আমি আমাকে নিয়েই তো এখনও বেচে আছি । একদিনআমাকে নিয়েই চলে যাব । সেদিন খুঁজলেও আর পাবি না..........আমার ভার্চুয়াল ফ্যাক্টরিতে স্বাগতম । আমার মন খারাপের সময়টা এখানে আর ফেসবুকে কাটে । মাঝে মাঝে দু একটা লেখা তৈরি করতে ইচ্ছা হলে চলে আসি এখানে ।
https://www.facebo ইসিজি মেশিনটা এটানা টিট টিট টিট টিট শব্দ করেই যাচ্ছে । অন্যসময় এ ধরনের বিরক্তিকর শব্দ শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো আলভি ।
কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন । আজকে সে মনে প্রাণে চাইছে আওয়াজটা যেনো না থামে ।
ইসিজি মেশিনটা থেকে কয়েকটা কর্ডযুক্ত তার বেড়িয়ে এসেছে ।
সেই কর্ডগুলো খোরশেদ সাহেবের বুকে আটকানো ।
পৌঢ় ভদ্রলোকের চোখ দুটো বন্ধ । শরীর নিস্তেজ । চোখের নিচে কালি পরেছে । শরীরের প্রত্যেকটা হাড় গোনা যায় ।
খোরশেদ সাহেবের ডান হাতটা শক্ত ধরে আছে আলভি । গত তিনদিন ধরে আইসিইউতে আছেন খোরশেদ সাহেব ।
তিন দিন আগে সকালবেলা হটাত্ই স্ট্রোক করেন ভদ্রলোক । তাকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসা হয় । গুরুতর অসুস্থ তিনি ।
কোমায় আছেন এখন ।
আলভি তার একমাত্র ছেলে । বড় অফিসে চাকরি করে সে । এক বছর হলো বিয়ে করেছে ।
বাম হাতে চোখের চশমাটা খুলে শার্টের কোণায় ঘষে নিলো আলভি ।
তারপর চোখে চশমাটা লাগিয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সে ।
তার মনে পরে যায় আগের স্মৃতিগুলো ।
যখন সে অনেক ছোট ছিলো তখন তার বাবা তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতেন । বাবার হাতের তর্জনী পরম নির্ভরতায় আকড়ে ধরে থাকতো আলভি ।
বাবার সাথে বৈশাখি মেলায় গিয়ে এটা সেটা কিনে আনা , বাবার কাধে চড়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলা ।
বাবার সাথে ক্রিকেট খেলা । অথবা মা কে না জানিয়ে চুপি চুপি বাইরে গিয়ে বার্গার খাওয়া ।
মা টের পেলে ঐ দিন পিতাপুত্রের বাসার খাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো ।
বাবার সাথে দুষ্টমির কথা মনে পরলো আলভির ।
আপনমনেই মুচকি হেসে উঠলো সে ।
হাতঘড়ি দেখলো সে । রাত ১.৩০ বাজে ।
গত ২ দিন ঘুম হয়নি । একটু তন্দ্রামত এলো আলভির । চেয়ারে বসে ঝিমাতে লাগলো সে ।
তার চোখের সামনে হসপিটালের শুভ্র সাদা দেয়াল উধাও হয়ে গেলো । সে জায়গা প্রথমে দখল করে নিলো লাল একটা আভা তারপর কালো একটা পর্দা নামলো তার চোখে । ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো সে ।
সপ্ন দেখছে আলভি । প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনটা ভেসে উঠলো তার স্মৃতির পর্দায় ।
কুয়াশাস্নাত দিনে পিচঢালা পথ দিয়ে তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে সে । হটাত্ করেই থেমে পিছনে ফিরছে । পিছনে ফিরেই দেখতে পাচ্ছে তার বাবাকে । ছেলের উচ্ছ্বলতা দেখে হাসিমুখে চেয়ে আছেন খোরশেদ সাহেব । তার চোখে অদ্ভুত স্নেহের একটা দ্বিপ্তি ।
তারপর আলভির স্মৃতির পর্দায় ভেসে উঠলো , ঈদের দিন । হাজার হাজার মুসলমান নামাজ আদায় করছে । সাদা পান্জাবি পায়জামা পরে ছোট্ট আলভিও গিয়েছে নামাজ আদায় করতে ।
ইমাম সাহেব নামাজ শেষে মোনাজাত ধরলেন । আলভি তখন খুব ছোট ।
এতোক্ষন মোনাজাত ধরে রাখতে পারে না সে । হাতে ব্যাথা করে ।
খোরশেদ সাহেব তা দেখে , আলভিকে তার কোলে তুলে নিলেন । আলভির ছোট ছোট হাতদুটোকে তুলে নিলেন নিজের হাতে ।
নামাজ শেষ হলো ।
সবাই কোলাকুলি করছে । খোরশেদ সাহেবও সবার সাথে কোলাকুলি করলেন । তারপর আলভির দিকে ফিরে তাকালেন ।
ছোট্ট আলভির মুখে তখন সকালের মিষ্টি এসে পরছে । খোরশেদ সাহেব হাটু গেড়ে ছেলের সামনে বসলেন , তারপর পরম মমতায় ছেলেকে বুকে টেনে নিলেন ।
কোলাকুলি করলেন । তারপর অনেক্ষন বুকের সাথে চেপে ধরে রাখলেন ছেলেকে ।
আবারও দৃশ্যপট পরিবর্তিত হলো আলভির স্মৃতির পাতায় । সে দেখতে পাচ্ছে একটা অনেক বড় মাঠে সে আর তার বাবা দাড়িয়ে আছে । মাঠটা কুয়াশাচ্ছন্ন ।
ছোট্ট আলভি মাঠের মাঝখান দিয়ে দৌড়াচ্ছে । হটাত্ কি মনে করতেই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তার বাবা নেই ! আলভি দিশেহারা হয়ে যায় । চিত্কার করে বাবাকে ডাকে সে । কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না ।
ছটফট করছে আলভি ।
ধড়মড় করে জেগে উঠলো সে । ঘামে ভিজে গায়ের শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে তার ।
সামনের বেডে শুয়ে থাকা বৃদ্ধ খোরশেদ সাহেবের দিকে তাকালো আলভি । খোরশেদ সাহেব আগের মতোই আছেন । ইসিজি মেশিনটাও একটানা একঘেয়ে শব্দ করে যাচ্ছে ।
ডুকরে কেঁদে উঠে আলভি । চেয়ার থেকে উঠে খোরশেদ সাহেবের পায়ের কাছে গিয়ে বসে সে । খোরশেদ সাহেবের পা দুটোকে জড়িয়ে ধরে সে । হু হু করে কেঁদে উঠে ছোট বাচ্চার মতো । মা গত হওয়ার পর বাবাই তার সব কিছু ।
বাবা চলে গেলে কি হবে , ভাবতেই পারে না আলভি ।
অনেকক্ষন লাগে নিজেকে শক্ত করতে । আস্তে আস্তে মাথা তোলে সে । হাতঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ভোর ৫ টা বাজে ।
একটু পর আইসিইউর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে নিশাত ।
ঢুকে দেখতে পায় আলভি চেয়ারে বসে আছে , তার গালে কান্নার পানি শুকিয়ে আছে । চোখের নিচে কালি । নিশাত ভয় পেয়ে যায় ।
আলভিকে আস্তে ডাকে সে । আলভি তার দিকে ফিরে তাকায় ।
তারপর নিশাতকে অবাক করে দিয়ে বের হয়ে যায় আইসিইউ থেকে ।
সকাল ৯ টা বাজে । আলভি এখনো ফেরে নি । তার মুঠোফোনটাও বন্ধ । নিশাতের ভীষন দুশ্চিন্তা হচ্ছে ।
একটু পর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আলভি । তার হাতে একটা প্যাকেট ।
আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে খোরশেদ সাহেবের বেডের কাছে হাটুগেড়ে বসে আলভি । খোরশেদ সাহেবের একটা হাত আকড়ে ধরে সে । তারপর আরেক হাতে প্যাকেটটা ছিড়লো সে ।
সেখানে একটা লাল গোলাপ আর একটা কার্ড ছিলো ।
আস্তে আস্তে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে সে "বাবা । ও বাবা । দেখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি । একটা লাল গোলাপ ।
একদম রক্তলাল । তোমার পছন্দের রং । কেনো এনেছি জানো ?
আজকে ভেলেন্টাইন ডে । ভালবাসা দিবস । এ দিন কাওকে ভালবেসে রিকোয়েস্ট করলে নাকি ফিরিয়ে দেয়া হয় না ।
বাবা । ও বাবা । প্লিজ উঠো না. . . দেখো না কি এনেছি তোমার জন্য । বাবা উঠো . ."
আলভি অঝোড়ে কাদছে আর খোরশেদ সাহেবের হাতটা ধরে ঝাকাচ্ছে ।
নিশাত হতভম্ব হয়ে গেছে ।
তার চোখেও পানি । আস্তে করে একটা হাত রাখলো আলভির কাধে ।
আলভি ঘাড় ফিরিয়ে নিশাতের দিকে তাকালো । তারপর নিশাতকে আকড়ে ধরে বলল "নিশাত বাবাকে বলো না উঠতে । আমি বাবার জন্য কি এনেছি বাবাকে দেখতে বলো না ।
বলো না একটু. . . " . .
পাগলের মতো আবারও খোরশেদ সাহেবের হাত ঝাকাতে থাকে সে । বার বার বলতে থাকে "বাবা । দেখো না , তোমার জন্য লাল গোলাপ এনেছি । দেখো না একটু . . . "
নিশাত তখন আলভিকে জড়িয়ে ধরে অঝোড়ে কাদঁছে । ইসিজি মেশিনটা টিট টিট শব্দ করে যাচ্ছে তখনও ।
- - উত্সর্গ - -
আমার আব্বাকে । আব্বা তোমাকে অনেক ভালবাসি । তোমার কঠোরতার ভুয়া মুখোশ আমি ধরে ফেলেছি । আর ধোকা খাবো না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।