আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এত বৈষম্য কখনই সমাজে ভাল ফল বয়ে আনতে পারে না।

আমি একটি সরকারী ব্যাংকে অফিসার পদে কাজ করি। আমার পাশে নতুন নিয়োগ পাওয়া একজন সিনিয়র অফিসার কাজ করেন। আমিও নতুন তবে তিনি আমার দেড় বছর পরে জয়েন করেছেন বলে বিভিন্ন সময়ে আমার থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জেনে নেন। একদিন কম্পিউটারে একাউন্ট ফরম এন্ট্রি দেওয়ার সময় spouse name এর ঘরে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন এর মানে কি? (আমাদের ফরম গুলো ছাপানো হয় বাংলায় আর কম্পিউটারে ইংরেজি। আর ফরমের সাথে কম্পিউটারের মিলও নাই।

) আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। একজন সিনিয়র অফিসার spouse এর মানে জানে না তা কি করে হয়! যা হোক শান্তস্বরে বলে দিলাম স্বামী বা স্ত্রী। তবে আমার আশ্চর্য হওয়া বাকি ছিল যখন কয়েক দিন পর এই একই প্রশ্ন আবারো করলেন! এছাড়া উনি husband বানানও জানেন না! একই সাথে জয়েন করা আরো একজন সিনিয়র অফিসার থেকে উনি এমনভাবে কাজ বুঝে নেন যেন একজন আরেকজন থেকে অভিজ্ঞতায় কত এগিয়ে। একই সাথে জয়েন করেও একজন এই কয়েক মাসে দক্ষ আর একজন এখনো বুঝেই যাচ্ছেন। মনে হয় আজীবনই যাবেন।

ব্যাপার হচ্ছে একজন মুক্তযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া আর একজন সাধারণ। কোনজন সাধারণ কোনজন মুক্তিযোদ্ধা আপনারাই বুঝে নিন। যে ছেলেকে আমার spouse এর মানে বলে দিতে হয় সে হয় সিনিয়র অফিসার! এক প্রজন্মের কর্মের দায়ভার কেন পরবর্তী প্রজন্মকে বহন করতে হবে? আামার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেননি এর দায় তো আমার নয়। অবশ্য এই বৈষম্য আমাদের রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যদের দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়; যা সেসময় সেনাবাহিনীতে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল।

এর ফলাফল শুভ হয়নি। বর্তমানে কোটা ব্যবস্থার নামে প্রশাসনে, সরকারী চাকরীতে যে বৈষম্য বজায় আছে তার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জমা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। তাই এই কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কিছু বলা হলে তাকে নাজেহাল অপদস্থ হবার ভয় থাকে। তবে পেটে যখন লাথি মারা হয় তখন সেটা মুক্তিযোদ্ধার না রাজাকারের সেই বিবেচনা করার সময় থাকেনা।

চেতনারও কোন আবেদন থাকেনা। বর্তমান সরকার সেটা ভালমতই টের পাচ্ছে। চেতনার দোহাই দিয়ে যেমন ভুল শাসন, অদক্ষতা, দুর্নীতি ইত্যাদি থেকে পার পাওয়া যায়না। তেমনি মুক্তিযুদ্ধের আবেগ দিয়ে বৈষম্য কে জায়েজ করা যাবেনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।