আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিম জগতের প্রানী।

আন্টার্কটিকা মহাদেশে প্রানের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে,অবশ্য এই মহাদেশের 98 শতাংশ 2-3 কিঃমিঃ পুরু বরফরের আবরনের নীচে ঢাকা। আন্টার্কটিকাতে যে কয়েকটি নিম্ন শ্রেনীর উদ্ভিদ দেখা যায়,তার বেশিরভাগই কুমেরু বৃত্তের বাইরে আন্টার্কটিক উপদ্বীপে ও এর সংলগ্ন এলাকাগুলিতে,কারন এখানকার গড় তাপমাএআ বেশী। যেহেতু অনেক প্রানী এই উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল সেহেতু উদ্ভিদ কম বিধায় এখানে প্রানীর সংখ্যাও কম। এর বাইরে বাকি জায়গায় মস,অ্যালগি এবং লাইকেন জাতীয় উদ্ভিদ ছাড়া আর প্রানের চিহ্ন নেই বললেই চলে। আন্টার্কটিকা উপদ্বীপের পশ্চিম তীরে এবং এর কাছাকাছি দ্বীপগুলিতে তিন ধরনের লতা আর একধরনের ঘাস পাওয়া যায়।

লতাগুলির নাম ডেসচ্যাম্পপিয়া Deschampia,ডেসচ্যাম্পপিয়া এ্যালিগ্যানটুলা Deschampia elegantula ও কলোবানথাস ক্রাসিফোলিয়াস Colobanthus crassifolius এবং ঘাসটির নাম পোয়া আনউয়া Poa annua। এর মধ্য মস,লাইকেন, এবং অ্যালগি এইসব শেওলা জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে প্রচন্ড ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা আছে। এরা প্রচন্ড ঠান্ডায় সুপ্ত অবস্হায় থাকে এবং অনুকুল পরিবেশে আবার জীবনে ফিরে আসে। মস পাওয়া যায় পার্বত্য এলাকায় প্রধান হিমবাহজাত হ্রদের আশেপাশে। আন্টার্কটিকাতে প্রায় 1200 ধরনের লাইকেন আছে হলুদ,লাল,সাদা,কালো বিভিন্ন ধরনের।

এর মধ্যে লাল লাইকেন সবচেয়ে কম দেখা যায়,পেঙ্গুইনের বাসায় হলুদ লাইকেন বেশী দেখা যায়। মস এবং লাইকেনের চেয়ে বেশি দেখা যায় অ্যালগি(Algae),পাথর,বরফ,সমুদ্র সব জায়গায় এদের দেখা যায়। এখাকার হিমবাহজাত পানির হ্রদগুলিতে নানান ধরনের ব্যাকটিরিয়া এবং কয়েক ধরনের ফাংগাস পাওয়া যায়,এই হলো উদ্ভিদের অবস্হা। আন্টার্কটিকা মহাদেশের প্রানীর ক্ষেত্রেও অবস্হা আরো করুন। পেঙ্গুইন,সীল,এবং পাখিরা যেহেতু সামুদ্রিক খাবারের উপর নির্ভরশীল তাই এগুলি জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটায় সমুদ্রে বা বরফের উপর কাজেই এদের সামুদ্রিক প্রানীই বলা ভালো।

এছাড়া কয়েক ধরনের নিম্ন শ্রেনীর কীটপতংগ ছাড়া আর বিশেষ কিছু নেই,আবার এই কীটপতংগুলোর মধ্যে অর্ধেকই আবার উকুন জাতীয় পরজীবী যারা পেঙ্গুইন ও সীলের গায়ে থাকে। এইসব বাদে আর আছে পাখাবিহীন একধনের মাছি আর স্প্রিংটেল জাতীয় ক্ষুদ্র কীট,এদের বেশির ভাগের খাদ্য হচ্ছে লাইকেন। এইসব পোকাদেরও বেশির ভাগই দেখা যায় আন্টার্কটিকা উপদ্বীপে কুমেরু বৃত্তের বাইরে। এই মহাদেশের সম্পূর্ন বিপরীত অবস্হা আন্টার্কটিক সমুদ্রের,এখানে প্রানের প্রাচূর্য এত বেশি যে পৃথিবীর আর কোথাও এর সাথে তুলনা হয় না। এই আন্টাটিকার সমুদ্রে যত প্রোটিন,কার্বোহাইড্রেট,চর্বি,শর্করা ইত্যাদির এত মজুদ আছে যা অন্য কোন সমুদ্রে নেই।

আর আশ্চর্যের বিষয় হলো এর কারন এই সমুদ্রের প্রচন্ড ঠান্ডা। এই অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে এই সমুদ্রের পানিতে অনেক বেশি অস্কিজেন ও কার্বন-ডাই-অস্কাইড ধারন করে রাখতে পারে। এছাড়া এখানকার পানিতে নাইট্রেট ও ফসফেটের পরিমানও প্রচুর,ছয়মাস সূর্যের আলো পাবার ফলে পানির উদ্ভিদের ফোটোসিনথেসিসের কাজে অনেক সাহায্য করে। পানির এই উর্বরতার ফলে সমুদ্রে উদ্ভিদ-প্ল্যাংকটনের (Phytoplankton) প্রচুর প্রাচুর্য দেখা যায়,এই উদ্ভিদ-প্ল্যাংকটন আবার প্রানী-প্ল্যাংকটনের(Zooplankton) খাদ্য,ফলে আন্টার্কাটিকার সুমুদ্রে লক্ষ কোটি প্রানী-প্ল্যাংকটন জম্নায়। এর মধ্যে পড়ে নানান জাতের ছোট ছোট প্রাণী,আন্টার্কটিকার বিখ্যাত চিংড়ি মাছ ক্রিল শ্রেনীর অন্তর্গত।

এই ক্রিল খেয়ে বেঁচে থাকে পেঙ্গুইন,সীল,এবং তিমি। বিঞ্জানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে প্রচন্ড ঠান্ডা প্রানীদের আয়ু বাড়ায়,তাই আন্টার্কটিকাতে প্রজাতির সংখ্যা কম হলেও একই প্রজাতির সংখ্যা প্রচুর। ক্রিল (Euphausia superba):দক্ষিন সমুদ্রে খাদ্য তালিকার একবারে নীচে আছে ফাইটোপ্ল্যাংকটন,এর মধ্যে আছে ডায়াটম (Diatom) জাতীয় এককোষী উদ্ভিদ,অ্যালগি ইত্যাদি। এর পরে আছে জুপ্ল্যাংকটন এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ক্রিল দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা কমলা রংরের এই চিংড়ি মাছটি দক্ষিন সমুদ্রের অধিকাংশ প্রানীর প্রধান খাদ্য,এক কেজি ক্রিলে খাদ্যপ্রান আছে প্রায় 1200 ক্যালরি। এই ক্রিলের শরীরে এক ধরনের পিগমেন্ট আছে যা দিয়ে আলসারের ওষুধ তৈরী হতে পারে।

এই পরিবারের অন্যান্য চিংড়ি পৃথিবীর অন্যান্য সমুদ্রেও পাওয়া যায়,কিন্ত ক্রিল শুধুমাএ পাওয়া যায় দক্ষিন সমুদ্রে। একটা তিমি দিনে প্রায় 4 টন ক্রিল খায়,এবং তিমি,সীল,পেঙ্গুইন এরা সবাই মিলে বছরে যত ক্রিল খায়,তার পরিমান হলো পৃথিবীতে যত মাছ ধরা হয় তার তিনগুন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই ক্রিল ধরা শুরু করেছে তবে চুক্তি অনুযায়ী এই ক্রিল ধরতে পারবে শুধু 60 ডিগ্রী দক্ষিন অক্ষাংশের বাইরে,কারন এর বাইরের দক্ষিন অঞ্চল সংরক্ষিত। আন্টার্কটিকার মাছঃ আন্টার্কটিকাতে যত মাছ পাওয়া যায় তার 90 শতাংশ হচ্ছে নোটোথেনিড (Notothenid) পরিবারের,তবে এদের দক্ষিন সমুদ্রের বাইরে এদের দেখা যায় না,আবার একই পরিবারের ছোট মাছও আছে। এদের কয়েকটি প্রজাতির রক্তে লোহিত কনিকা নেই, কারন এই সমুদ্রের পানিতে এত বেশী পরিমান অস্কিজেন দ্রবীভূত আছে,আর এত প্রচন্ড ঠান্ডা পানির জন্য মাছের শরীরে বিপাক (metabolism) এত ধীরে হয় যার ফলে এই সব মাছ সরাসরি শাসযন্ত্র থেকে অক্সিজেন নিয়ে রক্তের প্লাজমাতে দ্রবীভুত করতে পারে।

আবার কিছু মাছের এমন ক্ষমতা আছে যে প্রচন্ড ঠান্ডায়ও এদের রক্ত জমাট বাধে না। এই ক্ষমতা আছে ডিজোটিসাস মাওসানি Dissotichus mawsani ও ট্রেমাটোমাস Trematomus প্রজাতির মধ্যে এছাড়াও এদের রক্তে এক ধরনের অ্যান্টিফ্রিজ আছে। এই অ্যান্টিফ্রিজের কাজ করে একটি গ্লাইকোপেপটাইড (Glycopeptide) যা হচ্ছে দুইটি অ্যামিনো অ্যাসিড এর নাম (alanin ও threonine) ও দুটি শর্করা (galactose ও N-acetygalactosamine) দিয়ে এগুলি তৈরী। দক্ষিন সমুদ্রের মাছেদের আর একটি ক্ষমতা আছে দ্রুত বাড়ার। রস বা ওয়েডেল সমুদ্রের আইস শেলফের মধ্যে ঠান্ডায় জমে যাওয়া বড় বড় মাছ পাওয়া গেছে,এবং এগুলির কার্বন-14 ডেটিং করে এগুলির বয়স জানা গেছে তা প্রায় 1000 বছরেরও বেশী।

ধারনা করা হয় এই মাছগুলি সমুদ্রের তলায় পৌছেছিল এবং বরফের মধ্যে আটকা পড়ে,এবং পরবর্বীতে এই আইস শেলফ গুলি ক্ষয়ে যাবার ফলে এই মাছগুলি বরফের উপর উঠে আসে। এখন পর্যন্ত এই আইস শেলফের নীচের জীবন নিয়ে তেমন কোন গবেষনা শুরু হয়নি,এই গবেষনা শুরু হলে আরো নতুন তথ্য জানা যাবে। তিমিঃ ক্যাপ্টেন কুক দক্ষিন সমুদ্র ভ্রমন শেষে ফিরে এসে সীল এবং তিমির প্রাচুর্যের কথা বলেছিলেন,এর পর থেকে তিমি শিকারীরা দক্ষিন সমুদ্রে ব্যাপকহারে তিমি শিকার শুরু করে,এটা শুরু হয় ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। এবং 1935 সালে আন্টার্কটিক কনভারজেন্সের নীচে রেকর্ড 50,000 তিমি শিকার করা হয়েছিল,এইভাবে ক্রমাগত শিকারের ফলে তিমি আজ বিলুপ্ত হবার পথে। এটা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক হোয়েলিং কমিশন নির্দিস্ট কয়েকটি প্রজাতির তিমি মারার অনুমতি দিয়েছে,এবং তার সংখ্যাও নির্ধারন করে দিয়েছে।

এর মধ্যে ব্লু,ব্রাইড,ফিন,হাম্পব্যাক,ও রাইট এই পাঁচ প্রজাতির তিমি মারা সম্পূর্ন নিষেধ,কিন্ত এর পরেও বেআইনীভাবে তিমি শিকার করা হয়। রাশিয়া জাপান সবচেয়ে বেশি তিমি শিকার করে এর পরে করে অস্ট্রেলিয়া,পর্তুগাল, পেরু, ও চিলি। পৃথিবীর অধিকাংশ তিমি বিচরন করে দক্ষিন সমুদ্র এলাকায়,গরমকালে এরা আন্টার্কটিকাকে ঘিরে প্রায় 500 কিঃমিঃ এর মধ্যে থাকে, আর শীতকালে আরও উওরে চলে আসে। সাধারনত দু’ধরনের তিমি দেখা যায় প্রথম ব্লু হোয়েল,হাম্পব্যাক, গ্রে, আর বোহেড তিমি, দিতয় দলে স্পার্ম,বেলিন, এবং রাক্ষুসে তিমি যাকে বলা হয় অরকা (Grampus orca)। এর মধ্যে কিছু তিমির চোয়ালে হোয়েলবোন (Whalebone) নামের নরম হাড়ের তৈরী ছাঁকনি জাতীয় একটি জিনিস থাকে এর সাহায্যে ছোট মাছ ও ক্রিল ছেঁকে খেতে পারে, অন্য তিমিদের হোয়েলবোনের পরিবর্তে দাঁত থাকে।

এর মধ্যে অরকা বা রাক্ষুসে তিমি উল্লেখযোগ্য এরা আকারে ছোট কিন্তু প্রচন্ড হিংস্র এরা ধারালো দাত দিয়ে শিকার করে,এরা সবসময় দল বেঁধে থাকে। সীল এবং পেঙ্গুইন এদের প্রধান খাদ্য এরা শিকার করার সময় নানা রকমের শব্দ করে নিজেদের সাথে যোগাযোগ করে,অন্য সব তিমিদের মত এরাও তীক্ষ বুদ্ধি সম্পন্ন। ব্লু হোয়েল (Balaenoptera musculus): এরা শুধু সব প্রানিদের থেকেই বড় নয়,এরা বর্তমান পৃথিবীতে জীবিত প্রানিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এদের গড় ওজন 84 টন কিন্ত 180 টন ওজনের নীল তিমি ও পাওয়া গেছে এটা একটা রের্কড,এরা লম্বায় 24 মিটার। এদেরকে পৃথিবীর সব বড় সমুদ্রে কম বেশী দেখা যায়,কিন্ত গরমকালে এরা আন্টার্কটিকার বরফের কাছাকাছি চলে যায় এবং পুরা গরমকাল তারা সেখানে কাটায় এবং এখানে তারা প্রজনন করে।

কিন্ত সবচেয়ে বড় রহস্য হলো এই যে পৃথিবীর সমস্ত আধূনিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করেও এই নীল তিমিদের প্রজনন এলাকা বের করতে পারেনি বিঞ্জানীরা। এদের প্রধান খাদ্য ক্রিল এরা খুব লাজুক এদের দেখা পাওয়া বেশ কঠিন,এরা বিপন্ন প্রজাতি মানুষ এদেরকে শিকার করে আজ এদের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। 50 এর দশকে এই শিকারিদের হাতে 2,00,000 তিমি মারা পড়েছে। বর্তমানে এরা আইনের দ্বারা সূরক্ষিত তারপরেও গোপনে কিছু তিমি মারা হয়। ফিন হোয়েল (Balaenoptera physalus): এরা পৃথিবীর দ্বিতীয় বহওম প্রানী,এরা লম্বায় 20 মিটার,ওজন 40 থেকে 50 টন, মহিলা তিমি আকারে একটু ছোট হয়।

এরা খোলা মহাসাগরেই বংশ বৃদ্ধি করে এরা নীল তিমির মত বেশী দূর ভ্রমন করে না,এদের প্রধান খাদ্য ক্রিল এই খাবারের জন্য তারা আন্টার্কটিকার সমুদ্রসীমায় যায়। এদের সংখ্যা মাএ 80,000 হাজার এবং এদেরকে 1976 সালে আইন দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে। রাইট হোয়েল (সাউর্দান)(Balaena glacialis): এরা 18 মিটার লম্বা হয়,এবং ওজন প্রায় 96 টন এদের মাথাটা বিশাল যা শরীরের অর্ধেক অশং জুড়ে আছে,এদের চামড়া খসখসে এদের শরীরে পরজীবিরা বাস করে। এরা উপকুলীয় এলাকায় প্রজনন করে এদের প্রধান খাদ্য ক্রিল। এদের তেল এবং হাড়ের জন্য 1850 সাল পর্যন্ত প্রচুর পরিমান এই তিমি মারা হয়েছে।

বর্তমানে এদের সংখ্যা কত তা নির্ধারন করা যায়নি। হাম্পব্যাক (Megaptera novaeangliae): এদের গড় দৈঘ্য 13 মিটার,ওজন 31 টন। এদের পাখনা অনেক লম্বা হয় যা শরীরের মোট দৈঘ্যের এক তৃতিয়াংশ,এদের উওরসূরি হলো কূঁজো তিমি। এরা দ্বীপের মধ্যে উপহ্রদের অগভীর পানিতে বাচ্চা জম্ন দেয়। এদের ডাঁক প্রানী জগতের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং বৈচিএময়।

মিঙ্ক (Balaenoptera acutorostrata): এরা লম্বায় 8 মিটার ওজন 6 থেকে 8 টন,এরা। এই তিমি উওর-দক্ষিন এই দুই দিকেই যাতায়াত করে,এদের প্রধান খাদ্য ক্রিল এরা 70 এর দশক পর্যন্ত উপেক্ষিত ছিল এই কারনে এদের সর্ম্পকে তেমন কিছু জানা যায়নি। ওরকা (Grampus orca): এদেরকে রাক্ষুসে তিমি বলা হয়,এদের দৈঘ্য 9 মিটার কিন্ত নারী তিমি দৈঘ্যে 8 মিটার,এদের গড় ওজন 7 থেকে 8 টন। এরা প্রচন্ড হিংস্র মেরু অঞ্চল থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব মহাসাগরে এদের দেখা মেলে। এদের প্রধান খাদ্য সীল ও মাছ এরা অনেক সময় একসাথে সীল শিকার করে।

1978 সালে 900 রাশিয়ান তিমি শিকারী জাহাজ এই তিমিদের মেরে প্রায় র্নিবংশ করে দিয়েছিল,পরর্বতীতে আইন দারা এদের সুরক্ষিত করা হয়েছে,বর্তমানে এদের সংখ্যা প্রচুর। স্প্যাম (Physeter macrocephalus): পুরুষ তিমি 18 মিটার লম্বা হয় এবং ওজন 70 টন,নারী লম্বা হয় 11.5 মিটার আর ওজন হয় 17 টন পর্যন্ত। এই তিমির মাথা ভোঁতা হয় যা দৈর্ঘ্যে শরিরের এক তৃতীয়াংশ,এদের মাথার মধ্যে এমন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য আছে যা পানির গভীরে যখন এই তিমি ডুব দেয় তখন এর দেহের ভিতরকার তরল অংশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্যে করে। এরা ক্রিল ছাড়াও বড় বড় স্কুইড খায়,এবং এই স্কুইড ধরার জন্য এরা ঘন্টায় 7 থেকে 8 কিঃমিঃ গতিতে পানির 1000 মিটার নীচে যেতে পারে এবং একটানা 45 মিনিট পর্যন্ত ডুঁব দিয়ে থাকতে পারে। গ্রীস্মে এদের প্রজনন সময় এই সময় একটি পুরষের অধীনে 20 থেকে 30 জন নারী থাকে যা অনেকটা হারেমের মত,এদের গর্ভকাল 15 মাস।

18 শতকের শেষে এবং 19 শতকের প্রথম দিকে এদেরকে তৈল এবং চর্বির জন্য প্রচুর পরিমানে হত্যা করা হয়েছে,পরর্বতীতে এই তৈলের চাহিদা কমে যাওয়াতে 1979 সালে এদের হত্যা করা বন্ধ হয়। ‘সেই’ sei (Balaenoptera borealis) তিমি: এই তিমি 18.5 মিটার লম্বা হয়,ওজন 29 টন এরা নীল,এবং ফিন তিমির সাথে ঘনিস্ট। কিন্ত এরা বেশ সরু এবং এদের পাখনা ও ছোট,কিন্ত এরা ফিন তিমিদের মত দীর্ঘ উওর-দক্ষিনে যাত্রা করে না। ধারনা করা হয় এরা একজন সংগির সাথে জীবনের দীর্ঘ সময় কাটায়। অন্য তিমিদের মত এদেরকেও নির্বিচারে হত্যা করা হত,কিন্ত 1978 সালে আইন করে সুরক্ষা করা হয়।

সীলঃ এখানে চার প্রকারের সীল দেখা যায়,এরা সবাই ফোসিডা (Phocidae) পরিবারের অন্তর্গত,এখানকার সীলদের সাথে উওর গোলার্ধের সীলদের প্রচুর অমিল,এমনকি আন্টার্কটিক কনভারজেন্সের উওরের সীলদের থেকেও এরা আলাদা। উওরের সীলদের মত এরা মাটিতে চার পা ব্যাবহার করতে পারে না,পানিতে এরা পেছনের পা দুটি দিয়ে পানিতে সাঁতার কাটে যার ফলে পায়ের আকার ও ব্যাবহার পাখনার মত হয়ে গেছে। লেপার্ড সীল ছাড়া বাকি তিন প্রজাতির সীলের প্রধান খাদ্য ক্রিল সাথে ছোট মাছ ও স্কুইড। ওয়েডেল(Leptonychotes wadelli)সীল : সর্বদক্ষিনে এদের দেখা যায় এরা সাধারনত অক্ষত সামুদ্রিক বরফের উপরেই এরা থাকে এবং এক একটা অঞ্চলে এরা স্হায়ীভাবে বসবাস করে। লম্বায় এরা তিন মিটার বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে,এবং ওজন প্রায় 400 কিলোর কাছাকাছি,অবশ্য এই ওজনের অর্ধেকটাই হল চর্বি এই চর্বি এদের শরীর গরম রাখতে ও পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।

বিঞ্জানিরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমান মানুষের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুন বেশি,এর ফলে এরা পানির নীচে এক ঘন্টারও বেশি সময় থাকতে পারে। প্রচন্ড ঠান্ডার সময় এরা শরীরের উপরিভাগের রক্তবাহী ধমনীগুলোকে সংকুচিত করে ফেলে এর ফলে এরা শরীরের তাপ সঞ্চয় করে রাখতে পারে। শীতের সময় এরা বরফের নীচের পানিতে থাকে,কারন সেই সময় বরফের উপরের তাপমাত্রা চেয়ে বরফের নীচের পানির তাপ অনেক বেশি থাকে। এই সময় এরা শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য এই বরফের মধ্যে গর্ত করে। শীতকালের দীর্ঘ রাতে এরা শিকার ধরা এবং বরফের নীচে দিক ঠিক করার জন্য পানির নীচে তীক্ষ শব্দ করে যাকে ইকো-সাউন্ড বলে।

লেপার্ড (Hydrurga Leptonyx) সীলঃ এই সীলদের বিচরন ক্ষেএ হল আন্টার্কটিকার মূল মহাদেশকে ঘিরে থাকা ভাংগা সামুদ্রিক বরফের প্যাক আইসের উপর। এরা প্রচন্ড হিংস্র,এরা চার থেকে সাড়ে মিটার লম্বা হয়,ওজন প্রায় চারশো কিলো। এদের প্রধান খাদ্য পেঙ্গুইন এবং অন্যান্য সীলের বাচ্চা। অন্যান্য সীলের মত এদের শরীর বেশি মোটা না এই জন্য এরা প্রচন্ড ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন,এরা একা একা থাকতে ভালবাসে। এরা শিকার ধরার জন্য পানির নীচে লুকিয়ে থাকে,এবং পেঙ্গুইনের দল পানিতে নামলে এরা তখন পানির নীচ থেকে অতর্কিতে আক্রমন করে।

রস (Ommatophoca rossi)সীল: এদের গায়ক সীলও বলে কারন এরা যখন ডাকে তখন ঠিক গানের মত শোনায়। এরা আকারে ছোট এদের দৈর্ঘ্যে আড়াই মিটারের মত। এদের প্রধান খাদ্য স্কুইড,ক্রিল,ও অন্যান্য ছোট মাছ। এরা বিপ্নন প্রজাতির সীল সমগ্র আন্টার্কটিকায় এদের সংখ্যা বড়জোর 50,000,এরা সংরক্ষিত প্রানী এদের মারা আইনত নিষিদ্ধ। ক্র্যাবইটার (Lobodon carcinophagae) সীলঃ আন্টার্কটিকাতে এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী প্রায় 95 শতাংশ।

এদের দৈর্ঘ্য প্রায় চার মিটার ওজন প্রায় চারশো কিলো,এদের প্রধান খাদ্য হলো ক্রিল। আন্টার্কটিকার অভ্যন্তরের পাচঁশো কিঃমিঃ ভিতরে এদের পুরানো মমি পাওয়া গেছে,কার্বন-14 ডেটিং পরিক্ষা করে দেখা গেছে এগুলি 2000 হাজার বছরের পুরানো,এই রহস্যের সমাধান এখনো পুরোপুরি করা যায়নি। আন্টার্কটিকায় এই সীলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এছাড়াও আরো দুই ধরনের সীল দেখা যায়,তবে এদের বাস কুমেরুর বৃত্তের বাইরে তাই এদের আন্টার্কটিকার অধিবাসী বলা যায় না,তাছাড়াও আন্টার্কটিকার অন্য সীলদের সাথে এদের অনেক পার্থক্য আছে। ফার (Fur seal): এদের গায়ের চামড়া দিয়ে মূল্যবান পোশাক তৈরী,যার ফলে শিকারীরা শিকার করে এদের বংশকে প্রায় শেষ করে দিয়েছে।

এদের দেখা পাওয়া বেশ দূস্কর। এদের দৈর্ঘ্য 4 থেকে 10 (1.2 থেকে 3.1 মিটার)ফুট,ওজন 700 (317 কেজি) পাউন্ড, এদের গড় বয়স 12 থেকে 30 বছর। এদের চামড়া খুব দামি বিধায় একসময় এদেরকে প্রচুর পরিমানে হত্যা করা হতো,এটা বন্ধ করার জন্য 1911 সালে আইন করে এদেরকে সুরক্ষিত করা হয়। এলিফ্যান্ট (Elephant seal): এদের আয়তনের জন্যই এদের এই নামকরন,এছাড়াও এদের নাকটা হাতির শুরের মত ঝুলে থাকে এদের ডাক অনেক জোরালো অনেক দূর থেকে শোনা যায়। এরা দল বেধে বাস করে,এবং একটি পুরুষ সীলের অধীনে অনেকগুলি নারী সীল থাকে।

পেঙ্গুইনঃ পেঙ্গুইনরা হচ্ছে আদিমতম পাখিদের অন্যতম এরা সবাই স্ফেনিসিডা (Spheniscidae) পরিবারের অর্ন্তভূক্ত। আন্টার্কটিকাতে কয়েক ধরনের পেঙ্গুইন দেখা যায়,এর মধ্যে এম্পেরর (Emperor Penguin Aptenodytes forsteri ) পেঙ্গুইন এবং অ্যাডেলি (Adelie Pygoscelis adelie) হলো মূল মহাদেশের অধিবাসী। কুকের অভিযানের সময় তার সাথে ফর্স্টার নামে একজন আফিসার ছিল তার নামেই এম্পেরর প্রজাতির পেঙ্গুইনের নাম রাখা হয়। এছাড়াও কিং,ম্যাকারনি,জেন্টো এবং চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন দেখতে পাওয়া যায়। এরা সবাই কুমেরু বৃক্তের বাইরে আন্টার্কটিকা সংলগ্ন দ্বীপগুলিতেই বেশি দেখা যায়।

এদের গায়ে শক্ত আঁষের মত পালক থাকে,এদের চামড়ার নীচে প্রায় দুই ইঞ্চি পুরু চর্বি থাকে,এদের প্রধান খাদ্য ক্রিল। পানিতে পেঙ্গুইনরা ঘন্টায় প্রায় 30 কিঃমিঃ গতিতে সাঁতার কাটতে পারে,এবং পানির নীচে প্রায় 25 মিনিট পর্যন্ত ডুবে থাকতে পারে। এরা ডানা ব্যাবহার করে সাঁতার কাটতে আর পা ব্যাবহার করে দিক পরিবর্তনের জন্য। পেঙ্গুইনের সবচেয়ে মজার দিক হলো পানি থেকে যখন বরফের উপর উঠে,এরা পানি থেকে সোজা 7 ফুট উঁচু বরফের ডাঙার উপরে লাফিয়ে উঠে সোজা দাড়িয়ে পরে। ডাঙার ওপরে পেঙ্গুইনরা সাধারনত দুপায়ে চলে,আবার এর চেয়ে দ্রুতগতিতে যাবার দরকার হলে এরা তখন বুকের উপর ভর দিয়ে ডানা দুটিকে ব্যাবহার করে বরফের উপর দিয়ে পিছলে চলে যায়।

এম্পেরর পেঙ্গুইনঃ এরা প্রায় 4 ফুটের মত লম্বা হয়,আর ওজন প্রায় 45 কিলো এদের ভাবভঙ্গি বেশ রাজকীয়। এরা ডিম পারে শীতকালে যখন তাপমাত্রা থাকে -30 থেকে 40 ডিগ্রী সেলসিয়াস তখন,এই তাপমাত্রায় আন্টার্কটিকার সংলগ্ন সমস্ত সমুদ্র জমে বরফ হয়ে যায়,এবং এই বরফের উপর মা পেঙ্গুইন একটি মাত্র ডিম পারে,এই ডিমের ওজন প্রায় আধা কেজি। বাবা পেঙ্গুইন এই ডিমটি দুপায়ের ওপর নিয়ে পেটের চামড়া দিয়ে ঢেকে দুমাস ধরে এই ডিমের উপর তা দেয়। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে শীতের এই দীর্ঘ রাতে এই ডিম তা দেবার সময় হাজার হাজার পেঙ্গুইন একজায়গায় জড়াজড়ি করে থাকে ঠান্ডার হাত থেকে বাচার জন্য। বাবা পেঙ্গুইন এই দুমাস কিছুই খায় না,আর মা পেঙ্গুইন এই পুরা সময়টি খাবারের জন্য সমুদ্রে থাকে।

এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোলে তখন মা পেঙ্গুইন বাচ্চার দায়িত্ত নেয় এবং বাবা পেঙ্গুইন খাবারের জন্য সমুদ্রে যায়। প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য এম্পেরর পেঙ্গুইনের বাচ্চারা খুব ধীরে বাড়ে। বাচ্চার বয়স দুমাস হলে মা বাবা দুজনেই তখন সমুদ্রে যায় খাবারের জন্য,এসময় বাচ্চারা ঠান্ডা থেকে বাচার জন্য সবাই এক সাথে জড়াজড়ি করে থাকে। অ্যাডেলি পেঙ্গুইনঃ এরা আকারে ছোট উচ্চতা 2 ফুটের কাছাকাছি,ওজন প্রায় 30 কিলো। এই পেঙ্গুইনরা ডিম পারে নভেম্বর মাসে তখন কুমেরুতে গ্রীস্মকাল।

এরা বরফের উপর ডিম পারে না,ডিম পারার জন্য ওদের পাথুরে জ়মির দরকার এই জমির উপরে ওরা ছোট ছোট নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে বাসা বানায়,এই কাজটি করে পুরুষ পেঙ্গুইন। এর কিছুদিন পরে হাজার হাজার নারী পেঙ্গুইন আসে এবং তারা পুরুষ সংগী বাছাই করে এবং সংগী পছন্দ হলে বাসার বাকী কাজ তখন এরা দুজনে মিলে শেষ করে। নারী পেঙ্গুইন সাধারনত দুটি ডিম পারে,এবং নারী পুরুষ দুজনে মিলে পালা করে ডিমে তা দেয় যখন একজন ডিমে তা দেয় অন্যজন তখন সমুদ্রে খাবার খেতে যায়। ডিম ফুটতে সময় লাগে 30 থেকে 35 দিন,ডিম ফুটে যখন বাচ্চা বের হয় তখন এদের গায়ে পালক বা চর্বি কিছুই থাকে না। অ্যাডলি পেঙ্গুইনের বাচ্চা খুব তারাতারি বড় হয় জানুয়ারির শেষের দিকে এদের গায়ে পুরাপুরি পালক গজিয়ে যায়।

এই সময় বাচ্চারা মা বাবার সাথে সমুদ্রে চলে যায় এবং শীতকালটা বরফ জমা সমুদ্রে কাটায়। আন্টার্কটিকা মহাদেশের পাখীদের সংখ্যাও খুব করুন কুমেরু বৃক্তের বাইরে আন্টার্কটিকাকে ঘিরে যে সব দ্বীপ তাতে বেশ কয়েক ধরনের পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে আছে ফুলমার বা জায়ান্ট আন্টার্কটিক পেট্রেল (Macronectes giganteus) ও করমোরান্ট (Phalacrocorax atriceps) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আন্টার্কটিকা মহাদেশের সবচেয়ে ভেতরে যে পাখি বেশী দেখা যায় তার নাম হলো স্কুয়া। স্কুয়া (Skua,Catharacta mackormicki): স্কুয়া হচ্ছে ঈগল জাতীয় পাখি,অনেকে একে আন্টার্কটিকার বাজ বা ঈগল বলে।

এরা হিংস্র শিকারী পাখি এদের দৈর্ঘ্য 140 সেন্টিমিটার (ডানার ছড়ানো অবস্হায়),ওজন 980 থাকে 1900 গ্রাম। ডিম পারে:জানুয়ারী থেকে নভেম্বর,এদের প্রজনন ক্ষেএ আন্টার্কটিকার মূল ভূ-খন্ড ও এর আশেপাশের দ্বীপ ও উপদ্বীপে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর:বাচ্চা ফোটে। মার্চ ফেব্রুয়ারীতে বাচ্চা উড়তে পারে। এরা সমতল পাথুরে জমির উপর বাসা বানায়,এবং অন্য প্রানীদের হাত থেকে বাচ্চা রক্ষার জন্য একজন যখন ডিমে তা দেয় অন্যটি তখন চারপাশে হেটে হেটে মা এবং ডিমকে পাহারা দেয় স্কুয়া তার বাচ্চাকে রক্ষা করার জন্য যে কোন প্রানীর উপর তারা আক্রমন করে। স্কুয়ার বাচ্চা খুব তারাতারি বেড়ে উঠে স্কুয়ার বাচ্চা দেখতে মুরগির বাচ্চার মত শুধু আকারে একটু বড়।

এদের খাদ্য পেঙ্গুইনের বাচ্চা ও সামুদ্রিক ছোট মাছ এবং আন্টার্কটিকায় অবস্হিত বিভিন্ন গবেষনাগার থেকে ফেলা উচ্ছিট খাবার। দূর থেকে স্কুয়ার ডাক শুনলে মনে হবে যেন কেউ কথা বলছে। এদের ভৌগলিক দক্ষিন মেরুর ৮০ মাইলের মধ্যে পর্যন্ত দেখা গেছে,এত দক্ষিনে এরা বেঁচে থাকার মত খাবার পায় কিভাবে তা একটা বিস্ময়। স্কুয়া আন্টার্কটিকার বিপন্ন পাখিদের মধ্যে অন্যতম,এদের সংখ্যা মাএ কয়েক হাজার এদের দেখা পাওয়া বেশ দুস্কর প্রজনের সময় দ্বীপ গুলিতে 30 থেকে 35 জোড়া পাখি দেখতে পাওয়া যায়। মানুষের দ্বারা আন্টার্কটিকার পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখিন সেই সাথে এই পাখিরাও আজ হুমকির মধ্যে পড়েছে।

জায়ান্ট আন্টার্কটিক পেট্রেল (Macronectes giganteus): স্কুয়ার পরে এই জায়ান্ট পেট্রেল হলো দ্বিতীয় হিংস্র পাখি। এবং এরা আকারে বেশ বড় 2.2 মিটার ওজন 3.5 থেকে 5 কেজি। আন্টার্কটিকাকে ঘিরে যে সব দ্বীপ আছে সেখানে এদের পাওয়া যায়,তবে এরা সমুদ্রেই বেশিরভাগ সময় কাটায় ডিম পারার সময় ডাংগায় আসে। এরা অক্টোবর মাসে ডিম পারে জানুয়ারি মাসে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়,এবং এপ্রিল মাসে বাচ্চা উরতে পারে। এরা সামুদ্রিক হিংস্র পাখি সামুদ্রিক মাছ এদের প্রধান খাবার এছাড়াও জাহাজ থেকে ফেলে দেওয়া উচ্ছিট খাবার।

আন্টার্কটিকায় এরা বিপন্ন প্রজাতির পাখি আন্টার্কটিকার 4টি জায়গায় মাএ 300 পাখি আছে মানুষের জন্য আজ এরা বিপন্ন। স্নো পেট্রেল (Snow petrel/Pagodroma nivea): এই পাখিটি দেখতে একদম দুধের মত সাদা,আকার কবুতরের সমান 80 সেন্টিমিটার,ওজন 200 থেকে 300 গ্রাম। আন্টার্কটিকার মুল ভূখন্ডে ও সংলগ্ন উপদ্বীপে এদের দেখতে পাওয়া যায়,প্রজননের সময় এরা মূল ভূখন্ডে আসে। এরা পাহাড়ের পাথরের নীচে বরফের কাছাকাছি বাসা বানায় নভেম্বর মাসে ডিম পারে এবং জানুয়ারি মাসে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়,এই বাচ্চারা খুব দ্রুত বড় হয় এবং ফেব্রুয়ারী মাসেই বাচ্চারা উড়তে পারে এদের খাদ্য ছোট মাছ ও ক্রিল। আন্টার্কটিকায় এদের সংখ্য বেশ ভালোই আছে,কিন্ত এই সংখ্যা কতদিন থাকবে?এদের উপর গবেষনা করার জন্য প্রায় 1000 হাজার পাখির পায়ে রেডিও ট্রান্সমিটার যুক্ত রিং পড়ানো হয়েছে,এবং এর সাহায্যে গত 30 বছর ধরে এদেরকে নিয়ে গবেষনা করা হচ্ছে।

এই গবেষনায় দেখা গেছে যে এক এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে পুরুষ এবং মহিলা পাখি (গড়ে 20 বছর)একসাথে থাকে। স্টর্ম পেট্রেল (Oceanites oceanicus) এদেরকে উইলসনস স্টর্ম পেট্রেল ও বলে স্কটের অভিযানের বিন্জানী উইলসনের নামে এই পাখির নাম রাখা হয়। এটি আন্টার্কটিকার ক্ষুদ্রতম পাখি এটি মাএ 10 সেন্টিমিটার লম্বা,ওজন 34 গ্রাম। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম আকাশ ভ্রমনকারী পাখি। জুলাই আগস্ট মাসে খাবারের খোজে এরা আর্কটিক অঞ্চলে যায় এবং প্রজননের জন্য ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে আবার আন্টার্কটিকায় ফিরে আসে এই দীর্ঘ যাত্রা পথে এরা 40,000 কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করে।

এরা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মধ্যে ডিম পারে জানুয়ারিতে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় এবং মার্চের মধ্যে বাচ্চা উড়তে শেখে। এদের খাদ্য ক্রিল ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ কনা। অনেকের ধারনা আন্টার্কটিকাতেও শ্বেত ভাল্লুক আছে?শ্বেত ভাল্লুক শুধু সুমেরু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ,যেমন পেঙ্গুইন সীমাবদ্ধ কুমেরু অঞ্চলে। সুমেরু এবং কুমেরু অঞ্চলের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে নীচে এই পার্থক্য গুলি দেয়া হলো। কুমেরুঃ 1.আন্টর্কটিকাকা মহাদেশকে ঘিরে আছে দক্ষিন সমুদ্র।

2.বায়ু, এবং পানি প্রবাহ মহাদেশকে ঘীরে বাধাহিন। 3.আন্টার্কটিকাকে ঘিরে দক্ষিন সমুদ্রের বরফ জমার গড় হার 2.5 মিটার। 4.আন্টার্কটিকার 98 শতাশং মহাদেশীয় হিমবাহে ঢাকা এর সীমানা 13 মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। 5. আন্টার্কটিকার হিমশৈলগুলির আয়তন বিশাল,যা সাধারনত 100 ঘন কিলোমিটারে মাপা হয় 6.ভৌগলিক দক্ষিন মেরুর উচ্চতা 2912 মিটার,এবং ভূ-পৃ্স্ঠ সমুদ্রপৃস্ঠ থেকে 34 মিটার উঁচু। 7.দক্ষিন মেরুর গড় তাপমাত্রা -50 ডিগ্রী সেলসিয়াস।

8.কুমেরু বৃত্তের ভিতরে কোন গাছপালা নেই। 9.কুমেরুতে উদ্ভিদ বলতে প্রধানত মস আর লাইকেন। 10.আন্টার্কটিকা মহাদেশে দু-এক প্রকারের মাছি ছাড়া কোন প্রানী নেই। 11.দক্ষিন সাগরে 14 প্রজাতির তিমি এবং 4 প্রজাতির সীল পাওয়া যায়। 12. 19 প্রজাতির পাখি আছে (70 থেকে 80 ডিগ্রী দক্ষিন অক্ষাংশে) এর মধ্যে স্কুয়া ও পেঙ্গুইন অন্যতম।

13. এখানকার সমুদ্র অনেক বেশী উর্বর প্রান প্রাচূর্যে। ক্রিল জাতীয় চিংড়ি মাছে ভরপূর। 14.কয়েকটি গবেষনা কেন্দ্র ছাড়া আর কোন মানুষ নেই। 15.কুমেরু বৃও 1772 সালে জেমস কুক অতিক্রম করেন। সুমেরুঃ 1. আর্কটিক সমুদ্রকে ঘিরে আছে মহাদেশগুলি।

2.বায়ু ও পানি প্রবাহ মহাদেশের মধ্যেই প্রধানত সীমাবদ্ধ। 3.আর্কটিক সমুদ্রের বরফের গড় পুরুত্ব 4.5 মিটার। 4.মহাদেশীয় হিমবাহ শুধু গ্রীনল্যান্ডেই সীমাবদ্ধ এর পরিধি 1.7 মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। 5.গ্রীনল্যান্ডের হিমশৈলগুলি্র আয়তন ছোট একে ঘনমিটারে মাপা হয়। 6.ভৌগলিক উওর মেরুর উচ্চতা 1 মিটার।

এখানকার ভূ-পৃ্স্ঠ থেকে 4300 মিটার নীচে এর মানে সেখানে সমুদ্রের গভীরতা 4300 মিটার। 7.উওর মেরুর গড় তাপমাত্রা -18 ডিগ্রী সেলসিয়াস। 8.সুমেরু বৃত্তের ভিতরে তুন্দ্রা অঞ্চল ও গাছপালা আছে। 9.সুমেরু বৃত্তের ওপরে 450 প্রজাতির গাছপালা আছে। এবং 80 ডিগ্রী উওর অক্ষাংশের ওপরে আছে আরো 90 প্রজাতির উদ্ভিদ।

10.শ্বেত ভাল্লুক, মেরু শিয়াল,বল্গা হরিন, খরগোশ ও প্রচুর পোকামাকর আছে। 11.7 প্রজাতির সীল ও 18 প্রজাতির তিমি পাওয়া যায়। 12. 70 থেকে 80 ডিগ্রী উওর অক্ষাংশে 107 প্রজাতির পাখি আছে,স্কুয়া বা পেঙ্গুইন নেই। 13.এখানকার সমুদ্র কম উর্বর,ক্রিল নেই। 14.আদিম মানুষ থেকে শুরু করে এস্কিমোদের বাস।

15.70 ডিগ্রী উওর অক্ষাংশের ওপরে আধুনিক শহর আছে। 16.প্রাগৈতিহাসিক যুগেই মানুষ সুমেরু বৃও অতিক্রমন করেছে। ছবি সৌজ্যন্যেঃগুগল। সহায়ক গ্রন্হপন্জিঃ G.A. Doumani & W.E. Long The ancient life of Antarctic। H.G Goodell.Antarctic Marine Geology।

R.C Murphy. The Oceanic life of Antarctica। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।