আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলি...

এ আকাশ এমন আকাশ, কখনো ছায় মেঘে- সে আবার সুখেই ভাসে, দখিন হাওয়া লেগে (সিনেমা রিভিউ- ২ আজকের ব্যাবচ্ছেদ আরও দুটি বিপুল জনপ্রিয় নব্বই দশকের সিনেমা নিয়ে। প্রথমেই জীবন রহমানের রোমান্টিক অ্যাকশন প্রেম যুদ্ধ (১৯৯৪)। গড়পড়তা নায়িকা লিমা আর হার্ট থ্রব সালমান শাহ। ইমতিয়াজ বুলবুলের কারিশমা আগুনের কণ্ঠে “ওগো মোর প্রিয়া, জেনে রাখো তুমি/ তুমি ছাড়া এ প্রাণ রাখব না আমি, তুমি শুধু তুমি এই অন্তরে...” অনন্য গানটি একদম শুরুতেই। এতে নির্ধারিত হয় লিমা-শাহ প্রেম আগে থেকেই।

তাহলে স্পষ্ট, প্রেম নিবেদন নয়, বরং প্রেম পরবর্তী জীবন গাঁথা এবং তা পুনরুদ্ধার এ সিনেমার মূল ধারা। নানা মিষ্টি খুনসুটির মধ্যে কাহিনী গড়ায় সালমান-লিমার পরিণয়ে। এরই মাঝে সালমানের জীবনে ঝড়, পূর্ব শত্রুতায় ভিলেন ডন খুন করে তার বাবা- বোন কে। কোন কারণে মাজারে থাকা লিমাকে খুঁজতে বেরোয় সালমান, পথিমধ্যে ডন। ফলাফল, সালমানকে অজ্ঞান করে ফেলে সাগরে গুম করে ফেলে ডন।

এরই সাথে কাহিনীর ২য় পর্ব। সন্তান সম্ভবা লিমার বিয়ের আয়োজন হয় ৩য় পক্ষের সাথে। অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়া সালমানের শুরু হয় প্রেম পুনরুদ্ধার যুদ্ধ। সাগর সৈকতে মার্শাল আর্ট চর্চা আর মনে মনে লিমাকে খোঁজা। সালমান পুত্রের পাকা অভিনয়, তার বাবার সাথে মাকে খুঁজে বের করা, অসাধারণ- দুর্দান্ত।

প্রেম যুদ্ধ ছিল সাল্মানের বিদ্রোহী চরিত্রের এক প্রতিচ্ছবি। ছবিটির ফিনিশিং দারুণ সুন্দর, রোমাঞ্চে ভরপুর। বাকি বিস্তারিত নাই বা বললাম... গানঃ তুমি আমার জীবন মরণ তুমি আমার আশা, তুমি আমার জান আমার প্রাণ... এ যুগের শাহজাহান আমি যে, তুমি মমতাজ... এরকম শ্রুতিমধুর গান ছিল। দুর্বল দিকঃ নায়িকা লিমাকে আমার কোন সিনেমাতেই ফিট মনে হয়নি কখনো, স্থূলতা খুব বেশি, সাবলীলতাও খুব কম। সবল দিকঃ ভীষণ শক্তিশালী কাহিনী প্রবাহ।

নির্ভেজাল প্রেমের তীব্র যুদ্ধ। সালমান এবং তার ছেলের হৃদয় কাড়া অভিনয়। শেষের মিলও খুব মর্মস্পর্শী। এবার আসবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের অনবদ্য রসায়ন রুবেল-মৌসুমি-ওমর সানীর উল্কা সিনেমা। ত্রিভুজ প্রেমের আকশন-কমেডি এ উল্কা।

ছবির এক পর্যায়ে দেখা যায় ময়ূরীকে (খুব সম্ভবত প্রথম ছবি), যে কিনা সানীকে মিথ্যে ভালোবাসায় জড়াতে চায়। আমি নিশ্চিত নই, এটাই তার প্রথম সিনেমায় অভিনয় কিনা! যাই হোক, প্রথম অংশ রুবেল- সুমির, পরের অংশ সুমি- সানীর, তাতে সুমি-সানির জয় হয়। আন্ডারওয়ার্ড বস রুবেল শিল্পী মৌসুমির স্টেজ শো দেখে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে। বার বার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত রুবেল সুমির পরিবার তছনছ করে দেয়। তবুও অনড় সুমি।

ভীষণ অত্যাচারে সুমি একসময় সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে গানের তালিম নিয়ে তার স্টাইল পাল্টে ফেলে। দেশ বরেণ্য সেলিব্রিটি হয় তানি (সুমি)। এ অংশে আসে ঐতিহাসিক লাটিম মিয়া খ্যাত ওমর সানী। গ্রামের বোকা সানী সুমির গানের পাগল ভক্ত, তার ছবি কেটে রাখে। বিয়ের স্বপ্ন মনে লালন করতে থাকে সে।

ঘটনা প্রবাহে জীবনে প্রথম শহরে যায় সুমি কে খুঁজতে। সেখানে দিলদারের আশ্রয়ে শুরু হয় সুমি কে খোঁজা। নানা অসাধারণ হাসির ঘটনা ঘটতে থাকে। সুমির বাসায় সানী যা যা করে, তাতে তাকে পেশাদার কমেডিয়ান না বললে ভুল হবে। সুমি গাড়িতে যেতে বললে “আমার একটু বেসুবিধা আছে”, লিফট দেখে- “এই ডা আবার কি মেশিন রে বাবা!”- এরকম রসাত্মক কথা মালা সানীকে রোমান্টিক নায়কের ছায়া থেকে কমেডিপনায় ১০০ তে ১০০ দেয়।

সানীর এ সারল্য ভালো লাগে সুমির। তাদের প্রেম হয়ে যায়, তখনো কিন্তু সানী বোকা। এক পর্যায়ে সুমি খোঁজে পাগল রুবেল পেয়ে যায় সানীকে। শুরু হয় সানীকে মানুষ করার পালা। রুবেলের গাইডে সানী স্মার্ট হয়ে যায়, একদম স্বাভাবিক।

ততক্ষণে রুবেল নতুন চাল চালে- সুমিকে তুলে নিয়ে যায়, আর সানীকে সাগরে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়। ঘটনা বিন্যাসে সানী তার ভালোবাসা সুমিকে না পেয়ে, রুবেল কে সন্দেহ করে এবং তার কাছে যায়। এরপর শুরু হয় রুবেল-সানী দ্বন্দ্ব যুদ্ধ। আহ, দুর্দান্ত বাংলা সিনেমায় বুঝি প্রথম দুই ঘরানার নায়কের একসাথে অভিনয়। শেষ পর্যন্ত সানি-সুমির প্রেমের কাছে হার মানে রুবেল নিজে, আত্মহত্যা করে।

দুর্বলতাঃ ওমর সানী কেন যেন সব সময়ই ন্যাকা, নাকে কথা বলে। রুবেলের রহস্যময় অভিনয়। সবল দিকঃ তিনজন সুপার স্টারেরই বলিষ্ঠ অভিনয়, অসাধারণ কম্বিনেশন। গান গুলোও জনপ্রিয়, আমি তোমাকে... তোমাকেই শুধু চাই... যার মধ্যে একটি। ক্ষুধা সিনেমার অসঙ্গতি এ সিনেমায় সম্পূর্ণ উধাও করে দেন গাজী মাজহার।

ওমর সানীর কমেডি দুর্দান্ত, কোন দর্শক যা আগে কখনো দেখেনি। সবাই বলে, ধুর- বাংলা সিনেমার কি দেখে? তাদের জন্য রইল এ দুটি সিনেমার আমন্ত্রণ। বিফলে মূল্য ফেরত!! এরকম আরও বহু শিক্ষণীয় বাংলা ছবি আছে, যা সোনালি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।