আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনি যখন অভিভাবক-১

দেশটা নয়তো কারো বাপের ভিটা, করবে মন চাইলে যখন যেটা ভাই জানেন, আমার দুই বছরের বাচ্চাটি অসম্ভব রকমের বুদ্ধিমান। বাসায় ফিরবার সাথেই আমার মোবাইলটি হাতে নিয়ে খেলতে শুরু করে। আমার মনে হয়, এমন কোন ফাংশন বাকী নেই যে ও জানেনা। আমাদের এই বয়সে আমরা এতটা চিন্তাই করতে পারিনি। আরেকজন বলে, আমার দেড় বছরের বাচ্চাটির কথা কি বলব।

আমি বাইরে থেকে ওর মাকে ফোন করলে আগে তো ওই রিসিভ করবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তো মেঝেতে গড়াগড়ি আর সে কি কান্না। আসলে কি ভাই ডিজিটাল যুগের বাচ্চাতো। তাই বোধ হয় এমন করে। এ জাতীয় কথার সাথে খুবই পরিচিত ইদানীং কালের সদ্যর্জিত সন্তানের অভিভাবক।

সন্তান জন্ম দিলে বাবা-মা হওয়া সহজ ব্যাপার হলেও একজন সত্যিকারের অভিভাবক হওয়াটা সম্ভবত বেশ কষ্টসাধ্য। একজন অভিভাবককে তার সন্তানের সকল ভাল-মন্দ বিচার করবার যোগ্যতা থাকতে হয়। বাচ্চার মনে যা আসবে তাই চাইবে বলেই সে সন্তান কিন্তু একজন অভিভাবক কোন কিছু দেবার আগে অনেক কিছুই ভাববে, এটাই স্বাভাবিক। একজন সত্যিকারের অভিভাবককে তার সন্তানের উপকারার্থে যে বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হয় তা আমার সীমিত জ্ঞানের ওপর ভর করে আপনাদের খিদমতে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরলাম।  অনেক সময় শিশুটি কিছুই বোঝেনা এমনটা ভেবে তার সামনে বাবা-মা আপত্তিকর কথা বা অপরিচিত শব্দ অথবা অনাকাঙ্খিত আচরণ প্রকাশ করেন।

এটি শিশুর মনে দারুণ প্রভাব পড়ে। এ ব্যাপারগুলো খুব সহজেই শিশুরা ভুলতে পারেনা এবং সুযোগ পেলে তার অবচেতন মনে সেটা প্রয়োগ করে। সেদিন এক শিশুকে তার মা প্রহার করতে উদ্যত হলে, শিশুটি বলে, “তুমি অনেক ভাল সোনা। রাগ করেনা। এরকম আর হবেনা।

”। মা প্রহারের পরিবর্তে আৎকে উঠেছে, এ জাতীয় কথা শুনে। পরক্ষণেই মনে পরেছে, সে অনুকরণ করেছে মাত্র। সুতরাং একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সামনে যা করা বা বলা ঠিক নয় ঠিক তেমনি শিশুদের বেলায়ও সমানভাবে প্রযোজ্য।  ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা অনুকরণে গড়ে ওঠা এ জাতীয় বিদ্যাপীঠের শিশুরা তাদের সিলেবাসকৃত বইয়ের বোঝায় নুয়ে পড়েছে।

এতগুলো বই আমি পড়তে পারিনি, আমার সন্তানতো পড়ছে এ জাতীয় ভাবনার মাঝে অভিভাবকগণ আত্বতৃপ্তি বোধ করেন। শিশুর উপর ভারাতিরিক্ত বইয়ের বোঝার কারণে তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাতে নেমে আসে স্থবিরতা। বিশেষ করে মায়ের ভুমিকা এক্ষেত্রে অনেক বেশী দেখা যায়। পাশের বাড়ির ভাবীর বাচ্চাটা সব সাবজেক্টেই এ প্লাস অথচ আমার বাচ্চা দুটাতে এ মাইনাস। এ জাতীয় চিন্তায় মায়েরা অনেক বেশী ভোগেন।

যেভাবেই হোক আগামী পরীক্ষাতে আমার সন্তানকে সব সাবজেক্টে এ প্লাস পেতেই হবে। মায়ের এ জাতীয় মনোবাসনা পুরণার্থে শিশুটি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহ্নত হয়। অনেকক্ষেত্রেই এ জাতীয় মানসিক চাপে শিশুরা স্বাভাবিক প্রতিভা বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। সবাই যদি তার সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর কর্ণেল বানানোর নিয়তে এভাবে সব সাবজেক্টে এ প্লাস আর প্রথম হতে চাপ প্রয়োগ করেন তাহলে ভাবতে পারেন আগামীতে কার ঘর থেকে কবি নজরুল, ফররুখ, উমার খাইয়াম আসবে। এ কারণে একজন অভিভাবককে প্রথমত অনুধাবন করতে হবে আমার বাচ্চা কতটুকু চাপ সহ্য করবার মত।

যে পরিমাণ সে সহ্য করতে পারে তাতেই অভিভাবকদের সন্তুষ্টি থাকা উচিত।  আমার বাচ্চাটি একদম খেতে চায়না, এভাবে প্রত্যেক বেলা কি জোর করে খাওয়ানো সম্ভব। এ রকম চিন্তায় পরেছেন বা করছেন, এমন অনেক অভিভাবক আছেন। ঘর থেকে বের হলেই আইসক্রিম, চকলেট, চিপস তার জন্য বাজেট রেখেছেন। এসব লোভনীয় খাবারগুলোর মাত্রাতিরিক্ততা গ্রহণে শিশুর ক্ষুধামন্দা তৈরী হয়।

ফলে তাকে স্বাভাবিক খাবারের সময় অনেক যুদ্ধ করে খাওয়াতে হয়। তাই বাইরের খাবার দেখতে অনেক লোভনীয় হলেও বা বাচ্চার অনেক আবদার থাকাসত্বেও আপনি একজন অভিভাবক হিসেবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। যথাসম্ভব সংযত থেকে তাকে ইতিবাচক ভঙ্গিমায় বোঝাতে হবে। তবে মাঝে মাঝে তার বৈধ দাবী পুরণ করতে হয়, অন্যথায় তার মন ছোট হয়ে যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।