আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে ভিওআইপি ব্যবসা

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে ভিওআইপি ব্যবসায় করা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিটিআরসির পাওনা ২০০ কোটি টাকা। গত অক্টোবরের দিকে বিটিসিএল এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি ভাঙাতে গিয়ে এ মহালুটের খবর পায়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ভিওআইপি ক্যারিয়ারগুলোর কাছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা পাবে।

যার বিপরীতে তাদের কাছে ব্যাংক গ্যারান্টি রয়েছে মাত্র ২০০ কোটি টাকার; তাও আবার এর ৮০ শতাংশ ভুয়া। এ রকমই একটি ক্যারিয়ার রাজটেক লিমিটেডের পাপে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন সোনালী ব্যাংক বাড্ডা শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ আবদুস সালাম। রাজটেক ওই ব্যাংক শাখার নামে একটি ভুয়া গ্যারান্টি জমা দেয়। যার সাথে ওই ব্যাংকটির কেউ জড়িত নন। গত বছরের নভেম্বর মাসে বিটিসিএল থেকে গ্যারান্টি অ্যানক্যাশমেন্টের জন্য ব্যাংককে চিঠি লেখে।

ব্যাংক থেকে কোনো রকমের তদন্ত ছাড়াই যে শাখার নামে ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে তার ম্যানেজারকে সাময়িক বরখাস্ত করে। অথচ এর আগে বিটিসিএল পরিচালকের (অর্থ ও হিসাব) হোসাইন টেলিকম নামে একটি ক্যারিয়ারের ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়ে ব্যাংকের বাড্ডা শাখায় জানতে চাওয়া হয়। গত বছরের ৩১ মে এক চিঠিতে ওই ব্যাংক গ্যারান্টি যে ভুয়া তা জানিয়ে দেন ব্যাংকটির ম্যানেজার। কিন'রাজটেকের ক্ষেত্রে ব্যাংক শাখার কাছে এ রকম ব্যাখ্যা না চেয়েই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্তকৃত ম্যানেজার মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ভুয়া এ ব্যাংক গ্যারান্টির সাথে তার বা তার ব্যাংকের শাখাটির কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

রাজটেক ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি সাবমিট করে বিটিসিএলের সাথে প্রতারণা করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজটেক ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে ব্যবসায় করলেও বিটিসিএলে পাওনা ৪৫ কোটি টাকা আদায়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। গত বছরের ১০ নভেম্বর বিটিসিএল রাজটেককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে পাওনা পরিশোধ না করলে তাদের বিষয়ে ব্যবস'া নেয়া হবে। প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টির জন্য রাজটেকের ব্যবস'াপনা পরিচালক হাসিবুল বাসার ও বাড্ডা শাখা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংকের প্রধান শাখার জেনারেল ম্যানেজার নওশের। বাড্ডা থানায় মামলাটি করা হয়েছে, যার নম্বর ৪১।

কিন' বিটিসিএল এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আইন পদক্ষেপ নেয়নি। এ রকম আরো অনেক সঙ্কট রয়েছে ভিওআইপি-বাণিজ্য নিয়ে। বিটিসিএল জানায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর এ বিষয়ে একটি তালিকা তৈরি করে তারা। তালিকায় ৫৪টি ক্যারিয়ারের কাছে বিটিসিএলের বকেয়া পাওনা দেখানো হয়েছে ৪৯৫ কোটি ৮৩ লাখের বেশি। অথচ এই ক্যারিয়ারগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত বিটিসিএলের ব্যাংক গ্যারান্টি দুই কোটি ৫৭ লাখ ৫৯ হাজার ডলারের।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি সাব কমিটি বলছে, এ তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়। আরো অনেক হিসাবই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে যাদের ব্যাংক ড্রাফটের চেয়ে পাঁচ গুণ বিল বকেয়া পড়েছে। অন্য দিকে ব্যাংক গ্যারান্টিবিহীন প্রিপেইড পদ্ধতির ক্যারিয়ারগুলোর ক্রেডিট অনেক আগে শেষ হওয়ার পরও তাদের টেলিফোন কল নিচ্ছে বিটিসিএল। এভাবেও পাওনার পরিমাণ বাড়ছে কয়েক শ’ কোটি টাকা।

নিয়মানুসারে প্রতি মাসে বিল আদায় করার ব্যবস'া রাখা হলেও তিন বছর আগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এমন কোম্পানির কাছেও শতকোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বিটিসিএলের। ২০০৮ সালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইংল্যান্ডের টেলিলিংকের কাছে এখনো তিন লাখ ৪০ হাজার ডলারের বকেয়া রয়েছে। কিন' এ টাকা আদায়ে কোনো উদ্যোগই নেয়টি বিটিসিএল। অবৈধ আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন-সংক্রান্ত সংসদীয় সাব কমিটির বৈঠকে ক্যারিয়ারের হিসাবসংক্রান্ত বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে। জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির গত কয়েকটি বৈঠকে এ নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে বিটিসিএল।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু ক্যারিয়ারের সংযোগ নতুন করে বিচ্ছিন্ন করে তারা। সব মিলে বকেয়া আদায় না হওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ক্যারিয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২টি। আর সংযোগ বিচ্ছিন্ন এসব ক্যারিয়ারের কাছে বিসিটিসিএলের পাওনা এক কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার ডলার। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অনেক ক্যারিয়ারও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোনো টাকাই আদায় করছে না বিটিসিএল।

ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে ডিজিটেক নামে একটি ক্যারিয়ার অনেক আগে থেকে ব্যবসায় করে আসছিল। অথচ তাদের কাছেই বিটিসিএলের এক কোটি পাঁচ লাখ ডলার বকেয়া রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স'ায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানির সাথে প্রতারণা করা ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে। কিন' রহস্যজনক কারণে বিটিসিএল এ বিষয়ে কোনো ব্যবস'াই নিচ্ছে না।

জানা গেছে, ক্যারিয়ারগুলোর কাছে বিটিসিএলের ২২টি এসটিএম-১ ও ৩৪৭টি ই-১-এর সংযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এমন ক্যারিয়ারের কাছেও এখনো তাদের এসটিএম-১ ও অনেক ই-১ রয়ে গেছে। এমন অন্তত ৯টি ক্যারিয়ার পাওয়া গেছে, যাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও তারা বিটিসিএলের এসটিএম-১ ও ই-১-এর সেবা নিচ্ছেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন কোম্পানির কাছে বিটিসিএলের একটি এসটিএম-১ ও ৯০টি ই-১ রয়ে গেছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.