আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুল ক্লাব

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। প্রতিদিন ঠিক সাড়ে পাচটার সময় ছেলেটাকে ক্লাবে ঢুকতে দেখে দোলা। এসেই ফুড কাউন্টার থেকে একটা কফি নেয়।

তারপর পকেট থেকে একটা সিগারেটের কেইস বের করে খুব স্টাইল করে একটা সিগারেট ঠোটে নেয়। প্রখর ব্যক্তিত্বের সাথে সিগারেটটা জ্বালিয়ে তিন নাম্বার টেবিলটাতে জয়েন করে। চারজন বন্ধু মিলে প্রায় তিন ঘন্টা এইট বল খেলতে থাকে। ছেলেটাকে হয়তোবা দোলা তেমন একটা খেয়াল করতোনা যদিনা ছেলেটার একটা অদ্ভূত অভ্যাস থাকতো। সে প্রায় প্রতিদিনই তার সিগারেটের কেইসটা টি টেবিলে ফেলে চলে যায়।

তারপর দশ মিনিট পর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। কেইসটা নিয়ে একটা আত্মতৃপ্তির হাসি দেয়। তারপর চলে যায়। দোলা একদিন পাশ থেকে বলে উঠেছিলো, “প্রতিদিন আপনি একই ভুল কিভাবে করেন?”। ঠান্ডা চোখে ছেলেটা বলেছিল, “নান অফ ইউর বিজনেস।

অয়েল ইউর অওন মেশিন। ” প্রচন্ড আহত হয়েছিলো দোলা। সে দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী আর স্মার্ট হওয়ায় সব সময় ছেলেরা খুব তোয়াজ করে কথা বলে। জীবনে এই প্রথমবার কোন ছেলে তার সাথে এমন বিহেইভ করলো। স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়েছিলো শুধু।

কোন কথা বেরোয়নি মুখ থেকে। বলতে খুব ইচ্ছে করছিলো, “বেটা বলদ, হাবলা কোথাকার। শর্ট মেমোরী। আমার মেশিনের কি বুঝবি? তোর নিজেরই তো মেশিনের ঠিক নেই। ” কিন্তু রাগে থমথম করা মুখটা থেকে একটা শব্দও বের করতে পারলোনা দোলা।

মুচকি একটা হাসি দিয়ে ছেলেটা চলে গেলো পাশ কাটিয়ে। রাগে জ্বলতে লাগলো দোলা। চোখ সরিয়ে নিয়ে বোর্ডের দিকে মন দিলো। রাগটা ঝেড়ে ফেললো কিউ বলের উপর। রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি দোলার।

মন মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। অদ্ভূত এই ছেলেটার কথা চিন্তা করলেই রাগে মাথার টেম্পারেচার বেড়ে যায়। সে বাসা থেকে ঠিক করে এসেছে আজ ছেলেটাকে আচ্ছামত ধোলাই দেবে। সাপের পাচ পা দেখেছে নাকি অসভ্য ছেলেটা। কিন্তু সাতটা বেজে গেলেও আজ ছেলেটা আসেনি।

মেজাজটা খিচড়ে গেল আরো। রাতে ঘুমোতে গিয়েও বারবার ছেলেটার কথা মনে পড়ছে। এটাই আরো ঝামেলা বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাগ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। রাগ কমাটা খারাপ লক্ষণ।

ঝাড়ি মারার ইচ্ছাটা মরে যেতে পারে। পরের দিন অবশ্যই দোলা ছেলেটাকে পাকড়াও করবে। আচ্ছামত রামধোলাই দেবে। নাকমুখ শক্ত করে আইপডে হার্ডরক গান ছেড়ে কানে ইয়ারফোন গুজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো দোলা। হার্ডরক গান শুনলে মন শক্ত হয়।

রাগ বেড়ে যায়। এই মুহুর্তে রাগ বাড়ানো দরকার। ফাজিল ছেলে। বিহেভিয়ার জানে না। পর দিন চারটায় গিয়ে দেখে ছেলেটা রুটিন ব্রেক করে তার আগেই চলে এসেছে।

ঠোটে সিগারেট লাগিয়ে খেলায় মত্ত। কানে আবার ইয়ারফোন লাগালো দোলা। রাগটা জমানো দরকার। দশ মিনিট গান শুনে যুদ্ধাংদেহী ভাব নিয়ে ছেলেটার পেছন গিয়ে দাড়ালো দোলা। কর্কশ গলায় বলে উঠলো, “এক্সকিউজ মি, শুনছেন?” - উফফ!! হু দ্যা হেল? এত বাজে গলার টোন? পেছন ফিরে তাকালো অর্ণব।

- ও আচ্ছা। আপনি? দ্যা মেশিন উইম্যান? কি সমস্যা? - আপনি কি বললেন? আমার গলার টোন বাজে? স্যরি বলুন। - হাহ, সরি বলবো মানে? বাজে জিনিসকে বাজে বললাম। স্যরি বলবো কেনো? - শুনুন, আপনি কিন্তু কোন কারণ ছাড়া আমার সাথে সেদিন থেকে বাজে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। আমি কিচ্ছু বলিনি।

- তো এখন কি করছেন? - আপনি সেদিন শুধু শুধু আমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছেন। আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। - আমি কাউকে স্যরি বলিনা। আপনাকেও বলবোনা। আমার তো কোন ফল্ট নেই।

আপনিই আমার ব্যাপারে নাক গলিয়েছেন। - তাই বলে আপনি যাচ্ছে তাই বলে যাবেন তা তো হবেনা। স্যরি বলুন, তা না হলে কিন্তু... - এক শর্তে স্যরি বলতে পারি। আমার সাথে বাজী খেলতে হবে। যদি হারাতে পারেন তাহলে স্যরি বলবো।

আর আপনি হারলে আমাকে এক ঘন্টা সময় দিতে হবে। - রাবিশ। এক ঘন্টা সময় মানে। ইউ চিপ। - না না।

আপনার অন্য কিছু ভাবার দরকার নেই। আপনাকে নিয়ে এসব চিন্তা আমার সাতজন্মেও কেউ করবেনা। আপনি আমাকে কফি খাওয়াবেন। লজ্জায় লাল হয়ে দোলা বললো “ওকে, কি খেলবেন? ” - লেডিস চয়েজ। আপনি যা বলবেন তাই।

- না, আপনি বাজী লেগেছেন। আপনি যা বলবেন তাই। আর আমি লেডি মানেই যে দুর্বল সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। - আচ্ছা, এইট বল। রেইস টু ফোর।

- ওকে ডান। হেরে গেলো দোলা। ৪-৩ এ। শেষ ম্যাচে অর্ণবের দুর্দান্ত খেলা তাকিয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিলো না ওর। অর্ণব বললো, “চলুন, কফি খাওয়াবেন।

” দোলা বয়কে ডাকতে গেলেই অর্ণব বলে উঠলো, “এখানে না। বাইরে কোথাও। আপনার সাথে রিকশায় করে কোন কফিশপে খাব। ” - ননসেন্স। আপনি এ কথা আগে বলেন নি।

আপনার সাথে আমি রিকশায় উঠবো না। এটা কন্ডিশনের বাইরে। - নোপ। আপনি আমাকে একঘন্টা সময় দিতে রাজী হয়েছেন। চলুন, আমার চরিত্র ভালো।

এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন। ইতস্তত করে দোলা রাজী হয়ে গেলো। পরের বেশ কয়রাতেও ঘুম হলোনা। এই ফালতু ছেলেটা বড় যন্ত্রণা দিলো। কিন্তু তবুও এর মধ্যে কি যেন একটা রহস্য আছে।

রিকশায়, কফিশপে অনেকবার হাসিয়েছে মজার মজার কথা বলে। বেশ মজা করতে জানে। কিন্তু মাঝেমাঝে এত রাফ ব্যবহার যে কেন করে? উফফ, ছেলেটার নামটা পর্যন্ত জানা হয়নি। এ নিয়ে টানা পাচদিন দোলা বাজী খেলেছে অর্ণবের সাথে। একদিন জিতেছে।

সেদিনও দোলার ইচ্ছাতেই কফি খেতে গিয়েছিলো দুজনে। ইদানীং যন্ত্রণাটা কেন যেন বেড়ে গিয়েছে। সারাদিন ছেলেটার কথা মনে পড়ে। এত রহস্য কেন ছেলেটার মধ্যে। কথা বলতে চমৎকার লাগে।

সঙ্গটা বেশ উপভোগ করে। অর্ণবও বেশ উপভোগ করে তার সঙ্গ, বুঝতে পারে দোলা। কিন্তু মাঝে মাঝে বাজে ব্যবহার করেই চলে। দোলা মেনে নিয়েছে। ছেলেটা একটু পাগল টাইপের।

হতেই পারে। ব্যাপারটা ভাবায় তাকে। কি সম্পর্ক তাদের মাঝে? এত সহজে কি বন্ধু হওয়া যায়? তাহলে কেন এত ভাল লাগছে ছেলেটাকে এই অল্প কদিনের পরিচয়ে। সন্দেহ, দ্বিধা-দ্বন্দ। আজ পহেলা ফাল্গুন।

দোলা আর অর্ণব খেলা শেষে আবার রিকশায়। আজ দুজনই অনেক নীরব। হঠাৎ নীরবতা ভাঙে অর্ণব। - আচ্ছা, সেদিন আমি স্যরি বলতে রাজী না হলে করতেন? - অনেক কিছুই করতাম। - মারতেন নাকি? মহিলা গুন্ডা নাকি আপনি? নাকি আপনার বয়ফ্রেন্ড গুন্ডা? - শাট আপ।

আমার চলার জন্য কোন বয়ফ্রেন্ড লাগেনা। - ও আচ্ছা তাই। অবশ্য আপনার যেই চেহারা.... - আপনার সমস্যা টা কি? ভাল না লাগলে নেমে যান রিকশা থেকে। আমি কি জোর করে এনেছি আপনাকে? চুপ করে যায় অর্ণব। দোলা মজা পায়।

অবশ্য একটু মন খারাপও হয়। তাকে আজ পর্যন্ত কেউ অসুন্দর বলেনি। ছেলেটার প্রবলেম কি? পাঁচ মিনিট পর আবার নীরবতা ভাঙে অর্ণব। - শুনছো পাগলী? - আজব, আপনি তুমি করে কথা বলছেন কেন? পাগলী মিনস হোয়াট? রাবিশ, ইডিয়ট কোথাকার। আপনি নামুন রিকশা থেকে।

এই, রিকশা থামাও। অর্ণব রিকশাওয়ালার পিঠে হাত দিয়ে ইশারা করে রিকশা না থামাতে। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভারী কন্ঠে বলতে শুরু করে, - আজ সব কথা আমি বলবো। তুমি শুনবে। কথা বলার সুযোগ পাবে যদি মেনে নাও একটা শর্ত।

একটাই শর্ত দেবো তোমাকে। আর কখনো কোন দাবী নিয়ে আসবো না তোমার হৃদয় মহলে। হারিয়ে দিয়েছো আমায়। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এক রাস্তার পাশে। এই দিনে আমার আমিকে তোমার করে নিয়েছিলে।

অনেক খুজেছি তোমায়। কোথাও পাইনি। এত বড় শহরের এক ছোট পুল ক্লাবে খুজে পেলাম অবশেষে। কিছু করার ছিলোনার আমার। বিশ্বাস করো ।

এমনি এমনি তো আর আমাকে চোখে পড়বেনা তোমার। সে জন্যে আমার অল্প একটু ছলনা কি ক্ষমা করে দেয়া যায় না? জানি তুমি অনেক শক্ত। চলার পথে কারো প্রয়োজন হয়না। কিন্তু আমাকে তাকিয়ে দেখো। আমি একলা চলতে পারিনা।

হারিয়ে যাই। যেমনটা হারিয়ে গেছি তোমার মাঝে। একটা খুটি দরকার আমার। আকাশে যখন মেঘের ঘনঘটা, তখন আমার বুক কেপে উঠে। আমার একটু সাহস দরকার।

বৃষ্টির স্পর্শ আমি অনুভব করতে চাই। আমার একটা হাত দরকার। যে হাতটা ধরে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো। বর্ষার প্রথম কদমফুলটা দুষ্টুমী করে সেই হাতে তুলে দেবো। যে হাত ধরে বাদলা রাতে ব্যাঙের ডাক শুনবো।

অজানা আতঙ্কে সেই হাতটা কেপে উঠলে আমি সাহস দেবো। প্রতিজ্ঞা করবো পাশে থাকার। যেই হাতের ছোয়া আমি সারাটা জীবন আমার হাতে পেতে চাই। প্রতিটা মুহূর্তে। হৃৎপিন্ডের স্পন্দন আমায় ছেড়ে গেলেও সেই হাত আমায় ছাড়বেনা।

এমন একটা হাত দরকার আমার। । তোমার হাতটা কি রাজী আছে আমার সঙ্গী হতে? ডান হাতটা পেতে ধরলো অর্ণব দোলার সামনে। মাথা নামিয়ে তাকালো দোলার দিকে। কিছুটা আনন্দে, কিছুটা বিস্ময়ে- আবেগে দোলার চোখ দিয়ে একফোটা জল বের হয়ে এলো।

রিকশাঅলা পিছন ফিরে বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে বললো, “হাতটা ধইরা ফেলান আফা। নাইলে হারাইয়া যাইবো। ” ইবুক 'মুঠো ভরা রোদ' এ প্রকাশিত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।