আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুয়াডাঙ্গায় ভ্রাম্যমাণ পতিতার সংখ্যা প্রায় ৩শ!

দূরে অাছি......তার্হ ফেরা সহজ....কাছের মানুষ কখনো ফেরে না......... স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাধ্যবাধকতার ব্যবস্থা নেই : ভয়াবহ আকারে এইডস ছড়ানোর আশঙ্কা খাইরুজ্জামান সেতু/সাইফ জাহান: সন্ধ্যার পর রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের অলি-গলিতে ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় নৈশপ্রহরীদের ছত্রছায়ায় তারা দেহব্যবসা করে ভোরে ফিরে যায়। এরকম ভ্রাম্যমাণ পতিতার সংখ্যা জেলা শহরে ৩শ’র কাছাকাছি। এইডস প্রতিরোধে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত একটি এনজিওসূত্রে এ হিসাব পাওয়া গেছে। শুধু কি ভ্রাম্যমাণ? জেলা শহরের বেশ কয়েকটি মহল্লায় বাড়িভাড়া নিয়ে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন মহিলা গোপনে নির্দিষ্ট খদ্দেরদের মাধ্যমে দেহব্যবসা চালিয়ে আসছে।

মাঝে মধ্যে পুলিশ থানা কাউন্সিলপাড়ার চিহ্নিত বাড়িতে অভিযান চালিয়ে খদ্দেরসহ গনিকা গ্রেফতারও করে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হলেও ঠিক কতোটি বাড়িতে পতিতাবৃত্তি চলে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। অবশ্য একটি সংস্থার হিসাবে কমপক্ষে ১৪টি বাড়িতে এ ধরনের ব্যবসা চলে। তবে খুবই কৌশলে। পতিতাবৃত্তি করলেও এদের কেউই স্বীকৃত নয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার তেমন বাধ্যবাধকতাও নেই। ফলে এদের মাধ্যমে এইডস’র মতো মারণব্যাধি আশঙ্কাজনক হারে ছড়ানোর আশঙ্কা পদে পদে। তাছাড়া যারা সন্ধ্যার পর জেলা শহরের অলি-গলিতে ভ্রাম্যমাণ পতিতাবৃত্তি করে তাদেরও তেমন স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম নামের একটি সংস্থার চুয়াডাঙ্গা কার্যালয় ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের স্বাস্থ্য সেবাদানসহ এইডস রোগ প্রতিরোধে কনডম প্রদান করে। প্রতি মাসেই এ সংস্থার পক্ষে হাজার হাজার কনডম প্রদান করা হয়।

তাছাড়া থাকা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। কেনো বিপথগামিতা, কেনো পতিতাবৃত্তি? এসব প্রশ্নের জবাব জানতে বেশ কয়েকজন পতিতার সাথে যোগাযোগ করা হয়। এদেরই একজন চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন বিথি নামের একজন। নামটি অবশ্য তার আসল নয়। বয়স জানতে চাইলে তিনি ১৮ বছর বলে দাবি করলেও চেহারা দেখে মনে হয়েছে ৩০ পেরিয়ে গেছে।

বিথি কেনো এ পথে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি দামুড়হুদার বাস্তপুরে। জীবননগরের ধোপাখালি গ্রামে বিয়ে হলো। বিয়ের আগেই সেই স্বামীর যে স্ত্রী ছিলো তা না বুঝেই তার সংসারে গিয়ে নির্যাতনের পর নির্যাতনের শিকার হতে লাগলাম। একদিন সে স্বামীর ঘর ছেড়ে ফিরে এলাম বাপের বাড়ি।

মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গলো। একদিকে পেট, অন্যদিকে পাড়ার কয়েকজনের নানা লোভ। খারাপ হয়ে গেলাম। ’ খা-রা-প শব্দটি উচ্চারণ করতেই কান্নার তীব্রতা বেড়ে গেলো। নোংরা শাড়ির আচল দিয়ে চোখমুখ ঢেকে তিনি বললেন, ওসব বলতে পারবো না।

সহানুভূতির অনেক কথাই বলা হলো। দেয়া হলো সান্ত্বনা। এরপর কী হলো? এক দেড় বছর খারাপ পথেই কাটলো। জাফরপুরের একজনের সাথে বিয়ে হলো। তার বড় বউ না-কি পাগল।

তাই বলে সে বিয়ে করে তার বাড়িতে নিয়ে উল্টো মারধর শুরু করলো যখন, তখন আর সেখানেও থাকা হলো না। এখন ফের পথে পথে। রাতে বাজারের অলি-গলিতে ঘুরি। কতো টাকা হয়? কোনো রাতে ১ হাজার কোনো রাতে ৭শ। ওর কোনো ঠিক নেই।

চুয়াডাঙ্গায় এইডস রোগী এখন কতোজন? খাতা কলমে তার কোনো উল্লেখ না থাকলেও প্রবাস থেকে ফেরা কয়েকজনের ইতোমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন নারী দামুড়হুদার জয়রামপুরের, অপর একজন পুরুষ আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুরের। পারলক্ষ্মীপুরের ওই ব্যক্তি অবশ্য ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে রোগাক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন। দীর্ঘদিন পর কয়েক বছর আগে তার মৃত্যু ঘটে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়ের এক নারী ও জীবননগরের এক ট্রাকচালক এ রোগে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের আর সন্ধান মেলেনি।

ওই মহিলা ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন বলে জানালেও তার আসল কর্ম সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়নি। তবে ওই মহিলা জীবননগরের ওই ট্রাকচালককে নিজের স্বামী বলে দাবি করেছিলেন। এভাবে অনেকেই হয়তো আছেন যারা তাদের এইডস আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানার পর আত্মগোপন করেন অথবা পরিচয় আড়াল করে ঢাকার কোনো সেল্টারে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন। চুয়াডাঙ্গার একজন চিকিৎসকের নিকট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেলেও সিভিল সার্জন অফিসে তেমন তথ্য নথিভুক্ত নেই। মানবাধিকার সংস্থা সাংবাদিক ফোরামের চুয়াডাঙ্গাস্থ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর তেমন কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

তবে তিনি বলেছেন, আমাদের হিসাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরেই পতিতার সংখ্যা ২শ ৯০। এ সংখ্যা কখনো বাড়ে, কখনো কমে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই। আমাদের সংস্থার মাধ্যমে ৫ জন নারী দিয়ে ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের এইডস সংক্রমণের বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টার পাশাপাশি তাদের হাতে কনডম তুলে দেয়া হয়। আশ্রয় না থাকলে আমাদের আশ্রয়ে রেখে চিকিৎসাও দেয়া হয়ে থাকে।

এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থার রয়েছে যুববান্ধব কর্মসূচি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে কোনো কোনো সংস্থা এইডস সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছেও চুয়াডাঙ্গায় এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর পরিসংখ্যান নেই। তবে কয়েকটি সংস্থার যুববান্ধব কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারীদের একজন বলেছেন, পতিতাবৃত্তির ধরন আর ভ্রাম্যমাণ পতিতার সংখ্যা দেখে আমাদের চমকে উঠতে হয়। যদি কোনো এক পতিতার শরীরে এইচআইভি পজেটিভ হয়, তা হলে তার মাধ্যমে যে কতোজন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর পথে পা বাড়াবেন তা বলা কঠিন। ফলে বিষয়টির দিকে আমাদের সকলকেই বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার।

এইডস ছোঁয়াচে নয়। তবে এ রোগ ছড়ায় এইচআইভি পজেটিভ রোগীর সাথে কনডম ছাড়া যৌন সঙ্গম, তার রক্ত গ্রহণ, সিরিঞ্জ ব্যবহারে অসতর্কতা ও চুম্বনে অতিমাত্রায় লালা গ্রহণের মাধ্যমে। বাঁচতে হলে আমাদের এ বিষয়ে সকলকেই জানতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.