আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, এই তিন আল্লাহ নিয়ে (শুভ্র-টুপুর কাহিনী-২)

চির প্রতিবাদী পোস্টটা যখন লিখছি তখন ২৯ জুন,২০১৩, দুপুর ৩টা । শুভ্রর মনটা এতটা খারাপ, যে কাজ করতে ভয় পাচ্ছে । কয়েক দিন আগে অমনোযোগিতার কারনে অনেক গুলো ক্ষতি হয়ে গেছে । চাচ্ছে না আর কোন দূর্ঘটনা ঘটুক । প্রায় এক মাস পরে আজ সকালে কিছুটা স্বাভাবিকতা নিয়ে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল, টুপুর একটা মেসেজ দিয়েছে ।

পড়ে ওর মনটা এতটা খারাপ হয়ে গেল যে সারা দিন টা মাটি মনে হচ্ছে । মেসেজ টা এই রকম – “Sorry for this massage, but I’ve to send this massage…বিয়ের পরও আমাকে সবার সামনে ছোট করতে দ্বিধা বোধ করো না...নিজে তো আমার ফ্রেন্ডদের কাছে ছোট হয়েছো, কোন টাইম-টেবল এর তোয়াক্কা না করে যখন তখন ফোন দিসো...আর তোমাকে এটা মানা করার জন্য টু টাইমস ফোন দিয়েছিলাম....but তুমি নিজে ফোন ধরো নাই, বরং তোমার ফ্রেন্ড আর তোমার ফ্যামিলিকে জানাইছো যে টুপুর তোমাকে disturb করে, but for your kind information, তোমার সাথে পরকীয়ার কোন ইচ্ছা আমার নাই...আমার সম্পর্কে মিথ্যা complain এর জন্য আর আমাকে ছোট করার উদ্দেশ্যে তোমার কার্যক্রম-এ তোমার মা আর তোমার ফ্রন্ডদের বলেছে, আমার মাকে নাকি সে complain দিবে, যেখানে বিয়ের পর only 4 times only emergency তে আমি তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম..But only তুষ্টি, তারিন, সজল যদি তোমার মাকে complain দেয় যে তুমি যখন তখন ওদের disturb করছো, only for টুপুর...তাইলে...? But আমার ফ্রেন্ড or ফ্যামিলি তোমার আর তোমার ফ্যামিলির মতো না যে যখন তখন একে অন্যের fault, দোষ ধরবে, বাচ্চাদের মতো complain করবে । do anything as your family want.” একেই মনে হয় বলে “ যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর । ” শুভ্র অনেক ট্রাই করেছে বাড়িতে বোঝানোর, কিন্ত বাবা-মা কিছুতেই টুপুরকে পছন্দ করেনি । ৬ তারিখে টুপুর জানলো ফাইনালি শুভ্রর বাসায় জানাতে ।

শুভ্র আম্মুকে ফোন দিল । কিন্তু আম্মু পাত্তাই দিলো না । মাঝে কয়েক দিন অফিস অডিটের ঝামেলা ছিলো । ১৪ তারিখে আবার বাসায় জানায় । তাও হলো না ।

শেষ-মেষ ১৮ তারিখ রাত ১১.৩০-এ টুপুর ফোন দিয়ে বলল “কাল সকালে আসছি, তুমি তৈরি থেকো । ” শুভ্র অনেক বোঝানোর চেস্টা করায় ও বলল, “আমি যদি বাবা মা ছেড়ে আসতে পারি তুমি কেন পারবে না ?” শুভ্র এভাবে চাইনি । কারন জানত, এমনিতেই বাড়ির কেউ ওকে পছন্দ করে না, আর এভাবে নিয়ে গেলে তো কোন দিন বাড়িতে ধুকতে দেবেনা । আর ওরা সবাই ছোট পরিবারে বড় হয়েছে, চার জনের মাঝে আরও একজন কমে গেলে আর কিছুই বাকি থাকে না । অনেকের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো টুপুরের মাকে খুব ভোরে জানাবে যেন ও বাড়ি ছেড়ে না আসে ।

কতটা ঠিক করেছে বোঝনি কিন্তু তিনটা ফ্যামিলির সম্মান বাঁচানো টা কতটা প্রয়োজন ছিল এটা হয়তো কোন একদিন টুপুর বুঝবে । আন্টি শুভ্রকে বলল, “ওতো পালিয়ে বিয়ে করা খুব অপছন্দ করে, তাহলে এমন কেন করছে ?” বাসায় কেউ ওকে পছন্দ করে না, তাও টুপুরের-ই ভুলে । একটু একটু করে সেটাকে সমাল দিতে শুভ্রর কতটা কষ্ট হয়েছে তা টুপুর জানেও না । ওর প্রত্যেকটা ভুল স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসতে শুভ্রর প্রায় দেড় বছর সময় লেগে গেছে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবার জিদের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো ।

শুভ্র চিন্তা করলো ওতো ঢাকা থাকে, বাসায় তো টুপুর থাকবে, কয় দিন ও তুচ্ছ-তাচ্চিল্য সহ্য করবে । খুব বেশি হলে এক মাস বা দুই মাস । তার পর আর না পেরে হয়তো কোন একটা অঘটন করে বসবে, কারন টুপুর অনেক জেদি । ওর বিয়ের পরের দিন শুভ্র আর সহ্য করতে পারলো না । আগের কয়েক দিন মনকে বোঝানোর চেস্টা করেছে ।

পারেনি । মুখে গামছা গুঁজে দিয়ে কেঁদেছে, নয়তো পাশের রুমে থাকা কলিগ শুনে ফেলবে । ২১ তারিখে সারা রাত জেগে । আর না পেরে ভোর সাড়ে চারটায় কাছের বন্ধু শাওনকে ফোন দিলো । তারপর ফোনে-ই অঝোরে কান্না ।

কিছুতেই পারেনি নিজেকে আটকাতে । মায়ের কাছে ফোন দিয়েও একই অবস্থা । শাওন আর মা দুজনেই বলল বাড়ি চলে যেতে । সকালে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি চলে গেলো । অফিসের কেউই জানলো না কেন ।

যাবার পথে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে, শেষ বারের মত টুপুরকে কল দিল । বললো “বাড়ি যাচ্ছি, তুমি যাবে আমার সাথে ” । ঘুম ঘুম চোখে টুপুর জানলো, “না, আমি এখন ম্যারিড । একটু পরে আমার নানা-শ্বশুর আর শ্বশুর আসবে । ” এটাই ছিল শুভ্রর সাথে টুপুরের শেষ কথা ।

পরে টুপুর ফোন করে ছিল । শুভ্র কথা বলার মত শক্তিটুকু ছিলো না । শুভ্রর আরেক বন্ধু রিগান কথা বলেছিলো । কথা গুলো রেকর্ডও করে রেখেছিলো । খারাপ লাগবে বলে আজো শুনিনি সেই রেকর্ড ।

রিগান বলল, টুপুর জানিয়েছে শুভ্রর মন খারাপ করার কি আছে, শুভ্র যা চেয়েছে তাই তো হয়েছে । কিন্তু আর হয়তো কোন দিনই বোঝানো হবে না শুভ্র কি চেয়েছিল । বাড়ি যাবার চার দিন আগে থেকে না খাওয়া । বাড়ী যেয়েও টানা তিন দিন প্রায় না খাওয়া । বাবা-মা, আপু সবাই খুব খাওয়ানোর ট্রাই করছে, শুভ্র নিজে অনেক চেস্টা করেও খেতে পারিনি ।

মন এতোটাই খারাপ ছিল যে, সাত দিন নিজের চেহারাটাই দেখেনি । পরে যেদিন আয়নায় নিজেকে দেখলো, নিজেকে দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেছে । র্দুবলতায় শুভ্রর গা কাঁপছিলো । বাবা-মা কেউ ওর কষ্ট পাওয়াটা সহ্য করতে পারছে না । বাবাতো চার দিন শুভ্র সাথে কথাই বলেনি ।

রাগে না, কষ্টে । শেষ দিন শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছে, আর তার প্রথম কথাটা ছিল, “আব্বু, আমি বুঝতে পারিনি তুই এতোটা কষ্ট পাবি । এখন তো আর কিছুই করার নেই, মন খারাপ করিস না । হয় তো আল্লাহ তোর জন্য ওকে বানায় নি । ” এতো খারাপ লাগছিলো শুভ্রর ।

দাঁতে দাঁত চেপে ছিল । শুভ্র যদি কাঁদে ফেলে তাহলে বাবা আরো কষ্ট পাবে । ছেলের কষ্টের কাছে বাবা হার মানল ঠিকই, কিন্তু সময় পেরোনোর পর । পাঁচ দিন পরে শুভ্রর চোখে ঘুম আশে (কারন, দুই রাত মা ঘুমের ওষুধ দিয়ে শুভ্র ঘুম পাড়িয়েছিলো)। বিকাল ৩.৩০ ।

টুপুর ফোন দিয়েছিল । ইচ্ছে ছিলনা ফোনটা ধরার, কিন্তু ঘুমের ঘোরে ধরে ফেলে । তখন টুপুর জানায় ও হাজবেন্ডের সাথে বসুন্ধরা সিটিতে মু্ভি দেখছে । তখন শুভ্র কেমন লাগা উচিৎ । ও এর আগেও কয়েক বার ফোন করেছিলো ।

এটা শুভ্র তুস্টি আর তারিন (টুপুরের দুই বান্ধবী) কে জানায় । কারন টুপুরের সাথে আরো একজন আছে, সে কি ভাববে ? তুস্টি, তারিন, শাওন সবাই টুপুরকে নিষেধ করে । টুপুর বলেছিল এটা সবাইকে জানানো নাকি শুভ্রর অন্যায় হয়েছে । নিজের সমস্যা, নিজের মানুষ কে জানাবে না তো কাকে জানেবে ? সবাই সন্তনা দিচ্ছে । কিন্তু এতে কি মন ভালো হয় ? টুপুরের এস এম এস –র উত্তর যদি দেয়, তাহলে এমন হয় ১. শুভ্র ওকে ছোট করতে চাইনি বলেই ওর বিয়ের পর আর কথা বলিনি ।

২. ওর বন্ধুদের তখনই ফোন দিয়েছে, যখন টুপুর knock করেছে । ৩. শুভ্র টুপুরের ফোন ধরেনি, কারন ফোন দিয়ে ওর হাজবেন্ডের সাথে কি করছে এটা জানাবে, যেটা শুভ্রর সহ্য হবেনা । ৪. ও যখনই ফোন দিত শুভ্র মন খারাপ লাগতো, তাই শুভ্র মা বা শাওন কে জানাতো । ৫. শুভ্র ভাবত হয় তো টুপুর হয় তো ওকে মিস করছে, খারাপ লাগছে তাই ফোন দিচ্ছে, যা শুভ্রর রিসিভ করাটা অন্যায়, করন টুপুর এখন অন্য কারো । ৬. শুভ্রর যদি পরকীয়া করার ইচ্ছা থাকত তাহলে তো শুভ্রর মন খারাপ করার কোন কারন থাকতো না, ফোন দিয়ে তো কথাই বলতে পারত ।

বিয়ের পর শুভ্র এক বারও ফোন করেনি । ৭. শুভ্র কোন complain করেনি, শুধু জানিয়েছি টুপুর ফোন দিচ্ছে, এটা ওর বাড়ির মানুষ জানতে পারলে আবার প্রবলেম হবে, আর দোষ এসে পড়বে শুভ্রর উপর । ৮. শুভ্রর বাবা-মা টুপুরের উপর আর রাগ করে নেই, আর ও ডির্স্টাব ফিল করবে বলে শুভ্র ওকে ফোন না দিয়ে বাকি বন্ধু আর যাদের কে কাছের মানুষ মনে হয়েছে তাদের কে শুভ্র খারাপ লাগাটা জানিয়েছি । বারবার-ই বলেছে ওকে বাড়ির কেউই পছ্ন্দ করে বা কিন্তু কেন ? (মুল যে কারন, যে কারনে টুপূরের প্রতি এতো রাগ) ১. প্রথম যেদিন শুভ্রদের বাসায় গেছে, কাউকে না জানিয়ে, হুট করে পহেলা বৈশাখ দুপুরে । ড্রেস ছিল র্শট কামিজ আর জিন্স ।

প্রথম কয়েক মাস এই রকম ছিল । ২. দুপুরে আচমকা অচেনা একটা বাড়িতে (শুভ্রদের বাড়ী) ঘুমাতে চাওয়া । ৩. টুপুর ছেলে বন্ধুদের সাথে একটু বেশিই ফ্রি । শুভ্র কিছু মনে না করলেও ওর বাড়িতে এটা খূব বাজে ভাবে দেখতো । ৪. শুভ্র তখনও অপরিচিত, তবুও শুভ্রর সাথে ঘুরতে যাওয়া ।

৫. কোন প্রবলেম হলেই শুভ্রকে ফোন দেয়া । যখন তখন । ৬. সৌরভ (শুভ্রর ছোট ভাই) ওর সিনিয়র হওয়া স্বত্তেও, ও বলেছিল “ভাইয়া আপনি এতো সিগারেট খান কেন” । যেটা সৌরভ নেগেটিভলি নিয়েছিল । ৭. শুভ্রর মা আর সৌরভ্ করে সরাসরি বলা যে, ও শুভ্রকে পছন্দ করে।

এটা শুভ্রর মা চরম বেয়াদবি মনে করেছে । ৮. বেশ কয়েক দিন বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকা, যেটা শুভ্রর মা দেখেছে । ৯. শুভ্রর বাবা একদিন টুপুরকে ফোন করেছিলো, আর খুব টুপুর বাজে ব্যাবহার করেছিল (যদিও শুভ্র এটা স্বাভাবিক মনে করেছিল, কারন অচেনা মানুষের সাথে বাঙালি মেয়েরা এভাবেই বলে) । ১০. শুভ্রর বোন কুষ্টিয়াতে ওকে কয়েক দিন অন্য ছেলেদের সাথে টুপুরকে দেখেছে (ওর ক্লাসমেটের সাথে, কিন্তু শুভ্রর বোন তো আর জানে না) ১১. শুভ্র যখন বাড়ি যায়, শুভ্রর মায়ের সামনে থাকলে শুভ্র ফোন কেটে দেয় কিন্তু টুপুর বারবার ফোন দেই । ১২. শুভ্র যদি নিষেধ করে আজ দেখা করতে আসলে সময় দিতে পারবো না, তাও আসা আর বাসায় শুভ্রর ধরা খাওয়া ।

এত কিছুর পরেও যখন কোন রকমে স্বাভাবিক করেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । শুভ্রর কতটা খারাপ লেগেছে সেটা শুভ্রর সামনে দাড়ানো মানুষ ছাড়া আর কেউ দেখিনি । ল্যাব এটেনডেন্ট বলেছিল, “ শুভ্র ভাই, আপনাকে দেখে খুব মায়া হচ্ছে ” । খুব লজ্জায় পড়ে গেয়েছিল । অফিসে অনেকেই শুভ্রকে দেখে বুঝে ফেলেছিল, শুভ্র ভাল নেই ।

শুভ্র কি করার ছিল, আব্বু-আম্মু বা টুপুর কে বাঁচানো, নাকি শুধুমাত্র নিজেদের সুখের কথা ভেবে সাবাই কে কষ্ট দেয়া । টুপুর এখনো ফোন দেয়, কিন্তু কথা বলার জন্য নয়, শুভ্রকে তাচ্ছিল্ল্য করার জন্য । শুভ্র হাজার কষ্ট পেলেও আর হয়তো টুপুরের ফোন ধরবে না । কারন ভাগ্য হয়তো তার পক্ষে ছিল না । “জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, এই তিন আল্লাহ নিয়ে”, এটাই হয়তো মানতে হবে ।

শুভ্র টুপুরকে কতটা পছন্দ করত, কতটা ভালোবাসতো যার পরিমাপ শুভ্র কোনদিন করেনি, তা টুপুর বাদে সবাই বুঝলো । আর ভালোবাসা, এটা যদি কাগজে কলমে বোঝতে হয় বা প্রমান করতে হয়, তাহলে শুভ্র ফেল । টুপুর যেদিন এটা বুঝবে, হয়তো সেদিন ও শুভ্রর চেহরাটাই মনে করতে পারবেনা । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।