আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারত বাংলাদেশে শুধু গরুই পাচার করে না - বছরে ৮শ কোটি টাকার ফেন্সিডিলই পাচার করে -৩টি সরেজমিন প্রতিবেদন।

Digital Bangladesh Warriors - fb.com/openbd ২০০৯ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ সংখ্যা ছিল ৫০ লাখ। এদিকে গত দুই বছরে শুধু ইয়াবাসেবিই যোগ হয়েছে ৩০ লাখ। আজকাল গ্রামে গঞ্জে ছরিয়ে পরেছে ইয়াবা হেরোইনের মত নেশা। কৃষকের ছেলেদের আজ ইয়াবা আর মুজুরের ছেলেদের হেরোইন ধরিয়ে দিয়েছে। মন্ত্রী এমপি ও সরকারী দলের লোকজন আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে যৌথ্য বানিজ্য হিসাবে গ্রামেগঞ্জে পৌছে দিচ্ছে এসব মাদকের চালান।

মন্ত্রীর ছেলে/মেয়ে/ভাই, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি সহ ক্ষমতাশালী ও সরকারী গাড়িতেই যাচ্ছে এসব মাদকের চালান। সরেজমিন চোরাচালানঃ ভারতের সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানাগুলো শুধুই বাংলাদেশের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। হিলি স্টেশনের পেছনে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলা। স্টেশনের অদূরেই এ জেলার ত্রিমোহনী মোড়। এখানে পুলিশ ফাঁড়িও আছে।

এ পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছিই রয়েছে শন্টু ভৌমিক, টুম্পা ভৌমিক, অনীল আর ফড়িংয়ের ফেনসিডিল কারখানা। অনীল এলাকায় কাকাবাবু নামে পরিচিত। তার বাড়িতে ঢুকতে গেলে দুর্গন্ধে নিজের অজান্তেই নাক চেপে ধরতে হয়। নর্দমা আর ডাস্টবিনে ঘেরা এ বাড়িতেই বসবাস করে অনীল কাকার ছেলে দুলাল। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।

একটি তেল চিটচিটে পর্দা ঝুলছে। দুলাল নিজেই বারান্দায় বসে বালতিতে বানানো ভেজাল আর নকল ফেনসিডিল বোতলজাত করছে। অনীল জানায়, তাদের কাছে আসল জিনিসও আছে। যারা কম দামে খেতে চায়, তাদের জন্য এই নকল ফেনসিডিলের ব্যবস্থা। ফার্মেসি থেকে কিনে আনা কম দামের কফ সিরাফ, গুঁড়া চা পাতার পানি আর হালকা ঘুমের ট্যাবলেট (পরিমিত) মিশিয়ে নকল ফেনসিডিল বানানো হচ্ছে।

অনীলের দাবি, এর মান আসল ফেনসিডিলের চেয়ে খুব একটা খারাপ না। তারা ব্যবহৃত ফেনসিডিলের পুরনো বোতল টোকাইদের কাছ থেকে কিনে নেয়। এ ছাড়া বাজার থেকে ওই বোতলের মতোই দেখতে অন্য বোতল কিনে এনে নিজেদের ছাপানো লেবেল এঁটে তাতেও নকল ফেনসিডিল ভরে বিক্রি এবং সরবরাহ করে। বিক্রির জন্য আছে নানা কৌশল। এমনকি ফেনসিডিল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন পর্যন্ত বসানো আছে।

আর এসবের জন্য স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফকে সপ্তাহ চুক্তিতে রুপি দিতে হয়। বাংলাদেশের দিনাজপুরের হিলি ও জয়পুরহাটের সঙ্গে ভারতের প্রায় ৭২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। কালের কণ্ঠের সরেজমিন অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যমতে, এই দীর্ঘ সীমান্তের ওপারে অন্তত ৩০টি এবং এপারে অন্তত ৭০টি নকল ও ভেজাল ফেনসিডিল তৈরির কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলো সীমান্তের আশপাশের লোকালয়ের বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে। রাতের আঁধারে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব নকল ও ভেজাল ফেনসিডিল প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার বোতল করে পাচার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

বিডিআর ও সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, ভারতের অভ্যন্তরের ফেনসিডিলের কারখানাগুলো হলো সাইন্দ্যপাড়া, তেরকাতি, শ্রীরামপুর, আগ্রা, গোসাইপুর, নন্দীপুর, হাসপাতাল মোড়, দক্ষিণ পাড়া, সীমান্ত শিখা মোড়, হিলি বাজার, গোবিন্দপুর, ত্রিমোহনী মোড়, চকপাড়া, বকশিগঞ্জ, বৈকণ্ঠপুর, শ্যামবাজার, কামারপাড়া, ঠাকুরকুড়া, ঘাসুড়িয়া ও হাড়িপুকুরে। এসব অবৈধ কারখানা সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এর মধ্যে বড় কারখানাগুলো হচ্ছে হিলি বাজারের দক্ষিণে ভারতের অভ্যন্তরে শন্টু ভৌমিক, টুম্পা ভৌমিক ও ফড়িংয়ের বাড়িতে এবং হাড়িপুকুরের আতিয়ার রহমান, নাজির উদ্দীন, আশরাফুল, মাহবুবুুল আলম ও নজরুলের বাড়িতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের কয়েকজন ফেনসিডিল ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে জানায়, আসল ফেনসিডিলের ব্যবসায় লাভ যেমন বেশি, ঝুঁকিও তেমনি বেশি। অনেকে লোকসান দিয়ে পথের ভিখারিও হয়ে গেছে।

আর এ কারণেই তারা এখন ভেজাল ও নকল ফেনসিডিল তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। জয়পুরহাটের ভুটিয়াপাড়া, কয়া, হাটখোলা, চেঁচড়া এবং দিনাজপুরের হিলি বিওপির উত্তর গোপালপুর, জিলাপিপট্টি, ফুটবল খেলার মাঠ, কালিবাড়ী, রেলওয়ের পিডবি্লউ এলাকা, চেকপোস্ট গেট, ধরন্দা, বাসুদেবপুর বিডিআর ক্যাম্পের অধীনের হিন্দু মিশন, হাড়িপুকুর, মংলা বিশেষ ক্যাম্পের অধীনের রাইভাগ, নন্দীপুর, ঘাসুড়িয়া ও মংলা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার বোতল ভেজাল ও নকল ফেনসিডিল বাংলাদেশে যাচ্ছে। এ ছাড়া তারা তেলের বড় বড় গ্যালনে করে ফেনসিডিল বাংলাদেশে পেঁৗছে দেয়। সীমান্ত এলাকায় ইদানীং পাইপ দিয়েও ফেনসিডিল পাচার হয় বলে জানা গেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতার দূরত্ব কম হলে সাধারণত চিকন নল বা পানির পাইপ ব্যবহার করা হয়।

ওপারে কারখানায় বা কোনো নিরাপদ স্থানে ড্রামে ফেনসিডিল রেখে ওই নল দিয়ে তা ক্রেতার কাছে থাকা পাত্রে সরবরাহ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ফেনসিডিল টেনে নেওয়ার জন্য ইলেকট্রিক যন্ত্রও ব্যবহার করা হয়। তবে তা খুবই কম। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে জানা যায়, কিছু অভিযানে দেখা গেছে, মাটির নিচ দিয়েও অনেক সময় এ পাইপলাইন পদ্ধতিতে ফেনসিডিল পাচার হয়। সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যেই এ কারখানাগুলো বানানো হয়েছে।

১০০ মিলিমিটারের বোতলের পাশাপাশি এখন ৫০ মিলিমিটার বোতলেও ফেনসিডিল পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে শুধু ১০০ মিলিমিটার পাওয়া যেত। বোতলের গায়ে হিমাচল, বেঙ্গালুরু, কলকাতা ও লক্ষ্নৌ লেখা থাকলেও মূলত এগুলো স্থানীয়ভাবেই তৈরি। ১০০ মিলিলিটারের এক বোতল ফেনসিডিলের দাম ৬৫ থেকে ৭২ রুপি এবং ৫০ মিলিলিটারের দাম ৩৫ থেকে ৩৭ রুপি। পাচার হয়ে আসার পর ১০০ মিলিলিটার ফেনসিডিল এলাকাভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকায় সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। সড়কপথে প্রাইভেট গাড়িতে, ট্রেনে, পণ্যবোঝাই ট্রাকে এবং যানবাহনের পাটাতনে বিশেষ ব্যবস্থায়, বোরকা পরা নারীদের শরীরে বেঁধে, কোমল পানীয়র বোতলে ভরে এবং আরো অনেক কৌশলে পাচার হয় ফেনসিডিল। শিশুদেরও ফেনসিডিল পাচার বা বহনকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। চোরাকারবারিরা ফেনসিডিল পাচারে বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, গোবিন্দগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়া রুট ব্যবহার করে টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকায় পাঠাচ্ছে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিলি এলাকায় থেকে ফেনসিডিল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে মাঠপাড়ার লোকমান হোসেন বেলাল ওরফে হুন্ডি বেলাল, মনতাজ হোসেন, চুড়িপট্টির হযরত আলী সরদার, শামীম সরদার, স্টেশনপট্টির কামাল হোসেন, হিলি বাজারের ফেরদৌস রহমান, পারভেজ, ফকিরপাড়ার সাজ্জাদ, নুর আলম, ফারুক, শাহাবুদ্দিন, সেলিম কমিশনার, নিলামকারী জাহিদ, অপু ওরফে পাবনাইয়া অপু, নোয়াখাইল্যা হারুন, কালীগঞ্জের মোফা, লেবার সুলতান, মধ্য বাসুদেবপুরের কাহের মণ্ডল, রায়হান হাকিম, চণ্ডীপুরের মিন্টু কমিশনার এবং সাতকুড়ির দেলোয়ার।

বাংলাদেশের ফেনসিডিল ব্যবসায়ী আরমান আলী ও হযরত (ঢাকার ফুলবাড়িয়া এলাকার) কালের কণ্ঠকে জানায়, ভারত থেকে এসব নিম্নমানের ফেনসিডিল তাদের কেনা পড়ে বড় বোতল (১০০ মিলিমিটার) ৮০ রুপি এবং ছোট বোতল (৫০ মিলিমিটার) প্রায় ৪০ রুপি। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ, বাংলাদেশের বিডিআর ও পুলিশ (জিআরপি, ডিবি, থানা), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন খাতে টাকা দিতে দিতে সীমান্ত এলাকা পার হয়ে গাড়িতে উঠতেই প্রতি বোতলের দাম দাঁড়ায় চার-পাঁচ শ টাকার মতো। এরপর মূল গন্তব্যে পেঁৗছাতে পথেঘাটে আরো অনেক খরচ আছে। জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ফেনসিডিল চোরাচালান এখন আগের চেয়ে অনেক কম। বর্তমানে বাজারে চড়া দাম দেখেই বোঝা যায়, সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আছে।

এর পরও পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছে। এসপি এ কথা বললেও জয়পুরহাট সদর থানার ওসি আবু হেনা মোস্তফা কামাল বললেন অবাক হওয়ার মতো কথা। তিনি জানান, তাঁর থানায় চোরাচালানিদের কোনো তালিকা নেই। এর কারণ হচ্ছে, জয়পুরহাট এলাকায় কোনো চোরাচালানি নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এলাকার অঘোষিত করিডরগুলোতে বিডিআর প্রহরা আরো জোরালো না করা হলে ফেনসিডিল চোরাচালান রোধ করা সম্ভব নয়।

তবে এর আগে দরকার এ এলাকায় চোরাচালান রোধে যাঁরা নিয়োজিত, তাঁদের এ ব্যাপারে আরো সততা দেখানো। ওপারে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ হোসেন মির্জা ফেনসিডিল চোরাচালানের ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্ত এলাকায় উৎপাদন দূরে থাক, ফেনসিডিল বহন বা বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ চোরাচালানি চক্রকে ধরতে তাঁদের নেটওয়ার্ক বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। কালের কণ্ঠে অস্ত্র চোরাচালান নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় তাঁরা এ বিষয়গুলো আরো সতর্কতার সঙ্গে নতুনভাবে খতিয়ে দেখছেন বলে তিনি জানান। স্টোরী ২ ভারতীয় ছিটমহল তেরঘর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আসছে বেনাপোলে ভারতীয় ছিটমহল তেরঘরকে ল্যান্ডিং পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে গাতিপাড়া এবং দৌলতপুর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল পাচার হয়ে আসছে বন্দর নগরী বেনাপোলে।

একটি শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লাখ লাখ টাকার মাদক পাচার করে আনছে বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থল বন্দরে। এই বন্দর থেকে অভিনব কায়দায় বাস, ট্রাক, ট্রেন, কন্টেইনার, কভার ভ্যান, মটর সাইকেল এবং ভ্যানে করে পৌঁছে যাচ্ছে মরণনেশা ফেন্সিডিল ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে। ভারতীয় ৫৭ রুপী মূল্যের এই ফেন্সিডিল ঢাকাছাড়া বিভাগীয় শহরে বিμি হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকার মধ্যে। ব্যবসাটি অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এই ব্যবসায় পুজি খাটাচ্ছে। সরেজমিনে বেনাপোল চেকপোষ্ট থেকে ৩ কিঃমিঃ দক্ষিণে গাতিপাড়া ও দৌলতপুর গ্রামের মাঝে যেয়ে দেখা গেল ভারতীয় ১৩ ঘর নামক ছোট্ট ছিটমহল।

পূর্বে এই ছিটমহলের ভিতর বিএসএফ-এর একটি ক্যাম্প ছিল। প্রায় ৩ বছর আগে বিএসএফ এই ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ভারতীয় ১৩টি পরিবার বাস করার কারণেই ছোট্ট এই ছিটমহলের নাম ১৩ ঘর। কিন্তু এখন আর ১৩ পরিবার ঐ ছিটমহলে বসবাস করে না। সর্বমোট ৬/৭ পরিবার ঐ ছিটমহলে বাস করে।

ভারতীয় ভূ-খন্ড দখলে রেখে মাদকসহ অন্যান্য চোরাচালান ব্যবসা করার জন্যই ঐ সকল পরিবারের বাস। যাদের সকলেরই ঘরবাড়ি, ফসলের জমি সবই রয়েছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বনগাঁ শহরের আশেপাশে। ১৩ ঘর ছিটমহলের দু’পাশে সমতল ভূমিতে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের দুটি পোষ্ট। বাংলাদেশের সমতল ভূমি গাতিপাড়া গ্রামের মাটির সাথে মিশে আছে ১৩ ঘর ছিটমহল। সামনে ছোট হাওড় ও পরে মেহেন্দীর টেক নামে একটি টিলা।

যেখানে বাস করে ৪টি পরিবার। এলাকাবাসী জানায়, বর্ষা মৌসুমে নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটেই বনগাঁ শহরে যাতায়াত করে। ভারত এবং বাংলাদেশের শক্তিশালী সি-িকেট একত্রিত হয়েই ফেন্সিডিলের ব্যবসা করে। ওপারের একটি সূত্র জানায়, ফেন্সিডিল বাংলাদেশে পাচারে বিএসএফ কোন বাধা দেয় না। ফলে বনগাঁ শহর থেকে অনায়াসে ১৩ ঘর ছিটমহলে ফেন্সিডিলের চালান চলে আসে।

যেখান থেকে প্রায় প্রত্যেক ঘরেই ল্যান্ড করে ফেন্সিডিল। তবে ঐ ছিটমহলে লক্ষ্মী বৌদির কথা সবারই জানা। সেই সবচেয়ে বেশি ফেন্সিডিল মজুদ রাখে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গাতিপাড়ার পাকা রাস্তা থেকে ১৩ ঘর ছিটমহলের লক্ষ্মী বৌদির ঘর পর্যন্ত আসা-যাওয়া করতে চোরাচালানীদের সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। যার কারণে এই রুটেই বেশি ফেন্সিডিল পাচার হয়ে আসছে।

বেনাপোল বন্দর থেকে ৩৮ কিঃমিঃ রাস্তা পেরিয়ে ফেন্সিডিল চলে যায় যশোর শহরে। প্রশাসনের টোকেন সিস্টেম থাকার কারণে কোথাও ফেন্সিডিলের চালান আটক হয় না। ফেন্সিডিল বহনের জন্য বাস, ট্রাক বা ট্রেন কভার ভ্যান ছাড়াও বিশেষ সিস্টেমে ট্রাকে ডবল পার্ট বডি তৈরী করা হয়। বর্তমানে ফেন্সিডিল বহনের জন্য ভ্যানগাড়িরও ডবল পার্ট বডি তৈরী হচ্ছে। ভ্যানের কাঠের তৈরী বডির নাট খুলেই কাগজে ১০ পিচ করে ফেন্সিডিল বেঁধে মোট ২২৫ পিচ ফেন্সিডিল বডিতে লুকিয়ে আবার নাট আটকিয়ে দেয়া হয়।

অপরদিকে মোটর সাইকেলে ৩ জন আরোহীর মাঝখানে বসা ব্যক্তির গায়ে বিশেষ জ্যাকেটে পকেট সিস্টেম করে ১২০ বোতল ফেন্সিডিল বহন করা হচ্ছে। মাদকে ডুবেছে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্যের ব্যবসা, বিক্রি ও চালানে এখন ডুবে আছে কুমিল্লা। জেলার ৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার কোনো কোনো গ্রামের ৭০ ভাগ মানুষ জড়িয়ে পড়েছে মাদক বিক্রির পেশায়। পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় 'লাইনম্যানরা' মাদক পাচার নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের সঙ্গে আছে তাদের বিশেষ সখ্য।

দুই জেলার সীমান্তের ওপারে গড়ে তোলা হয়েছে নকল ফেনসিডিলের কারখানা। করাল গ্রাসে কুমিল্লা কুমিল্লার মাদক স্পটের বাড়িগুলোর নারীরা মাদক সেবনকারীদের পরিচয় দেয় 'আত্মীয়' ও 'শুভাকাঙ্ক্ষী' বলে। পুরুষরা সীমান্ত থেকে বাড়িতে মাদক নিয়ে আসে আর নারীরা ঘরে বসে তাদের এই 'আত্মীয়' ও 'শুভাকাঙ্ক্ষী'দের যত্ন করে পরিবেশন করে ফেনসিডিল ও 'বাবা' নামে পরিচিত ইয়াবা ট্যাবলেট। দিনে দিনে মাদক ব্যবসায়ীরা সামাজিকভাবেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছে। এক মাদক ব্যবসায়ীর সম্পর্কে অন্য মাদক ব্যবসায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কোনো তথ্য দেয় না।

কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করলে মুখোমুখি হতে হয় সামাজিক বিচারের। মাদকদ্রব্য আইনে কোনো ব্যক্তির কাছে মাদক না পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা যায় না। আর সেই সুযোগটিই নেয় গডফাদাররা তারা ভদ্র বেশে অন্য পেশা এবং রাজনীতিতে জড়িত থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। কুমিল্লা সীমান্তের সবচেয়ে আলোচিত মাদক 'ঘাট' হচ্ছে সুয়াগাজির দরিবটগ্রাম, পানপট্টি, তারাপুর, রাজেশপুর ইকোপার্ক, কুমিল্লার গোলাবাড়ী, বিবিরবাজার, বৌয়ারা, ব্রাহ্মণপাড়ার তেতাভূমি আর চৌদ্দগ্রামের সদর, কাইচ্ছুটি, বুড়িচংয়ের কংসনগর ও সংকুচাইল। প্রতিদিন এসব এলাকায় অসংখ্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে করে শত শত তরুণ-তরুণী গিয়ে ফেনসিডিল এবং ইয়াবা সেবন করে ফিরে আসে।

তারা আসে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে। আত্মীয় এবং শুভাকাঙ্ক্ষী পরিচয় দিয়ে তাদের এই আপ্যায়ন নির্বিঘ্ন করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের সঙ্গে থাকে সাপ্তাহিক এবং মাসিক চুক্তি। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার দরিবটগ্রামের এক ব্যবসায়ী জানান, আইন প্রয়োগকারী কোন সংস্থার লোকজন মাদকের ঘাটের টাকা নেয় তা যেকোনো মাদক ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন জব্দ করে ফোনবুকে সেভ করা নম্বর দেখলেই জানা যাবে। সুয়াগাজি, কংসনগর, কাইচ্ছুটি, গোলাবাড়ী ও রাজাপুর এলাকা ব্যবহৃত হয় ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে। এসব পয়েন্ট দিয়ে মাসে অন্তত ৫০ কোটি টাকার মাদক পাচার হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশে।

সুয়াগাজি ও কাইচ্ছুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এবং কংসনগর কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে হওয়ায় মাদক পাচার হয় খুবই সহজে। শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে একটু ম্যানেজ করতে পারলেই হলো। সচিবালয়ের সরকারি গাড়ি, উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি, সাংবাদিক নামধারীদের গাড়িসহ বিলাসবহুল যানবাহন, যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ব্যবহার করে মাদক পাচার করা হয়ে থাকে এখান থেকে। মাদক যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কঙ্বাজারসহ বিভিন্ন জেলায়। সরকারি গাড়ি এবং চেয়ারম্যানের গাড়ির চালকরাসহ পাচার-প্রক্রিয়ায় জড়িত আছে পুলিশও।

হাতেনাতে ধরাও পড়েছিলেন দুই এসআই। গত জানুয়ারিতে চৌদ্দগ্রামে ফেনসিডিল বহনের সময় ধরা পড়ে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যার গাড়ি। উপজেলা চেয়ারম্যান তখন গাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ গাড়ির চালক রাঙ্গামাটির ওমদা গ্রামের দিদারুল আলম এবং পাচারকারী সফিককে ২৯০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে। এর চেয়েও উদ্বেগজনক ঘটনা হচ্ছে, এক দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের পিএস মিজানুর রহমানের সরকারি গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৯১ বোতল ফেনসিডিল।

গাড়িটিতে জাতীয় পতাকা এবং সচিবালয়ের মনোগ্রাম লাগানো ছিল। তবে মিজানুর রহমান গাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ গাড়িচালক হারুনুর রশিদ হিরুকে গ্রেপ্তার করে। 'শহরে অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি পয়েন্টে মাদক বিক্রি হয়। মাদক পাচারে জেলার শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ জড়িত।

' খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের ১৮টি বিটে মাদক নিয়ন্ত্রণ করছেন একজন সাবেক ছাত্রনেতা। প্রতি বুধবার এসব বিটের টাকা তিনি নিজে ভাগবাটোয়ারা করে দেন। টাকা যায় থানার ক্যাশিয়ার ও গোয়েন্দাদের কাছে। কুমিল্লা থেকে মাদক পাচার হয় রেলপথেও। ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদলের কাছে হরিমঙ্গল, বাগরা, গঙ্গানগর, বুড়িচংয়ের রসুলপুর, কুমিল্লার শাসনগাছা এলাকায় ট্রেন থামিয়ে মাদক ওঠানো-নামানো হয়।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান দাবি করেন, 'অবশ্যই ট্রেনের চালক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই ট্রেনগুলো থামানো হয়। পাচারকারীরা থামায় না। তবে বিষয়টি জিআরপি পুলিশ নিয়ন্ত্রণাধীন। সে জন্য আমরা সেখানে কাজ করি না। জানা গেছে, বাংলাদেশে পাচারের সুবিধার্থে ভারত সীমান্তে স্থাপন করা হয়েছে ফেনসিডিলের কারখানা।

ফেনী সীমান্তের কাছে এ রকম কারখানা থাকার কথা বলেছে ব্যবসায়ীরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বিজিবি ফেনসিডিলের কারখানা বন্ধ করার দাবি করে। তবে বিএসএফের কর্মকর্তারা ফেনসিডিলের কারখানা থাকার কথা অস্বীকার করেন। বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আখতারুজ্জামান বীরপ্রতীক বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ফেনসিডিলের কারখানার কথা।

ফেনীর বিজিবি কর্মকর্তারাও বলেছেন। কিন্তু বিএসএফ ফেনসিডিল কারখানা থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ' মাদক ব্যবসাটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়ে গেছে। বেশি দিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটকেও রাখা যাচ্ছে না। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে চলে আসছে।

চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নামে টাকা উত্তোলনকারীদের স্থানীয়ভাবে লাইনম্যান বলা হয়। তাদের তত্ত্বাবধানে ভারত থেকে আসা মাদক দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। আর এ কাজ পরিচালানায় ব্যবহার করা হয় বিশেষ টোকেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন সীমান্তে এমন অর্ধশতাধিক লাইনম্যান, সাবলাইনম্যান রয়েছে, যাদের মদদে চলছে মাদক চোরাচালান। থানার পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবির নাম করে এ লাইনম্যানরা নিয়মিত মাসোয়ারা উঠিয়ে থাকে।

আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্ম ও কুমিল্লা থেকে ট্রেন ছাড়ার পর এসব লাইনম্যানের দেখা মিলে প্রকাশ্যে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরই লাইনম্যানদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী আগরতলায় নকল ফেনসিডিল তৈরির অন্তত অর্ধশত কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ক্লোরোফর্ম, ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক দ্রব্য ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ফেনসিডিল বানানো হয়, যা শুধু বাংলাদেশে পাচারের জন্য। সীমান্তের ওপারের বটতলা, উষাবাজার, গোলচক্কর, নরসিংসার, বালুরঘাট, লঙ্কামোড়া, বিশালঘর, লিচু বাগান, লস্করটিলা, পুরান এয়ারপোর্ট এলাকায় এসব ফেনসিডিল কারখানার অবস্থান।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও সেখানে অনেক ফেনসিডিল কারখানা থাকার কথা স্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গী হয়ে বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে ফেরার পথে গত ৮ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউসে এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ফেনসিডিল ত্রিপুরায় কফের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে ইচ্ছা করলেও কারখানাগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে পাচার রোধে পুলিশ তৎপর আছে। ' সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারত থেকে বিভিন্ন কৌশলে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক পাচার হয়ে আসে।

বিএসএফের সহযোগিতায় কখনো কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে নিয়ে আসা হয় মাদক। আবার কখনো বেড়ার এপার-ওপার দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার হয়। বিজয়নগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্তে ফেনসিডিল পাচারে ব্যবহৃত হয় পাইপ। ভারতীয় চোরাচালানিরা পাইপের এক প্রান্ত দিয়ে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে দিলে অন্য প্রান্তে বাংলাদেশিরা তা গ্রহণ করে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.