আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চড় এবং জুতো!

নাজমুল ইসলাম মকবুল চড় এবং জুতো! নাজমুল ইসলাম মকবুল আতকে উঠার মতো শব্দ চড় এবং জুতো ! দুটিরই আলাদা আলাদা অর্থ থাকলেও অপরাধী ব্যভিচারী অবিচারী কিংবা অত্যাচারীদের নিকট অবশ্যই আতংকের। প্রতিপকে প্রচন্ড শক্তিতে যেকোনভাবে খালি হাতে কিংবা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলেও এর যতটুকু প্রতিক্রিয়া হয় গালে টাস করে কষে কিংবা হালকাপাতলা চড় মারলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কয়েকগুণ এমনকি শতগুণও। তদ্রুপ জুতো ব্যবহার করা হয় পায়ে। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রতিপরে গালে কিংবা শরিরে টাস করে বা হালকাপাতলা বাড়ি মারলেও এর প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পায় অনেক অনেক গুণ। যারা দরজায়ে উলায় বা বেশি সম্মানের আসনে অবস্থান করেও অবিবেচকের মতো গ্লানিকর কাজ করতে পাষান হৃদয়ে একটুও ঝাকুনি দেয়না তাদের কপালে এসব জুটলে তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে মানুষের হৃদয়পটে ভেসে উঠে যুগের পর যুগ কালের পর কাল বছরের পর বছর শতাব্দীর পর শতাব্দী।

ইতিহাস থেকে সেই প্রাচীণকালের অত্যাচারী বাদশা নমরুদের পরিণতি আমরা জানি। যার মৃত্যু হয়েছিল নিজ হাতে জুতো দিয়ে নিজের মাথায় আঘাতের মাধ্যমে। পাকিস্তান আমলে পরাক্রমশালী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নাকি সিলেট সফরে এলে তাকে জুতো প্রদর্শন করা হয়েছিল বলে আগেকার মুরব্বীয়ানরা এখনও আলাপচারিতায় বলেন। বাংলাদেশে যাকে স্বৈরাচারী বিশেষনে বিশেষিত করা হয় সেই সাবেক প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক প্রেসিডেন্ট থাকাকালীণ সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসার বিশাল জনসমাবেশে গেলে সেখানে জুতো নিপে করা হয়েছিল বলেও ব্যাপক জনশ্র“তি আছে। তবে ইরাক ও আফগানে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হামলা চালিয়ে দেশ দুটি দখল করে হাজার হাজার শিশু নারী পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা নির্যাতন নিপীড়নের দায়ে মহাপরাক্রমশালী আমেরিকার সাবেক যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট বুশকে সেই ইরাকের মাটিতেই এক্কেবারে কাছে থেকে জুতো নিপে করে বিশ্বব্যাপী হইচই তোলে যে ইতিহাস গড়েছেন সেই ইরাকী সাংবাদিক জাইদীকে আজ একনামে চিনেন বিশ্বের কোটি কোটি জনগন।

জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ওই প্রতিবাদকে অন্তর থেকে সমর্থন জানান গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। দোয়া ও পুরস্কৃত করতে থাকেন জাইদীকে। জাইদী পরিণত হন গোটা বিশ্বের প্রতিবাদী মানুষের এক মুর্ত প্রতীকে। কিন্তু গত কয়েকদিন পুর্বে ভারতের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ৭১ বছরের বৃদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ারের গালে তারই দেশের হরবিন্দর সিং নামের এক শিখ যুবক এক্কেবারে সরাসরি প্রচন্ড চড় মেরে বিশ্ব মিডিয়ায় আবারও তুলে দিলো হইচই। হরবিন্দর সিং চড় মারার পর বলেছে, মন্ত্রীর দুর্নীতি এবং দেশে ক্রমাগত অসহনীয়ভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তার এই চড় মারা।

সাংবাদিকদের কাছে সে বলেছে, ‘আমি তাকে চড় মারার জন্যই এসেছিলাম। ’ কোমর থেকে ছোট একটি কৃপাণ বের করে সে বলেছে, ‘আজ (২৪ নভেম্বর ২০১১) গুরুতর কিছু ঘটে যেতে পারত। কেবল গুরু তেজবাহাদুরের শাহাদাত দিবস বলে মন্ত্রীকে মা করে দিয়েছি। ’ চড় ও জুতোর মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আমি তেমন একটা ভাবিওনি লেখারও চিন্তা করিনি। কিন্তু ওই চড় সংক্রান্ত বিষয়ের উপর গাফফার চৌধুরীর ‘ভারতের মন্ত্রী চড় খেলেন: আম্মোদের অবস্থা কী হবে?’ শিরোনামের একটি লেখা পড়ে কিছুটা না লিখে পারলামনা।

আব্দুল গাফফার চৌধুরী নিবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করেছেন, ‘গণতন্ত্র কোনো দেশে জুড়ি গাড়ি চড়ে আসেনা। আসে চর্চা, ধৈর্য ও অভ্যাস গঠনের দ্বারা। আমাদের দেশে এই চর্চা, ধৈর্য ও অভ্যাস গঠন কোনোটাই নেই। ভারত বড় দেশ হতে পারে। কিন্তু এখনও আমাদের মতো একই আর্থসামাজিক অবস্থার দেশ।

কিন্তু সে দেশটিতে যে গণতন্ত্রচর্চার ইচ্ছা আছে, অভ্যাস গড়ে উঠছে, শারদ পাওয়ারের ঘটনা তার প্রমাণ। ’ এখন আসি আমার মুল কথায়। ভারতের টিপাইমুখে ভারত সরকার কর্তৃক বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণের প্রতিবাদে বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে অবস্থানরতো বাংলাদেশীরাও আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনেও পালিত হয়েছে এবং হচ্ছে নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচী।

ভারতীয় দুতাবাসগুলোর সামনেও হয়েছে বিােভ, দেয়া হয়েছে স্মারকলিপি। এমনকি খোদ ভারতেও এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে এবং হচ্ছে। টিপাই বাঁধের তিকর দিক সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান পরিবেশ বিজ্ঞানী লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক কলামিস্টরা অসংখ্য অগণিত লেখালেখি বক্তৃতা বিবৃতি চালিয়ে যাচ্ছেন। আবদার অনুরোধ মিছিল মিটিং সেমিনার সিম্পোজিয়াম আলোচনাসভা প্রতিবাদসভা মানববন্ধন স্মারকলিপি ইত্যাদি একমাত্র সরকারদল ছাড়া তাদের জোটভুক্ত অন্যান্য দলসহ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করছেন হরদম। চুড়ান্ত কর্মসূচী হিসেবে পালন করেছেন টিপাই অভিমুখে পদযাত্রা ও লংমার্চ।

কিন্তু ভারত সরকার তাতে কান দেয়াতো দুরের কথা বরং উল্টো উপহাসের সুরে কয়দিন আগে মনমোহন সিং এতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে আহবান জানান। কোটি কোটি মানুষের আন্দোলনকে কতখানি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে বা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালে এমন কথা একজন প্রধানমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে তার বিচারের ভার সম্মানিত পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। স¤প্রতি আমাদের দেশের বর্তমান সরকারের একজন নয়া মন্ত্রী, ভারতবন্ধু হিসেবে পরিচিত সরকারদলীয় জাদরেল নেতা বলেছেন, লংমার্চ শর্টমার্চ করে টিপাইমুখ বন্ধ করা যাবেনা। তাদের এধরনের বক্তব্য ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য শুনার পর বুঝতে হবে যে, আমাদের পিট দেয়ালে ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও কঠোর কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর বিকল্প কোন পথ তারা খোলা রাখেননি।

কিন্তু অগণিত কর্মসূচী পালনের পর লংমার্চ ও পদযাত্রার মতো বড়ো কর্মসূচীও শেষ হওয়ায় আর কঠোর কর্মসূচী হাতে আছেই বা কী। সারা পৃথিবীতে অবস্থানরতো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীরা প্রত্যেকটি দেশে অবস্থিত ভারতীয় দুতাবাস ঘেরাওয়ের চুড়ান্ত কর্মসূচী দিতে পারেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সকল সংস্থায় বিষয়টি উত্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারেন। জাতিসংঘের সামনে আরও বৃহত্তম বিােভ কর্মসূচী নিতে পারেন। এছাড়া ছোট্ট একটি কর্মসূচীর কথাও ভেবে দেখার এবং আমার এ ুদ্র প্রস্তাব বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাই।

যেহেতু বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণে ভারতের শ্রদ্ধাভাজন প্রধানমন্ত্রী অনড় এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন তাই ভারতের মহাসম্মানিত প্রধানমন্ত্রীকে সতর্কতা ও সম্মানের সাথে আলতো করে চড় মেরে তার বোধোদয় ঘটানোর বা ঘোর কাটানোর একটি কর্মসূচী দেয়া যেতে পারে। এতে কোন জাইদী বা হরবিন্দর সিং এর মতো ব্যক্তিও এগিয়ে আসতে পারেন। মন্ত্রী মহোদয়কে হাতের কাছে না পেলে কিংবা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সান্নিধ্য পেতে ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা তৈরী করে বিশ্বের প্রতিটি ভারতীয় দুতাবাসের সম্মুখে কিংবা ঐতিহাসিক স্থানে সুবিধামতো সাজিয়ে রেখে বিশাল জনসমাগম ঘটিয়ে সকলে সুশৃঙ্খলভাবে লাশ দেখার মতো সারিবদ্ধহয়ে হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে গিয়ে জনপ্রতি একটি করে ওই মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকার গালে সম্মানের সাথে চড় মেরে মেরে স্থান ত্যাগ করে অন্যকে সুযোগ করে দিতে পারেন এবং তা সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রদর্শণ করে বিশ্ববাসীকে দেখানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মহাসমাবেশের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এসব কর্মসূচী পালন করেও যদি তা বন্ধে ভারত সরকার কার্যকর পদপে না নেয় বা চৈতন্যোদয় না ঘটে তবে পরবর্তীতে একই ধরনের কুশপুত্তলিকা নির্মাণ করে ল ল মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে গালের মধ্যে আলতো করে জুতোর বাড়ি (আঘাত) দেওয়ার চুড়ান্ত কর্মসূচী দেবার ঘোষনাও দিতে পারেন। তবে আমি আশাবাদি এসব দুঃখজনক কিংবা অপমানজনক কর্মসূচী দেবার আগেই আমাদের সুপ্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সরকারপ্রধান বাংলাদেশ ও ভারতের কোটি কোটি মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানিয়ে টিপাইসহ সকল বাঁধ কিংবা ড্যাম নির্মাণ বন্ধ করে ফারাক্কা ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিয়ে সুপ্রতিবেশীসুলভ তথা খাটি বন্ধুত্বসুলভ আচরন শুরু করে আমাদেরকে মহাসমস্যা থেকে রা করতে এগিয়ে আসবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।