আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোভ দেখিয়ে অভিসারের ফাঁদ পাতেন ঢাবি অধ্যাপক!

জীবনটা কাঠের পেন্সিলে লেখা কোন গল্প বা কবিতা নয় ,একবার ভুল হলে আবার নতুন করে লেখা যাবে!!! মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। ডাক নাম বাহলুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার সুযোগে ছাত্রীদের বেশি নম্বরের লোভ দেখিয়ে অভিসারের ফাঁদ পাতেন তিনি। বিভাগের ছাত্রীরাই তার লালসার শিকার।

তার বিরুদ্ধে একই বিভাগের দুই ছাত্রীর সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত কমিটি। দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী। তদন্ত কমিটির কাছে বাহলুল ছাত্রীদের সঙ্গে অবাধে যৌনকাজে লিপ্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রতারিত দুই ছাত্রী লিখিত ও মৌখিকভাবে তদন্ত কমিটির কাছে বাহলুলের শাস্তি দাবি করেছেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১০ সাল থেকে এ দু’ছাত্রীর সঙ্গে অভিসার চালিয়ে আসছিলেন বাহলুল।

তাদের বাদ দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচতে বাহলুল এ দু’ ছাত্রীর বিরুদ্ধে তার কক্ষের চাবি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। প্রতারিত এ দু’ছাত্রী বাহলুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে প্রধান করে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজী, অধ্যাপক আবদুল বাছির, এ কে এম খাদেমুল হক ও সুরাইয়া আখতার।

যৌন কেলেঙ্কারি অভিযোগ ওঠায় ৩০শে এপ্রিল বাহলুলকে এক বছরের জন্য বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে বিভাগের কোন কক্ষে না আসার জন্য নির্দেশ দেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তৌফিকুল হায়দার। বাহলুল ‘৩০০৯ নম্বর’ কক্ষকে সেক্সহোম হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাহলুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন বিভাগের চেয়ারম্যান। রেজিস্ট্রারের কাছে লেখা চেয়ারম্যানের চিঠিতে বলা হয়- বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বিভাগের কতিপয় ছাত্রীকে নানা প্রলোভনের জালে জড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন।

অথচ এক পর্যায়ে এসব ছাত্রীদেরকে কৌশলে অভিযুক্ত করে তাদেরই বিচার দাবি করে তিনি বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। বাহলুল শাস্তি থেকে বাঁচতে উল্টো প্রতারিত দু’জন ছাত্রীদের বিরুদ্ধে তার কক্ষের তালার চাবি নিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছিলেন। কথিত অভিযোগের তদন্ত করতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনের শেষ দিকে লেখা হয় ‘ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ঘটনার দীর্ঘ নেপথ্য কাহিনী উদঘাটিত হয়’।

প্রতিবেদনে বলা হয়- বাহলুল একের পর এ দু’জন ছাত্রীর সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে পালাক্রমে আবেগের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগকারিনী এ দু’ছাত্রী দাবি করেন যে তারা বাহলুলের জীবনসঙ্গী হওয়ার প্রত্যাশা ও আশ্বাসের প্রেক্ষিতে নিজস্ব বিবেচনায় তার সঙ্গে ওঠাবসা করেন। কিন্তু সমপ্রতি বাহলুলের অন্যত্র বিয়ে চূড়ান্ত হওয়ার খবর জেনে তারা উভয়েই বিচলিত হয়ে পড়ে। চলতি বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ওই দু’ছাত্রী বাহলুলের কক্ষে যান বিয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় দু’জন ছাত্রী উভয়েই বাহলুলের ক্যাম্পাসের বাসায়, বন্ধুদের বাসায় ও অন্যত্র তার সঙ্গে পছন্দমতো সময় কাটিয়েছে।

এদের মধ্যে ‘র’ (নামের সাঙ্কেতিক অক্ষর)-র সঙ্গে সম্পর্ক চরমতম গভীরতায় উপনীত হয় এবং দু’জনেই ব্যাপারটি অকপটে স্বীকার করেন। ‘র’ দাবি করেন যে বাহলুলের হবু স্ত্রীকে তিনি (র) বিষয়টি তাদের বিয়ের আগেই অবহিত করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু অপরপক্ষ তা আমলে নেয়নি। ‘র’ তার চরম বিপর্যয়ের দায়দায়িত্ব স্বীকার করেও বাহলুল তাকে জীবনসঙ্গী না করায় বাহলুলকে ওয়াদা, আশ্বাস ও বিশ্বাসভঙ্গ করার দায়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় ছাত্রী ‘ল’র সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতম পর্যায়ে না পৌঁছলেও প্রতারিত হওয়ার ক্ষোভে সে-ও বাহলুলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।

তদন্ত কমিটি সন্দেহাতীতভাবে এ বিশ্বাসে উপনীত হয়েছে যে বাহলুল শিক্ষকসুলভ গণ্ডি অতিক্রম করে ওই দু’ছাত্রীর সঙ্গে যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তা নৈতিক স্খলনই নয়, এ আবেগীয় সম্পর্ক স্থাপনে উভয় ছাত্রীর কথিত সম্মতি তার অনুকূলে কোন সাফাই হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। নৈতিক স্খলনের অপরাধে মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বাহলুলের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। এছাড়া সার্বিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদেরকেও তিরস্কার করে চিঠি দেয়া হয় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। বাহলুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানের চিঠি: সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বাহলুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তৌফিকুল হায়দার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া চিঠির অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ও কলা অনুষদের ডিনকে দেয়া হয়েছে।

৩রা জুন ওই চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়- আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বিভাগের কতিপয় ছাত্রীকে নানা প্রলোভনের জালে জড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। অথচ এক পর্যায়ে এসব ছাত্রীদের কৌশলে অভিযুক্ত করে তাদেরই বিচার দাবি করে তিনি বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। তার আবেদনের সূত্রে ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ’-এর জবাবে অভিযুক্ত ছাত্রীদ্বয় মাহমুদুর রহমানের বিচার ও শাস্তি দাবি করে পাল্টা অভিযোগ করেন। বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি করেন।

এতে মাহমুদুর রহমানের রচম ন্যক্কারজনক নৈতিক স্খলনের নানা তথ্য উদ্ঘাটন হলে তিনি কৃত যৌন কেলেঙ্কারি ও অপরাধের সত্যতা অকপটে স্বীকার করেন। এ প্রেক্ষাপটে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মাহমুদুর রহমানকে বিভাগের শিক্ষা-পরিবেশ ও আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত তাৎক্ষণিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিভাগীয় সকল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ ১লা জুন বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় মাহমুদুর রহমানের ব্যাপারে চরমতম নৈতিক স্খলনের দায়ে যথোপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। আমরা এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। অভিযুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বাহলুল বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সঠিক নয়। তদন্ত কমিটির কাছে ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করেননি বলে জানান। বাহলুল আরও বলেন, এটি সম্পূর্ণ বিভাগের আন্তঃরাজনীতি।

ছাত্রীদের সঙ্গে ফোনে চরম ঘনিষ্ঠতার কথোপকথনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বক্তব্য তদন্ত কমিটি আমাকে শোনায়নি। এক পর্যায়ে বাহলুল বলেন, বিষয়টি বিভাগের মধ্যে গোপন থাকার কথা ছিল। অভিযোগকারী ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকের বাইরে কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি। মালটা এখানে. http://dnewsbd.com/single.php?id=36531 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।