আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া আর না পড়া - ৩য় পর্ব

২য় পর্বঃ সাহাবাগণের বাণীঃ আল্লামা আইনী তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী” তে লিখেছেন, ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কেরাত না পড়ার ব্যাপারে প্রায় ৮০ জন সাহাবীর মত পাওয়া যায় (অর্থাৎ তাঁরা কেরাত না পড়তে বলেছেন) । তাঁদের অনেকে আবার এই মতটিতে অনেক জোর দিয়েছেন এবং কেরাত পড়াকে বৈধ বলেননি। এখানে তার কিছু মতামত ও বাণী তুলে ধরা হল যাতে এ বিষয়টির গুরূত্ব বুঝা যায় এবং এই বিষয়ে সাহাবাদের অবস্থান বুঝা যায়ঃ ১। আতা ইবনে ইয়াসার (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার যায়েদ ইবনে সাবিত (রঃ) কে নামাযে ইমামের পিছনে কেরাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। জবাবে যায়েদ ইবনে সাবিত (রঃ) বলেছিলেন, নামাযে ইমামের পিছনে কেরাত প্রয়োজন নেই।

(সহীহ মুসলিম শরীফ ২১৫ : ১) ২। মালিক নাফি (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) কে প্রশ্ন করা হত, ইমামের পিছনে কেউ কুরআন পঠ করিবে কি? তিনি বলিতেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পিছনে নামায পড়ে তখন ইমামের কেরাতই তাহার জন্য যথেষ্ট। আর একা নামায পড়িলে অবশ্য কুরআন পাঠ করিবে (নিজে নিজে) । বর্ণনাকারী বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) নিজেও ইমামের পিছনে কুরআন পাঠ করিতেন না। (মালিক মুয়াত্যা ৫১ ; ই’লা’উস সুনান ৭৬ : ৪) ৩।

উবায়দুল্লাহ ইবনে মুকসিম বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর, যায়েদ ইবনে সাবিত এবং জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন (এই বিষয়ে) । তাঁরা বলেন যে, ইমামের পিছনে কোন সালাতেই কেউ তিলাওয়াত করবে না। (আতারুস সুনান ১১৬ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮১ : ৪ ) পরবর্তী বর্ণনায় অসন্তুষ্টির পরিমাণ দেখুনঃ ৪। আলকামাহ বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) বলেন, ইমামের পিছনে কেরাত পড়া লোকের মুখ মাটি (ইট বা পাথরের টুকরা) দিয়ে পূর্ণ করা হবে। (আতারুস সুনান ১১৬ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮১ : ৪ ; সুদাদ ৮৭ : ৪) ৫।

আবু জামরাহ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, ইমাম যখন আমার সামনে থাকবে তখন কি আমি তিলাওয়াত করব? তিনি উত্তর দিলেন, না। (আতারুস সুনান ১১৬ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮১ : ৪ ৯) ৬। ইবনে আব্বাস (রঃ) জানিয়েছেন যে (মত প্রকাশ করেছেন) ইমামের কেরাত তোমাদের জন্য যথেষ্ট, সেখানে ইমাম নীরবে পড়ুক অথবা জোরে পড়ুক। (দারুন কুতনী ৩৩১ : ১ ; ই’লা’উস সুনান ৮২ : ৪ ) ৭। মুসা ইবনে আকাবাহ জানিয়েছেন যে রসূলুল্লাহ (সঃ), হযরত আবু বকর, হযরত উমর এবং হযরত উসমান (রঃ) ইমামের পিছনে কেরাত পড়তে নিষেধ করতেন।

(উমদাতুল ক্বারী ৬৭ : ৩ ; ই’লা’উস সুনান ৮৪ : ৪) ৮। মুসা ইবনে সা’দ ইবনে জায়েদ তাবিত তাঁর দাদা জান থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (তাঁর দাদা জান)বলেন, যে ইমামের পিছনে কেরাত পড়ে তার জন্য কোন নামায নেই(তার নামায হল না)। (মুয়াত্যা মুহাম্মদ ১০০ ; ই’লা’উস সুনান ৮৭ : ৪) ৯। ইব্রাহীম নাখাঈ বলেন, “(ধর্মে) প্রথম সৃষ্টি নতুন বিষয় হল ইমামের পিছনে কেরাত পড়া। সাহাবারা ইমামের পিছনে কেরাত পড়তেন না।

” (আল জাওহারুন নাকিহ ১৬৯ : ৪) এই মতটি আরও গুরুত্ব পাবে নিচের বর্ণনায়ঃ ১০। ইব্রাহীম নাখাঈ বলেন, ইমামের পিছনে কেরাত পড়া প্রথম ব্যক্তি একজন দোষী বা অভিযুক্ত (বেদাত সৃষ্টিকারী) । (মুয়াত্যা মুহাম্মদ ১০০ ; ই’লা’উস সুনান ৮৯ : ৪) মুহাম্মদ ইবনে সিরীন আমাদের বলেনঃ ১১। “সুন্নাহের আলোকে ইমামের পিছনে কেরাত পড়াকে আমি অনুমোদন করি না । ” (ইবরি আবি শাইবাহ ৩৭৭ : ১; ই’লা’উস সুনান ৯০ : ৪) ১২।

আবদুল্লাহ ইবনে যাইদ ইবনে ইসলাম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সঃ) এর ১০ জন সাহাবী ইমামের পিছনে কেরাত পড়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তারা হলেনঃ আবু বকর সিদ্দীক(রঃ), উমর ফারুক(রঃ), উসমান বিন আফফান(রঃ), আলী ইবনে আবি তালিব(রঃ), আবদুর রহমান ইবনে আউফ(রঃ), সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস(রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রঃ), যাইদ ইবনে তাবিত(রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর(রঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রঃ)। (ক্বলায়দুল আযহার ৪২ : ২) ১৩। হযরত আলী (রঃ) বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে তিলাওয়াত করল, তার নামায শুদ্ধ হল না। ” অন্য একটি হাদীসে তিনি বলেন, “সে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল।

” (আল জাওহারুন নাকিহ ২১৮ : ২, ইবনে আবি শাইবাহ ৩৭৬ : ১) ১৪। সা’দ (রঃ) বলেন, “I would like a burning ember (জ্বলন্ত কয়লা) to be in the mouth of the one who recites behind the Imaam.” (আবদুর রাজ্জাক ১৩৮ : ২ ; ইবনে আবি শাইবাহ ৩৭৬ : ২) উমর ইবনুল খাত্তাব (রঃ) কি বলেন, শুনুন। ১৫। তিনি বলেন, “If only there could be a stone (পাথর) in the mouth of the one who recites behind the Imaam. ” ((আবদুর রাজ্জাক ১২৮ : ২) হুযুরে পাক (সঃ) এর এরকম মহান ও মর্যাদাপূর্ণ সাহাবীগণ যারা স্কলারও ছিলেন, আবু বকর (রঃ), উমর (রঃ), উসমান (রঃ), আলী (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ), যাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রঃ), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ), সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রঃ), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রঃ) এবং বড় বড় তাবেঈন যেমন মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রহঃ), ইবরাহীম ইবনে নাখাঈ (রহঃ), আওযায়ী (রহঃ) ইত্যাদি – সমস্ত বুযুর্গরা একই মত প্রকাশ করেছেন। “ইমামের পিছনে মুক্তাদীর জন্য কোন কেরাত নেই।

” তাঁদের মাঝে অনেকেই তাদের মতামতের উপর খুব শক্ত অবস্থানে ছিলেন এবং সবাইকে মেনে চলার উপদেশ দিতেন বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন আর অন্যদের অনেকেই ইমামের পিছনে কেরাত পড়াকে নতুন সৃষ্টি বা প্রচলনও বলেছেন। তাঁদের অনেকের মতামত এরকমঃ “(ইমামের পিছনে) কেরাত পড়নেওয়ালার মুখ জ্বলন্ত কয়লা বা পাথর দিয়ে পূর্ণ করে দেওয়া হোক। ” অন্যরাও এই বিষয়ের গুরুত্ব বুঝতে পেরে অনেকটা এরকম মতামত দিয়েছেন। অনেকে এই বিষয়ের উপর এতই গুরুত্ব দিয়েছেন যে তাঁরা এ কথাও বলেছেন, যে ইমামের পিছনে পাঠ করবে তার সালাতই হবে না। হানাফীদের মতামত এসব মতামত অনুসারেই … “ইমামের পিছনে কিছু পড় না কারণ ইমামের কেরাতই পর্যাপ্ত।

” (চলবে ইনশাল্লাহ্‌) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.