আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ থার্টিফার্স্ট নাইটঃ চলেন উল্লাস করি; আমরা ছাড়া আর কে আছে এত আনন্দের দাবিদার ??? [সংগ্রহিত]

আমার কিছু বলার ছিল আসছে থার্টিফার্স্ট নাইটঃ চলেন উল্লাস করি; আমরা ছাড়া আর কে আছে এত আনন্দের দাবিদার ??? By Arafat Bin Sultan “থার্টিফার্স্ট নাইট” কি বস্তু তা নতুন করে বলে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার সাহস করছি না। স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা পড়ুয়া থেকে শুরু করে মোটামুটি সবাই এই “জিনিস”এর আগমন উপলক্ষ্যে চেতনে হোক, অবচেতনে হোক মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে সুন্দর করে লিখে ফেলে “হ্যাপি নিউ ইয়ার!”। .আমি তো এখানে বাংলা অক্ষরে লিখলাম, আপনারা আবার ভুলেও এই কাজটি করতে যাবেন না যেন! তাহলে “প্রগতিশীলেরা” আপনাকে “ক্ষ্যাত” বলতে পারে। ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা ইংরেজিতেই লিখেন। আমরা বাংলাদেশীরা একটু অতিমাত্রায় “উদার”, মুক্ত সংস্কৃতির চেতনায় উজ্জীবিত।

শুধু ৫০ পয়সা খরচ করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে তো আর থার্টিফার্স্ট নাইটের মত “জোশ” একটা উপলক্ষ্য উদযাপন সম্ভব নয়, তাই আমরা আরো অনেক কিছু চাই। রাতভর গান (?!?) হবে নৃত্য (!?!) হবে আরো অনেক কিছু হবে যা লিখে আমার কি-বোর্ড ও কম্পিউটারকে লজ্জা দিতে চাইনা, কারণ আমার ডিভাইসগুলোকে আমি অনেক ভালবাসি। সারাদিন “সুশীলতা” দেখিয়ে রাত্রে পার্টিতে না নাচলে তো আবার “জনপ্রিয়” হওয়া যায়না, তাই এদের বাঁধা দেয়া আমার আপনার কর্ম নয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে দশ হাজার মানুষ মারা যায় স্রেফ সড়ক দুর্ঘটনায়; আহত হয় লক্ষাধিক। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই এমন খবর আজ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুতরাং এটা নিয়ে ভাববার সময় কই? আমার তো ভালোই যাচ্ছে দিনকাল। চলেন সেলিব্রেট করি! (১) ঈদের আগে রাস্তা সংস্কার হল। ৬৯০ কোটি টাকা (কম-বেশি হলে কমেন্টে জানিয়ে দিন) খরচ করে রাস্তাঘাটের “সাময়িক” উন্নয়ন সাধনের প্রয়াস নেয়া হয়েছিল। যদিও এটিকে নতুন এক “হরিলুটের” সুযোগ হিসেবে অভিহিত করেন কেউ কেউ। আপনার ভাল লাগুক বা না লাগুক দেশের মানুষের করের টাকায় আরও অনেক কিছুই হচ্ছে, হবে।

তাই বলে আমরা তো আর থেমে থাকতে পারিনা। দেশিয় আচার-অনুষ্ঠানে যেহেতু আমাদের পোষায় না, তাই চলুন ধার করে হ্যালোইন হোয়াইট বা এরকম আরও কিছু আমদানি করা যায় কিনা গবেষণা করি। (২) আমার দেশের বুকের উপর দিয়ে শুরু হল ট্রানজিট। বহু তর্ক-বিতর্ক থাকা সত্বেও দেশকে সিঙ্গাপুরের মত উন্নত করার স্বপ্নে বিভোর আমরা। আজকে ব্লগে দেখলাম তিতাস নদী আমাদের ট্রানজিটের “পয়লা মাশুল” হিসেবে বলি হতে যাচ্ছে।

ব্লগের তথাকথিত মুক্তমনারা কুরবানির ঈদের সময় পশুপ্রীতির ব্যপক হইচই লাগিয়ে দেয়। তারা এখন কোথায় গেল? (৩) টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হলনা। মনমোহন সিং বাংলাদেশে এসে আমাদের ভাল ভাল কথা বলেন আর অপর দিকে মনিপুরে গিয়ে বলেন “টিপাইমুখ বাঁধ হবেই”। .ভারত অন্তত একটা জিনিস আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, তা হল দেশপ্রেম। অন্যকে ঠকিয়ে হোক বা শোষণ করে হোক, সেদেশের নেতারা ঠিকই দেশের জন্য কিছু করতে চাচ্ছে; এখন আমাদের সম্পদ আমরা রক্ষা করতে না পারলে কার কি? ওই যে কথায় বলেনা, “গরীবের সুন্দরী বউ থাকতে নেই”।

তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবিদার আমরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি আমরা তা পেয়েছি? বহু আগে ছিটমহল নিয়ে আমাদের পাওনা না দিয়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ইস্যুতে শোষিত হয়েছি আমরা। তাতে কি? মুক্তিযুদ্ধের ঋণ তো শোধ করতে হবে! আর তা করতে গিয়ে সীমান্তে বহু মানুষ বলি দিয়ে যাচ্ছি প্রতি বছর। এই তো বিজয় দিবসেও আমরা এমনই ভাবে আর একবার ঋণ শোধ করলাম, মনে পড়ে? মনে না পড়লে আমি অযথা আপনার সময় নষ্ট করতে চাইনা, আপনি এক্ষুনি বাসার পাশের ইলেক্ট্রনিক্স দোকানের সবচেয়ে “রকিং” সাউন্ড সিস্টেমটা বুকিং দিয়ে আসেন। দেরীতে গেলে নাও পেতে পারেন, তখন আবার থার্টিফার্ষ্ট নাইট পানসে হয়ে যাবার রিস্ক থেকে যাবে।

সো, বি কুইক! ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ। কি করে এত সহজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ভুলে যাচ্ছি আমরা? কেউ কেউ তো বলে দেশে নাকি কোন মুক্তিযুদ্ধই হয়নি! অনেক আবার শহীদদের সংখ্যা নিয়ে টানাটানি করে। দেশের মাটিতে এরকম অনেক কিছুই সহ্য করতে হচ্ছে আমাদের। এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বপ্নের মত লাগে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ফেসবুকে সবাই একদিকে লাল-সবুজ প্রোফাইল পিকচার সেট করছে আর অন্যদিকে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের ম্যাচে গ্যালারিতে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে লাফালাফি হচ্ছে।

আমরা বাংলাদেশীরা আর কবে মানুষ হব? আর কতটা প্রাণ গেলে আমরা নিজের দেশকে ভালবাসার কথা অন্তত “চিন্তা” করব? এদিকে দেশের একটি খ্যাতনামা স্যাটেলাইট চ্যানেল নতুন রাজাকার ফর্মুলা দিয়ে দিল। দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পড়লেই নাকি রাজাকার হয় এবং এগুলো "খুলে ফেললেই" নাকি রাজাকারের বিচার হয়ে যায়! কত্তবড় মাথামোটা স্টুপিড আইডিয়া চিন্তা করে দেখুন. . . আমাদের দেশে জনপ্রিয় হওয়া খুব সহজ। সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা- এসব নিয়ে ঘাটলে উদাহরণ পেয়ে যাবেন। এছাড়া মিলে-অমিলে শুধু নির্দিষ্ট পোষাকের প্রতি থাকা এলার্জিকে পুরো একটা সমাজের মধ্যে ছড়িয়েও ব্যপক সুশীলতার ভাব নেওয়া যায়। শুধু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই লাইন কথা বলার সময় লোক পাওয়া যায়না।

কমপক্ষে ২৮,০০০ কোটিপতির বাস এই বাংলাদেশে; যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। এই হতদরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সামান্য খরচ করার মানসিকতা হয়না আমাদের, বরং ইউনিফর্ম পরে শখ করে একদিন ফুল বিক্রি করেই আমরা সবকিছু “বদলে” দিতে বদ্ধপরিকর। বদলানোর সময় এখনই- লেটস রক! (৪), (৫) দিনবদলের এই পালা লেগেছে আমাদের প্রতিটি অঙ্গনে। আজ পার্লারের পোশাক পরিবর্তন কক্ষেও সিসি ক্যামেরার লাইট জ্বলছে। আচ্ছা, ধরেই নিলাম ওখানে ভিডিও করা হয়নি, তাহলে ক্যামেরাটি কি চেহারা দেখার জন্য রাখা ছিল? আবার তাদের যদি এতটাই সৎ উদ্দেশ্য থাকে তবে পরে ওটা খুলেই বা ফেলা হল কেন? আমাদের বিজ্ঞান গুরুরা বা সুশীল সমাজ এসব তুচ্ছ বিষয়ে কথা বলে ইমেজ নষ্ট করতে চান না।

তারা আরও অনেক জটিল জটিল ইস্যুতে “বিজি” আছেন। আমার দেশের মানুষ না খেতে পেয়ে আত্নহত্যা করছে, আর আমরা কে.এফ.সি’র নিত্য নতুন ব্রান্সের ফিতা কাটছি। লোডশেডিং এ হসপিটালে রোগীর দুর্ভোগ, ছাত্রছাত্রদীদের পরালেখায় বাঁশ যাচ্ছে, আর আমরা এসি’র নিচে প্রবাসী মামার পাঠানো কম্বল জড়িয়ে মোবাইল আলাপে ব্যস্ত। সুতরাং দেশের কোন অবস্থাই আমার ফুর্তির কমতি হতে দিতে পারছেনা। তাই আসুন এই থার্টিফার্স্ট নাইটে আনন্দ-উন্মাদনার আরেক রেকর্ড করে বিশ্বকে চিনিয়ে দিই বাংলাদেশও এখন ওয়েস্টার্নদের মত আধুনিক হয়ে গেছে।

আচ্ছা মনে পড়ে সেই থার্টি ফার্স্টের কথা, যেখানে এক আপুকে অন্য একজনের পোশাক গায়ে জড়িয়ে নিতে হয়েছিল? মনে পড়লে ভাল, না পড়লে আরও ভাল- কারণ এটা আপনার “জলি” মুড নষ্ট করে দিতে পারে। শুধু একটাই অনুরোধ, রাস্তা দিয়ে পার্টিতে যাওয়ার সময় দু-ধারের শীতার্ত লোকগুলোর কথা চিন্তা করে দেখবেন একবার। এর পর আপনার সিদ্ধান্ত আপনার কাছে। ইংরেজি নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা রইল, ধন্যবাদ। রেফারেন্সের দরকার পড়লে ক্লিক করে দেখতে পারেনঃ (১)- Click This Link (২)- Click This Link (৩)- Click This Link (৪)- http://bumgk.com/?p=2391 (৫)- Click This Link মূল অনুচ্ছেদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।