আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরম পত্র ( গাজুরিয়া মাইর ) [ একটি শিক্ষণীয় পোস্ট ]

যা ছিল না,তা না পাওয়াই থাক। সব পেলে নষ্ট জীবন ১৯৫৬ সাল । মৌলানা আবুল আলা মউদুদি পৃথক নির্বাচনের শ্লোগান ওয়ালা পতাকা কাধে ঢাকায় আসলেন। পল্টন ময়দানে বিরাট সভা মঞ্চ তৈরি হলো । আলাদা ডায়ানামো ফিট করে ইলেকট্রিক লাইট এর ব্যবস্থা।

মঞ্চের উপর এক ইঞ্চ পুরু গালিচা পেতে সোফা সেট বসান হলো। আর হুজুরদের পানের পিক ফেলার জন্য কুলুক দান আনা হলো। সভা ক্ষেত্র একেবারে লোকে লোকারণ্য । হলকুম দিয়ে উচ্চারণ করে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হলো। এরপর হুজুর বাঙালি মুসলমানদের সবক দেওয়ার জন্য যে মাত্র উরধু তে মুখ খুলসেন আর যায় কোথায় ? মাইরে রে মাইর।

গাজুরিয়া মাইর । হুজুর অক্করে 440yrds রেসে ফাস্ট হইয়া গেলেন । এক দৌড়ে কাপ্তান বাজারের কসাই পট্টি। মৌলানা সাব পরদিনই লাহোর পালিয়ে গেলেন । চল্লিস হাজার টাকা ব্যয়ে তার সাধের আম জলসার এই পরিনতি হলো।

এরপর মৌলানা আবুল আলা মউদুদির চোট পোট পশ্চিম পাকিস্তানেই সিমাবদ্ধ থাকলো। আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসলে জামাতে ইসলামী তাকে পূর্ণ সমর্থন দিলো। কিন্তু আইয়ুব খানের ফ্যামিলি প্লানিং আর এক লগে ৪ টা সাদি বন্ধ করনের আইনে হুজুর খুবি খাপচুরিয়াস হয়ে উঠলেন। তাই আইয়ুব বিরোধী গন অভত্থানে র সময় জামাত আলারা শুধু একটা কামই করলেন। সেটা হচ্ছে রাস্তার ধারের সমস্ত ফ্যামিলি প্লানিং এর সাইন বোর্ড ভেঙ্গে ফেললেন।

১৯৭০ সাল । ১৪ বছর পর মাউলানা মউদুদির খুবই খায়েশ হলো ঢাকার পল্টন ময়দানে একটা জলসায় তকবির ফরমাবেন । যেমন চিন্তা তেমন কাজ । জামাতে ইসলামীর মাইনে করা কর্মীরা সব কাজে ঝাপিয়ে পরলেন । রঙ বেরঙ এর অফসেট ছাপা পোস্টারে ঢাকা শহর ছেয়ে গেল ।

চব্বিশটা বেবি ট্যাক্সিতে মাইক ফিট করে আম জলসার প্রচার করা হত। বিরাট উঁচু ডায়াস তৈরি করে গালিচা পেতে আবার কুলুক দানের ব্যবস্থা করা হল। আর এবার ট্রাক বোঝাই করে চাকু, ছোরা, লাঠি মসজিদের ও পাশটায় লুকিয়ে রাখা হল। হুজুরের আম জলসায় এগুলো হল সরঞ্জাম । এছাড়া মফস্বলের মক্তব-মাদ্রাসা থেকে ৫ টাকা দিন হিসাবে বিনা ভাড়ায় ট্রেনে করে তাল বেলেম আনা হলো।

সভার উদ্যোগ তাদের দিল আনন্দে ভরে গেল । কিন্তু একি !!অবিরাম চিৎকার করা সত্তেও কেউ বসতে রাজি নয় । জলসার শুরু তেই চট্টগ্রামের জামাতে ইসলামীর আমির উরধুতে খালি একটা লাইন বলেছেন যে " পূর্ব বাংলার মুসলমানরা সব হিন্দু হয়ে যাচ্ছে " ব্যস! অইখানেই ফুল স্টপ । বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । আপনারা মনে করবেন না যে পানির বৃষ্টি ।

এটা হইল ইটের বৃষ্টি । আরে ইটরে ইট !! হাজার হাজার ইত এসে পড়তে লাগলো । ওদিকে মাইকে অবিরাম চিৎকার হচ্ছে ' ভাই সব, বদরের জঙ্গ শুরু হয়ে গেছে । আপনারা ইয়া আলি বলে লাঠি ছোরা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন । কিন্তু কিসের কি !! এদিকে নারায়ে তাকবির আর জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্যে ইটের চোটে হুজুর রা সব মতিঝিলের দিকে ভাগোয়াট ।

লড়াই শেষ হল। দু জন নিহত আর ১০৬ জন আহত । এই হল বাঙ্গালিদের জাত তুলে গালি দেওয়ার পরিনতি । এইটাই শেষ। এরপর মাউলানা মউদুদি কে আর ক্রেন দিয়ে টেনেও ঢাকা আনা যায় নাই .।

। লেখক : এম আর আখতার মুকুল ( চরম পত্র , ১৬ জুন ১৯৭১ ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।