আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌন সুড়সুড়ি দেবেন তো পর্ণ সাইট খুলুন, সংবাদপত্র কেনো?

প্রতারিত মনে হচ্ছে। সাংঘাতিক প্রতারিত লাগছে নিজেকে। আমি একজন সাংবাদিক, এটা ভাবতে প্রচন্ড লজ্জা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের সাংবাদিকতার কোর্স শেষ করেছি সাত বছর ধরে। ছাত্রাবস্থাতেই শুরু করেছি সাংবাদকিতা।

পাশ করার আগেই মোটামুটি পেশায় একটা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছি। কর্মজীবনে অগুনতি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে কাজ করতে এসেও, প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। শিখছি প্রতিনিয়ত। সবখানেই একটা কথা সবার আগে এসেছে।

সংবাদ লিখতে গিয়ে কখনো নিজের মতামত তুলে ধরবেন না। সংল্শিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলুন। সূত্র হিসেবে তাদের নাম উল্লেখ করুন। যার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিন। আমার কাজের খাতিরেই রোজ অসংখ্য কাগজে চোখ বুলাতে হয়।

সঙ্গত কারনেই বহুল প্রচারিত এবং জাতীয় দৈনিকগুলোর দিকেই থাকে নজর। কম প্রচলিত কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলোর দিকে নজর দেয়ার তেমন একটা সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই 'নতুন সময়' নামে একটি দৈনিকের অস্তিত্ব যে আছে বাংলাদেশে সেটাও জানা হয়ে ওঠেনি। জানলাম গত দুদিন ধরে চলা একটি গুজবের সূত্র ধরে। গুজবটি মঙ্গলবারের সংস্করণে অনেক জাতীয় দৈনিক প্রকাশ করলেও লেখার ক্ষেত্রে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করেছে।

কোনো কোনো পত্রিকা গুজবটিতে কানই দেয় নি। কোন প্রসঙ্গে বলতে চাইছি, নিশ্চয়ই এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গেছে আপনাদের কাছে। হ্যাঁ, আমি মেহেরুন রুনী-সাগর সারওয়ার দম্পতির হত্যাকান্ড প্রসঙ্গেই বলছি। এটা নিয়ে গত দুদিন ধরে চলা সবচেয়ে বহুল আলোচিত গল্পটি যে নিছকই গুজব তা মঙ্গলবার স্পষ্ট হয়েছে পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যেও। গল্পটি কি, সেটি বলতে আমার খুব খারাপ লাগছে।

আরেকটু সামনের দিকে এগোলেই আপনি জানতে পারবেন। নোংরা ওই কথাগুলো এখানে লিখতে কি-বোর্ডে আমার আঙুল সরছে না। যাইহোক, বলছিলাম নতুন সময় নিয়ে। এটি'র মাস্টহেডের (সাংবাদিকতার ভাষায় পত্রিকার নামসহ লোগোটিকে মাস্টহেড বলি আমরা) ঠিক ওপরে লেখা 'প্রতিদিনের মিড-ডে ট্যাবলয়েড'। বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পে নতুন সংযোজন নি:সন্দেহে।

তবে একটু খটকা লাগলো শ্লোগানটি দেখে। 'আমরা খবর বদলে দেই না'। কিসের সাথে যেন মিল খুঁজে পাচ্ছি! অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমের সাথে প্রতিহিংসা বশত: এই শ্লোগান নির্বাচন নয়তো? দৈনিক নতুন সময় বিশ্বিবদ্যালয় জীবনে আমাদের একটি হোমওয়ার্ক করতে হতো প্রায়ই। সংবাদপত্রের আধেয় বিশ্লেষণ। অর্থাত বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়বস্তু নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ বিশ্লেষণ।

আজ আমি এই দৈনিক নতুন সময় পত্রিকাটির ১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্করণটির আধেয় বিশ্লেষণ করবো। সংক্ষেপেই করবো। নিজের মতো করে করবো। ছাত্রজীবনের মতো করে নয়। একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টি দিয়ে।

যদিও সাধারণ পাঠকের দৃষ্টি নিয়ে আমার পক্ষে বিশ্লেষণ করাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে। নতুন সময় পত্রিকার ১৪ ডিসেম্বর সংখ্যার প্রথম পাতা পত্রিকাটির প্রধান সংবাদটি দেখুন। 'পরকীয়ার কারনেই খুন'। লিংকটি ওপরে শেয়ার করেছি। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

মনে হচ্ছে না, রিপোর্টার ইমরান আলী গাঁজা খেয়ে রিপোর্টটি লিখতে বসেছে? তার সূত্র কে? গোয়েন্দা সংস্থা! আমি যদি বলি, গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, 'ইমরান আলী একজন প্রথম শ্রেনীর গাঁজাখোর'? এরপর এটা ব্লগে তুলে দেই! তাহলে কি বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে গেলো? ইমরান আলী লিখেছেন : 'সূত্রমতে, তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তারা দুটি বিষয়ে ধারণা করছেন, এর একটি হলো .....' না। বাকিটা আমার মুখে আসছে না। যাহোক। উদ্ধৃত লিংক পড়ে জেনে নেবেন কি লিখেছেন তিনি। আমার প্রশ্ন: আমরা সবাই জানি, নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের একমাত্র সাক্ষী মেঘ।

যদিও বলা হচ্ছে মেঘকে অন্য রুমে আটকে রেখে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। আর বাকি দুজন সাক্ষী হলো হত্যাকারীরা। যারা এখনো ধরা পড়েনি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফ থেকেও। তাহলে: মিস্টার ইমরান আলী এতো নিখুঁত বর্ণনা কোথায় পেলেন? তার সূত্র কি স্বপ্নে পেয়েছে ঘটনার এই বিবরণ? তারপর বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় পত্রিকার সবচাইতে বড় রিপোর্টার ইমরান আলীকে সেই স্বপ্নের বিবরণ জানিয়েছে! পৃষ্ঠা ৫ এর একটি প্রতিবেদন লক্ষ্য করুণ। সংবাদদাতা তানিয়া মমতাজ লিখেছেন 'সাগর-রুনির প্রেম বিয়ে হতাশা দুরত্ব খুন অতপর...'।

একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। একটি সুস্থ্য সবল স্বাভাবিক মানুষের জীবনে যা ঘটে থাকে: রোমান্স, প্রেম, বিয়ে, ঝগড়া, খুনসুটি, ক্যারিয়ারের উত্থান পতন, বিদেশ যাত্রা, ফিরে আসা...রুনি-সাগরের জীবনেও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। তানিয়া মমতাজ তার অতি-দীর্ঘ ফিচারের চার কলাম জুড়ে সেই একান্ত ব্যক্তিগত অম্ল-মধুর জীবনের বিবরণ দিয়েছেন। নিহত দম্পতির বন্ধুদের বরাত দিয়েই লিখেছেন তিনি। এসব তথ্য সঠিক বলেই ধরে নিচ্ছি।

কিন্তু সেসব বন্ধুদের নাম কি? তথ্যগুলোতো এমন কোনো স্পর্শকাতর কিছু না যে তাদের সেই 'বন্ধুরা' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাকবেন! তারপরও যুক্তির খাতিরে মেনে নিচ্ছি, তানিয়া মমতাজ আপনি সঠিক। কিন্তু শেষটাতে এসে এ কি করলেন? সূত্রের বরাত দিয়ে আপনি লিখেছেন: '....পুলিশ ওই ঘটনা বের করতে পারলেই বের হবে কারা খুন করেছে সাংবাদিক দম্পতিকে। কারা এ ঘটনার জন্য দায়ী। সাগর ও রুনির সহকর্মী ও বন্ধুরা বলেছেন, সবার আগে প্রয়োজন রহস্যের কিনারা করা। কি সে রহস্য, যা কি-না মেঘের মতো একটি শিশুকে এতিম করে দিতে পারে।

' মিস মমতাজ, আমি অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার অফিসে কোনো সমন্বয় নেই। আপনি যেখানে এখনো রহস্য খুঁজছেন, সেখানে একই দিনের পত্রিকার প্রথম পাতার প্রধান খবরে আপনারই এক সহকর্মী রহস্য উম্মোচন করে দিয়ে বলছেন, 'পরকীয়ার কারনেই খুন'। তিনি ঘটনার সময়কার নিখুঁত বর্ণনাও দিচ্ছেন। তানিয়া মমতাজের ফিচার এই পর্যায়ে এসে বিষয়বস্তু থেকে একটু দূরে সরে যাচ্ছি। নতুন সময়ের ১৪ ফেব্রুয়ারি সংস্করণের শেষ পৃষ্ঠার দিকে লক্ষ্য করুন।

একেবারে নিচে বামের কলাম। 'মিলনের চারটি গোপন সূত্র'। বাহ! এই না হলে একটা রুচিশীল দৈনিক। নতুন সময়: মিলনের চারটি গোপণ সূত্র সম্পদাক ও প্রকাশক নাজমুল হক শ্যামল। আপনাকে জানাই বিনম্র অভিনন্দন।

দারুন একটা পত্রিকা বের করেছেন আপনি! তবে, আপনার এই পত্রিকাটি দেখার পর থেকে সাংঘাতিক প্রতারিত লাগছে নিজেকে। আমি একজন সাংবাদিক, এটা ভাবতে প্রচন্ড লজ্জা হচ্ছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।