আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"No more suicide" স্টিকি পোষ্ট দেখে লিখতে ইচ্ছা হল

সিরাতুল মুস্তাকিম চাই, সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আল্লাহের গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে **** দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়েগেছে বিসমল্লাহির রাহমানের রাহিম ১৯ বছরের কামরুল কে তার বিএসসি প্রথম বর্ষে পড়া সহপাঠিরা নিয়ে এসেছে মেডিসিন ওয়র্ডে। গতকাল রাত থেকে কামরুল শুধু ছক্কা, চার আর বোল্ড আউট ছাড়া কিছুই বলছে না। চোখও খুলছে না, ও। একটু খুঁজতেই হাতে তার লেখা পাওয়া গেল সাবিনা।

কোন পিন বা ধারালো কিছুর অগ্রভাগ দিয়ে লেখা, সাবিনা। সাবিনার গতকাল বিকালে বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ছক্কা চার পিটিয়েও কামরুল এখন বোল্ড আউট। ব্যাপারটা ওয়ার্ডে আমাদের জন্য ছিল নিতান্তই হাস্যকর। আমিতো বলেই বসলাম এই রকম মেয়ে মানুষি করলেতো কোন মেয়েই আপনাকে বিয়ে করবে না।

আজকের স্টিকি পোষ্টটা দেখে লিখতে ইচ্ছা করল। মানষিক স্বাস্থ্য ব্যাপারটা আমাদের দেশে খুবই অবহেলার বস্তু। সয়ং ডাক্তাররাই এই ব্যাপারটাকে তেমন একটা গুরুত্ত দিতে চাননা। আমার নিজের জীবনের একটা ৭ মাসের পর্যায় ছিল, যখন আমি আমি ছিলাম না। ঐ আমিকে, আমি এখন চিনি, আগে চিনতাম না।

কখনো ভাবিও নাই যে ঐ আমির সাথে আমার দেখা হবে। রাস্তায় কাঁদতে কাদঁতে হাটতাম, অস্বাভাবিক কিছু মনে হতনা এটা। কে দেখল কে কি মনে করল কিছুই কোন ব্যাপার ছিলনা আমার কাছে। কখন খেতাম আর কখন খেতাম না, তার কোন গুরুত্ত ছিলনা আমার। একজনকে এক মুহুর্ত দেখবার জন্য বিকেলে প্রায় চারশ কিঃমিঃ পারি দিয়ে দিগন্ত জয় করে আবার গভীর রাতেই যন্ত্রদানবে করে ঢাকায় ফিরতাম।

তখন একবার কার্ফিউ ডেকেছিল, পুলিশের সামনে দিয়ে শাহাবাগে ঘুরা ঘুরি করেছি গুলি খাবার আশায়, ভাবটা ছিল এমন যে তোরা গুলি করে আমারে বাঁচা। আমার বাবা-মা এর কন্ট্রোল ছিলনা আমার উপর। আর আমার নিজেরতো ছিলই না। বন্ধুরা বিষন্ন দেখেছে কিন্তু প্রথম দিকে তেমন কিছু বুঝতেই পারে নাই। পারবার কথাও ছিল না।

কারন আমি আমার সমস্যা সবসময় নিজেই সমাধান করি। আই কিউ পরিক্ষা জিবনে যত বার দিয়েছি আমি, আমার স্কোর ছিল ১৩৮, মাত্র ২ এর জন্য কখনই জিনিয়াস ট্যাগ নিতে পারি নাই , কিন্তু চরম বুদ্ধিমানতো আমি নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমার সোসাল কিউ তো প্রায় শুন্যের কোঠায়!!! এটা আমি তখনো জানতাম না। মনে করতাম আইকিউই সব। বুদ্ধিদিয়েই বুঝি সবকিছুর সমাধান হয়!! মানষিক কষ্টের কারনে, কোন রূপ শারিরীক অসুস্থতা ছাড়াই যে শরিরের প্রতিটা কোষে কোষে ব্যাথার অনুভুতি হতে পারে , যন্ত্রনার অনুভুতি হতে পারে এটা আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না, যদি না আমি ঐ আমির সাথে পরিচিত না হতাম।

মাঝে মাঝে মনে হত, আমার মাথার ভিতর থেকে আমার মস্তিষ্ক যন্ত্রনায় ফেটে বের হয়ে যাবে, কখন মনে হত আমার মেরুদন্ডের হাড্ডি গুলোকে থেতলানো কোন বিকৃত হাতুড়ি দিয়ে কেউ পেটাচ্ছে। শারির বিদ্যা ব্যাবচ্ছেদ বিদ্যা সহ শরিরের সকল কিছুই আমার নখ দর্পনে, অন্যের কষ্টের সমাধান আমার কাছে ছিল কিন্তু আমার নিজের কষ্টের কোন কুল কিনারা ছিলনা। আর উপশমতো অনেক দূরের বিদ্যা। দোজখ যন্ত্রনা কেমন হতে পারে এর সামান্য ধারনা হয়ত পেয়ে গেছি, ফর গুড। হলিউডের ডেভিল বিষয়ক মুভি গুলতে যে আত্না বিক্রি করে জিবনের সুখ কেনা যায়, এই চিন্তা মাথায় ঘুরত আমার, জানিনা শয়তান এসে কোন কিছু অফার করলে কি করতাম।

তবে এখন যত ভালো মানুষই সাজি না কেন, তখন মনে হয় আমি গ্রহনই করতাম। জানি না?? আল্লাহ জানেন!! বেঁচে থাকবার কোন ইচ্ছাই তখন আমার আর বাকি ছিলনা। মনে হত প্রতি মুহুর্তে ওপারে যেতে পারলেই সুখ। এটার একটাই উপায় ছিল আমার কাছে। আত্নহত্যা! আর আত্নহত্যার সকল সুন্দর সুন্দর উপায় গুলোও আমি জানি।

ঐ সময় আমার কাছে আমার কষ্টের চাইতে, নিজেই খুন হয়ে যাওয়া ছিল অনেক সহজ। আমার ধার্মিক সত্তা ছাড়া কিছুই আমাকে রক্ষা করে নাই, এ আমি নিশ্চিত জানি। এই পৃথিবীর কোন কিছুই আমাকে রক্ষা করতে পারতনা বা আমার কামনার বিনিময় হতে পারতনা। শুধু মাত্র আমি বেঁচে আছি এজন্যই যে আমি জানতাম আত্নহত্যা মানে দোজোখ। মনে মনে শুধুই বিড়বিড় করতাম hell is not an option for me. Hell is not an option for me…………… ।

যাই হোক আল্লাহ আমার দিকে দেখেছেন, আল্লাহ আমার মনের কামনা পূর্ণ করেছেন। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমার জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে আমার ধর্ম চিন্তা ছাড়া কিছুই ছিলনা। কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যারিয়ারটার কাজ করে অন্য কোন ভালো লাগা বা বিশ্বাস বা বন্ধুত্ত বা ভালোবাসা। আর যাদের মধ্যে কিছুই থাকে না তাদের পরিনতি হয় আত্নহত্যা, এবং এখন আমি জানি এটাই স্বাভাবিক। নিম্নের আয়াত গুলোর শিক্ষা আমাকে বাঁচিয়ে ছিলঃ ২ঃ১৯৫ আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।

আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। ৪ঃ২৯,৩০ হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না।

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য। আরেকটা আয়াত আছে ৪ঃ৯৩, ঐখানে আল্লাহ বলেছেন “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে……। ” এই আয়াতটাও আত্নহত্যার বিপক্ষে।

কারন আপনি আল্লাহের উপর নিরাশ হলেই আত্নহত্যা করতে পারেন, আর কোন ইমানদার কখন আল্লাহের উপর নিরাশ হতে পারেন না, তাহলে ইমান থাকে না। আবার যদিও ধরেই নেই যে আত্নহত্যার সময় ইমান ছিল, তাহলে সে একজন মুসলমানকে হত্যার দায়ে দ্বায়ি হয়ে যান। কিছু কথাঃ নিজেকে ছড়িয়ে দিন, অনেক অনেক ভালোলাগা তৈরি করুন। নিজের কিছু সমস্যা অন্যকে সমাধান করেতে দিন, হতে পারে বাবা, মা, ভাই বোন, কিংবা বন্ধু বান্ধব। মানসিক কষ্টের সময় ডাক্তারের কাছে যান।

ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানেই আপনি পাগলের খাতায় নাম লেখালেন, এরকম চিন্তাও করবেন না। অনেক মানুষ সামান্য কিছু চিকিৎসাতেই বা শুধু মাত্র কাউন্সিলিং এই ভালো হয়ে যান। মানষিক কষ্ট আর তার পরিনতি হিসাবে আত্নহত্যা, এই দুয়ের মাঝে অনেক লম্বা সময় থাকে, চারপাশের মানুষ চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন এই সময়ে। কাউকে যদি মানষিক কষ্টে দেখতে পান, তার জন্য কিছু করুন। তাকে বুদ্ধিমান-জ্ঞানী, ধার্মিক, ভালোমানুষ, বোকা মানুষ, উচ্ছল মানুষ, লোভি মানুষ ইত্যাদি ভেবে তার আত্নহত্যা করবার ক্ষমতাকে আন্ডার এসটিমেট করবেন না, প্লিজ।

আমার এক দূর সম্পর্কের আত্নিয় ভাই, আত্নহত্যা করেছিল, এইচ এস সি তে স্টার পারার যায়গায় শুধুই প্রথম বিভাগ পেয়ে ছিল বলে, (পরে অবশ্য, দেখাগিয়েছিল শুধু সে স্টার না, তারচেয়ে অনেক ভালো করেছিল) আপনার সামান্য সময় একটা জীবন বাঁচাতে পারে। ভালো কথা বাবা মায়েরা ছেলে মেয়েদের উপর পড়ালেখার অজোচিত বোঝা চাপিয়ে দিবেন না। আর মানসিক কষ্টের কোন সেক্স নাই, নারী পুরুষ উভয়েই সমান, বিশ্বাস না হলে আজই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল গুলোতে ঘুরে নারী পুরুষের এটেমটেড আত্নহত্যার পরিসংখ্যান নিন। অবাক হয়ে যাবেন, নারী পুরুষ সবারই অনেক দুখঃ। আর শত শত আত্নহত্যার খবর কিন্তু কখনই মিডিয়া পর্যন্ত পৌছায় না!!!(বিশ্বাস না হলে ডাক্তার বন্ধুদের জিজ্ঞাস করুন) আপনি কষ্টে পরলেই একমাত্র বুঝতে পারবেন যে কষ্টটা কেমন।

মানষিক যন্ত্রনা কাকে বলে?? যেমন একজন হাপানির রুগীই জানেন যে তার শ্বাস কষ্ট যখন হয় তার কেমন লাগে, অন্য আর কেউ যানে না। তাই অন্যে কি বলল, তা চিন্তা না করে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নিন। আমার ঐ খারাপ সময়টায় প্রতিদিন শত শত বার হতাশ হয়েছি, কিন্তু এক বারো আশা হারাই নাই। আল্লাহের কাছে আশা করতে হবে। তিনি সব কিছু দিতে পারেন।

তিনি মহান। আপনার কাছে, আপনার যে প্রাপ্তি অকল্পনিয় ব্যাপার, আল্লাহের কাছে তা কিছুই না। তিনি করুনাময় মহান-দাতা। *****হাসবুনাল্লাহু ওয়া নে’মাল ওয়াকিল, নিয়মাল মাওলা ওয়া নিয়মান নাশিইর। ***** (চরম সাহায্যকারী দুয়া, ছোট বেলায় বাবা শিখিয়ে ছিল, খুব সম্ভবত বেঁচে থাকবার অন্যতম বা একমাত্র কারন) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।