আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: মেয়ে তুমি কি আমায় ভালবাসো??

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! বিকালবেলা প্রতিদিনই মীম বারান্দায় এসে বসে । বিশেষ কিছু দেখে না । কেবল চেয়ে থাকে । মানুষ জনের যাওয়া আসা দেখে । হলে থাকলে অবশ্য বিকালে রুমে থাকা হয়না ।

ওর বান্ধবীরা কিছুতেই ওকে রুমে থাকতে দেয় না । এদিক ওদিক নিয়ে যায় । কিন্তু বড়মামার এই বাসায় আসলে ওর বিকাল বেলাটা এভাবেই কাটে । বারান্দায় বসে । আজও বারান্দায় বসে ছিল ।

মানুষ জনের আসা যাওয়া দেখছিল । ঠিক এমন সময় মীম ছেলেটা কে দেখলো । প্রথমে এজ ইউজাল দেখছিল । কিন্তু দ্বিতীয়বার ছেলেটার উপর চোখ পড়তেই মীমের মনে কেমন যেন এক অনুভূতি হল । তারপর আর একটু ভাল করে দেখে ওর সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিল না , সত্যি সত্যি মীম ছেলেটাকে দেখছে কিনা ? চোখের ভুল না ।

যখন বুঝতে পারলো চোখের ভুল না আসলে ও ছেলেটাকে খুজে পেয়েছে ওর পুরা শরীর জুরে এক ধরনের শিহরোন বয়ে গেল । বুক ধরফর করতে লাগল । ইচ্ছা হল এখনই দৌড়ে নিচে নেমে যেতে । কিন্তু ও কোন তাড়াহুড়া করল না । এখন যদি ও নিচে নামতেও যায় হয়তো ও ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলবে ।

তাই ওর বারান্দায় বসে দেখতে লাগল ছেলেটা কোন বাড়ির মধ্যে ঢোকে । সত্যি এতো দিন পর মীম এভাবে ছেলেটাকে খুজে পাবে তাও আবার এভাবে ? ও এমনটা ভাবতেই পারে নি । ছেলেটা আসতে আসতে হাটছে । মাথা নিচু করে । দুপকেটে হাত ঢুকিয়ে ।

সেদিন যাবার সময় ছেলেটা দুপকেটে হাত ঢুকিয়েই হাটছিল । হাটতে হাটতে ছেলেটা ঠিক অপজিট বিল্ডিং টায় ঢুকে পড়লো । তাহলে সে এখানে থাকে ! মীম আর দেরি করলো না । মোটামুটি দৌড় দিল নিচে নামার জন্য । ওর আর কোন দিকে খ্যাল নাই ।

ড্রইং রুমে ওর মামাতো বোন তিথি বসে ছিল । ওকে এভাবে বের হতে দেখে বলল “কই যাস এভাবে?” “আপু ওকে দেখেছি” । “ওকে ! কাকে ?” “ ঐ ছেলেটাকে” । তিথি বেশ অবাক হল । তিথি তার শান্ত শিষ্ট বোনটাকে এর আগে কথনও এতো উত্তেজিত দেখেনি ।

“সত্যি দেখেছিস ? ভুল হয়নি তো” । “না আপু বিশ্বাস কর । আমার একটুও ভুল হয় নি” । “ কোথায় দেখেছিস” ? “গলির মাথা ধরে হাটতে হাটতে আমাদের অপজিট বিল্ডিংটাতে ঢুকলো” । “আচ্ছা দাড়া ।

আমিও যাচ্ছি তোর সাথে । কিন্তু আগে তুই ড্রেস বদলা । এভাবে নিচে যাবি নাকি ?” মীম নিজের পোশাকের দিকে তাকালো । খানিকটা লজ্জা পেল । কেবল একটা টপ আর লেগিংস ।

এভাবে নিচে যাওয়া যায় নাকি ? টপখুলে একটা কামিজ পরল । তারপর নিচে গেল । তিথি সামনের বাড়ির দারোয়ান কে চিনতো । তাকে গিয়ে বলল “একটু আগে যে একটা ছেলে ঢুকলো ছেলেটা কয় তালায় থাকে ?” “ কালো ব্লেজার পরেছিল” । দাড়োয়ান বোধহয় চিনতে পারল ।

বলল “উনিতো এখানে থাকেন না” । “ তাহলে” ? “পাঁচতলার সামাদ সাহেবের ছেলেকে উনি পড়ান” । “ ও । প্রতিদিন আসেন” ? “প্রায় প্রতিদিন” । “ সন্ধ্যায় আসেন ?” “বেশির ভাগ সময়েই আসেন এই সময়ে” ।

“কতক্ষন থাকেন” ? “এই ধরেন দেড় দুই ঘন্টা” । তিথি বলল চল” দেড় ঘন্টা পরে আবার আসবো চল” । “ না আপু তুমি যাও । আমি এখানে ওয়েট করি “। “আরে খামোখা এখানে বসে থাকবি কেন” ? “না আপু আমি কোন চান্স নিতে চাই না” ।

তিথি খানিকটা অবাক হল । মীমের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আর কথা বাড়াল না । কেবল বলল “আচ্ছা আমাদের গেটের কাছে বসে থাকিস । ওখান থেকে তো এই গেট টা দেখা যাবে । চল ।

“ মীম নিঃশব্দে এগিয়ে গেল । ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে সত্যি সে ছেলেটার দেখা পেতে যাচ্ছে । আর তার থেকেও বেশি অবাক হচ্ছে যার নাম পর্যন্ত ও জানে না তার জন্য এতো টান দেখে । এই তো যেন সেদিনকার কথা । মীম ওর ক্যাম্পাসে ছিল ।

ক্লাস ছিল না । তাই নাট্য মঞ্চের পাশে বসে কি যেন একটা বই পড়ছিল । এমন সময় ছেলেটা ওর সামনে এসে দাড়াল । মীম মুখ তুলে চেয়ে দেখে শ্যামলা চিকন লম্বা একটা ছেলে । মোটামুটি সুদর্শন ।

প্রথম দেখাতে কারো খারাপ লাগবে না । “আমাকে কিছু বলবেন” ? ছেলেটা মাথা ঝাকাল । কিন্তু ছেলেটার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যে ছেলেটা খুব বিব্রত বোধ করছে । “আসলে যে কিভাবে কথাগুলো বলব । কিন্তু তার আগে প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না” ।

“ বলুন” । “আমি আসলে এখানে পড়ি না । কিছু বন্ধুদের সাথে আপনাদের এই ক্যাম্পাসটা দেখতে এসেছি । ওদের সাথেই ঘুরছি লাম এমন সময় আপনাকে দেখি । আপনাকে দেখার পর কেমন জানি অদ্ভুদ এক অনুভুতি হতে লাগল আমার মনের মধ্যে ।

এই অনুভূতির ব্যাখ্যা আমি কিছুতেই করতে পারলাম না । এরকম টা আগে কথনও আমার সাথে হয় নি । আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল আপনার সাথে আমার কথা বলতেই হবে । না বললে আমি যেন ঠিক মত বাঁচবো না । দম আটকে মারা যাবো” ।

ছেলেটা আর কি বলবে যেন খুজে পেল না । মীমও কি বলবে খুজে পেল না । ছেলেটা একটা গোলাপ ফুল ইতস্তত এগিয়ে দিয়ে বলল যদি এটা নিন তাহলে আমার খুব ভাল লাগবে । মীম গোলাপফুলটা নেওয়ার সময় ছেলেটার দিকে তাকাল । ছেলেটার চোখের দিকে তাকাল ।

ছেলেটার চোখ দেখে মনে হল ছেলেটা যেন সত্যি কথা বলছে । “আমি এখন যাই” ? যাই বলেও ছেলেটা চলে গেল না । “আমি তাহলে যাই ? আর আপনেকে বিব্রত করার জন্য আমি সরি” । বলে ছেলেটা পিছন দিকে হাটা দিল । কিন্তু পিছন ফিরে তাকাল আবার ।

তারপর আবার । মীম গুনলো মোট ছয়বার ছেলেটা পিছন ফিরে ওকে দেখল । মীমের হয়তো ভুলে যাবা উচিত্ ছিল । কিন্তু মীম ভুলে গেল না । বলতে গেলে ভুলতে পারলো না ।

ছেলেটার ঐ ইনোসেন্ট চেহারা সে কিছুতেই ভুলতে পারলো না । আসতে আসতে ঐ ছেলেটার চিন্তা ওকে পেয়ে বসল । সেদিন রাতে ঘুমুবার সময় মীম লক্ষ্য করল ওর ঘুম আসছে না । ঘুরে ফিরে কেবল ঐ ছেলেটার কথাই মনে আসছে । একবার মনে হল কি সব ছাই পাশ ভাবছে ও ।

কোথাকার কে না কে ? কি না কি বলে গেল ? আর ও গাধার মত রাতের ঘুম কামাই করে ঐ ছেলেটার কথা ভাবছে । আর ঐ ছেলেটা হয়তো ওর কথা চিন্তাও করছে না । কত মেয়ের সাথে এমন ভাবে লাইন মেরেছে কে জানে ? কিন্তু এই কথা মানতে মীমের মন সায় দিল না । মীমের মনে হল যেন এখন ছেলেটাও ওর কথাই ভাবছে । ও যেমন জেগে আছে ছেলেটাও জেগে আছে ।

ঐ দিন পুরো রাত মীম ছেলেটার কথা ভেবে কাটাল । পরদিন সকাল বেলা ঐ নাট্যমঞ্চের কাছে ছেলেটার জন্য ওয়েট করল । হয়তো ছেলেটা আবার আসবে ভেবে । ছেলেটা আর আসে নি । কিন্তু মীম ছেলেটাকে কিছুতেই আর ভূলতে পারল না ।

মীমও কতটা অদ্ভুদ ভাবেই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেল । মীম পুরানো কথা গুলো ভাবছিল । বাস্তবে ফিরে এল । এমন সময় মীম দেখলো ছেলেটা আসছে । মীম গেটের কাছে গিয়ে দাড়াল ।

ছেলেটা প্রথমে ওকে একবার দেখল । কিন্তু ভাল করে খ্যাল করল না । কিন্তু পরক্ষনেই ওর দিকে আবার ফিরে তাকালো । এবার একরাশ বিশ্ময় ছেলেটার চেহারা জুড়ে দেখা দিল । কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলতে পারল না ।

কতক্ষন এভাবে দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে ছিল বলতে পারবে না । মীম নিজেই এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে । “হাই” ! “ হাই” ! ছেলেটা কোন রকমে বলল । তারপর আবার দুজনে কথা হারিয়ে ফেলল । কিছুক্ষন পর এবার ছেলেটা নিরবতা ভাঙ্গল ।

“সত্যিই কি তুমি” ! মীম হাসল । “বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি” ? “সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না” । “যখন তোমাকে প্রথম দেখলাম তখন আমারও বিশ্বাস হয় নি । কিন্তু এখন বিশ্বাস হচ্ছে” । মীম দেখল ছেলেটা এখনও ওর দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে ।

ছেলেটার বিশ্ময় এখনও কাটে নি । “এসো হাটিঃ । গলির মধ্যেই ওর হাটতে লাগল । কিছুক্ষন হাটার পর ছেলেটা বলল “একটু সামনেই মিন্টু রোড । ঐ এলাকাটা আমার খুব পছন্দ ।

চল ওখানে যাই” । “ চল” । “ কোন সমস্যা হবে না তো” । “ না কোন সমস্যা নাই চল” । ওরা রিক্সায় উঠল ।

রিক্সায় যেতে মীম বলল “জানো তুমি আসবে এই আশায় আমি পরদিন ঐ নাট্যমঞ্চের কাছে গিয়ে ছিলাম” । “ সত্যি তুমি গিয়েছিলে” ? ছেলেটার মুখে একরাশ বিশ্ময় । “ হু” । “ আমি কি গাধা ! একটা বারও মনে হয় নি তুমি ওখানে যেতে পারো । তাহলে আরো কত তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হয়ে যেত”।

“তুমি গিয়ে ছিলে” ? মীমও অবাক হল । “ আমি তোমাদের ভার্সিটির প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের সামনে একেক দিন ওয়েট করতাম । মেয়েদের হলের সামনে ওয়েট করতে চেয়েছিলাম বাট ঐটা অশোভন মনে হয়েছে তাই হয় নি । যখন মনে হয়েছে আমার ভাগ্যে তোমাকে দ্বিতীয়বার দেখা হওয়া নেই , তখন চলে এসেছি” । মীম কোন কথা বলতে পারল না ।

কেবল চেয়ে থাকল ছেলেটার দিকে নিরবে । মিন্টু রোডটাতে পৌছানোর পর ছেলেটা বলল “জানো আমার অনেক দিনকার ইচ্ছা আজ পুরন হল” । “ কি ইচ্ছা” ? “দেখো এই এলাকাটা ঢাকার অন্য এলাকা গুলোর মত না । আমার অনেক দিনের শখ এই রাস্তাটা ধরে আমার প্রিয় মানুষটার সাথে হাটবো । আজ সেটা পূরণ হল” ।

মীম হাসল । কিছুক্ষন ওরা নিরবে হাটল । এক সময় মীম বলল “আচ্ছা তুমি আমার নাম জানো” । ছেলেটা মাথা নাড়াল । “একজন মানুষের সম্মন্ধে তুমি কিছুই জানো না ।

এমন কি নাম পর্যন্তও না , তাহলে সে তোমার প্রিয় মানুষ হয়ে গেল” ? এবার ছেলেটা বলল “তুমি আমার নাম জানো” ? “ না” । “ তাহলে” ? “তাহলে কি” ? “তাহলে আমার সাথে যখন তোমার দেখা হল তোমার চোখমুখে ওমন একটা আনন্দের আভা ছিল কেন ? আমার জন্য সেদিন ওয়েট কেন করেছিলে”? মীম কোন জবাব দিতে পারল না । ছেলেটা এতোক্ষন মীমের পাশাপাশি হাটছিল । এবার ও মীমের সামনে দাড়াল । ওর চোখে চোখ রেখে বলল “আমি তোমার সম্পর্কে কিছুই জানি না ।

কেবল এইটুকু জানি যে ঐ দিন তোমাকে দেখার পর থেকে আমার জীবনে ভালবাসার মানে হচ্ছ তুমি । তোমার সাথে যদি আমার আজ কিংবা কোন দিন দেখা নাও হত তাহলেও আমি তোমাকেই ভালবাসতাম । মেয়ে তুমি কি আমাকে ভালবাসো” ?? (সমাপ্ত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.