আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালনের গানঃ কোন নামে ডাকিলে তারে হৃদাকাশে উদয় হবে

কোন নামে ডাকিলে তারে হৃদাকাশে উদয় হবে আপনা আপনি ফানা হলে সে ভেদ জানা যাবে আরবী ভাষায় বলে আল্লা, ফারসীতে কয় খোদা-তাআলা গড বলেছে যীশুর চ্যালা, ভিন্ন দেশে ভিন্নভাবে আপনা আপনি ফানা হলে সেভাব জানা যাবে । । মনেরও ভাব প্রকাশিতে ভাষার উদয় এ জগতে মনাতীত অধরে চিনতে ভাষাবাক্য নাহি পাবে। আপনা-আপনি ফানা হলে সে ভাব জানা যাবে আল্লা, হরি, ভজন-পূজন সকলি মানুষের সৃজন অনামকো চিনায় বচন বাগেন্দ্রিয় না সম্ভবে। আপনাতে আপনি ফানা, হলে তারে যাবে জানা সিরাজ সাঁই কয় লালন কানা, স্বরুপে রুপ দেখ সংক্ষেপে ।

আপনা-আপনি ফানা হলে সে ভাব জানা যাবে। কোন নামে ডাকিলে তারে হৃদাকাশে উদয় হবে আপনা-আপনি ফানা হলে সে ভেদ জানা যাবে । । যার কোন নাম নাই, রুপরসগন্ধশব্দস্পর্শাতীত যিনি তাকে কি আসলে কোনভাবে ডাকা বা বিশেষায়িত করা যায়? মুসলমান যাকে বলে আল্লাহ, তিনিই হিন্দুর হরি, যীশুর চ্যালা পল তাকেই বলেছেন গড। এসব নামের মধ্যে কোন নামে ডাকলে ঈশ্বরকে পাওয়া যাবে।

কোনটা তাঁর আসল নাম? কবিয়াল বিজয় সরকারের অনুরুপ একটা গান আছে, মূলকথাগুলো এরকম, "জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি? তোমায় এত নামে ধরাধামে মানুষে ডাকে....তোমার বাবাও নাই, মাও নাই তাহলে এ নাম তোমায় কে দিল" ফকির লালনের প্রশ্ন কোননামে ডাকলে হৃদয়ের শতদলপদ্মে তাঁর উদয় হবে? কারণ যুগে যুগে সাধকেরা বলে গেছেন বিশ্বাসীর হৃদয়ে তিনি অবস্হান করেন। বিখ্যাত সুফীসাধক ইবনে আরাবী বলেছেন, The heart of the believer is the real Kaaba। ধরাছোঁয়ার অতীত যিনি তাকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বুঝা যাবে না। অনামকো চিনায় বচন বাগেন্দ্রিয় (বাক+ ইন্দ্রিয়) না সম্ভবে। যার নাম নাই তাকে বাক্য বা ইন্দ্রিয় (চক্ষু,কর্ণ,নাসিকা,জিহবা,ত্বক) গোচর করা যায় না।

কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে আপনাতে আপনি ফানা বা বিলীন হলে সে ভেদ বুঝা যাবে। Mysticism শব্দের রুট গ্রীক Myen (উৎপত্তি) এর অর্থও হল-- to close our senses। ইন্দ্রিয়ের দ্বার বন্ধ করে যে করে বায়ুর বা দমের সাধন সেই তো বাউল। কারণ চিন্তায় সত্যকে পাওয়া যায় না, ধ্যানে পাওয়া যায়। চিন্তা বা মনের ভাব প্রকাশের জন্য মানুষ ভাষার জন্ম দিয়েছে, কিন্তু চিন্তার অতীত, মনের অতীত যিনি তাঁকে সেই ভাষা বা বাক্যে পাওয়া যাবে না।

এইজন্য ঠাকুর রামকৃষ্ণ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন, "ঈশ্বর জ্ঞান ছাড়া আর সব জ্ঞান উচ্ছিষ্ট হয়ে গেছে"। এ জ্ঞানে পরের মুখে ঝাল খাওয়ার সিস্টেম নাই। তাহলে এত যে নামে তাকে ডাকা হয় এতসব নামের উৎপত্তি হল কিভাবে ? ফকির লালন বলেন এসব নাম মানুষেরই সৃজন বা সৃষ্টি। ফানা অবস্হায় সাধকের অনুপ্রেরণা থেকেই এসব প্রেরণাপ্রাপ্ত নাম এবং ভজন-পূজনের যত পদ্ধতি। নাম ধরে ডেকে যদি তাকে না জানা যায় সেক্ষেত্রে ঈশ্বরকে দেখার উপায় কি? সিরাজ সাঁইয়ের দোহাই দিয়ে ফকির লালন জানাচ্ছেন, 'স্বরুপে রুপ দেখ সংক্ষেপে', অর্থাৎ মানুষের ভেতরেই খোদা, মানুষের আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, আপনাতে আপনি ফানা বা সমাধি হলেই সেটা জানা যাবে।

বড়ু চন্ডীদাসের ভাষায়, 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই'। গানের লিন্কঃ সৌজন্যে আল্লামা শয়তান কোন নামে ডাকিলে তারে জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৬ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।