আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ নবীর জীবন কথা-১

সত্য সমাগত। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বংশ পরিচয়ঃ রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশ সারা বিশ্বের সেরা ও উত্তম বংশ। আপন পর সবাই অকপটে তা স্বীকার করত। আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোচ্চ বংশোদ্ভত হওয়ার দিকে ইঙ্গিঁত করে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাঁর রিসালত বা পয়গামের দায়িত্ব কাকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে অনেক জ্ঞাত। ” (সূরা আন আমঃ ১২৪) আবু সুফিয়ান (ইসলাম গ্রহনের পূর্বে) যখন রোমের সম্রাটের কাছে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয় দিচ্ছিল তখন সেও বলেছিল যে, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশীয় ব্যক্তি।

তখন রোম সম্রাট হিরাকল বলেছিলেনঃ “তেমনি নবী রসূলগণ সর্বোচ্চ বংশ ও গোত্রে প্রেরীত হয়ে থাকেন। ” (সহীহ সীরাতুন নব্বীয়াহ, পৃঃ ৯। ) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বলেছেনঃ “আমি বনী আদমের সর্বোত্তম বংশে প্রেরীত হয়েছি। আমার যুগই সর্বশেষ্ঠ যুগ। ”(সহীহ আল বুখারীঃ ৪/১৫১) অপর এক হাদীসে আছে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা কিনানা গোত্র থেকে কুরাইশকে বাছাই করেন, আবার কুরাইশদের থেকে বনু হাশিমকে বাছাই করেন এবং বনূ হাশিম থেকে আমাকে বাছাই করেন।

” (মুসলিম শরীফ (২২৭৬), তিরমিযী শরীফ (৩৬০৬), মুসনাদু আহমদঃ ৮/১০৭, হা/ ১৭১১১, , সিলসিলা সহীহাঃ ৩০২। ) পবিত্র বংশধারাঃ রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বংশধারা নিম্নরূপঃ মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনু আব্দিল্লাহ, ইবনু আব্দিল মুত্তালিব, ইবনু হাশিম, ইবনু আব্দিমানাফ, ইবনু কুছাই, ইবনু কিলাব, ইবনু মুররাহ, ইবনু কাআ’ব, ইবনু লুওয়াই, ইবনু গালিব, ইবনু ফেহের (কুরাইশ), ইবনু মালিক, ইবনু নযর, ইবনু কিনানা, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু মুদরিকাহ, ইবনু ইলিয়াস, ইবনু মুদ্বার, ইবনু নাযার, ইবনু মাআ’দ, ইবনু আদনান, ইবনু আদু, ইবনু মাইসা’, ইবনু সালামান, ইবনু এওয়ায, ইবনু বূয, ইবনু ক্বামওয়াল, ইবনু উবাই, ইবনু আওয়াম, ইবনু নাশিদ, ইবনু হাযা, ইবনু বিলদাস, ইবনু ইয়াদলাফ, ইবনু ত্বাবিখ, ইবনু জাহিম, ইবনু নাহিশ, ইবনু মাখী, ইবনু আইফী, ইবনু আবকার, ইবনু উবাইদ, ইবনু আলদুআ’, ইবনু হামদান, ইবনু সাবজ, ইবনু ইয়াসরাবী, ইবনু ইয়াহযান, ইবনু ইয়ালহান, ইবনু আরআওয়া, ইবনু আইফা, ইবনু যীশান, ইবনু আইসার, ইবনু আকনাদ, ইবনু ইহাম, ইবনু মুকছির, ইবনু নাহিছ, ইবনু যরাহ, ইবনু সুমাই, ইবনু মযযী, ইবনু ইওয়ায, ইবনু আরাম, ইবনু কায়দার, ইবনু ইসমাঈল, ইবনু ইবরাহীম, ইবনু তারা (আযর), ইবনু নাহুর, ইবনু সারুজ, ইবনু রাঊ, ইবনু ফাইজ, ইবনু আবির, ইবনু আরফাকশাও, ইবনু সাম, ইবনু নূহ, ইবনু লামক, ইবনু নাতুশাইহ, ইবনু আখনূ’, ইবনু ইদ্রিস, ইবনু ইয়ারিদ, ইবনু মালহালঈল, ইবনু কায়নান, ইবনু আনূশ, ইবনু শীছ, ইবনু আদম আলাইহিসসালাম। -(রাহমাতুল্লিল আলামীন, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ২৫-৩১, কাজী মুহাম্মদ সুলাইমান মনছুরপূরী) হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাতা পিতা পর্যন্ত নারী পুরুষের যতগুলি স্তর রয়েছে প্রত্যেক স্তরের প্রতিটি নারী ও পুরুষ সৎ ও পবিত্র ছিলেন। কেউ কখনো ব্যবিচারে লিপ্ত হন নি। রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমি বিবাহের মাধ্যমে জন্ম গ্রহন করেছি, ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়।

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমার পিতা মাতা পর্যন্ত কোন নারী পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হননি। আর জাহেলী যুগের ব্যভিচার আমাকে চুয়েঁ নি। ” (ইরওয়াউল গালীলঃ ১৯৭২, সহীহুল জামিউস্ সাগীরঃ ৩২২৫। ) আব্দুল্লাহ ও আমেনাঃ কুরাইশ সর্দার আব্দুল মুত্তালিবের ছিল দশ পুত্র। এদের সকলেই ছিলেন বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান।

তাঁর সকল পুত্রের মধ্যে আব্দুল্লাহ খুবই প্রশংসনীয় গুণাবলী ও কেন্দ্রীয় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর পিতা বিয়ে দিয়েছিলেন বনূ যুহরার সর্দার ওহাব এর কন্যা আমেনার সঙ্গেঁ, যাঁকে সে সময় উচ্চ বংশ, সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কুরায়শদের ভিতর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলা মনে করা হত। রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি সিরিয়া সফর থেকে ফেরার পথে মদীনা শরীফে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তথায় মৃত্যু বরণ করেন। ‘দার আল্ নাবেগা আলজা’দী’ নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

(আর রাহীকুল মাখতুম, ছফীউররাহমান মুবারকপুরী, পৃঃ ৫৩। ) হযরত আমেনা তাঁর জন্মের পূর্বেই এমন বহু নিদর্শন দেখতে পান যদ্বারা বোঝা যেত যে, তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ অত্যুজ্জল ও মর্যাদাকর হবে। ” (নবীয়ে রহমত- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী- ১১৩) জন্মঃ রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ হস্তি বাহিনীর অভিযানের বছর প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ মুতাবিক ৫৭০ খৃষ্টাব্দ সোমবার দিন সকালে জন্ম গ্রহণ করেন। এটি ছিল মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকোজ্জল ও বরকতময় দিন। ইমাম মুসলিম তাঁর প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ ‘সহীহু মুসলিম’-এ হযরত আবুকাতাদা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, এক বেদুইন বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সোমবারে সিয়াম (রোযা) পালন সম্পর্কে কি বলেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ এটি সে দিন যাতে আমার জন্ম হয়েছে এবং এতেই আমার কাছে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।

(সহীহ মুসলিমঃ হা/নং ১১৬২। ) উল্লেখ্য যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইতিহাস গ্রন্থসমূহে অনেক উক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহ) বলেনঃ “ইমাম মালিক (রাহ) ও অন্যান্য মুহাদ্দিসরা প্রসিদ্ধ তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুত্ইম থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল, রবিউল আওয়ালের ৮ তারিখ। অনেক ঐতিহাসিকগণ একথাকেই সঠিক মনে করেছেন।

হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মূছা আল খাওয়ারযমী এউক্তিকে অকাট্য বলেছেন। আর ইবনে দেহয়াহ এউক্তিকে প্রধান্য দিয়েছেন। ”(সহীহুস সীরাতিন নববীয়্যাহ, টীকা, পৃঃ ১৩। ) মিসরের প্রসিদ্ধ গণিতশাস্ত্র বিশারদ মাহমূদ পাশা একটি পুস্তিকা রচনা করেন যাতে তিনি গণিত বিদ্যার অকাট্য দলীল প্রমাণাদী দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল রবিউল আওয়ালের ৯ তারিখ মুতাবিক ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল। (সীরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী পৃঃ ১০৮) নাম করণঃ নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম হতেই মা আমেনা এসংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান।

সংবাদ পেতেই তিনি ছুটে আসেন, পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গেঁ কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। আরবে এনাম ছিল একেবারেই নতুন। ফলে লোকেরা খুব বিস্মিত হয়। (সীরাতে ইবনে হিশামঃ ১/১৫৯-৬০, ইবনু কাছীরঃ ১/২১০।

) যুবাইর ইবনে মুতায়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমি মুহাম্মদ, আহমদ, হাশির, আকিব, মাহি এবং খাতম। ” (মুসনাদে আহমদঃ ৪/৮১,৮৪/ ১৬৮৬৯,১৬৮৯২। ) দুগ্ধ পান কালঃ সর্ব প্রথম তাঁকে তাঁর মাতা হযরত আমেনা দুগ্ধ পান করান। অতঃপর আবুুলাহাবের বাঁদী ‘য়ুওয়াইবা’ তাকে দুগ্ধ পান করায়। অতঃপর ধাত্রীর সন্ধান করতে থাকেন।

‘হাওয়াযিন’ গোত্রের বানী সা’দ এর মহিলা হযরত হালীমা ছা’দিয়া এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হন। এমন ভাবে যে, অন্য কোন ধাত্রী শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণ করলনা পক্ষান্তরে হালীমা সাদীয়াও অন্য কোন শিশু পেলনা। ফলে বাধ্য হয়ে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গ্রহণ করলেন। গ্রহণ করার পর থেকেই হালীমার ঘরে ইলাহী বরকতের জোয়ার শুরু হল। দুবছর দুগ্ধ পানের পর বিবি হালীমা শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে তাঁর মার নিকট হাজির হন এবং সাথে সাথে এই আকাঙ্খাও ব্যক্ত করেন যে, শিশুকে আরো কিছু দিনের জন্য তাঁর নিকট যেন থাকতে দেয়া হয়।

এদিকে মক্কা শরীফে তখন মহামারী চলছিল। উভয় দিক চিন্তা করে বিবি আমেনা তাঁর শিশুকে হালীমার নিকট ফিরিয়ে দেন। এমনি ভাবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী সাদে লালিত পালিত হন। সেখানে তিনি তাঁর দুধ ভাইদের সঙ্গেঁ জঙ্গঁলে ছাগল চরাতেন। (সহীহ আল বুখারী, কিতাবুন নিকাহ, সীরাতুননবীঃ ১/১৭২।

) হালীমা সাদীয়ার পরিবারঃ হযরত হালীমা সাদীয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিল তাঁর স্বামী হারিছ ইবনু আব্দিল উয্যা এবং তাঁর চার সন্তান আব্দুল্লাহ, উনাইসা, হুযাইফা এবং হুযাফা (শায়মা)। রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পরিবারে প্রায় ছয়টি বছর অতিবাহিত করেন। হালীমা সাদীয়া (রাঃ) ও তাঁর স্বামী উভয়ে ইসলাম গ্রহন করেছেন। সন্তানদের মধ্যে আব্দুল্লাহ এবং শায়মা ইসলাম গ্রহন করেছেন। বাকী দুই জনের কথা জানা যায়নি।

(সীরাতুন্নাবী-আল্লামা শিবলীঃ ১/১১৯। ) বক্ষ বিদীর্ণঃ যখন তিনি বানী সাদে ছিলেন তখনকার এক ঘটনা। একদা তিনি জঙ্গঁলে ছাগল চরাতে গেলেন। তখন দুজন ফেরেশতার আগমন ঘটে। তাঁর সীনা মুবারক ফেড়ে ফেলা হয়।

তাঁর পবিত্র হৃৎপিন্ড থেকে গোশতের টুকরো কিংবা মাংস পিন্ডের মত একটি কালো বস্তু বের করে তাঁরা ছুড়ে ফেললেন। অতঃপর তাঁর হৃৎপিন্ড খুব ভাল করে ধুয়ে ও পরিস্কার করে স্ব স্থানে স্থাপন করে দেন এবং তা পুনরায় পুর্বের মতই হয়ে যায়। (সিলসিলা সহীহাঃ হা/৩৭৩। ) এই ঘটনার পর হযরত হালীমা রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মা আমেনার কোলে ফিরিয়ে দেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।