আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

।। রাতের আকাশ তারা ভরা ।।

আমি আমাকে নিয়েই তো এখনও বেচে আছি । একদিনআমাকে নিয়েই চলে যাব । সেদিন খুঁজলেও আর পাবি না..........আমার ভার্চুয়াল ফ্যাক্টরিতে স্বাগতম । আমার মন খারাপের সময়টা এখানে আর ফেসবুকে কাটে । মাঝে মাঝে দু একটা লেখা তৈরি করতে ইচ্ছা হলে চলে আসি এখানে ।

https://www.facebo বাড়ির বাহিরে প্রাইভেট কার টা দাড়ানো । আমজাদ সাহেব গাড়ির দিকে ফিরেও তাকালেন না । আজকে তার গায়ে প্রতিদিনের ভারী স্যুট অথবা গলায় আটোঁসাটো টাইটা নেই । পরনে একটা হালকা শার্ট আরট্রাওজার । তার বিশাল বাড়ির মেইন গেইটে আজ কোন দাড়োয়ান নেই ।

গেইটের তালা খুলে রাস্তায় বেড়িয়ে এলেন । একটা রিক্সা ডাক দিয়ে তাতে চড়ে বসলেন । তাকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে । বাংলাদেশের প্রখ্যাত এক শিল্পপতি তিনি । বাড়ি , গাড়ি , টাকা ,পয়সা কিছুর অভাব নেই তার ।

অফিসের সবাই তাকে বাঘের মতো ভয় পায় । আপাদমস্তক সত্‍ একজন মানুষ । কিন্তু লোকটা কেমন জানি গুরুগম্ভীর থাকেন । তার মুখে হাসি দেখা আর ডুমুরের ফুল দেখতে পাওয়া সমান কথা । কঠোর নিয়ম নিতির অনুশাসনে তার জীবন বাধা ।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায আদায়ের পর একটু দৌড়ানো । তারপর ব্যাস্তভাবে বাসায় এসে গোসলের পর নাস্তা খেয়ে অফিসে যাওয়া । রাতে বাসায় ফেরা । এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন । ঠিক ৯ টায় তিনি অফিসে পৌছান ।

কখনো ঐ সময়ের হেরফের হয় না । তার চুলে পাক ধরেছে । মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে । বয়স ষাট হলেও শরীরে তার ছাপ পড়েনি । ভদ্রলোকের স্ত্রী অনেক আগেই গত হয়েছেন ।

কোন ছেলে মেয়ে আছে বলে জানা নেই কারো । কেননা ভদ্রলোক ব্যাক্তিগত জীবন দিয়ে কোন কথা বলতে চান না । সেই আমজাদ সাহেব আজ সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে রিকসায় করে কোথায় যেনো যাচ্ছেন । ব্যাপারটা অদ্ভুতই বটে । বাসার সব বার্বুচি , দাড়োয়ান , মালি , ড্রাইভারকে তিনি আজ ছুটি দিয়েছেন ।

তিনি এখন খুশি মনে যাচ্ছেন বাজার করতে । বহুদিন বাজার করা হয় না । কোন এক অজানা কারনে তার মুখের কোনে আজ একচিলতে হাসি খেলা করছে । (২) হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকলো রোদেলা । হাত ঘড়িতে দেখলো সকাল ৯.৩০ বাজে ।

আজ তাকে বস্ মেরেই ফেলবে । ভয়ে ভয়ে অফিসে ঢুকে বস্ এর কামড়ায় গিয়ে অবাক হয়ে দেখলো তার বস্ নেই । বেশ অবাক হলো রোদেলা । এমন অদ্ভুত ব্যাপার তো কখনো হয় নি ! ঘড়িতে দেখলো আবার । ডিজিটাল ঘড়িটার কোনায় লেখা ২৯ শে ফ্রেব্রুয়ারী ।

তার মানে আজকে কোন ছুটির দিন নয় । তাহলে ? চিন্তায় পরে গেলো রোদেলা । সে আমজাদ সাহেবের PA . . আমজাদ সাহেবের সব কিছুর খবর রাখা তার দায়িত্ব । তবে কি আমজাদ সাহেব অসুস্থ ? চিন্তা করতে করতে ম্যানেজার সাহেবের রুমে ঢুকলো সে । ম্যানেজার জানালো যে আমজাদ সাহেব আজকে অফিসে আসবেন না ।

তার বিশেষ কি কাজ আছে যেনো । আরো অবাক হলো রোদেলা । আমজাদ সাহেবের যে কোন কাজের কথা তিনি রোদেলাকে জানান । তাহলে আজকে কি এমন কাজ ? ? ব্যাপারটা খোচাঁচ্ছে রোদেলাকে । ভাবলো অফিসের পর স্যারের সাথে দেখা করে আসবে সে ।

বিকালের দিকে অফিস শেষেই আমজাদ সাহেবের বাড়িতে রওনা হলো রোদেলা । যেতে যেতে রাত হয়ে গেলো । গেইটের কাছে গিয়ে অবাক হলো সে । গেইটের সামনে সাধারনত দাড়োয়ান থাকে । আজ নেই ।

গেইটা ঠেলা দিলো সে । তাকে অবাক করে দিয়ে হা হয়ে খুলে গেলো গেইট । আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো সে । পুরো বাড়িতে কেমন জানি সুনসান নিরবতা । গা ছমছমে ভাব ।

রোদেলা চিত্‍কার করলো"ড্রাইভার চাচা ! , বুয়া !. . রফিক চাচা !" কেউ সাড়া দিলো না । অজানা আশংকায় বুকটা ধক্ করে উঠলো তার । চিত্‍কার করলোসে আবার "স্যার । স্যার আপনি কোথায় ?" তার চিত্‍কার বড় হলরুমটাতে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এলো তার কাছেই । আস্তে আস্তে সে আমজাদ সাহেবের রুমের দিকে এগিয়েগেলো ।

হটাত্‍ আমজাদ সাহেবের স্টাডি রুম থেকে মানুষের কথা বলার মৃদু আয়োয়াজ ভেসে এলো । রোদেলা এগিয়ে গিয়ে স্টাডির দরজাটা ঠেলে সামান্য ফাঁক করলো । (৩) মুগ্ধ হয়ে গেলো রোদেলা । সারা রুমে লাল , গোলাপি কাগজ সাটানো । দেয়াল থেকে ঝুলছে রংবেরঙ্গের বেলুন ।

আর অসংখ্য মোমবাতি । বিশাল ঘড়টাতে যেখানে আগে বুকশেলফ ছিলো এখন সেখানে কিছু নেই । ঘরটার মাঝখানেএখন শুধু একটা টেবিল । টেবিলের দু প্রান্ত দুটো চেয়ার । একটা চেয়ারে আমজাদ বসে আছেন ।

অপর চেয়ারটা ফাঁকা । আমজাদ সাহেবের সামনে বিশাল একটা কেক । আর কেকের সামনে একটা ছবি । আমজাদ সাহেব কার সাথে যেনো কথা বলছেন । রোদেলা ঘড়ে ঢুকে আস্তে করে ডাক দিলো "স্যার ।

" আমজাদ সাহেব ঘাড় ফিরালেন । রোদেলা দেখতে পেলো তার চোখ দিয়ে পানি পরছে । ধক্ করে উঠলো রোদেলার বুকটা । মানুষটার চোখে এরআগে কখনো পানি দেখেনি সে । কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল "কি হয়েছে স্যার ।

কার সাথে কথা বলছেন ?" আমজাদ সাহেব হাত তুলে ছবিটা দেখালেন । একটা ৭-৮ বছরের বাচ্চার ছবি । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন"আমার মেয়ে , আরিশা । আজ ওর জন্মদিন । " রোদেলা অবাক হয় ।

আমজাদ সাহেবের যে মেয়ে আছে এটা জানতো না সে । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো "তো স্যার আরিশা কোথায় ?" "চলে গেছে । রাগ করেছে আমার সাথে । রাগ করে লুকিয়ে গেছে । " জড়ানো কন্ঠে বললেন আমজাদ সাহেব ।

"কোথায় ? কেনো ?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রোদেলা । রোদেলার হাতে একটা ডাইরি ধরিয়ে দেয় আমজাদ সাহেব । সেটার প্রথম পৃষ্ঠায় কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট বাচ্চার লেখা "-- আব্বু । তুমি পঁচা । আমাকে টেডি বিয়ার কিনে দাওনি কেনো ? তোমার সাথে আঁড়ি ।

আমি কিন্তু লুকিয়ে যাব । " রোদেলা স্বপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় আমজাদ সাহেবের দিকে । "আরিশাকে এর পরের জন্মদিনে একটা টেডি বিয়ারদেওয়ার কথা ছিলো । কিন্তু আমার ছোট্ট পাখিটা তার আগেই অভিমান করে কোথায় যেনো চলে গেলো । প্রতি চার বছর পর এই দিনে ওর জন্য অপেক্ষায় থাকি আমি ।

ও আসবে । আমাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলবে "আব্বু তুমি অনেক ভালো । তোমাকে একটা পাপ্পি । " . . তারপর টুক করে আমার গালে একটা চুমো দিবে" বললেন আমজাদ সাহেব । রোদেলা স্তব্ধ হয়ে গেছে ।

বজ্রহতের মতো দাড়িয়ে আছে সে । হটাত্‍ আমজাদ সাহেব তার হাত দুটো ধরে করুন গলায় বললেন "মা । তুমি আমার মেয়েটাকে একটু বলে দাও না। আমার সাথে যেনো আর রাগ করে না থাকে । আমি ওকে অনেক অনেক টেডি বিয়ার কিনে দিব ।

" কথাগুলো বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে দিলেন আমজাদ সাহেব । বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন তিনি । কষ্টের একটা শীতল শিহোরন বয়ে গেলো রোদেলার শরীরে । চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে তারও । তখন রাতের আকাশ তারায় ভরা ।

কে জানে হয়তো ঐ তারাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরিশা । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।