আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেশে ফেরা

অনার্স পরীক্ষা দেবার পরেই দেশের বাইরে পড়তে যাবার হুজুগ চাপলো। শুরু হলো বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে Admission এর চেষ্টা। ক্লাসের একটা মেয়েকে ভীষন পছন্দ করতাম। ওকে Impress করারও একটা ছেলেমানুষী চেষ্টাও ছিলো। বিরাট যৌথপরিবারে সবার ছোট আমি।

আমাকে বাইরে পাঠাবার চিন্তা অন্তত ওদের ছিলোনা। জীবন সম্পর্কে খুব serious কখনই ছিলাম না। তারপরেও কখন আর কিভাবে যে Australiaর একটা university তে admission আর visa পাওয়ার জটিল ধাপগুলো পার হয়ে উড়াল দেবার সময় হলো বুঝতেই পারি নাই। সেই দিন থেকেই বুঝি শুরু হলো বাংলাদেশের সাথে আমার প্রথম প্রেম। এত ভাল বাংলাদেশকে আর কোনদিন লাগে নাই।

এই দেশ ছেড়ে মনে হচ্ছিল একদিনও থাকতে পারবোনা। মনে হচ্ছিল আমি ফাঁসীর আসামী। Faculty,TSC,বন্ধুদের মনে হচ্ছিল জীবনের একটা অবিচ্ছ্যেদ্দ অংশ। এগুলো ছেড়ে থাকা অসম্ভব। ছোটবেলা থেকেই মায়ের খুব ভক্ত ছিলাম।

খালি মনে হচ্ছিল আমার কিচ্ছু চাইনা, আমি শুধু মায়ের কাছে থাকতে চাই। প্লেন যখন উড়ছিলো, একবার ভাবছিলাম প্লেনটাকে হাইজ্যাক করে ঢাকার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাব। তাহলেই বুঝুন মনের অবস্হা। সিডনীতে নেমে একটা কঠিন শপথ নিলাম। মাষ্টারটা কমপ্লিট করেই দেশে চলে যাব।

তারপর মনটা একটু শান্ত হলো, যাক মাত্র একবছরতো এই দেশে আছি! মনে আছে বন্ধু পাপ্পুকে চিঠি লিখেছিলাম,"দোস্ত, আমার আর মৃত্যুর পর নরকবাস হবে না। আমার নরকবাস পৃথিবীতেই হয়ে গেলো। " দিন যায় আর আমি ধীরে ধীরে cope করতে থাকি। মায়ের কথা মনে হয়। দেশের কথাও মনে হয়।

Study, job সবনিয়ে আমার একেবারে জগাখিচুরী অবস্হা। মাথার মাঝে একটা পোকা তবু গুনগুন করে," বাড়ি ফিরে যাব আমি বাড়ি ফিরে যাব, যেখানকার মানুষ আমি সেখানেই ফিরে যাব। " দিন যায় আমার আর বাড়ি ফেরা হয়না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমার তিন প্রানের বন্ধু Australia চলে এসেছে। জীবনটা আর আগের মত Boring লাগেনা।

পড়াশুনা ও একসময় শেষ হয়। চাকুরীতে যোগ দেই । আমার আর দেশে ফেরা হয়না। সবাই বলে এখানে যখন এসেছো Permanent residentship টা নিয়ে যাও। আমার মনের মাঝে নিশ্চই সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো থেকে যাবার।

নাহলে আমি permanenet residentship নিবো কেন? সেটা এক অদ্ভুত সময়। একটা অলিখিত কম্পিটিশন সবার মাঝে। কার কত ভাল গাড়ী, কার কত ভাল salary pakage,কার আগে কে বাড়ি কিনবে ইত্যাদি। আসলে Consumer Society তে Product সবসময় মানুষকে attract করে। পকেটে ডলার অথবা Credit Card।

যা ইচ্ছা তাই কেনা যায়। আর জীবনভর ব্যাংক এর interest গুনতে হয়। একটা Vicious circle এর মত। আমি প্রথম প্রথম এগুলো থেকে সন্তপর্নে দূরে থাকতাম। সাইকেল চালাতাম যাতে ওই দেশে কোন Bonding তৈরী না হয়।

পরে অবশ্য এসব ধরে রাখতে পারিনি। ততদিনে অবশ্য আমার দেশের ভীষন পছন্দের মানুষ ঝরে গিয়েছে। অনেক নতুন বন্ধু বান্ধবী। হঠাৎ হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে উঠি। আর নয় আমি এবার বাংলাদেশে যাবই।

এবার সবাই বলে at least পাসপোর্টটা নিয়ে যাও। পাসপোর্ট নেবার পর সবাই হাসে। বলে এবার যাও দেখি? তুমিতো এখন Australian। হঠাৎ ই আমি গোছাতে শুরু করলাম। দীর্ঘদিন এই দেশে থেকেছি।

Involvement কম নয়। সবকিছু গোছাতে সময় লাগবে। কেউ বলল Fool, কেউবা বলল পাগল। আবার কেউ বলল ফিরে আসতেই হবে। আমি Adamant।

একদিন খুব বেশী কাউকে না জানিয়ে প্লেনে চেপে বসলাম। পেছনে পরে রইল দীর্ঘ স্মৃতি। সাত বছর পর, ২০০৭ সালের জুলাই মাসের এক ভীষন গরমের রাতে ঢাকায় পৌছালাম। অনেক পরিবর্তন হয়েছে এই দেশের। কোন পরিবর্তন হয়নি আমার মায়ের।

আজ পর্যন্ত এখানেই আছি। প্রথম পড়তে যাওয়ার আবেগ আর নেই। কোন বন্ধুর সাথেই তেমন যোগাযোগ হয়নি। ঢাকা সিডনী থেকে অনেক ব্যস্ত শহর। আমি বেশ আছি আমার মায়ের কাছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.