আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়ছে রিজার্ভ, কমছে আমদানি ব্যয়

গত তিন মাস ধরে আমদানি ব্যয় কমতে থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২৭ শতাংশ কমেছে। ডিসেম্বরে কমেছে ২৪ শতাংশ। আগের মাস নভেম্বরে কমেছিল ২৩ শতাংশের মতো। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৯৮০ কোটি (৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন) ডলার।

মাসখানেক আগে এই রিজার্ভ ৮৮০ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। আমদানি ব্যয় কমার এই ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। তিনি বলেন, “অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে ঋণ না দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমদানিতে। ” তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেছেন, কম প্রয়োজন ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমলে সমস্যা নেই। কিন্তু শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমলে চিন্তার বিষয়।

“মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমলে শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমবে। সেক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জন নাও হতে পারে,” বলেন তিনি। তবে খাদ্য আমদানি কমায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বিআইডিএসের এই গবেষক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১ হাজার ৭৮২ কোটি (১৭ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৩৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

আর ২০১০-১১ অর্থবছরের পুরো সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ ৬২ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির এলসি কমেছে ৩৫ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৯ শতাংশ। তবে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১০৩ শতাংশ।

আতিউর রহমান ও জায়েদ বখত দুজনই বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য বাড়তি জ্বালানির প্রয়োজন পড়ায় জ্বালানি তেল আমদানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। তুলনা করলে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে খাদ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৮৮ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি বেড়েছিল ৮৬ শতাংশ। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি বেড়েছিল ৬৯ শতাংশ। তবে এ সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ ৩ শতাংশের মতো কমেছিল।

গভর্নর বলেন, “রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জানুয়ারি মাসে ১২২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। এর আগে এক মাসে এতো রেমিটেন্স আর কখনো আসেনি। ” অন্য দিকে আমদানি ব্যয়ও কমে এসেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপও কমেছে।

এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকবে,” বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার সবচেয়ে কম বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৪০ পয়সা। ২৯ জানুয়ারি এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা ৮৪ পয়সায় লেনদেন হয়েছে ডলার। গভর্নর বলেন, জ্বালানি তেল, যন্ত্রাংশ, সার ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি মূল্য পরিশোধে ব্যয় বেশি হওয়ায় গত কয়েক মাসে বিদেশি মুদ্রার চাহিদাও ছিল বেশি।

এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যায়। স¤প্রতি এসব পণ্যের আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের যোগানও বেড়েছে। “ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কার্ব মার্কেটেও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে,” বলেন আতিউর। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। খবর: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.