আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আ’লীগ নেতার ৫২ কর্মী দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর পাহারাদার

মনের মহাজন খুঁজে ফিরি.... রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ১৫০০ যৌনকর্মীর নিরাপত্তায় রয়েছে ৫২ পাহারাদার। নীল রংয়ের শার্ট গায়ে কারো কারো হাতে লাঠি মানুষগুলো চোখে পড়ে যৌনপল্লীতে ঢোকার পরপরই। পল্লীর বাসিন্দা এবং যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করছে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠনের সভানেত্রী মনি বেগম বাংলানিউজকে বলছিলেন, এই যৌন পল্লীর নিরাপত্তাহীনতার কথা। তিনি জানান, নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সব সময় শঙ্কায় থাকি। আগে কমিউনিটি পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও এক অজানা কারনে এখন কমিউনিটি পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে না।

জানা গেলো, কমিউনিটি পুলিশ তুলে দিয়ে তাদের পরিবর্তে এখন ৫২ জন পাহারাদার এই এলাকার দায়িত্বে রয়েছে। যাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা। মনি বেগম বলেন, এতে নিরাপত্তা কিছুই নিশ্চিত করা যায়নি। আমরা বার বার স্থানীয় থানায় এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশ উঠে যায় এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম মন্ডল হয়ে উঠেন এই যৌনপল্লীর দ-মু-ের কর্তা। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও চলে আসে তার কব্জায়। গঠন হয় নিজস্ব নিরাপত্তা দল। নীল শার্টে লাঠি হাতে যাদের দেখা যায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে। প্রতিদিন পল্লীতে আসা খদ্দেরদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা তোলে এই দলের কর্মীরা।

টোকেন সিস্টেম। জন প্রতি ২০ টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে খদ্দেরের কাছ থেকে। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ঢুকতে পাঁচটিট গেট রয়েছে। এই সব গেটে বসে থাকে পাহারাদাররা। সেখান থেকেই তোলা হয় টাকা।

ভিতরে ঘুরে ঘুরেও টাকা তুলতে দেখা যায় অনেককে। পল্লী ঘুরে দেখা যায়, দুপুর দুইটার পর লাল মিয়া, মানিক, নিজাম, রশিদ, মফিজ ও স্বপনের পরিচালনায় ৫২ জন পাহারাদার গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন রংয়ের টোকেন দিয়ে জন প্রতি ২০টাকা করে তুলছে। সংশ্লিষ্টদের হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার টোকেন বিক্রি হয় যার মূল্য ৪০হাজার টাকা। অভিযোগ, সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শ্রেফ চাঁদাবাজি করছে এরা। এবং যৌনপল্লীতে যেকোন ঘটনার বিচারও তাদের হাতে।

সবকিছুই তাদের ইচ্ছামতো চলে। যৌনপল্লীর বাড়ীওয়ালী ও সাধারন যৌনকর্মীরা এদের কাছে জিম্মি এবং অসহায় হয়ে আছেন। পাহারাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। কোন খদ্দের যদি এদের কথা না মানে তাহলে তাকে নির্যাতন করা হয়। তাই ভয়ে বাধ্য হয়ে এই পাহারাদার গ্রুপের কথামত চলতে হয় সবাইকে।

যৌনপল্লীতে প্রবেশ করার প্রধান গেটে এদের একটি অফিস আছে এবং সেখান থেকেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ হয়। পাহারাদার গ্রুপের নেতা মফিজ, স্বপন ও মানিকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, মো. নুরুল ইসলাম মন্ডল আমাদের চাকরি দিয়েছে। আমরা যা করি তার নির্দেশ মত করি। আমরা দিন মজুর মাত্র। সারা রাত ৩০০টাকা বেতনে চাকরি করি।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে টিকিট বিক্রি করে যা আয় হয় তার সর্ম্পূণ টাকা আমরা তার কাছেই দিয়ে দেই। এই পল্লীতে যা আয় তার সব কিছুর হিসাব তাকে দিতে হয়। যাকে যাকে ম্যানেজ করার দরকার সে করে। আমরা তা বলতে পারবো না। স্থানীয় কয়েকজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এই পদ্ধতিতে পল্লীতে প্রতিদিন অবৈধভাবে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় হয়।

পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই এই গ্রুপ গত তিন বছর ধরে এমন চাঁদাবাজী করছে। এমনকি তাদের কোনো দায়িত্ব নিতেও রাজি নয় পুলিশ। এই পাহারাদারদের বিষয়ে স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা থেকে বলা হয়, ‘তারা আমাদের কেউ না। ’ তবে অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গেই সারাক্ষণ দেখা যায় তাদের। এর আগে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে এই দ-মু-ের কর্তা ছিলেন আরেকজন।

নাম সাঈদ। তার নেতৃত্বেই সেসময় চাঁদাবাজী চলতো। মাঝে জরুরি অবস্থার মধ্যে বন্ধ হয় চাঁদাবাজী। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার শুরু হয় চাঁদা নেওয়া এবং এখন সেটা নিচ্ছেন নুরুল ইসলাম মন্ডল। এ দিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়ালন্দঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নুরুল ইসলাম মন্ডলের পাহারাদার বাহিনী গঠিত হয়েছে আমি এখানে আসার অনেক আগেই।

তারা কীসের ভিত্তিতে কার কাছ থেকে কতো টাকা নিয়ে থাকে আমি সঠিক বলতে পারবো না। তবে যে কোন অপরাধের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। এ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আবুল বাশার বলেন. কোনো অভিযোগ পেলে তার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো। অপর দিকে নুরুল ইসলাম মন্ডলের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যা। যৌন পল্লীর নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছে।

এরা কতো করে টাকা পায় তাও আমি জানি না। ’ পাহারাদার সবাইকে আপনি নিয়োগ করেছেন এমন প্রসঙ্গে কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন এবং এর আশেপাশের ইউনিয়নের লোকও এখানে আছে। মূলত, পল্লীর নিরাপত্তার জন্যই এই পাহারাদার নিয়োগ করা। ’ খদ্দেরদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরা এই টাকা দিয়েই সংসার চালায়। চাঁদার টাকার বড় অংশ তাকে দেওয়া হয় এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম ম-ল বলেন, ‘এই ধরনের টাকা আমি খাই না এবং চিন্তাও করি না।

না জেনে এবং আমাকে বিপদে ফেলতেই এ অভিযোগ করা হয়েছে। ’ সূত্র: বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।