখনো এটা প্রমান করবে না যে সেখানে নিরাপত্তার সমস্যা নেই। নিরাপত্তার সমস্যা যদি নাই থাকে তবে কেন পাক সরকার খেলোয়াড়দের জন্য হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখার প্রস্তাব দিবেন? আমাদের সাকিবরা কি কখনো হেলিকপ্টারে চড়েন নী??
পাকিস্তানে যে নিরাপত্তার অভাব নেই এটা কেবল তখনই প্রমাণ হতে পারে যখন ভারত সে দেশে গিয়ে বড় কোন টুর্নামেন্ট খেলে নিরাপদে ফিরে আসে।
বাংলাদেশ গিয়ে খেলে আসলে কোন কিছুই প্রমাণ হবে না।
হয়ত এমন হলো যে, মাঠে কিংবা রাস্তায় কোন গন্ডগোল দেখা দিল, কিন্তু খেলোয়াড়রা নিরাপদেই হোটেলে পৌছল, তখন কি মানুষ আমাদের নিয়ে হাসবে না? আমাদেরকে সস্তা মনে করবে না??
যেখানে আইসিসি নিজেদের অফিসিয়াল পাঠাতে চাচ্ছে না তখন কোন অঘটন ঘটলে কার নিকট গিয়ে তদন্তের আবেদন করবে? এমনিতেই একটু খারাপ খেললে মানুষে বলে বাংলাদেশের টেষ্ট ষ্ট্যাটাস দেয়া ঠিক হয় নি, এটা দ্বারা কি বাংলাদেশকে সস্তা বানানো হয় না?? এই সফর হয়ে গেলে মানুষ আমাদের আরো সস্তা ভাববে।
প্রশ্ন: যেখানে কেহ সে দেশে গিয়ে খেলতে চায় না সেখানে কেন আমরা যাব??
ক) তাদের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য?
খ) তাদের অর্থনীতি চাংগা করার জন্য?
গ) নিজেদের সাহসী প্রমণ করার জন্য?
ঘ) নিজেদের মানবতা দেখানোর জন্য?
ঙ) নাকী আমাদের সাথে খেলার মত কোন দেশ নেই তাই?
অপর দৃষ্টিতে:
অনেকে হয়ত ভাবতে পারে, এখানে রাজনীতির গন্ধ আছে, আছে
ব্যাক্তিগত স্বার্থও জড়িত।
> হয়ত এই সফর সাকসেস করিয়ে দিতে পারলে, কেহ চাইলে পাক সরকার থেকে লক্ষ ডলার হাদিয়া পেতে পারেন।
> হয়ত এই সফর সাকসেস করিয়ে দিতে পারলে আন্তর্যাতিক পর্যায়ে বড় কোন পদ পাওয়ার পথ আরো সুগম হবে।
সফরকালীন সময়ে খেলোয়াড়দের চিন্তা কোন দিকে থাকবে...
> মাঠে থাকুক আর হোটেলে থাকুক, সব সময় খেলোয়ারদের মাথায় চিন্তা থাকবে এই বুঝি বোমা ফাটল, এই বুঝি গুলি ছুড়ল এইরকম চিন্তা মাথায় নিয়ে মাঠে খেলতে নামলে কী কোনদিন ভাল খেলতে পারবে?
এমনিতেই দলের যে করুন অবস্থা!
অনেকদিন পর সে দেশে খেলা হলে দর্শকও প্রচুর হবে, ফলে ভীড়ের মাঝ থেকে কেউ কিছু একটা বলে চিৎকার দিলেই খেলোয়াড়রা ভয় পেয়ে যাবে, মোট কথা সবসময় একটা উৎকন্ঠায় থাকবে।
জরুরী পয়েন্ট:
>> বাংলাদেশ বড় ব্যাবধানে হারলে মানুষে বলবে এটা হলো দু'দেশের মাঝে এক ভাড়ামী। আর খেলোয়াড়রাও মানসিক প্রেসারের কথা বলে দায়ভার থেকে শহজেই মুক্তি পাবে।
>> বাংলাদেশ জয় পেলে পাকিরা বলবে তাদের দল টাকা নিয়েছে এবং লাগাবে গন্ডগোল।
মোট কথা এই সিরিজ থেকে পাবার মত দুই দলের কিছুই নাই।
এবার এই ছবিটা দেখুন...
মোট কথা:
আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে ভালবাসি। তাদের ক্ষতি হওয়াতো দূরের কথা তাদের অসম্মানও আমি কখনো কামনা করি না। তাই আসন্ন পাকিস্তান সফরকে আমার রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তিগত স্বার্থেরই ফলাফল বলে মনে হচ্ছে। কাজেই আমি বাংলাদেশ সরকারের নিকট এই সফর বাতিল করার অনুরুধ জানাচ্ছি।
সাথে আইসিসিকেও অনুরুধ করব, আপনারা ভাল করেই আমাদের অন্চলের রাজনীতির দৌরাত্বের কথা জানেন, তাই কোন দল কিংবা ব্যাক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার মাধ্যমে ১৬কোটি মানুষের প্রাণের দল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে যেন কোন অনিশ্চিতের দিকে ঠেলে না দেয়া হয়, সেই দিকটা খেয়াল রেখেই উক্ত টুর্নামেন্টের অনুমতি না দেয়া হোক।
আসন্ন পাকিস্তান সফরের কাল্পনিক দৃশ্য।
আমি আইসিসি ও বিসিবি বরাবর ইমেইল করেছি, ইচ্ছে করলে আপনারাও করতে পারেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।