আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফিকশন : দ্য গ্রাফ (২য় ও শেষ পর্ব)

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। (৩) মেরিনাকে এ অবস্থায় দেখে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো জাহিদের। কাল থেকে লোকগুলো তাকে একটা চেয়ারে আটকে রেখেছে।

মেরিনা জানতে পেরেছে তার বাবাকে এরাই মেরেছে। কেন মেরেছে এটাও টাকমাথা চশমাপড়া লোকটা বলেছে। জানার পর থেকেই তার ইচ্ছা করছে এদেরকে মেরে ফেলতে। তাকে এরা একটা ছবির অংশ দেখিয়ে বারবার বলছে এটার বাকীটা একে দিতে। ছবিটা দেখার পর থেকেই তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে একটু পরপর।

এই ছবিটাই সে এতদিন চোখ বন্ধ করলে দেখতে পেতো। দুবার সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। শরীর প্রচন্ড দুর্বল। তার দুচোখে প্রচন্ড ঘুম নেমে আসছে। কিন্তু চোখ বুজলেই চোখের সামনে কতগুলো রেখার আকিবুকি দেখতে পায়।

তার দম বন্ধ হয়ে আসে। - ক্লিয়ো, বাচ্চাটাকে কষ্ট দিয়োনা। তোমার কি কোন দয়ামায়া নেই? - বড় কিছুর জন্য ছোট অনেক কষ্টই সহ্য করতে হয় জাহিদ। তুমি মেরিনাকে নিয়ে বাকী গ্রাফটা সলভ করে আমাকে দাও। আমি কথা দিচ্ছি মেরিনাকে ছেড়ে দেবো।

- না ক্লিয়ো, আমি আমার দেশের সাথে আমার বসের সাথে আর প্রতারণা করতে পারবোনা। আমি গ্রাফ সলভ করবোনা। - তাহলে তুমি আমার সামনে একটাই উপায় রাখছো। সেটা হল মেরিনার ব্রেইনটাকে নিউরাল কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার করা। সেটার ফলাফল কি হতে পারে তুমি নিশ্চয়ই সেটা জানো।

আমার নিজেরও একটা বাচ্চা আছে। আমি চাচ্ছি না মেরিনাকে মেরে ফেলতে। বাকীটা তোমার ইচ্ছা। আমি যতটুকু বুঝতে পারছি, তুমি মেরিনার ক্ষমতা ব্যবহার করে গ্রাফটা কমপ্লিট করতে পারবে। কারণ তুমি মেরিনার ক্ষমতা মেরিনাকে জীবিত রেখেই ব্যবহার করতে জানো।

আর আমি ব্যবহার করলে মেরিনার ব্রেইনটাকে শরীর থেকে আলাদা করে ব্যবহার করবো। সুতরাং সবকিছু তোমার উপর নির্ভর করছে। - না ক্লিয়ো, তুমি মেরিনার কোন ক্ষতি করবেনা। আমি গ্রাফ কমপ্লিট করবো। - তোমাকে একদিন সময় দেয়া হলো।

এই একদিন তুমি আমার অতিথি হয়ে মেরিনাকে নিয়ে আমার এখানে থাকবে। আগামীকালকে আমি পুরো গ্রাফ না পেলে কি করবো বুঝতেই পারছো। আমার একটা ছোট্ট ভুল আমার অপেক্ষার পালা ৮ বছর বাড়িয়ে দিয়েছে। এবার গ্রাফটা কমপ্লিট করতে পারলেই আমি হবো অঢেল টাকা আর ক্ষমতার মালিক। আমি আর অপেক্ষা করতে চাইনা।

বুঝতে পারছো জাহিদ? মেরিনা চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তার সামনে গাঢ় এক অন্ধকারে ভাসছে অসম্পূর্ণ গ্রাফটা। তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিচ্ছিন্ন কিছু সংখ্যা। মাঝে মাঝে গ্রাফের কিছু বিন্দু উজ্জল হয়ে উঠছে আর সেটা থেকে অন্য একটা বিন্দুতে। মেরিনা সেই বিন্দুর স্থানাংক বের করে দুই অক্ষের মানের সমষ্টির বর্গের ফিবোনাচ্চি নাম্বারটা নিয়ে সেই কোঅর্ডিনেটে বসাচ্ছে আর সেগুলো গ্রাফের অংশ হয়ে যাচ্ছে।

সে খেয়াল করে দেখেছে সংখ্যাগুলো একটা প্যাটার্ণ করে আসছে। এমন প্যাটার্ন সে আগে কখনো দেখেনি। হঠাৎ সে প্যাটার্ণটা ধরে ফেললো। চরম উত্তেজনায় সে চোখ খুলে কাগজ হাতে নিল আর দ্রুতগতিতে গ্রাফ আকা শুরু করলো। গ্রাফটায় যখন আর দুটা বিন্দু বসানো বাকী তখন মেরিনার শরীর হঠা অবশ লাগতে শুরু করলো।

সে আবার অজ্ঞান হয়ে গেলো। জ্ঞান হারানোর আগে সে অস্পষ্টভাবে দেখলো ক্লিয়ো দৌড়ে এসে তার হাত থেকে ছো মেরে কাগজটা নিয়ে গেলো। (৪) ক্লিয়ো গ্রাফটা কম্পিউটারে লোড করার পর চরম হতাশ হয়ে গেলো। গ্রাফটা এখনো কমপ্লিট হয়নি। দু-তিনটা বিন্দু এখনও বসানোর বাকি।

সময় চলে যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। এদিকে মেয়েটা আবার সেন্সলেস হয়ে গেছে। কখন জ্ঞান ফিরবে কে জানে? মনিটরের দিকে তাকিয়ে ক্লিয়োর মাথায় এখন অন্য একটা চিন্তা ঘুরছে। মেরিনা মেয়েটা অনেক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। এর ব্রেইনটাকে নিউরাল কম্পিউটারে কাজে লাগাতে পারলে তাক লাগিয়ে দেয়া যেত।

ঠান্ডা মাথায় ক্লিয়ো প্ল্যান করতে থাকল। মেরিনা গ্রাফটা কমপ্লিট করার পরেই সে খুন করবে জাহিদকে। তারপর মেরিনাকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবে। অঢেল ক্ষমতার মালিক হতে আর বেশী দেরি নেই। হঠাৎ ক্লিয়োর মাথাটা কেমন যেন ঝিম মেরে উঠলো।

অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো তার। বামে ঘুরে সে তাকালো মেরিনার দিকে। চোখ আটকে গেলো মেরিনার চোখে। চোখজোড়া এখন আর বন্ধ না। কঠিন চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো মেরিনা।

গ্রাফটা সে কমপ্লিট করে ফেলেছে। সেটা এখন তার চোখের সামনে ভাসছে। নিজেকে এখন তার অনুভুতিশুন্য একটা রোবট মনে হচ্ছে। ক্লিয়োকে মনে হচ্ছে আরেকটা কম্পিউটার। ক্লিয়োর দিকে তাকিয়ে আবার একটা হাসি দিয়ে গ্রাফটা সে ছুড়ে দিলো ক্লিয়োর চোখে।

সাথে সাথেই নিজের শরীরে প্রচন্ড উত্তাপ অনুভব করল মেরিনা। সে এখন ধীরে ধীরে ঢুকে যাচ্ছে ক্লিয়োর মাথায়। ক্লিয়োর চিন্তাশক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলল মেরিনা। ক্লিয়োর চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা অতিসুন্দর গ্রাফ। সেটা মাঝে মাঝে নড়ছে।

আকৃতি বদলাচ্ছে। সেই সাথে নড়ছে ক্লিয়ো। জাহিদের চোখের সামনে ভেলকিবাজীর মত পরপর ঘটনাগুলো ঘটে গেলো। ক্লিয়ো তার চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে রুমের সিকিউরিটির দায়িত্তে থাকা লোকগুলোকে গুলি করে মেরে ফেললো। তারপর রিভলবারটা জাহিদের কাছে ছুড়ে দিয়ে জোম্বির মত হেটে ব্যালকনিতে গিয়ে ঝাপ দিলো পনের তলার উপর থেকে।

মেরিনা দুর্বল ভাবে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। জাহিদ দৌড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে মেরিনা। ধীরে ধীরে মেরিনার উত্তপ্ত শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসে। জাহিদ মেরিনার তুলতুলে ছোট্ট শরীরটা কোলে তুলে নেয়। জলভেজা চোখে এগিয়ে যায় দরজার দিকে।

বাইরে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। ............................................. সমাপ্ত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.