আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘তুই সোহেল তাজের ভাগনে, এমন শিক্ষা দিব যে জীবনেও ভুলবি না

‘তুই সোহেল তাজের ভাগনে, এমন শিক্ষা দিব যে জীবনেও ভুলবি না—এই কথা বলেই একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমার ছেলেকে হাজতে ঢোকাতে বলেন। এরপর এক পুলিশ সদস্য টানাহেঁচড়া করে আমার ছেলেকে গুলশান থানার হাজতে ঢুকিয়ে দেয়। ’ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে কেবিনে চিকিৎসাধীন ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন মা সিমিন হোসেন রিমি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর ছোট ছেলে রাকিব হোসেনকে নির্যাতন করে বিনা অভিযোগে গুলশান থানায় আটকে রাখা হয়। আহত রাকিব এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রাকিব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জোহরা তাজউদ্দীনের নাতি। রাকিবের মামা সোহেল তাজ বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আহত সন্তানের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে গতকাল শনিবার রাতে সিমিন হোসেন বলেন, ‘বিনা কারণে ছেলেকে আটক করার পর আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তার পরও তিন ঘণ্টা রাকিবকে আটক রাখে পুলিশ। ’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের মতো লোকদের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে যাদের ওপরে যোগাযোগ করার কেউ নেই, তাদের অবস্থা কী হবে!’ কথা বলার সময় হাসপাতালের কেবিনে উপস্থিত ছিলেন সিমিন হোসেনের স্বামী মোস্তাক হোসেন, ছোট বোন মাহজাবিন আহমেদসহ পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন।

প্রথম আলোর প্রতিনিধির কাছে তাঁরা রাকিবের ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিবরণ দেন। চিকিৎসাধীন রাকিবের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বন্ধু হিমেলকে নিয়ে গুলশানে একটি খাবারের দোকানের সামনে আমি গাড়ি পার্ক করছিলাম। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই পুলিশ সদস্য আমাকে ডাক দিয়ে বলেন, “এই, তুই এদিকে আয়। ” আমি ভদ্রভাবে বললাম, আমাকে তুই করে বলছেন কেন? এতে পুলিশ সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “তোর কাছ থেকে ভদ্র কথা শিখতে হবে?” কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পুলিশ সদস্য আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।

তাঁরা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে টহল পুলিশকে খবর দেন। কিছুক্ষণ পর টহল পুলিশের একটি দল এলে আমি একপর্যায়ে নিজেকে সোহেল তাজের ভাগনে পরিচয় দিই। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য বলেন, “সোহেল তাজের ভাগনে! দাঁড়া, তোর মামাগিরি ছুুটাই। ”’ রাকিবের মা সিমিন হোসেন জানান, টহল দলের পাঁচ-ছয়জন পুলিশ রাকিবকে মাটিতে শুইয়ে পেটাতে থাকেন। বুট দিয়ে তার বুকে লাথি মারে।

শটগান দিয়ে তাকে আঘাত করে। কিছুক্ষণ মারধরের পর তাকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে গুলশান থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাকিবের বাবা মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘ছেলেকে আটকের খবর পেয়ে আমি গুলশান থানায় যাই। গিয়ে দেখি রাকিব ও হিমেলকে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তখন ওসি থানায় ছিলেন না।

অনেকক্ষণ বসে থাকার পর একজন কর্মকর্তা আসেন। তিনি কোনো কথা না শুনেই আমাকে বকাঝকা শুরু করেন। এ সময় তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনকল শেষে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সোহেল তাজের ভাগনে! জন্মের শিক্ষা দিচ্ছি। দুজনকেই থানায় ঢুকা।

এরপর আমার ছেলে রাকিব ও তার বন্ধুকে টানাহেঁচড়া করে হাজতখানায় ঢুকায় পুলিশ। রাত সোয়া নয়টার সময় ওসি এসে মুচলেকা নিয়ে আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন। ’ রাকিবের খালা মাহজাবিন আহমেদ বলেন, ‘রাকিবকে আটকের খবর শুনে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, কমিশনার, ডিসিসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা বলেন, থানা থেকে এক্ষুনি ছেড়ে দেওয়া হবে। এর পরও তিন ঘণ্টা তাকে আটক রাখা হয়।

অথচ তার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ধরনের অভিযোগ আনতে পারেনি। আটকের সময় পুলিশ তার মুঠোফোনটি কেড়ে নেয়। পরে সে তার বন্ধু হিমেলের মুঠোফোন দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ’ রাকিবের বয়স ১৯। তিনি এ লেভেলে পড়ছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। তার পরও তাঁকে কেন নির্যাতন করা হলো—জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি শাহ আলম বলেন, ‘অনেকগুলো গাড়ি আটকের সময় ওই দুই ছেলেকেও আটক করা হয়। থানায় আনার পর ছেলেটি পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। ’ নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের অভিযোগ সত্যি নয়। ’ গুলশান বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবির বলেন, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে।

তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাকিবের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনাইটেড হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তাঁর শরীরে মারধরের আঘাত রয়েছে। তাঁকে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে এখন অবস্থা ভালো।

রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও ড. কামাল হোসেন আহত রাকিবকে দেখতে হাসপাতালে যান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।