ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস
কাগজে-কলমে অন্যতম সেরা দল। শহীদ আফ্রিদি ও সাঈদ আজমলকে পাবে তারা কেবল শেষ দুই দিনের জন্য। তার পরও বাকিদের নিয়েই তারা শিরোপা জিততে পারে। টপ-অর্ডারে ইমরান নাজির ও নাজিমউদ্দিন দিতে পারেন উড়ন্ত সূচনা। মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদের বিস্ফোরক ব্যাটিং ফিরিয়ে আনারও মঞ্চ হতে পারে এই টুর্নামেন্ট।
কাইরন পোলার্ড ঝড় তুলবেন শেষ দিকে, তাঁর স্লো মিডিয়াম বোলিংও দারুণ কার্যকর। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত দুই বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি ও মোশারফ হোসেনের ব্যাটও প্রয়োজনে কথা বলে। এই সুবিধা দলটি পাবে পেস আক্রমণেও, রানা নাভেদ ও মাশরাফি ব্যাট হাতেও ঝড় তুলতে পারেন। ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন আজহার মাহমুদ। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে সম্প্রতি দুটি সেঞ্চুরি করেছেন, ব্যাট করতে পারেন যেকোনো পজিশনে।
সঙ্গে পেস বোলিং তো আছেই!
চিটাগং কিংস
স্থানীয় খেলোয়াড় সংগ্রহে সম্ভবত সবচেয়ে সমৃদ্ধ দল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দারুণ ফর্মে ছিলেন জহুরুল ইসলামও। উইকেটের সামনে-পেছনে দারুণ কার্যকারিতার জন্য তাঁর দাম নিলামে ছয় অঙ্ক ছুঁয়েছে যৌক্তিকভাবেই। তুলনামূলক সস্তায় পেয়ে যাওয়া ফয়সাল হোসেন মানিয়ে নিতে পারেন যেকোনো পরিস্থিতিতে।
তবে দলের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে তামিম ইকবালের ওপর। তামিম ফর্মে ফিরলে নাসির জামসেদের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটি প্রতিপক্ষের জন্য হবে যথেষ্টই ভীতি জাগানিয়া। দলের সেরা সংগ্রহ ডোয়াইন ব্রাভো। ওপেনিং থেকে যেকোনো পজিশনে ব্যাটিং করতে পারেন, দারুণ কার্যকর তাঁর মিডিয়াম পেস। ত্রিনিদাদের অলরাউন্ডার কেভন কুপার দিতে পারেন বড় চমক।
পেস আক্রমণ অবশ্য কিছুটা দুর্বল। ফরহাদ রেজা, ব্রাভোদের নিয়ে সেটা সামলাতে হবে জেরম টেলরকে। তবে স্পিন দিয়েই বাজিমাত করতে পারে দলটি। মুত্তিয়া মুরালিধরনের সঙ্গে বল ঘোরাবেন এনামুল জুনিয়র-সানজামুলরা!
দুরন্ত রাজশাহী
খেলোয়াড় তালিকা হয়ত রাজশাহীকে ফেবারিটের তালিকায় রাখবে না। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের সফলতম দল তারা তো খুব বড় তারকা না নিয়েই! সেই সাফল্যের নেপথ্য কারিগর খালেদ মাসুদ আছেন এই দলের সঙ্গেও, আছেন সাবেক আরও দুই অধিনায়ক।
ব্যাটিংয়ে বড় দায়িত্ব নিতে হবে জুনায়েদ সিদ্দিক ও মুশফিকুর রহিমকে। তবে রাজশাহীকে শিরোপা জিততে হলে জ্বলে উঠতে হবে দুই অলরাউন্ডার মারলন স্যামুয়েলস ও আবদুল রাজ্জাককে। স্যামুয়েলস গত অক্টোবরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বাংলাদেশ সফরে দারুণ ফর্মে ছিলেন। তবে বিগ ব্যাশে নিষ্প্রভ ছিলেন রাজ্জাক। মোহাম্মদ সামির সঙ্গে সৈয়দ রাসেলের পেস জুটি কার্যকরই হওয়ার কথা।
ইমরান তাহির না আসায় স্পিন আক্রমণে সাকলাইন সজীবই বড় ভরসা, সঙ্গে ফাওয়াদ আলম, কায়সার আব্বাসের মতো স্পিনিং অলরাউন্ডাররা। জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার শন আরভিন হতে পারেন ট্রাম্প কার্ড আর লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান হতে পারেন ‘আনসাং হিরো। ’ তবে রাজশাহীর মূল চালিকাশক্তি হতে পারে ওই টিম স্পিরিট।
খুলনা রয়েল বেঙ্গল
নিলামে সবচেয়ে কৌশলী ছিল খুলনা। খুব বড় সব নাম হয়তো নেয়নি, নিয়েছে দারুণ কার্যকর সব ক্রিকেটার।
টি-টোয়েন্টি উপযোগী অলরাউন্ডারে ভরা এক দল—সাকিব-নাসির-স্মিথ-রাসেল-জয়াসুরিয়া! সময়ের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দুই দেশী ক্রিকেটারকে পেয়েছে দলটি—সাকিব ও নাসির। খুব ভালো ফর্মে না থাকলেও এই উইকেটে আবদুর রাজ্জাক যেকোনো দলের জন্যই সম্পদ। দলের সেরা সংগ্রহ সম্ভবত আন্দ্রে রাসেল, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ঢেলে দেন শতভাগ। সেরাটা পেছনে ফেলে এলেও বিগ ব্যাশে ভালো ফর্মে ছিলেন হার্শেল গিবস। টি-টোয়েন্টির রসায়নটা খুব ভালো জানেন আইরিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নিয়াল ও’ব্রায়ান ও ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ডুইন স্মিথ।
ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পাওয়া জস বাটলারের না আসা একটা ধাক্কা। সংশয় আছে ৪২ পেরোনো সনাৎ জয়াসুরিয়া ও টি-টোয়েন্টিতে শিবনারায়ণ চন্দরপলের কার্যকারিতা নিয়েও। তবে ফিদেল এডওয়ার্ডস, শফিউল, ডলারদের নিয়ে পেস আক্রমণটা দারুণ। আর সাকিবের অধিনায়কত্ব তো আছেই। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের ‘ডার্ক হর্স’ খুলনা।
বরিশাল বার্নার্স
বরিশালকে নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট একটা নামই—বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ‘হটকেক’ ক্রিস গেইল। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিস্ফোরক টপ-অর্ডার হতে পারে এই দলেরই—গেইলের সঙ্গে আহমেদ শেহজাদ, ব্র্যাড হজ ও রমিজ রাজা জুনিয়র। বিশ্বের নানা প্রান্তে ১৩২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হজ বরিশালের দারুণ সংগ্রহ। তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কা—৫ ম্যাচ পরই দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে পাড়ি দেবেন গেইল। তখন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীসকে।
উঠতি তরুণ মমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন ও কামরুল রাব্বিদের জন্য বড় পরীক্ষা এই টুর্নামেন্ট। আলাউদ্দিন বাবু ও পাকিস্তানের ইয়াসির আরাফাতের মতো দুজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার বড় শক্তি। সোহরাওয়ার্দী শুভ ও সোহাগ গাজীকে নিয়ে গড়া স্পিন আক্রমণও ভালো। নিয়ন্ত্রিত অফ স্পিনের সঙ্গে ঝোড়ো ব্যাটিং মিলিয়ে সোহাগ হতে পারেন দলের বড় চমক।
সিলেট রয়্যালস
কাগজে-কলমে সম্ভবত সবচেয়ে পিছিয়ে।
দেশি কিংবা বিদেশি—খেলোয়াড় সংগ্রহে খুব পরিকল্পনার ছাপ রাখতে পারেনি দলটি। কোনো ধরনের ক্রিকেটেই কখনো অধিনায়কত্ব না করা ইংলিশ অলরাউন্ডার পিটার ট্রেগোকে অধিনায়কত্ব দেওয়াই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কোচ স্টুয়ার্ট ল-ই সম্ভবত দলের সবচেয়ে বড় তারকা! ইমরুল কায়েস, কামরান আকমল, শুভাগত হোম, নাঈম ইসলাম ও স্কট স্টাইরিসকে নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইনআপ কী করবে বলা মুশকিল। সোহেল তানভির, রুবেল হোসেন ও তালহা জোবায়ের সমন্বিত পেস আক্রমণের ওপর তুলনায় বেশি ভরসা রাখা যায়। পুনরুজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়ান চায়নাম্যান ব্র্যাড হগ স্পিন আক্রমণের মূল ভরসা।
সব মিলিয়ে দল খুব সমৃদ্ধ নয়। তবে সিলেটের ভরসা হতে পারে টি-টোয়েন্টির অনিশ্চয়তা, কাগজ-কলমের হিসাব তো অনেক সময়ই পাল্টে যায় মাঠে!(Copied) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।