আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিটিসেল,ওয়ারিদ, বাংলালিংক, একটেল ও গ্রামীন ফোনের ব্র্যান্ডিং রহস্য

বর্তমান সময়ে গ্রামীন ফোনের স্পন্সরে ট্রান্সকম প্রথম-আলোর “দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট” বা “একাত্তরের চিঠি” , বাংলা লিংকের “জাগরণের গান” এবং একটেলের খোদ “রবি” হয়ে যাওয়া আমাদের মত গরীব ছাত্রদের হত্যাকাণ্ডের মত মামুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । আসুন খুঁজে দেখি এই তিন রক্তচোষার রং বদলের রহস্যময় ইতিহাস । গ্রামীন ফোন নরয়ের টেলেনর কোম্পানির বাংলাদেশী ভার্সন । আপনারা যেমনটা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সে বিভিন্ন নামে ছলে-বলে-কৌশলে বিশ্বজুড়ে মানুষের রক্ত চুষে বেড়ায় । বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই তারা পাকিস্তানে টেলেনর নামেই মানুষের রক্ত চুষত ।

কিছুদিন হল তারা ভারতে এই ব্যবসা শুরু করেছে “ইউনিনর (Uninor)” নামে । বাংলাদেশে ও ব্যবসা চালুর জন্য ইউরোপের এই কেতাদুরস্ত লুটেরা কেন “গ্রামীন” আবার “ফোন” নাম ধারণের মাধ্যমে আপাত দৃষ্টিতে এক গ্রাম্য ইমেজ ধারণ করল ??? কম কথায় যদি আমরা এই রহস্যের একটা কিনারা করতে চাই তাহলে বলতে হয়: টেলেনর কোম্পানি এই অঞ্চলের বাজার ভালোমতো বাজিয়ে দেখে এমত: সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে তাদের প্রধান কম্পিটিশন শহুরে ফোন “সিটিসেল” আর দিক চিহ্নহীন “একটেল” তাই তারা ৬৪ হাজার গ্রামের বাংলাদেশের জনগণকে লুটের মহাসমারোহের দিগবিজয়ী বাহিনীর নাম রাখল দুনিয়ার চিরায়ত রক্ত-চোষার আধুনিকতম রূপ মাইক্রো-ক্রেডিটের রূপকার “গ্রামীন ব্যাংক”-কে সামান্য উচ্ছিষ্ট দিয়ে “গ্রামীন ফোন” নাম ধারণের মাধ্যমে । তারা সারা দেশে PCO চালু করল “পল্লী ফোন” নামে । তারা তাদের লোগো আঁকল বাংলার প্রকৃতি আর বাঙ্গালীর বুকের রক্তের লাল-সবুজ রং-এ । তারা গলা কাটল, তারা রক্ত চুষল, তারা ব্যবসা করল ।

তাদের এই বিজয় রথের সামনে ধুলোর মত উড়ে গেল “একটেল” আর “সিটিসেল” । “গ্রামীন ফোন” পরিণত হল দেশের এক নম্বর লুটেরায় । তারা ২০০৮-০৯ সালের বাংলাদেশের সবথেকে বেশী মুনাফাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল এবং অবৈধ VoIP ব্যবহারের মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে ধরা পড়ল এবং বরাবরের মতই সামান্য জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে গেল । ইতোমধ্যে তারা চাইতে শুরু করেছে নতুন ব্র্যান্ড ইমেজ; গ্রামীনের গ্রাম্যতা আর দারিদ্র তাদের কাছে এখন অতি অপ্রয়োজনীয় বিষয় । মার্কেট এখন তাদের একাধিপত্য তাই তারা তাদের গলা-কাটা সার্ভিসের দাম কমাতে চাইল না; এই দামী সার্ভিসের জন্যে চাই একটি ধনী ক্রেতাগোষ্ঠি আর তাদের জন্যই চাই নতুন ধনীদের ব্র্যান্ডিং ।

এ জন্য প্রথমে তারা “ডিজুস-(dijuce)” নামে একটি ব্র্যান্ড লঞ্চ করল শুরুতে তার প্রমোশনে তখন পর্যন্ত গ্রাম্য “গ্রামীন ফোন”-এর কোন নাম গন্ধ ছিল না; অনেকে তখন জানতই না যে “ডিজুস” “গ্রামীন ফোন”-এর একটি সাব-ব্র্যান্ড । তা যাই হোক “ডিজুস” মার্কেটে আসল এবং সুযোগ দিল সারা রাত প্রায় বিনা মূল্যে কথা বলার । তখন সারা দেশের তরুণ-তরুণীরা “ডিজুস” নেশায় উন্মত্ত । মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের “ডিজুস” রাত জাগা ও ফোন সেক্স করার এক সংস্কৃতি তৈরি করল । এভাবে “ডিজুস” নিয়ে যথেষ্ট ব্যবসা হবার পর কথিত “জনস্বার্থে” করা এক রীট মামলার রায়ের মাধ্যমে এই ফ্রি-ফোন-সেক্স সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে গেল ।

এর কিছুকাল পর বাজারে এল মিসরীয় দস্যু ওরাসকমের “বাংলা লিংক” (উল্লেখ্য তারা কোরিয়ায় ব্যবসা করে “কোরিয় লিংক” নামে) । তারা বাঙ্গালীত্বে মাতোয়ারা করে দিতে চাইল । বাঘের ডোরাকাটা চামরা হল তাদের লোগো । এক দিকে তারা না-না নর্তক-নর্তকী নাচানো বিজ্ঞাপনে দেশ কাঁপাল অন্যদিকে তারা বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধ, এবং জাতীয়তাবাদকে নিজেদের ব্র্যান্ডিং-এর পুঁজিতে পরিণত করল । ইতোমধ্যে বিশ্বে সৃষ্টি করা হয়েছে নাইন-ইলেভেন ফোভিয়া এবং এর পরবর্তী আমেরিকা-ইউরোপীয় ইউনিয়নের বোমাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ আর তারও পরে পুঁজিবাদের ইতিহাসের জঘন্যতম মন্দা ।

এসব কিছু মিলিয়ে জনগণের ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা । (চলবে…) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।