আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ প্রয়োজন একটা.........

নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক একটা ভূতের গল্প দিয়ে শুরু করি। ভূত আর নাপিতের গল্প। অনেক দিন আগের কথা। দেশে মহা অকাল পড়েছে। খরায় সব ফসল পুড়ে ছাই।

কৃষকেরা ভাবনায় অস্থির কিভাবে সারা বছর কাটাবে। এমনই একজন কৃষক নূরু মিয়া। তার এক বন্ধু নাপিত স্বপন। দুশ্চিন্তার কথাটা স্বপনকে জানাল নূরু। স্বপন বলল- দোস্ত! যদি কিছু মনে না কর একটা কথা বলি, যদি তা শোন আশা করি অভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

: কী কথা,বল ! : এ কয় মাস তো অবসর। তাই না? :হ্যাঁ, অবসর । : আমার সাথে একটা কাঁচি আর একটা ক্ষুর নিয়ে নেমে পড়। ভালোই চলতে পারবে। : আমি তো চুল কিভাবে কাটতে হয়, জানি না।

: শিখিয়ে দেব। এক সপ্তাহ সময়। রাজি হয়ে গেল নূরু। কৃষ্ক নূরু আস্তে আস্তে নাপিত হচ্ছে,তাই তার বউ খুব নারাজ। কিন্তু অভাবের চাপে শক্ত করে কিছু বলতে পারছে না।

সপ্তাহ-দশ দিন যাওয়ার পর আলাদা যন্ত্রপাতি সহ নূরুকে নিয়ে বের হলো স্বপন। গ্রাম থেকে বের হয়ে সোজা মাইল খানেক দূরে রাস্তাটা যেখানে গিয়ে দুভাগ হয়েছে সেখানে গিয়ে থামল তারা। স্বপন বললঃ তুমি বাম দিকের গ্রামটায় যাও, আমি যাচ্ছি ডান দিকে। সন্ধ্যার আগে আমরা আবার এখানে এসে মিলিত হবো। আয় যা হয় দু'জনে সমান ভাগ করে নেব।

নতুন পেশা। নূরু ভয়ে ভয়ে পা বাড়াল বাঁ দিকের গ্রামটার দিকে। সন্ধ্যা হতে এখনো অনেক বাকি,কিন্তু যা রোজগার হয়েছে তা খুবই সামান্য। নূরু ভাবল, একটু আগেই ফিরে যাই। আশ্চর্য ! ফিরে এসে দেখল স্বপন তারও আগে ফিরে এসেছে এবং খুব খুশি! এক রকম চিৎকার করে ডাকল নূরুকে।

: কি খবর স্বপন? খুব খুশি মনে হচ্ছে! : তাড়াতাড়ি চল, খুব খুশির খবর আছে। : কি খবর শুনি? : গোপন ! একদম গোপন ! : তাই! কিন্তু বস্তাটা কিসের? : ওর মধ্যেই খবর আছে। কথা না বলে হাঁটো ! নূরু কিছুটা ভয়ও পেল। নাপিতগিরি করতে গেলাম,চুল কাটলে মানুষ টাকা দিবে। বস্তা কেন? কী আছে এর মধ্যে।

স্বপন দ্রুত হাঁটছে। নূরুও যাচ্ছে তার সঙ্গে। মাথায় রহস্যের জট তৈরি হচ্ছে। বেলাটা ডুবে যাচ্ছে প্রায়। সামনেই স্বপনদের বাড়ি।

:নূরু ! ঘরে ঢোক। : ঘরে ঢোকব? বাড়ি যাব না? : টাকা ভাগাভাগি করব না? : অ...... নূরু চুক্তির কথাটা... নূরু চুক্তির কথা ভুলেই গিয়েছিল। ঢুকল ঘরে। তারপর যখন স্বপন বস্তার মুখ খুলল তখন তো নূরুর মাথা ঘুরিয়ে পড়ার দশা। হায় খোদা! এত টাকা !? : সবগুলো টাকা।

: এতগুলো টাকা কোথায় পেলে? : আগে ভাগ কর,সমান সমান, পরে সেটা বলব। রাতে একটুও ঘুম হলো না নূরু মিয়ার। এতগুলো টাকা স্বপন পেল কোথায়? কাল আর চুল কাটা নয়। আগে রহস্যটা বের করতে হবে। পরদিন পথে নেমেই সোজা প্রশ্ন করে বসল নূরু- স্বপন আসল ঘটনাটা এখনো বললে না? : টাকাগুলো একজন দিল! : মানুষ এমনিই মানুষকে এতগুলো টাকা দেয়? ! আসল কথা বল ? : মানুষ না তো ! : তাহলে...... : ভূত ! : ভূত মানে?! : ভূত মানে তো জানি না, তুমি যদি শুনতেই চাও তাহলে ঘটনা খুলে বলতে পারি।

: বল ! : ডান দিকের যে রাস্তাটা দিয়ে কাল গেলাম, এ রাস্তা ধরে আধা মাইলের মত গেলেই বামে একটা বিশাল জঙ্গল পড়ে। গিয়েছো কখনো ? : না,তবে শুনেছি মানুষ নাকি দিনেও ওদিকে যেতে ভয় পায়। : ভয় পাওয়ারই কথা। সবচে' বড় ভয়ের কথা হলো যাওয়ার রাস্তাটা এর ভিতর দিয়েই। গ্রাম নেই,মানুষ নেই, পাখিগুলোও ফিসফিস করে কথা বলে।

: তারপর ? : আমি হাঁটছি ভেতর দিয়ে। ভয় কাটাবার জন্য গান ধরলাম। আর তখনই ঘটল ঘটনাটা ! : ঘটনা মানে ...... : ছিপছিপে লম্বা একটা ভূত! দাঁতগুলো ফাঁক ফাঁক বড় বড়। একটা চোখ বড়, একটা চোখ ছোট। পায়ের পাতা পর্যন্ত চুল।

: তারপর......... : আমার সামনে পথ আগলে নাচতে লাগল। আমি তো ভয়ে শেষ, তারপরেও ভাবলাম- বাঁচতে হলে সাহস করতে হবে! শুরু করলাম আমিও। : তুমিও মানে? : মানে আবার কি? ও নাচছে, আমিও নাচছি। সমানে সমান ! কিছুক্ষণ নাচার পর ভূতটা থেমে গেল। আমি কিন্তু নেচেই চলেছি।

: তারপর ? : তারপর তো ভূত অবাক ! বলল, তুমি নাচছ কেন ? আমি বললাম,তুমি আগে বল, কেন তুমি নেচেছ? সে বলল, তোমাকে ধরার জন্য। আমি বললাম, আমিও তো তোমাকে ধরার জন্যই নাচছি! বলল, আমাকে ধরবে তুমি? বললাম, হ্যাঁ ধরব। আমার উস্তাদ নূরু বলেছে একশ' ভূত ধরে প্যাকেট করে দিতে পারলে পুরস্কার দেবে। অনেক টাকা পুরস্কার ! : একশ' ভূত ! : হ্যাঁ ! : ধরেছো একটাও? : নিরানব্বইটা ধরেছি। একটাই বাকি।

তোমাকেও ধরে ফেলেছি প্রায়। এখন প্যাকেট করব ! : প্যাকেট !? : হ্যাঁ, প্যাকেট। তারপর কি করলাম জানো? আমার বাক্স থেকে আয়নাটা বের করে তার সামনে ধরলাম। বললাম, কী ! ঠিক তোমার মত না? এই হলো প্যাকেট! বেচারা তো ভয়ে কাতর। বলল, তোমাকে আমি এক বস্তা টাকা দেই,আমাকে ছেড়ে দাও।

বললাম, না ! ওসবের দরকার নেই। তোমাকে প্যাকেট করবই । আবার শুরু করলাম নাচ। মারের ভঙ্গিতে নাচ! কাবু হয়ে পরল ভূত। খুব বিনয় করে বলল, আমাকে এবারের মত ছেড়ে দাও।

বললাম,টাকাটা নগদ দাও। আর টাকার ভাগটা তো তুমি পেয়েছোই। : স্বপন !! : হোঁ ! : জায়গাটা আমাকে দেখাতে হবে। আমি ভূত দেখব। : তুমি ভয় পাবে।

: ভয় পাব মানে! মাথা খারাপ?! ধমক দিয়ে কান ফাটিয়ে ফেলব না ! স্বপন নানাভাবে বুঝাল। কিন্তু কিছুতেই মানে না,সে ভূত দেখবেই। কী মুশকিল। অবশেষে বাধ্য হয়ে গতকালের নির্জন জায়গাটায় নিয়ে গেল নূরুকে। স্বপন লক্ষ করল- জায়গাটা আজ আরো নীরব।

থমথমে। কৌতূহল হলো। জঙ্গলের একতু ভিতরে ঢুকে দেখে মাঠের মত পরিষ্কার একটা জায়গা। ভূতের কোন সভা-টভা হবে নাকি? নিজেকে প্রশ্ন করল স্বপন। ভাবল, হতেও পারে।

দাঁতে ঠোঁট কেটে ভাবল এক মিনিট। : নূরু ! : হোঁ ! : একটা আইডিয়া...... : বল ! : বর বটগাছটার একবারে পাতার ভিতরে হারিয়ে যেতে হবে। : চল ! সোজা উপরে উঠে গেলো দুই বন্ধু। : নূরু ভয় পাচ্ছো ? : তুমি পাচ্ছ কি না তাই বল? : বেশী সাহস দেখিও না। বস ! তারপর কোমর থেকে গামছাটা খুলে একটি ডালের সাথে বেঁধে দিল নূরুকে।

সত্যি সত্যিই একটু পরে শুরু হলো ভূতদের আগমন। মাঝখানে সিংহাসন পাতা হলো। ইয়াভুড়ি রাজা এসে অলঙ্কৃত করলেন সিংহাসন। সকলে দাঁড়িয়ে মাথা নুইয়ে তাজিম করল তাকে। রাজা হুকুম করলেন- বল, গত একমাস কোথায় কি ঘটেছে? শুরু হলো নানা অভিযোগ সুবিধা অসুবিধার কথা।

রাজা শুনছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। সবশেষে দাঁড়ালো স্বপন নাপিতের ফাঁদে পড়া ভূত। দাঁড়িয়েই শুরু করল বিলাপ। বলল, হুজুর! এই জঙ্গলে আমাদের নিরাপত্তা নেই।

কালই এক ভূতধরা মানবের হাতে পড়েছিলাম। তারপর বলে চলল পুরো কাহিনী ! নূরু তো হাসি চেপে মরছে। স্বপন বলছে , সাবধান ! এখন ধরা পড়লে মরণ নিশ্চিত! সব শোনে রাজা বলল- ভূতধরা যখন তোমাকে ধরতে চাইল তুমি তখন হুংকার দিতে পারলে না ! ভূত বলল- হুজুর! বিপদের হুংকারটা তো শেখাননি ! রাজা তখন ক্ষোভে মহা ক্রোধে কানে তালা লাগানো হুংকার দিয়ে জঙ্গল কাঁপিয়ে তুলল, হুংকারে প্রায় বেহুঁশ হয়ে শরীরের সাথে বাঁধা ডালটি ভেঙে গড়িয়ে পড়তে লাগল নূরু। স্বপন দেখল- খাইছে! ধরা বুঝি পড়েই গেলাম। তখন সে দ্রুত চিৎকার করে ওঠল- বন্ধু ! বড়টারে ধর ! আমি আসছি।

একথা শুনে রাজা মশাই সিংহাসন ছেড়ে এক লাফে ভোঁ দৌড়! বাকিরা কি আর পেছনের দিকে তাকায়। ********* গল্পটা ভূতের হলেও, গল্পের পূর্ণতায় একটা যুক্তি আছে। আতঙ্কের মুহূর্তে একটা সাহসী চিৎকার মুহূর্তে সাহসী শক্তিমান প্রতিপক্ষকে কাবু করে ফেলতে পারে। তাই যখন আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছি,তখন যদি সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ করত আর তার সাথে আমাদের সরকার মশাই একটা সাহসী চিৎকার দিতে পারতেন,তাহলে তাদের নির্যাতন অবশ্যই কমত। আবার বেঈমান আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে হামলে পড়েছিল তখন প্রবল বিক্রমে রুখে দাঁড়িয়েছিল মুসলমান আফগানরা।

পৃথিবীর দেড়শ' কোটি মুসলমান যদি একটা চিৎকার দিতে পারতো- ধরো বন্ধু ! আমরা আসছি! তাহলে জুতা-বুশেরা নাপাক কাপড়ে পালাতে বাধ্য হতো। যখন ইরাকে গেই এই খুনি সম্প্রদায় -চির উন্নত ইরাকী বীরেরা অসম সাহসে দাঁড়িয়েছিল রুখে ! তখন মুসলিম রাজন্যবর্গ যদি কেবল এই বলে একটা চিৎকার দিত- ধরো খুনিদের ! আমরা আসছি! দস্যু বেঈমানরা কলজে ফেটে মারা যেত ইরাকের বালুঝড়ে। আহা ! আমরা কত অসহায় ! স্বপন বাবুর মতো একটা চিৎকার দেবার সাহসও আমদের নেই। আমরা তো এমন ছিলাম না কোনদিন !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।