আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরু আসে বিএসএফ-এর সঙ্গে বোঝাপড়া করেই, গুলি হয় সমঝোতা না হলে---আসেন ভারতীয় পন্য বজৃন করতে হলে গুরু খাওয়া ছাড়ি-নইলে কিন্তু হবে না।

ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা সীমান্তে সমঝোতা করেই বাংলাদেশে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসে। বিএসএফ-এর সঙ্গে অলিখিত বোঝাপড়া এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীদের কাছে গরু বিক্রি করে থাকে। লাইসেন্স, পারমিটধারীরাও একই পদ্ধতিতে গবাদিপশু এনে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, এ ধরনের গোপন সমঝোতা ছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় গরু প্রবেশ অসম্ভব। ভারত থেকে গরু আনা এবং বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীদের বিএসএফ-এর গুলির শিকার হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে।

এ প্রতিবেদনের উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গরুর অবৈধ ব্যবসায় গোপন বোঝাপড়ার অভাব থেকেই গরু ব্যবসায়ীরা বিএসএফ-এর গুলির শিকার হয়। শতকরা ৯৯ ভাগ গরু ব্যবসায়ীই গরু আনতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যায়। একমাত্র লাইসেন্স, পারমিটধারী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে গরু আমদানি নিশ্চিত করা হলে সীমান্তের ওপার থেকে লুকিয়ে গরু আনা অনেক কমে যাবে। গুলিবর্ষণ, প্রাণহানির ঘটনাও অনেক কমবে। লাইসেন্স, পারমিটধারী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তিদের অবৈধভাবে গরু আনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী দেশের ২৬টি গবাদিপশুর শুল্ক করিডোর রয়েছে। গরুপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক দিয়ে এসব করিডোর দিয়ে বৈধভাবে গরু আনা হয়। কিন্তু বৈধ প্রক্রিয়ায় করিডোরগুলোর বাইরে বিভিন্ন জেলার সীমান্ত পথে প্রচুর গবাদিপশু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এভাবে ব্যবসায়ীরা গরুপিছু ৫০০ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এ ৫০০ টাকা ফাঁকি দিতে তারা জীবনবাজি রেখে গরু এনে থাকে।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিএসএফ-এর সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া আগেই করে নেয়া হয়। তা না হলেই বিএসএফ গুলিবর্ষণ, প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। অবৈধ পথে গরু আনা বন্ধ করতে বিজিবি কার্যকর ভূমিকা সব সময় রাখতে পারছে না। বাংলাদেশের পারমিট, লাইসেন্সধারীরাও এর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে না, বিজিবিকে দ্রুত অবহিত করে না। এর কারণ তারা নিজেরাও করিডোরের পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথেও গরু এনে থাকে।

বিজিবির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়নি, সীমান্তে নিয়োজিত এ বাহিনীর সদস্যরা এ অসাধু প্রক্রিয়ার সঙ্গে কতটা জড়িত এবং কিভাবে তা বন্ধ করা যায়। অবৈধ পথে বাংলাদেশে কত সংখ্যক গবাদিপশু আসে তার কোন পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। তবে কাস্টমস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধারণা- বছরে কয়েক লাখ গরু অবৈধ পথেই এসে থাকে। বৈধ পথে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ হাজার গরু আসার তথ্য দেখানো হয়। ধর্মীয় বিধিনিষেধের জন্য ভারত থেকে সরকারিভাবে গবাদিপশু রপ্তানি নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশ সরকারও সরকারিভাবে এলসি’র মাধ্যমে গবাদিপশু ভারত থেকে আমদানি করতে পারছে না। ৫০০ টাকা করে আদায় সাপেক্ষে সীমান্তবর্তী শুল্ক করিডোরের মাধ্যমে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশের বৈধতা দেয়া হয়। ভারত থেকে নিয়ে আসা গরু প্রথমে বিটে আনা হয়। বিট নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। জেলা, আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিটের লাইসেন্স দেয়া হয়।

এ বিট নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ভূমিকা নেই। বিজিবির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিটে যত গরু আনা হয় তার সবগুলোর জন্য নির্ধারিত ৫০০ টাকা করে দেয়া হয় না। ৫০০ টাকা দিয়ে একটি গরু পার করার আড়ালে দু’টি, তিনটি গরুও পার করে নেয়া হয়। এতেও সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজিবি এ প্রথা বাদ দিয়ে এলাকাভিত্তিক লাইসেন্স, পারমিট প্রথা চালু করার সুপারিশ করেছে।

এতে গবাদিপশু আনা অনেকটা নিয়মমাফিক ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। লাইসেন্স, পারমিটধারীদের শূন্য লাইনে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া যাবে। বর্তমানে শতকরা ৯৯ ভাগ ব্যবসায়ীই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গরু আনতে যায় এবং অনেক সময় বিএসএফ-এর গুলির শিকার হয়। গবাদিপশুর ব্যবসা সীমান্ত শূন্য লাইনে হলে মৃত্যুর হার সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে বিজিবি অভিমত প্রকাশ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজিবির প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনায় নিয়েছে।

তবে লাইসেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে তা নিয়ে গরু আনার অনুমতি দেয়া প্রচলিত আইন, বিধিবিধান ও আমদানি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু মানবজমিনকে বলেন, সীমান্তে চোরকারবারি, গরু পাচারের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করেই এসব অঘটন ঘটছে। সীমান্তবর্তী দু’দেশেরই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয় লোকজনকে ব্যবহার করে চোরাকারবারিসহ নানা অসাধু কার্যক্রম করে আসছে। বিরাট সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা কঠিন হলেও বিজিবিকে সে নিদের্শই দিয়েছি। সীমান্ত চৌকি বাড়ানো হচ্ছে।

সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। সে উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। বিজিবি হাবিলদার, চোরাকারবারিদের ধরে নিয়ে আটক রাখা এবং এক বাংলাদেশী যুবককে নির্বাতনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের দ্রুত ও বলিষ্ঠ হস্তক্ষেপের ফলেই তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পারস্পরিক নিয়মিত যোগাযোগ এবং সীমান্তে টহল বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।