আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঃঃ স্কুলব্যাগ, তুমি বড্ড ভারি ঃঃ

ভালো থাকতে চাই..। যা কিছু ভালো সেদিকে সবাইকে আহবান.। কাক ডাকা ভোরে যখন বাসা থেকে বের হই অফিসের উদ্দেশে, রাস্তা প্রায় ফাঁকা। সবচেয়ে বেশি যাদের দেখি তারা হোলও কিছু উদ্বিগ্ন বাবা-মা আর তাদের স্কুলগামী বাচ্চা। এই সময় টায় রিকশার বড়ই অভাব থাকে।

বাচ্চার কাধেঁর ব্যাগটা দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। এখন দেখি অনেক বাসার সামনে এই সময়টায় রিকশা দাঁড়ানো থাকে, কারন বাবা-মা বাধ্য হয়ে রিকশা ওয়ালার সাথে মাসকাবারি চুক্তিতে গেছেন। কিন্তু সবারতো আর এটা করা সম্ভব নয়। তাই চোখে পড়ে অনেক উদ্বিগ্ন মুখ। আমি অনেক আগেই সকালে বাসা থেকে বাস-স্টপিজ বা মেইন রোড পর্যন্ত আসার জন্য রিকশা চড়া ছেড়ে দিয়েছি, যাতে একজন বাচ্চা হলেও সেটাতে স্কুল যেতে পারে।

নরমাল সময় থেকে মাত্র ১০ মিনিট আগে আমি বাসা থেকে বের হই তারপর হেটে হেটে বাস-স্টপিজ...। কথা হচ্ছে, এই বাচ্চাগুলোর হয়তো নিজের ওজনের চেয়ে কাঁধের ব্যাগের ওজন বেশি। মনে হয় জ্ঞানের হাতি ঘোড়া সব এই ব্যাগের মধ্যে। সব যদি গেদাকালেই শিখাইতে হয় তাইলে বাকি জীবন কি শিখবে ? অনেক জ্ঞানী-গুনীজন এই ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন আমি আর নাই বললাম। কিন্তু আমি কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।

প্রথম কবে ঠিক আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে গেছিলাম মনে নাই। আপা স্কুলে যেতো আর আমিও পিছ পিছ যেতাম। বাড়ি থেকে স্কুল বেশি দূরে না, রাস্তা দিয়ে গেলে ১০ মিনিট আর জমির আইল ধরে দৌড় দিলে ৫ মিনিট। সাধারনত স্কুলে যাবার সময় ভদ্র ছেলের মত রাস্তা দিয়ে যেতাম আর যখন স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাজত তখন মাঠ-খেতের মধ্যে দিয়ে এক দৌড়...কার আগে কে যাবে...। এই আনন্দ শহুরে বাচ্চারা কি কখনই পাবে ? স্কুলের বই, এটা যে ব্যাগে করে নিয়ে যেতে হয় সেটাই তো বুঝেছি অনেক পরে।

বই নেবার পন্থা ছিল ৪ ভাবে। মাথায় কিম্বা কাঁধে কিম্বা কাঁখে কেউবা আবার বুকের সাথে বই লেপটে নিয়ে স্কুলে যেত। কারা বই মাথায় নিয়ে যেতো সেটা বোঝার একটা উপায় ছিল। কিভাবে...? তাদের উপরের বইয়ের মলাটে থাকতো তার তৈলাক্ত মাথার ছাপ। যখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি তখন মনে হয় আমাকে আর আমার আপাকে স্কুল ব্যাগ কিনে দেওয়া হোল, সেটা যে কি আনন্দের ব্যাপার ছিল তা বলবার নয়।

কিন্তু আসল বিপদ হোল সেই ব্যাগে বই নিয়ে স্কুলে যাবার পর। সবাই এমনভাবে তাকাতে লাগল যেন ভিন গ্রহ থেকে এসেছি আর সে কি হাসাহাসি...!! অগত্যা কিছুদিন ব্যাগ নেবার পরে পোলাপানের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে প্রিয় ব্যাগ টাকে বাসায় রেখেই বইগুলোকে আবার মাথায় নিয়ে স্কুল যাত্রা শুরু হোল। হাই স্কুল এ এসে স্কুলের দূরত্ব যেমন বাড়ল তেমনি বইগুলোর দূরত্ব ও বাড়ল অর্থাৎ বইগুলো মাথা থেকে নেমে গেল বাইসাইকেল এর ক্যরিয়ারে। আমার পুরো প্রাইমারী স্কুল জীবনে ২% ছাত্রছাত্রীর ও ব্যাগ ছিল না। এর হাই স্কুলে এ এটা হয়তো ৫% এ উন্নীত হিয়েছিল।

সেই ব্যাগ এখন হইছে এত ভারি যে বহন করাই দায়। এই ওজনদার ব্যাগ কি আমরা তাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না ...??  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।