আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামী নাম দিয়ে দলগঠন (বা ফিরকা) করা হারাম বিদআত

আমি খুবই সাধারণ ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ উনার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাজমু আল ফাতওয়া’ এবং ‘আল-উকুদ-উদ-দুররিয়াহ’-কারাগার থেকে পত্র; এ লিখেছেন যারা ইসলামের নামে দল গঠন বা দলাদলি (ফিরকাবাজি) করে তারা ‘আহলুল সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ’র অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তিনি তাদের নাম দিয়েছেন ‘আহলুল ফিরকা ওয়াল বিদয়াহ’। মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হাদীসের ভাষায় হত্যাযোগ্য গর্হিত অপরাধ। কুরআনের বহু আয়াত এবং হাদীসে রাসূল দ্বারা প্রমাণিত আমরা সমস্ত বিশ্বের মুসলিমরা একই জাতি এবং এক উম্মাহ। ভাষা, সম্পদ, গায়ের রঙ যাই হোক না কেন সমস্ত দুনিয়ার মুসলিমরা উম্মতে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আমাদের রব এবং ইলাহ হলেন এক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। আজ ইহুদী, খৃষ্টান আর হিন্দুদের বানানো জাতিসংঘের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে পঞ্চাশের আরো অধিক দেশে ভাগ করে আমাদের মাথার উপর তাবেদার, জাতীয়তাবাদী, তাদেরই পোষ্য কুকুর তাগুত সরকারদের বসিয়ে রেখেছে।

আমাদের নিজেদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষের বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে তারা তামাশা দেখছে আর যখন যার উপর ইচ্ছা নিজেদের আক্রোশ পূরণ করছে। মুসলিমরা আজ আল্লাহর শরীয়াহ দিয়ে নিজেদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারছে না। পালন করতে পারছে না জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া হুকুম আহকাম সমূহ। সমস্ত দুনিয়ার মুসলিমরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, দারিদ্রতার করালগ্রাসে পড়ে আছে। অথচ মুসলিমদের পায়ের নীচেই আল্লাহ তাআলা দিয়ে রেখেছেন দুনিয়ার সকল প্রাকৃতিক সম্পদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ।

কত আশ্চর্যের ব্যাপার সম্পদ মুসলিমদের আর বড়লোক ইহুদী খৃস্টান আর পৌত্তলিকেরা! মুসলমানদের দেশে হওয়া সত্ত্বেও অসৎ তাবেদার দালাল শাসকদের কল্যাণে সব সম্পদ পাচার হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকায়। এসকল দুরাবস্থার অন্যতম কারণ হল, মুসলিমদের মাঝে দলাদলি আর ফিরকাবাজি ও কুরআন সুন্নাহর প্রকৃত জ্ঞানের অভাব। যারা কুরআন সুন্নাহ কিছুটা বুঝার চেষ্টা করে তারা নিজেরাই একটা দল বানিয়ে নেয় ইসলামের নামে। অথচ উম্মাহকে বিভক্তি করা হারাম। আমরা জানি ৫২টি দেশ মিলে আঠার শতকে একটি দেশ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট (UNITED STATES OF AMERICA)।

ঐক্য তাদেরকে বর্তমানে অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ২০০০ সালে আমাদের চোখের সামনে সমস্ত ইউরোপ মিলে EU ইউরো গঠন করল। তারা কি সাদা চামড়া বলে এক হয়েছে? কখনও নয়, কারণ যদি তাই হত তবে বসনিয়ান মুসলিম আর আলজেরিয়ান ও চেচনিয়ান মুসলিমদের তারা এভাবে গনহত্যা কখনও করতো না। তারা ঐক্য গঠন করেছে কারণ তারা খ্রীস্টান। দুনিয়ায় হিন্দুদেরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আছে হিন্দুস্থান।

দুনিয়ায় ভ্রান্ত্র আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত শিয়াদের একটি রাষ্ট্র আছে-ইরান। আর আমরা মুসলিমরা বিভ্রান্ত্র জাতির মত পথ হারা হয়ে ঘুরে মরেছি আর রোজই ইসলামের নামে নতুন দল গঠন করেছি। অথচ কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা “যারা কাফের তারা একে অপরের সহযোগী (এবং) যদি তোমরা (সারা দুনিয়ার মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধভাবে) তা না কর [সহযোগী না হও, এক উম্মাহ হিসাবে এক খলিফার নেতৃত্বে (সর্ব্বোচচ মুসলিম নেতা পুরো মুসলিম বিশ্বের) আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করে তওহীদ বা একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা না কর] তাহলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হবে ফিতনা, ফাসাদ, বিপর্যয় ও বিশৃংখলা (র্শিক হবে প্রতিষ্ঠিত)। ”(আল-আনফাল : ৭২-৭৩) [ আয়াতের তরজমা নেয়া হয়েছে ড মুহাম্মদ মুহসীন খানের দ্য নোবল কুর’আন;পৃ-২৪১ (ভ.৮; ৭৩) তাফসির আত তাবারিতে উল্লেখিত ] “তোমাদের এ উম্মত হ‛চ্ছে একই উম্মত এবং আমি তোমাদের রব, কাজেই আমাকেই তোমরা ভয় করো। কিন্তু পরে লোকেরা তাদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে নিয়েছে।

প্রত্যেক দলের কাছে যা কিছু আছে তার মধ্যে তারা নিমগ্ন হয়ে গেছে। ভালোই, তাহলে ছেড়ে দাও তাদেরকে, ডুবে থাকুক নিজেদের গাফিলতির মধ্যে একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত। তারা কি মনে করে, আমি যে তাদেরকে অর্থ ও সম্মান দিয়ে সাহায্য করে যা‛চ্ছি, তা দ্বারা আমি তাদেরকে কল্যাণ দানে তৎপর রয়েছি ! না তাহা নয়, আসল ব্যাপার সম্পর্কে তাদের কোন চেতনাই নেই”। (আল-মুমিনুন : ৫২-৫৬) “তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য (দলাদলি) সৃষ্টি করো না। ” (আশ শুরা-১৩) “আর তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করো,তোমরা পরস্পরে বি‛চ্ছিন্ন হয়ো না।

(আলে ইমরান : ১০৩) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সমস্ত ফিরকার নেতা এবং তাদের দলের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেনঃ হুদাইফাহ্ বিন আল-ইয়ামান (রাঃ) থেকে দুটি সহীহ হাদিস গ্রন্থে (বুখারী ও মুসলিম) বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসের শেষ অংশে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তারপর আমি (হুদাইফাহ্ বিন আল-ইয়ামান) জিজ্ঞেস করলাম ঐ আংশিক ভালোর পর কি আবার মন্দ আসবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন “হ্যাঁ দোজখের আগুনের ফটকের আহবানকারীরা (অর্থাৎ ইসলামী দলের নামধারী ফিরকার নেতারা), যে ব্যক্তিই তাদেরকে ইতিবাচক জবাব দেবে (অর্থাৎ তাদের বানানো ইসলামী দলে বা ফিরকায় যোগ দিবে) তারা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। ” আমি তখন তাকে তাদের সম্পর্কে আমাদের কাছে বিবরণ দিতে বললাম, তিনি বললেন, “তারা আমাদের জাতির লোক হবে, এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। ” (অর্থাৎ মুসলিম জাতির লোক এবং ইসলামের ভাষায় কথা বলবে) আমি তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- আমি যদি সে সময় বেঁচে থাকি তাহলে আপনি আমাকে কি উপদেশ দেবেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মুসলমানদের মূল অংশের (জামায়াহতুল মুসলিমীন) এবং তাদের ইমামের (খলিফাহ) সাথে লেগে থাকবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম যদি কোন জামায়াহ বা ইমাম (খলিফা) না থেকে তাহলে কি করবো। তিনি জবাব দিলেন “সকল দল থেকে বেরিয়ে যাও এমনকি সেক্ষেত্রে যদি তোমাকে তোমার (তুমি যখন তোমার ঐ অবস্থায় থাক) কাছে মৃত্যু না আসা পর্যন্ত গাছের তলায় বসে থাকতে হয় তবুও ।

” [বুখারী,মুসলিম] (বুখারীর হাদীসে বর্ণিত) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরো উম্মাহকে একটি মানুষের শরীরের সাথে তুলনা করেছেন, একটি শরীরের মাথা একটি হয় অর্থাৎ একজন আমিরূল মুমিনীন বা খলিফার নেতৃত্বে সমস্ত উম্মাহকে সর্বাবস্থায় একত্রিত থাকা আমাদের জন্য ফরয হুকুম। খলিফাকে বাইয়াত না দিয়ে মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু। আর বর্তমানে খলিফা না থাকায় ইসলামিক রাষ্ট্র ‘দারুল ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ব্যক্তিগতভাবে ফরয হয়ে আছে এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকার এই বিষয়টি এত জরূরী যে তার জন্য দরকার হলে একজন মুসলিমকেও হত্যা করতে হতে পারে। আবু সা’ঈদুল খুদরী কর্তৃক বর্ণিত যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন “যদি দুজন খলিফাহ আনুগত্যের প্রতিশ্রূতি (বাইয়াহ) নেন তবে তাদের শেষোক্ত জনকে হত্যা কর। ” (মুসলিম কিতাবুল ইমারাহ) তবুও মুসলিমদের মাঝে অনৈক্য দলা-দলি করা যাবে না।

কোরআন আর সুন্নাহতে কোথাও একবার ও বলা হয়নি দারূল ইসলাম (ইসলামী রাষ্ট্র) না থাকলে তোমরা আলাদা আলাদা ইসলামী দলে ভাগ হয়ে থাকতে পারবে। এ সংক্রান্ত সকল দলিলে তাফাররাক বা দলাদলিকে সম্পূর্ণ নিষেধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে কঠোরভাবে। তাই দলাদলি করা হারাম বিদয়াত। [ বইঃ তাগুত-প্রথম খণ্ড ] সংকলিত ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.