আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

|| একটি ঝড়ের রাত এবং আসিফ ভাইয়ের ট্রাউজারস হারানোর গল্প ||

মানুষের জীবন খুবই বিবর্ণ থাকে মাঝে মাঝে। আসলে একে বিবর্ণ বলাটা বোধ হয় ঠিক না। এটাও একটা রং। হয়তো নিকষ কালো কিংবা ধূসর ! রাত ৪ টা ১০ কি ১২ হইবে। কানে হেডফোন লাগাইয়া রুপম এর গান শুনিতেছিলাম।

হঠাৎই মনে হইল কে যেন দরজাতে জোরে জোরে আঘাত করিতেছে। হেডফোন খুলিয়া আবার শিওর হইলাম যে বেলকনি এবং বাথরুমের দরজাতে জোরে জোরে কে যেন আঘাত করিতেছে। মনে হইলো কোন পেত্নী আমার নিকটে আসিতে চাইতেছে। আমার মতো একজন সুদর্শন পুরুষকে রুমে একা পাইয়া তাদের এমন বাসনা হইতেই পারে। যেইখানে মানবীদের পর্যন্ত এহেন ইচ্ছা জাগ্রত হয় সেইখানে পেত্নীই বা কম যায় কিসে? ভয়ে গায়ের প্রত্যেকটা লোম দাঁড়াইয়া গেল।

তাড়াহুড়া করিয়া রুমের বাতি প্রজ্জলন করিলাম। সাহস করিয়া বেলকনির দরজা খুলিতেই দেখি বাহিরে প্রচণ্ড ঝড় হইতেছে। আমি দেখিলাম বেলকনিতে শুকাইতে দেওয়া আমার প্যান্ট শার্ট ইতোমধ্যে পুনরায় ভিজিয়া একাকার হইয়া গিয়াছে। তাড়াতাড়ি ইহাদের রুমের মধ্যে আনিয়া রাখিয়া একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতে না ফেলিতেই আবার অস্বস্তিতে পড়িলাম। কারণ আমার লুঙ্গি ! দেখিলাম আমার লুঙ্গিখানা পুরোপুরি ভিজিয়া চুপসাইয়া গিয়াছে।

পাঠক আপনার এহেন চিন্তা করা মোটেও উচিৎ হয় নাই। হ্যাঁ অবশ্যই বৃষ্টির পানিতে আমার লুঙ্গি ভিজিয়া গিয়াছে, অন্য কিছু নয় ! যাহাই হইলো মোটেও শুভকর কিছু হয় নাই। বৃষ্টির পানিতে আমার লুঙ্গি ভিজিয়া আমাকে যে অস্বস্তিতে ফেলিয়া দিয়াছে সেই অস্বস্তি নিয়াই আমি বেলকনিতে কিছুক্ষন দাঁড়াইয়া রইলাম। ভাবিলাম কোন সুন্দরী রমণী থাকিলে এই মুহূর্তে তাহার সহিত ছাঁদে ভিজিতে পারিলে মন্দ হইতো না। কিন্তু আপচুচ ! আবার ভাবিলাম একা একাই যাই, ছাদ হইতে ভিজিয়া আসি।

কিন্তু পেত্নীর ভয়ে যাইবার সাহস করিলাম না। কারণ পেত্নীর সাথে রোমান্টিসিজম করা বিপদজনক হইতে পারে ! ইহা ভাবিতেই মনটা আবার খারাপ হইয়া গেল। আমি রুমের মধ্যে পুনরায় গমন করিলাম। রুমের ভেতরে আসিতেই দেখি বিদ্যুৎও পলায়ন করিয়াছে। এমন সময় রুমে কে যেন করা নারিলো।

কিছু না ভাবিয়া দরজা খুলিতেই দেখি আমাদের মহামান্য ফেলুদা বা গান্ডুদা ওরফে আসিফ ভাইয়ের আগমন। আসিফ ভাইয়ের নামকরণের সার্থকতা না হয় আরেকদিন শুনাইবো। যাই হোক তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কহিলেন, "আরমান ছাঁদে যাবি?" আমি উত্তরে কহিলাম, "আপনি কহিলেন, আর আমি যাইবো না ইহা কি হইতে পারে দাদা?" অতঃপর দুইজনে ছাঁদে গমন করিলাম। ছাঁদে যাইয়া আমি আমার এক বৎসরের সুপ্ত বাসনা পূর্ণ করিলাম। বৃষ্টির পানিতে স্নান করিতে লাগিলাম।

হিমশীতল পানির সাথে সৃষ্টিকর্তার উপহার ছিল শিলা। না ইহা কোন রমণী বা পেত্নী কিংবা কোন হুর পরী না, নিতান্তই বরফের টুকরা ! আমি যখন কল্পনার সাগরে ভাসিতেছি এমন সময় বোধ করিলাম আসিফ ভাই কিছু খুঁজিতেছেন। ভাবিলাম তিনি অন্ধকারে রত্ন খুঁজিতেছেন ! জিজ্ঞেস করিতে তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমি আবার আমার চিন্তার সাগরে ডুব দিলাম। কিন্তু কিছুক্ষন ডুব মারিবার পর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করিতে লাগিলাম।

ভাইকে বলিলাম, "ভাই চলেন। শীত অনুভব করিতেছি। " ভাই কিছু না বলিয়া আমার সঙ্গে রুমে আসিয়া পড়িলেন। বাথরুম থেকে কাপড় বদলাইয়া আসিয়া দাঁড়াইতেই ভাই স্নেহবাৎসল্যতাপূর্বক একটি ধুম্রশলাকা বাড়াইয়া দিলেন। দুইজনে যখন নিকোটিন সুধা পান করিতেছি এমন সময় ভাই খুব ইমোশনাল হইয়া কহিলেন, আরমান আমার একটা ট্রাউজার হারাইয়া গিয়াছে।

ছাঁদে শুকাইতে দিয়াছিলাম। এখন দেখিলাম নাই। ওইটা আমার খুব শখের ছিল রে। ইন্টারে থাকিতে কিনিয়াছিলাম ! ট্যুরে গেলেই ওইটা লইয়া যাইতাম। " আমি ওনার চেহারার দিকে তাইকায়া দেখি বেচারার কাঁদো কাঁদো ভাব।

তাহাকে সান্ত্বনা দেবার নিমিত্তে কহিলাম, " ভাই আপনি বিবিএ পাশ করিয়া বাহির হন আমি আপনার বিবাহে উহার চাইতেও সুন্দর একটি ট্রাউজার আর সাথে আরও কিছু গিফট করিবো। " উৎসর্গঃ সাময়িক ব্যাচেলর আমাদের প্রিয় ঘুড্ডির পাইলট ভাইকে। আমার কথাঃ ভাইয়ের জন্য আমার মনটাও অনেক খারাপ। আর আমি রম্য লিখতে পারি না। কিন্তু চেষ্টা চালালাম।

বিশিষ্ট রম্য লেখক বড় ভাইয়েরা আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।