আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন দেবশিশুর মৃত্যু ও বিরামহীন সাইকোপ্যাথিক যাত্রা

১. প্রচন্ড অসহ্যকর অবস্থার দুই দিন যাবত সময় কাটাচ্ছি। গতকাল সকাল থেকে কিছু খেতে পারছিনা। শুধু চা আর পানি খাচ্ছি। খাবার খেতে নিলেই তিনটা শিশুর মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বারবার ভেসে উঠছে।

নিষ্পাপ, করুণ, অসহায় আর যন্ত্রণাকাতর তিনটা দেবশিশুর মুখ। ২. বিজয়ের বয়স মাত্র আট বছর। শৈশবের উজ্জল সময়ে মুখর হবার কথা তার। কিন্তু বাস্তবতা অনুযায়ী বাস্তব সবসময় চলেনা। যে সময়ে বাবা-মার সাথে তার অভিমান করবার কথা সেই সময়টাতে সে দেখেছে বাবা-মার কলহ।

সরল রেখার মত জীবন চলেনি তার। যখন আদর আর স্নেহ পাওয়ার ও অনুধাবন করবার বয়স, বাবা-মার প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা আর টান থাকবার বয়স ঠিক তখনই তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আর তার ছোট বোন সাড়ে তিন বছরের সাদিয়াকে হত্যা করা হয়েছে গলা টিপে। তাদের অসহায় বেদনার্ত চোখগুলো, বর্বরতার সময় তাদের অবাক ও বিস্ময় মিশ্রিত চাহনীগুলো ঘাতককে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে নাই। !! আর দশ জনের মত আমি বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছিনা।

একজন মানুষ কতটা পাষন্ড ও বর্বর হলে এমন আচরণ করতে পারে! কতটা পাষন্ড হলে!! সে কি কারো সন্তান নয়! তার কোন সন্তান নেই! ৩. আড়াই বছরের রিয়াকে নিয়ে মা গিয়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডাক্তারের রুমে শিশুসহ ঢোকা নিষেধ। তাই বাইরে দুইজনের কাছে সামান্য সময়ের জন্য রেখে গিয়েছিলেন রিয়াকে। সেই রিয়াকে খুঁজে পাওয়া গেল সাড়ে তিনঘন্টা পরে, খুঁজে পাওয়া গেল মর্গে। তাকে হত্যা করা হয়েছে।

তার ছোট নরম তুলতুলে শরীরে পাওয়া গেছে আঘাতের চিহ্ন। সে কার কাছে কি অপরাধ করেছিল, কার পাকা ধানে মই দিয়েছিল জানিনা। শুধু অনুমান করতে পারি ইবলিশও এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেনা। এটা কি কোন সাইকোপ্যাথের কাজ! ৪. এই তিন মৃত্যু নিয়ে আগামী দুই তিনদিন পত্রিকাগুলো মুখর থাকবে। চা-এর টেবিলে আলোচনা হবে।

আবার নতুন কোন ঘটনা ঘটবে। সবাই সেটা নিয়ে মাতবে। আমরা ভুলে যাবো তিনজন দেবশিশুর প্রতি মানব সভ্যতার এই চরম হিংস্রতার কথা। আজকাল আমরা খুব সহজে সবকিছু ভুলে যেতে পারি। আমরা খুব সহজে অতি স্বাভাবিকভাবে সবকিছু মেনে নিতে পারি।

এই সকল ঘটনা আর আমাদের আর স্পর্শ করেনা। ! আমরা প্রতিবাদে ফেটে পড়তে পারিনা! শুধু নিজের মধ্যে নিজেকে নিয়ে গুটিয়ে যেতে পারি। আমরা সকলেই কি এক একজন সাইকোপ্যাথ অর্থাৎ মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি। ৫. আমি বাসায় পত্রিকা রাখিনা। কারণ পত্রিকা পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায়।

কিন্তু অফিসে পত্রিকা রাখতেই হয়। পত্রিকা পড়তে এখন ভয় পাই। এই তিনমুখ, এই তিন মৃত্যু আমার পত্রিকা ভীতিকে আরো প্রকট করে দিয়েছে। এখন আমি অফিসে বসে ঘন্টায় ঘন্টায় বাসায় ফোন করি। আমার সন্তানের বয়স প্রায় চার বছর।

তার নিরাপত্তার চিন্তায় আমি কারো উপর ভরসা রাখতে পারছিনা। আমিও কি সাইকোপ্যাথ হয়ে যাচ্ছি? ৬. মেনে না নিবার মত সবকিছুকে মেনে নিবার এবং স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহন করবার এক অদ্ভূত ক্ষমতায় আমরা আজ ক্ষমতাবান । আমাদের সমাজ আর রাষ্ট্র সবকিছু সহ্য করবার আর মেনে নেবার মহান সভ্যতায় শিক্ষিত হয়ে ক্রমশ পরিপূর্ণ সাইকো সমাজ আর রাস্ট্রে পরিণত হচ্ছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।