আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পি.আর. প্ল্যাসিড ভালবাসা বা ভালবাসি। কঠিন একটি শব্দ, যা সহজে যায় বলা। কঠিন এই শব্দের কার্য্ত সফলতা আসে অনেক কাঠ খড়ি পুড়িয়ে। শব্দটি অনেকে সহজে বলে ফেলেএ আমি এখনও কাউকে বলতে পারিনি। শুনেছি বহুবার। শব্দটির সাথে স্কুল জীবন থেকেই আমি পরিচিত। তারপরেও, বাস্তব ভা

আমি একজন সাংবাদিক পি.আর. প্ল্যাসিড ভালবাসা বা ভালবাসি। কঠিন একটি শব্দ, যা সহজে যায় বলা। কঠিন এই শব্দের কার্য্ত সফলতা আসে অনেক কাঠ খড়ি পুড়িয়ে। শব্দটি অনেকে সহজে বলে ফেলেএ আমি এখনও কাউকে বলতে পারিনি। শুনেছি বহুবার।

শব্দটির সাথে স্কুল জীবন থেকেই আমি পরিচিত। তারপরেও, বাস্তব ভালবাসার স্বাদ পেয়েছি জাপানে এসে। বলতে গেলে সাধারণ যে সময়ে বা বয়সে পাবার কথা ছিল, তারও অনেক পরে ভালবাসার স্বাদ পেয়েছি আমি। তবে ভালবাসার যে আনন্দ তা উপভোগ করার আগেই ভালবাসার জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি। বলা যায়, জাপান আসার উদ্দেশ্যে যখন দেশ ত্যাগ করি, তখন একবার এবং জাপানে এসে টাকা রোজগার করে স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশে ফিরে যাবার পরিকল্পনা করছিলাম যখন, তখন আরেকবার এই ভালবাসার জন্য কষ্ট পেয়েছি।

এই ভালবাসাবাসি নিয়ে একটা কথা আছে, কেউ করলে লীলা খেলা, আর আমরা করলে হয় ----। বিষয়টি এখন কারো কাছে গোপন করার আর কিছু নেই। ভালবাসার জন্য কোন বয়স নির্ধারণ করা নেই। ইদানীং শোনা যায়, দশ বছরের ছেলে মেয়েরাও নাকী প্রেম করে। আবার ৭০/ ৮০ বছরের বুড়োরাও প্রেম করে।

এই প্রেমের মাঝে আমরা পবিত্রতা আর অপবিত্রতা খুঁজতে যাবো না। ভালবাসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি কাজ করে, তা হল মন। দুটি মন এক হলেই ভালবাসার জন্ম হয়। আর দু’টি মনের এই এক হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পর্যায়কে ভাললাগাই বলতে পারি। আর মনের এই মিল হবার পর তার যে প্রকাশ, তাতেই পূর্ণতা।

সেটা হয় শরীরে। মনেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে শরীরে। এটাতেই কেউ কেউ পবিত্রতা আর অপবিত্রতা খুঁজে। পবিত্রতা আর অপবিত্রতা দিয়ে ভালবাসাকে বিভাজন করার চেষ্টা করবো না। সহজ সরল ভাষায়, আমার কাছে যা মনে হয়, একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসে, আবার একটি মেয়েও একটি ছেলেকে ভালবাসে একই ভাবে।

আমার বেলায় এপর্যন্ত অতিক্রম করে আসা বয়সে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্কুল জীবনে আমার ভালবাসাবাসি ছিল মুখে মুখে, সেই ভালবাসা কখনও মন পর্যন্ত গড়ায়নি। শরীর পর্যন্ততো প্রশ্নই আসে না। ভালবাসার কথা জানাতে গিয়ে দু’একবার যে চিঠি লেখা হয়নি তা বলবো না। সেই বয়সে আমার ভাললাগা আর ভালবাসা সেই চিঠি পর্যন্তই ছিল সীমাবদ্ধ।

স্কুল জীবন পেরিয়ে যখন কলেজ জীবনে পা রাখলাম, তখন বন্ধুবান্ধব আর খেলাধূলাতেই সময় কাটাতাম বেশী। আমি ছিলাম নটরডেম কলেজের ছাত্র। নটরডেম কলেজে পড়া মানে প্রতিদিনই পরীক্ষা। মিশনারী স্কুলে পড়াশোনা করার ফলে কুইজ এর সাথে পরিচয় ঘটেছে আগেই। সুতরাং পড়াশোনার চাপের জন্য বেগ পেতে হয়নি আমার কলেজে এসে।

কলেজে এসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দ করেছি খুব। ভালবাসাবাসির ধারে কাছে যেতে চাইনি কখনও। এরই মধ্যে পাশের বাসার এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আমাদের বাসায় খেলতে এসে প্রায়ই আমার ঘরে ঢুকে দুষ্টামী করত। ছোট ছিল বলে কখনও কিছু মনে করতাম না, ওর দুষ্টামীতে বাধাও দিতাম না। একদিন আবিস্কার করলাম, আমার একাউন্টিং খাতার পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে, ”আমি তোমাকে ভালবাসি”।

খাতার পাতায় পাতায় এত বেশী ভালবাসি শব্দটা লেখা এবং এতবার হার্ট এর ছবি আঁকা দেখে ভাবছিলাম কে লিখতে পারে (?)। তাছাড়া সন্দেহ করার মত কাউকে আমার রুমে কখনও আসতে দেখিনি। এমনকি আমি কখনও চিন্তাও করতে পারিনি, এত ছোট কোন মেয়ে এই ভাবে এই ভালবাসার কথা লিখতে পারে। কয়েকমাস পর যখন আমি বিষয়টি আবিস্কার করলাম, তার দু’দিন পর ওরা আমাদের এলাকা ছেড়ে অনেক দূরে বাসা শিফট করে চলে গেছে। এর কিছুদিন পর আরও এক মজার ঘটনা আবিস্কার করলাম।

তখন সংসদ ভবনের কাজ চলছিল। প্রতিদিন ভোরে আমরা কয়েকবন্ধু সংসদ ভবন মাঠে লেকের ধারে এক সাথে দৌঁড়াতে বা মর্নিং ওয়াক করতে যেতাম। অনেক সময় ফুটবল নিয়ে যেতাম অন্যদের সাথে খেলতে। এত ভোরে আশে পাশে কাউকে উঠতে দেখা যেত না। বাসা আমাদের ছিল তেজগাঁও,মনিপুরীপাড়াতে।

একদিন বাড়ির সামনেরর বড় গেইট খুলে সামনে রাস্তায় পা বাড়াতেই পায়ের কাছে একটা ভাজ করা কাগজ এসে পড়ল। আমি আশে পাশে তাকালাম। আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পাইনি। ভয়ে ভয়ে কাগজটি হাতে নিয়ে না পড়েই পকেটে ভরে সাইকেলে চড়ে চলে গেলাম লেকের পার। গিয়ে দেখি অন্য বন্ধুরা সবাই এসে হাজির।

বন্ধুরা গায়ের কাপড় বদলে রেডী হয়েছে, আর আমি ওদের থেকে দূরে সরে একা একদিকে দাঁড়িয়ে ভাজ করা কাগজটি খুলে পড়লাম। পড়ে একা একাই হাসছি। আমার হাসি তখন দেখে কে। কাউকে আর বলতে পারিনি আমার এমন পাগলের মত হাসির কারণ। যে কাগজটি কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম, সেই কাগজে কারো কোন নাম ছিল না।

হাতের লেখা ছিল খুবই বিশ্রী। বড় এক টুকরা কাগজের মধ্যে লেখা ছিল শুধু, ”আমি তোমাকে ভালবাসি”, এবং ইংরেজীতে ”আই লাভ ইউ”। চিঠি পড়ে আমার ভিতর হাসি ছাড়া আর কোন আবেগ কাজ করেনি তখন। যে মেয়েটি আমাকে ভালবাসার কথা লিখে ঢিল দিয়ে আমার পায়ের কাছে কাগজটি পাঠিয়েছিল, সে যদি তার দেওয়া কাগজটি পড়ার সময় আমার চেহারা দেখতো বা কাগজটি পড়ার মুহুর্তর অবস্থা দেখতে পেত, তাহল মনে হয় পাগলই বলত না শুধু আমাকে, বাকী জীবনে হয়তো আর কাউকে ভালবাসার কথা লিখে এভাবে কাগজ দিত না। এত কিছু হওয়া সত্বেও, তখন পর্যন্ত আমার মনে ভালবাসার স্থান করতে দেইনি।

এরপর থেকে বলা যায় এই চিঠির বিষয়টি ছিল নিয়মিত। একদিন একটি ছেলে আমাকে গোপনে কিছু কথা বলতে চাইল। ছেলেটি আমার সাথে কথা বলার জন্য আমাকে এমন যায়গাতে নিয়ে গেল, আমি ভয়ে জ্ঞান হারানোর অবস্থা। অনেক ভয়ে ভয়ে ওর পিছু পিছু গেলাম একটি আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এর ভিতর। যেই ছেলেটি আমাকে সেখানে নিয়ে গেল, সে আসলে ভয় পাওয়ার মতই ছিল।

যাই হউক, সেখানে আমাকে নিয়ে যাবার পর বলতে শুরু করল, ওই মিয়া এত বোকা কেন তুমি। ডেইলি যে চিঠি পড়, তা বুঝতে পার না, কে দেয়? ওর কথা শুনে তখন আমি কি আর দুনিয়ায় আছি? কি উত্তর দেবো, ভাবছি। নিজে থেকেই যা বলার বলল সব কথা। আমার ভয় ভাঙ্গিয়ে সাহস বাড়ালো সে। একদিন ওই ছেলেটি আমাকে সিনেমার টিকিট ধরিয়ে দিল দুইটি।

টিকিট দিয়ে সময় বলে দিয়ে বলল, মেয়েটি ফার্মগেইট ছন্দ হলের সামনে থাকবে, তুমি ঠিক সময়ে চলে যেয়ো। সেদিন সিনেমার টিকিট নেয়ে আমি গেলাম। বলতে পারি মেয়ের আগ্রহেই ছেলেটি আমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে গেল ছন্দ হলে। মেয়েটির পড়নে ছিল স্কুল ড্রেস। স্কুল ড্রেস দেখে আমাদেরতো কোন প্রকারেই যেন ভিতরে ঢুকতেই দিবে না, এমন অবস্থা করছে।

তখন লজ্জা আর ভয় কাজ করছিল আমার ভিতর। পরলাম বিপদে। বুঝতে পারলাম হট্টোগোল বাধবে স্কুলের মেয়ে ভাগিয়ে এনেছি বলে। তখন কাঠাল বাগান আর ফার্মগেইটের অনেকের সাথেই আমার চলা ফেরা ছিল। জানি, ওরা যদি জানতে পারে আমার এই অবস্থা, তা হলেতো খবরই আছে।

কিন্তু সে পর্যন্ত আর যেতে হয়নি। ম্যানেজার চলে আসলেন চিৎকার আর চেচামেচি শুনে। ম্যানেজার আমকে দেখে কোন কথা আর বলেননি, কাউকে বলতেও দেননি। স্পেশাল কেয়ারে আমাদের ভিতরে নিয়ে বসিয়ে দিলেন। ছবি দেখলাম।

ছবি কি আর দেখা হয়? কান গরম হয়ে গেল। কারণ, আমাদের গার্ড দিচ্ছিল সেই ছেলেটি। এটা আমার জন্য সাহসের না হয়ে, ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটির সাথে আমার দীর্ঘদিন এই টিঠি আর সিনেমাতে সম্পর্ক থেমে ছিল। একসময় আমি এলাকা ছাড়লাম।

তখন আমি এইচ.এস.সি. কেন্ডিডেট। কোন যোগাযোগ আর করা হয়নি ওদের সাথে। কয়েকমাস পর পরীক্ষাও শেষ হল। মন দিলাম অন্য দিকে। কিসের প্রেম আর কিসের কি।

সমাজ সেবা, সংঘ সমিতির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম সারা দিনরাত। তার চেয়ে বেশী ব্যস্ত ছিলাম টিউশনী নিয়ে। এরপর একবার ইন্ডিয়াতে গেলাম এক সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে দেখা পেলাম আধুনিক এক ভালাবাসার। কিন্তু সেটাও আমাকে টলাতে পারেনি।

কারণ, আমার টার্গেট ছিল অন্য দিকে। ’৮৯এ নাগরী সেন্ট নিকোলাস হাই স্কুলের হোস্টেল মাঠে একবার এক সংস্কৃকিত অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলাম। হাজারের মত দর্শক শ্রেুাতা বসা সামনে। প্রধান অতিথি ছিলেন ডাকসু-র ভিপি আক্তারুজ্জামান আর বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজ বংশী। আমি ছিলাম আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

সারাদিনের অনুষ্ঠান, এর এক পর্যায় বাইরে গেলাম হাটতে। তখন অন্যরা একটি মেয়েকে বসালো আমার স্থানে। এসে দেখি সুন্দরী একটি মেয়ে আমার চেয়ারে। সে ঘোষণা করছে। আমি মেয়েটিকে তার নাম জিজ্ঞেস করার আগেই পাশে বসেই বললাম, এই মেয়ে তুমি কি কাউকে ভালবাস? ভাল না বাসলে আমার কথা ভাবতে পারো।

বলেই আবার বললাম, যদি বিয়ে করতে চাও তাতেও রাজী। আমার কথা শুনে মেয়েটি লাল হয়ে গিয়েছিল রাগে। এ পর্যন্তই। অনেকদিনপর মেয়েটির সাথে আমার আবার দেখা হল ফার্মগেইটে। কথা হল আমাদের।

সেদিনই ওর হোস্টেলে গেলাম। ও থাকতো রাজাবাজার মেয়েদের এক হোষ্টেলে। এর পর থেকেতো হোস্টেলে যাওয়া ছিল আমার নিয়মিত কাজ। ১৯৯১ এ এসে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হল। জীবনের মোড় ঘুরে গেল সে সাথে আমারও।

জীবনের প্রতি মায়া শেষ হয়ে গেল যেন অনেকটা বিভিন্ন কারণে। মেয়েটিকে বলেছিলাম, আমি কখনও বলবোনা, ”তোমাকে ভালবাসি”। সময়ই বলবে আসলে আমাদের গন্তব্য কি। এরই মধ্যে চলে এলাম জাপান। আসার সময় এয়ারপোর্টে মেয়েটি আমাকে বিদায় জানাতে আসলে বলে এসেছিলাম, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, ’৯৫এ দেশে ফিরে আসবো।

ততদিন থাকতে পারলে আমাদের বিয়ে হবে। তখন এই কথা কোন ভালবাসা থেকে বলা হয়নি। সেটা ছিল আমার দায়িত্ব বোধ থেকে। এরপর জাপান আসার পর আমরা চিঠি লেখায় মনোযোগী হলাম। যে সময়ের কথা বলছি, তখন কম্পিউটার চোখে দেখাতো দূরের কথা, শুনিওনি এই কম্পিউটারের কথা।

ফোনও এত সহজ লভ্য ছিল না। চিঠিই ছিল আমাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা বা মাধ্যম। একপর্যায় সময়ের বাস্তবতার কারণে আমরা দু’জন দু’দিকে হারিয়ে গেলাম। বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটি চলে গেলো শ্বশুরবাড়ী।

আর আমি ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে বিয়ারের মধ্যে ডুবে গেলাম। সেটা ছিল ৯৫ সন। এরপর থেকে আমার মনে আর কোন দেশী স্টাইলে ভালবাসার স্থান দেইনি। যা ছিল, তার প্রত্যেকটি জাপানীজ স্টাইলে বা ইউরোপিয়ান স্টাইলে। শুরু হল আমার ভিন্ন এক জীবন।

জাপানে আমাদের যতই দিন যায়, জাপান হয়ে উঠল আমাদের জন্য ততই হয়ে উঠতে থাকে কঠিন এক জায়গা। ভিসা না থাকলে যে কোন সময় পুলিশ বা ইমিগ্রেশনের হাতে ধরা পরতে পারি। পুলিশ ধরে পাঠিয়ে দিবে দেশে। আ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দেশটা মনে হত আমার কাছে জনশূন্য। কারো কথাই শুনতে ইচ্ছা হত না।

বাধ্য হয়ে বিয়ে করলাম জাপানী এক মেয়েকে। বিয়ে করার পর মনে হল, যা হারিয়েছি তার চেয়ে ভাল কিছু যেন আমি পেয়েছি। ধন্য হলাম। ইদানীং লেখালেখি করতে শুরু করেছি আবার সেই ছাত্র জীবনের মত করে। এই লেখালেখির সুবাদে পরিচয় হল পাখির সাথে।

পাখি আমার একলা পাখি। চারিদিকের কিচির মিচির সব কিছুকে পিছনে ফেলে সারা দিলাম পাখির ডাকে। পাখি প্রতিদিন নেটে এসে বাজ দিয়ে তার উপস্থিতির কথা জানান দেয় ইয়াহু ম্যাসেনজারে। পাখি আমার মনে পুরো দিনের সময় জুড়ে থাকে। এদিক সেদিক উড়ে বেড়ায় হয়তো সে।

সে আমার কথা এত ভাবে কিনা জানি না। তবে আমার সমস্ত মন জুড়ে আছে এখন পাখি। এর নাম যদি ভালবাসা হয় তাহলে এই প্রথম ভিতর থেকে আমি বলতে পারি আমি পাখিকে ভালবাসি। হা হা হা। পাখির সাথে কম্পিটিশন করছে এখন নতুন এক বিষয়।

তা হল পৃথিবীতে অনেক দাম্পত্য নষ্ট কারী সামাজিক সাইট ”ফেইসবুক”। এই ফেইসবুক আমার মাথা খেয়ে ফেলেছে বলা যায়। বার্তমান সময়ের আলোচিত এই ফেইসবুক আমার মত অনেকেরই উপকারে এসেছে পাখির সন্ধান পেতে। আবার পাখিদের হারানোর কাজেও ভূমিকা রেখেছে। ফেইসবুকের কারণে আমার ক্ষতি হয় প্রচুর, উপকারও হয় কিছু।

এই উপকারটুকুর জন্যই ক্ষতিটা মেনে নেই। অনেক পাখির দেখা পাই ফেইসবুকে। তবে অনেক পাখির দেখা পেলেও ফেইসবুকের কারণে আমি ভালবাসার আর কোন পাখির দেখা পাবো কিনা জানি না, তবে পাখিকে যে হারাবো তা কেন জানি মনে হয় খুব। কারণ পাখিও যে ফেইসবুকের প্রতি আসক্ত এখন। সর্বশেষ আমার ভালবাসাবাসির কি হয় এই ফেইসবুকের বদৌলতে, তা দেখা আমার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

পি.আর. প্ল্যাসিড ভালবাসা বা ভালবাসি। কঠিন একটি শব্দ, যা সহজে যায় বলা। কঠিন এই শব্দের কার্য্ত সফলতা আসে অনেক কাঠ খড়ি পুড়িয়ে। শব্দটি অনেকে সহজে বলে ফেলেএ আমি এখনও কাউকে বলতে পারিনি। শুনেছি বহুবার।

শব্দটির সাথে স্কুল জীবন থেকেই আমি পরিচিত। তারপরেও, বাস্তব ভালবাসার স্বাদ পেয়েছি জাপানে এসে। বলতে গেলে সাধারণ যে সময়ে বা বয়সে পাবার কথা ছিল, তারও অনেক পরে ভালবাসার স্বাদ পেয়েছি আমি। তবে ভালবাসার যে আনন্দ তা উপভোগ করার আগেই ভালবাসার জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি। বলা যায়, জাপান আসার উদ্দেশ্যে যখন দেশ ত্যাগ করি, তখন একবার এবং জাপানে এসে টাকা রোজগার করে স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশে ফিরে যাবার পরিকল্পনা করছিলাম যখন, তখন আরেকবার এই ভালবাসার জন্য কষ্ট পেয়েছি।

এই ভালবাসাবাসি নিয়ে একটা কথা আছে, কেউ করলে লীলা খেলা, আর আমরা করলে হয় ----। বিষয়টি এখন কারো কাছে গোপন করার আর কিছু নেই। ভালবাসার জন্য কোন বয়স নির্ধারণ করা নেই। ইদানীং শোনা যায়, দশ বছরের ছেলে মেয়েরাও নাকী প্রেম করে। আবার ৭০/ ৮০ বছরের বুড়োরাও প্রেম করে।

এই প্রেমের মাঝে আমরা পবিত্রতা আর অপবিত্রতা খুঁজতে যাবো না। ভালবাসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি কাজ করে, তা হল মন। দুটি মন এক হলেই ভালবাসার জন্ম হয়। আর দু’টি মনের এই এক হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পর্যায়কে ভাললাগাই বলতে পারি। আর মনের এই মিল হবার পর তার যে প্রকাশ, তাতেই পূর্ণতা।

সেটা হয় শরীরে। মনেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে শরীরে। এটাতেই কেউ কেউ পবিত্রতা আর অপবিত্রতা খুঁজে। পবিত্রতা আর অপবিত্রতা দিয়ে ভালবাসাকে বিভাজন করার চেষ্টা করবো না। সহজ সরল ভাষায়, আমার কাছে যা মনে হয়, একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসে, আবার একটি মেয়েও একটি ছেলেকে ভালবাসে একই ভাবে।

আমার বেলায় এপর্যন্ত অতিক্রম করে আসা বয়সে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্কুল জীবনে আমার ভালবাসাবাসি ছিল মুখে মুখে, সেই ভালবাসা কখনও মন পর্যন্ত গড়ায়নি। শরীর পর্যন্ততো প্রশ্নই আসে না। ভালবাসার কথা জানাতে গিয়ে দু’একবার যে চিঠি লেখা হয়নি তা বলবো না। সেই বয়সে আমার ভাললাগা আর ভালবাসা সেই চিঠি পর্যন্তই ছিল সীমাবদ্ধ।

স্কুল জীবন পেরিয়ে যখন কলেজ জীবনে পা রাখলাম, তখন বন্ধুবান্ধব আর খেলাধূলাতেই সময় কাটাতাম বেশী। আমি ছিলাম নটরডেম কলেজের ছাত্র। নটরডেম কলেজে পড়া মানে প্রতিদিনই পরীক্ষা। মিশনারী স্কুলে পড়াশোনা করার ফলে কুইজ এর সাথে পরিচয় ঘটেছে আগেই। সুতরাং পড়াশোনার চাপের জন্য বেগ পেতে হয়নি আমার কলেজে এসে।

কলেজে এসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দ করেছি খুব। ভালবাসাবাসির ধারে কাছে যেতে চাইনি কখনও। এরই মধ্যে পাশের বাসার এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আমাদের বাসায় খেলতে এসে প্রায়ই আমার ঘরে ঢুকে দুষ্টামী করত। ছোট ছিল বলে কখনও কিছু মনে করতাম না, ওর দুষ্টামীতে বাধাও দিতাম না। একদিন আবিস্কার করলাম, আমার একাউন্টিং খাতার পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে, ”আমি তোমাকে ভালবাসি”।

খাতার পাতায় পাতায় এত বেশী ভালবাসি শব্দটা লেখা এবং এতবার হার্ট এর ছবি আঁকা দেখে ভাবছিলাম কে লিখতে পারে (?)। তাছাড়া সন্দেহ করার মত কাউকে আমার রুমে কখনও আসতে দেখিনি। এমনকি আমি কখনও চিন্তাও করতে পারিনি, এত ছোট কোন মেয়ে এই ভাবে এই ভালবাসার কথা লিখতে পারে। কয়েকমাস পর যখন আমি বিষয়টি আবিস্কার করলাম, তার দু’দিন পর ওরা আমাদের এলাকা ছেড়ে অনেক দূরে বাসা শিফট করে চলে গেছে। এর কিছুদিন পর আরও এক মজার ঘটনা আবিস্কার করলাম।

তখন সংসদ ভবনের কাজ চলছিল। প্রতিদিন ভোরে আমরা কয়েকবন্ধু সংসদ ভবন মাঠে লেকের ধারে এক সাথে দৌঁড়াতে বা মর্নিং ওয়াক করতে যেতাম। অনেক সময় ফুটবল নিয়ে যেতাম অন্যদের সাথে খেলতে। এত ভোরে আশে পাশে কাউকে উঠতে দেখা যেত না। বাসা আমাদের ছিল তেজগাঁও,মনিপুরীপাড়াতে।

একদিন বাড়ির সামনেরর বড় গেইট খুলে সামনে রাস্তায় পা বাড়াতেই পায়ের কাছে একটা ভাজ করা কাগজ এসে পড়ল। আমি আশে পাশে তাকালাম। আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পাইনি। ভয়ে ভয়ে কাগজটি হাতে নিয়ে না পড়েই পকেটে ভরে সাইকেলে চড়ে চলে গেলাম লেকের পার। গিয়ে দেখি অন্য বন্ধুরা সবাই এসে হাজির।

বন্ধুরা গায়ের কাপড় বদলে রেডী হয়েছে, আর আমি ওদের থেকে দূরে সরে একা একদিকে দাঁড়িয়ে ভাজ করা কাগজটি খুলে পড়লাম। পড়ে একা একাই হাসছি। আমার হাসি তখন দেখে কে। কাউকে আর বলতে পারিনি আমার এমন পাগলের মত হাসির কারণ। যে কাগজটি কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম, সেই কাগজে কারো কোন নাম ছিল না।

হাতের লেখা ছিল খুবই বিশ্রী। বড় এক টুকরা কাগজের মধ্যে লেখা ছিল শুধু, ”আমি তোমাকে ভালবাসি”, এবং ইংরেজীতে ”আই লাভ ইউ”। চিঠি পড়ে আমার ভিতর হাসি ছাড়া আর কোন আবেগ কাজ করেনি তখন। যে মেয়েটি আমাকে ভালবাসার কথা লিখে ঢিল দিয়ে আমার পায়ের কাছে কাগজটি পাঠিয়েছিল, সে যদি তার দেওয়া কাগজটি পড়ার সময় আমার চেহারা দেখতো বা কাগজটি পড়ার মুহুর্তর অবস্থা দেখতে পেত, তাহল মনে হয় পাগলই বলত না শুধু আমাকে, বাকী জীবনে হয়তো আর কাউকে ভালবাসার কথা লিখে এভাবে কাগজ দিত না। এত কিছু হওয়া সত্বেও, তখন পর্যন্ত আমার মনে ভালবাসার স্থান করতে দেইনি।

এরপর থেকে বলা যায় এই চিঠির বিষয়টি ছিল নিয়মিত। একদিন একটি ছেলে আমাকে গোপনে কিছু কথা বলতে চাইল। ছেলেটি আমার সাথে কথা বলার জন্য আমাকে এমন যায়গাতে নিয়ে গেল, আমি ভয়ে জ্ঞান হারানোর অবস্থা। অনেক ভয়ে ভয়ে ওর পিছু পিছু গেলাম একটি আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এর ভিতর। যেই ছেলেটি আমাকে সেখানে নিয়ে গেল, সে আসলে ভয় পাওয়ার মতই ছিল।

যাই হউক, সেখানে আমাকে নিয়ে যাবার পর বলতে শুরু করল, ওই মিয়া এত বোকা কেন তুমি। ডেইলি যে চিঠি পড়, তা বুঝতে পার না, কে দেয়? ওর কথা শুনে তখন আমি কি আর দুনিয়ায় আছি? কি উত্তর দেবো, ভাবছি। নিজে থেকেই যা বলার বলল সব কথা। আমার ভয় ভাঙ্গিয়ে সাহস বাড়ালো সে। একদিন ওই ছেলেটি আমাকে সিনেমার টিকিট ধরিয়ে দিল দুইটি।

টিকিট দিয়ে সময় বলে দিয়ে বলল, মেয়েটি ফার্মগেইট ছন্দ হলের সামনে থাকবে, তুমি ঠিক সময়ে চলে যেয়ো। সেদিন সিনেমার টিকিট নেয়ে আমি গেলাম। বলতে পারি মেয়ের আগ্রহেই ছেলেটি আমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে গেল ছন্দ হলে। মেয়েটির পড়নে ছিল স্কুল ড্রেস। স্কুল ড্রেস দেখে আমাদেরতো কোন প্রকারেই যেন ভিতরে ঢুকতেই দিবে না, এমন অবস্থা করছে।

তখন লজ্জা আর ভয় কাজ করছিল আমার ভিতর। পরলাম বিপদে। বুঝতে পারলাম হট্টোগোল বাধবে স্কুলের মেয়ে ভাগিয়ে এনেছি বলে। তখন কাঠাল বাগান আর ফার্মগেইটের অনেকের সাথেই আমার চলা ফেরা ছিল। জানি, ওরা যদি জানতে পারে আমার এই অবস্থা, তা হলেতো খবরই আছে।

কিন্তু সে পর্যন্ত আর যেতে হয়নি। ম্যানেজার চলে আসলেন চিৎকার আর চেচামেচি শুনে। ম্যানেজার আমকে দেখে কোন কথা আর বলেননি, কাউকে বলতেও দেননি। স্পেশাল কেয়ারে আমাদের ভিতরে নিয়ে বসিয়ে দিলেন। ছবি দেখলাম।

ছবি কি আর দেখা হয়? কান গরম হয়ে গেল। কারণ, আমাদের গার্ড দিচ্ছিল সেই ছেলেটি। এটা আমার জন্য সাহসের না হয়ে, ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটির সাথে আমার দীর্ঘদিন এই টিঠি আর সিনেমাতে সম্পর্ক থেমে ছিল। একসময় আমি এলাকা ছাড়লাম।

তখন আমি এইচ.এস.সি. কেন্ডিডেট। কোন যোগাযোগ আর করা হয়নি ওদের সাথে। কয়েকমাস পর পরীক্ষাও শেষ হল। মন দিলাম অন্য দিকে। কিসের প্রেম আর কিসের কি।

সমাজ সেবা, সংঘ সমিতির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম সারা দিনরাত। তার চেয়ে বেশী ব্যস্ত ছিলাম টিউশনী নিয়ে। এরপর একবার ইন্ডিয়াতে গেলাম এক সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে দেখা পেলাম আধুনিক এক ভালাবাসার। কিন্তু সেটাও আমাকে টলাতে পারেনি।

কারণ, আমার টার্গেট ছিল অন্য দিকে। ’৮৯এ নাগরী সেন্ট নিকোলাস হাই স্কুলের হোস্টেল মাঠে একবার এক সংস্কৃকিত অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলাম। হাজারের মত দর্শক শ্রেুাতা বসা সামনে। প্রধান অতিথি ছিলেন ডাকসু-র ভিপি আক্তারুজ্জামান আর বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজ বংশী। আমি ছিলাম আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

সারাদিনের অনুষ্ঠান, এর এক পর্যায় বাইরে গেলাম হাটতে। তখন অন্যরা একটি মেয়েকে বসালো আমার স্থানে। এসে দেখি সুন্দরী একটি মেয়ে আমার চেয়ারে। সে ঘোষণা করছে। আমি মেয়েটিকে তার নাম জিজ্ঞেস করার আগেই পাশে বসেই বললাম, এই মেয়ে তুমি কি কাউকে ভালবাস? ভাল না বাসলে আমার কথা ভাবতে পারো।

বলেই আবার বললাম, যদি বিয়ে করতে চাও তাতেও রাজী। আমার কথা শুনে মেয়েটি লাল হয়ে গিয়েছিল রাগে। এ পর্যন্তই। অনেকদিনপর মেয়েটির সাথে আমার আবার দেখা হল ফার্মগেইটে। কথা হল আমাদের।

সেদিনই ওর হোস্টেলে গেলাম। ও থাকতো রাজাবাজার মেয়েদের এক হোষ্টেলে। এর পর থেকেতো হোস্টেলে যাওয়া ছিল আমার নিয়মিত কাজ। ১৯৯১ এ এসে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হল। জীবনের মোড় ঘুরে গেল সে সাথে আমারও।

জীবনের প্রতি মায়া শেষ হয়ে গেল যেন অনেকটা বিভিন্ন কারণে। মেয়েটিকে বলেছিলাম, আমি কখনও বলবোনা, ”তোমাকে ভালবাসি”। সময়ই বলবে আসলে আমাদের গন্তব্য কি। এরই মধ্যে চলে এলাম জাপান। আসার সময় এয়ারপোর্টে মেয়েটি আমাকে বিদায় জানাতে আসলে বলে এসেছিলাম, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, ’৯৫এ দেশে ফিরে আসবো।

ততদিন থাকতে পারলে আমাদের বিয়ে হবে। তখন এই কথা কোন ভালবাসা থেকে বলা হয়নি। সেটা ছিল আমার দায়িত্ব বোধ থেকে। এরপর জাপান আসার পর আমরা চিঠি লেখায় মনোযোগী হলাম। যে সময়ের কথা বলছি, তখন কম্পিউটার চোখে দেখাতো দূরের কথা, শুনিওনি এই কম্পিউটারের কথা।

ফোনও এত সহজ লভ্য ছিল না। চিঠিই ছিল আমাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা বা মাধ্যম। একপর্যায় সময়ের বাস্তবতার কারণে আমরা দু’জন দু’দিকে হারিয়ে গেলাম। বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটি চলে গেলো শ্বশুরবাড়ী।

আর আমি ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে বিয়ারের মধ্যে ডুবে গেলাম। সেটা ছিল ৯৫ সন। এরপর থেকে আমার মনে আর কোন দেশী স্টাইলে ভালবাসার স্থান দেইনি। যা ছিল, তার প্রত্যেকটি জাপানীজ স্টাইলে বা ইউরোপিয়ান স্টাইলে। শুরু হল আমার ভিন্ন এক জীবন।

জাপানে আমাদের যতই দিন যায়, জাপান হয়ে উঠল আমাদের জন্য ততই হয়ে উঠতে থাকে কঠিন এক জায়গা। ভিসা না থাকলে যে কোন সময় পুলিশ বা ইমিগ্রেশনের হাতে ধরা পরতে পারি। পুলিশ ধরে পাঠিয়ে দিবে দেশে। আ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দেশটা মনে হত আমার কাছে জনশূন্য। কারো কথাই শুনতে ইচ্ছা হত না।

বাধ্য হয়ে বিয়ে করলাম জাপানী এক মেয়েকে। বিয়ে করার পর মনে হল, যা হারিয়েছি তার চেয়ে ভাল কিছু যেন আমি পেয়েছি। ধন্য হলাম। ইদানীং লেখালেখি করতে শুরু করেছি আবার সেই ছাত্র জীবনের মত করে। এই লেখালেখির সুবাদে পরিচয় হল পাখির সাথে।

পাখি আমার একলা পাখি। চারিদিকের কিচির মিচির সব কিছুকে পিছনে ফেলে সারা দিলাম পাখির ডাকে। পাখি প্রতিদিন নেটে এসে বাজ দিয়ে তার উপস্থিতির কথা জানান দেয় ইয়াহু ম্যাসেনজারে। পাখি আমার মনে পুরো দিনের সময় জুড়ে থাকে। এদিক সেদিক উড়ে বেড়ায় হয়তো সে।

সে আমার কথা এত ভাবে কিনা জানি না। তবে আমার সমস্ত মন জুড়ে আছে এখন পাখি। এর নাম যদি ভালবাসা হয় তাহলে এই প্রথম ভিতর থেকে আমি বলতে পারি আমি পাখিকে ভালবাসি। হা হা হা। পাখির সাথে কম্পিটিশন করছে এখন নতুন এক বিষয়।

তা হল পৃথিবীতে অনেক দাম্পত্য নষ্ট কারী সামাজিক সাইট ”ফেইসবুক”। এই ফেইসবুক আমার মাথা খেয়ে ফেলেছে বলা যায়। বার্তমান সময়ের আলোচিত এই ফেইসবুক আমার মত অনেকেরই উপকারে এসেছে পাখির সন্ধান পেতে। আবার পাখিদের হারানোর কাজেও ভূমিকা রেখেছে। ফেইসবুকের কারণে আমার ক্ষতি হয় প্রচুর, উপকারও হয় কিছু।

এই উপকারটুকুর জন্যই ক্ষতিটা মেনে নেই। অনেক পাখির দেখা পাই ফেইসবুকে। তবে অনেক পাখির দেখা পেলেও ফেইসবুকের কারণে আমি ভালবাসার আর কোন পাখির দেখা পাবো কিনা জানি না, তবে পাখিকে যে হারাবো তা কেন জানি মনে হয় খুব। কারণ পাখিও যে ফেইসবুকের প্রতি আসক্ত এখন। সর্বশেষ আমার ভালবাসাবাসির কি হয় এই ফেইসবুকের বদৌলতে, তা দেখা আমার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।