আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথে প্রান্তরে-৭ সাউথ আফ্রিকায় কয়েকদিন-২

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............ পথে প্রান্তরে-৭ সাউথ আফ্রিকায় কয়েকদিন-২ দঃ আফ্রিকায় আমি বছর সাতেক আগেও একবার এসেছিলাম বেশ লম্বা সময়ের জন্য। তখন দঃআফ্রিকার যে জৌলুশ দেখেছিলাম-এখন তার অনেকটাই ম্লাণ মনে হচ্ছে। স্থানীয় বাংলাদেশীরাও আমার ধারনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলেন। কারন শ্বেতাংগদের শাসন ব্যাবস্থায় এবং শ্বেতাংগদের শাসন ব্যাবস্থার পরবর্তী বেশ কয়েক বছর মিশ্র বর্ণের পূর্ব ধারার চলমান ব্যাবস্থা জৌলুশ ছিল। কিন্তু বর্তমান সম্পূর্ণ কালোদের শাসন ব্যাবস্থায় দিনে দিনে সেই জৌলুশ হারিয়ে যাচ্ছে।

শ্বেতাংগরা এনি হাউ,এনি কস্ট কালোদের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতেন। অন্যদিকে কালোদের শাসন ব্যাবস্থায় কালোদের দ্বারা যথাযথ কাজ করিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা!কালোদের কর্ম বিমূখতা দেখে বিষয়টা আমার কাছে একেবারে অযৌক্তিক মনে হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা-কালোরা কর্ম বিমূখ বলেইতো বাংলাদেশীরা দঃআফ্রিকায় কর্ম চঞ্চল! দঃ আফ্রিকায় বেশীরভাগ মানুষই ধূমপানে অভ্যস্ত বললে ভুল বলা হবেনা-এমনকি ছোট শিশুরাও ধূমপানে অভস্থ্য। ধূমপানের পাশাপাশি চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি প্রবল আকর্ষণ রয়েছে-সেই সংগে কোমল পানীয় ও শুষ্ক খাবার তাদের খুবই প্রিয়। স্থায়ী অধিবাসিগণ সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী আবাসন, ১৮ বছরের নিচে এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সের অধিবাসীরা সরকারী ভাতাসুবিধা ভোগ করেন।

অবৈতনিক ও বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা সর্বত্র চালু রয়েছে। শহর ও গ্রামে একই ধরনের শিক্ষায়তন গড়ে উঠেছে। বাঙালিরা অনুকূল পরিবেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কোন কোন শহরে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাঙালিদের কিছুটা প্রতিকূল পরিবেশে ব্যবসা করতে হলেও কেপটাউনে অধিকাংশ বাঙালি চমত্কার পরিবেশে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। অবশ্য মাঝে মাঝে কিছু স্থানীয় কালো মানুষ বিদেশীদের ঘর/দোকানে হামলা করে টাকা পয়শা ছিনিয়ে নেয় এমনকি খুন খারাবীও হয়।

বেশীরভাগ প্রবাসী বাঙালি মুদি দোকান,ফলের দোকান ও কাপড়ের ব্যবসায় জড়িত। অনেক বাংলাদেশীই বৈবাহিক সূত্রে দঃআফ্রিকার নাগরিকত্ব পেয়ে অন্য প্রবাসীদের থেকে কম যোগ্যতা নিয়েও শুধু “"জামাই” যোগ্যতায়" অনেক বেশী উপার্জন করছেন। এখানে বাংলাদেশীরা "“জামাই” হিসেবে অত্যন্ত বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন"। কাজেই যে কেউ চাইলেই আফ্রিকান মেয়ে বিয়ে করে সেই সুযোগের সদ্বব্যাবহার করতে পারেন। বাংলাদেশীরা দক্ষিন আফ্রিকায় গিয়ে প্রথম অবস্থায় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দোকানে চাকরি করে পরবর্তীতে অতি সহজেই দোকানের মালিক হতে পারছেন।

অনেকই এককভাবে না পারলেও অংশীদারি ভিত্তিতে দোকানের মালিক। সাধারন ব্যাবসায়ীরা প্রত্যেকেই গড়ে দেড় দুই লক্ষ টাকা এবং সাধারন চাকুরীজিবীরা ৭০/৮০ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন। অনেক বাংলাদেশীই একাধিক দোকান মালিক এবং উপার্জনও খুব ভাল। চেষ্টা করলে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া সম্ভব। ওয়ার্ক পারমিট পেলে দেশে আসা যাওয়া করা যায়।

তবে বেশিরভাগ প্রবাসী “এসআলম” (সাময়িক অনুমোদন)এর মাধ্যমে সে দেশে অবস্থান করছেন। ছয় মাস অন্তর এসআলম নবায়ন করতে হয়। পুলিশী হয়রানি খুব একটা নেই। বরং পুলিশ নানাভাবে প্রবাসীদের সহযোগিতা করে থাকে। ওদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে গাড়ী খুবই প্রয়োজনীয় উপকরণ-যা অনেক বাংলাদেশীদেরই আছে।

মালামালের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে পোশাকের দাম খুবই বেশি। এক্ষেত্রে দঃ আফ্রিকায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানীর অবারিত সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দঃ আফ্রিকায় ঔষধ রপ্তানীরও বিরাট সুযোগ রয়েছে এবং ইতোমধ্যেই আমাদের দেশীয় ৪/৫টি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেই সুযোগ গ্রহন করেছে। তাছাড়া ওখানে বিস্তীর্ণ জমি অনাবাদী রয়েছে যা অংশীদ্বারিত্বের ভিত্তিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসল উত্পাদনের অবারিত সুযোগ রয়েছে।

এই সুযোগটা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নিটোল গ্রুপের মালিক আবদুল মতলুব আহমেদ নেবার জন্য জোহানেসবার্গ,কেপটাউনসহ আরো কয়েকটি শহরে লিয়াজো অফিস খুলেছে। কিন্তু মতলুব আহমেদের মতলব ভালনা। তিনি এই ব্যাবসার আড়ালে ফরেন কারেন্সী পাচারের দূরভিস্বন্ধি করছেন-যা ইতোমধ্যেই সরকারের উর্ধতন মহলে প্রকাশ পেয়েছে। স্বচ্ছতার সাথে দঃ আফ্রিকার সাথে যৌথভাবে কৃষি উতপাদনের ব্যাবসা করতে পারলে বাংলাদেশের বিপূল সংখক অদক্ষা শ্রমিকের কর্ম সংস্থা হতে পারে। আর্থীক ভাবে বাংলদেশীরা ভাল থাকলেও তাঁদের সমস্যারও অন্ত নেই।

প্রথমেই দক্ষিণ আফ্রিকা যাবার ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশে দূতাবাস না থাকার কারণে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যাওয়া সম্ভব হয় না। এতদিন ভারতের নয়া দিল্লিতে সাউথ আফ্রিকান দূতাবাস থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা ব্যবস্থা চালু থাকায় কিছু কিছু বৈধ ভিসা পাওয়া সম্ভব হত। দিল্লিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও খরচ কম হওয়ায় সেখানে যাওয়ার সুবিধা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ অফিশিয়াল কার্যক্রম শ্রীলংকায় স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে নিয়মিত ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ যেমন কমে গেছে তেমনি শ্রীলংকা যাওয়া আসাও অনেক বেশী ব্যয়বহুল হয়েছে।

এ অবস্থায় সরকারের উচিত বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস খোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। দঃ আফ্রিকায় সকল ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম করার সুযোগ রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যেমন অনেক মন্দির রয়েছে তেমনি গীর্যারও অভাব নেই। আবার মুসলমানদের প্রার্থনার জন্য গড়ে উঠা মসজিদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। দঃ আফ্রিকায় প্রাবাসী বাংলাদেশীদের বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠাতে না পারা একটি বড় বিড়ম্বনার বিষয়।

হুণ্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কারণে প্রচুর রাজস্ব প্রাপ্তির সুবিধা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে, আবার হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তাই বৈধ উপায়ে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থার জন্য আমাদের সরকারের জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই প্রয়োজন। অন্যদিকে সাউথ আফ্রিকাতেও থেকেও অবৈধ প্রবাসী বাঙালীরা ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে নগদ টাকা নিয়ে প্রবাসীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস উদ্যোগ গ্রহণ করলে সহজেই বাংলাদেশীদের ব্যাংকিং সুবিধা লাভ সম্ভব।

এ সমস্যাদি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্স প্রাপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব। সবাইকে ধন্যবাদ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।