আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হে খোদা ! পুরুষ হয়ে জন্মানোটা কি পাপ ?

একজন সাদাসিদে মানুষ চট্টগ্রামের ইপিজেড মোড়ে সন্ধ্যার সময় লোকাল সিটি সার্ভিস বাসগুলোর অবস্থা বছরের প্রতিটি কর্মদিবসেই একই । কিছু মানুষ বাসে উঠার জন্য জীবন বাজি ধরছে,বাসে উঠা বলতে পায়ের তালুর সামান্য যে কোন একটি অংশ বাসে রাখতে পারলেই হল । বাসের ভেতর আগে থেকেই প্রচুর সংখ্যক মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একে অপরের বগলের তলার ঘামের গন্ধ শোঁকায় ব্যাস্ত এবং গুটিকয়েক মানুষ বাসের গুটিকয়েকটি সিট সিংহাসনের মত দখল করে বসে থাকে । যদিও কখনো বুঝিনা এরা সিটের দখল পায় কিভাবে । মাঝে মাঝে মনে হয় এদের জন্মই মনে হয় বাসে এবং জন্মসুত্রেই তারা বাসের সিটগুলো দখল করে বসে থাকে ।

ইপিজেড মোড় থেকে সন্ধ্যার সময় বাসে প্রচুর গার্মেন্টস শ্রমিক মেয়েও উঠে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকে । সেদিনও উঠেছিল কয়েকজন । বাস চলছে । কাস্টমস মোড়ে আসতেই হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি । বাস দাঁড় করানো হল ।

ঘটনা যেটা বুঝা গেল সেটা হল,একজন উদীয়মান নারী পকেটমার ধরা পড়ছে । স্বাভাবিকভাবেই মারধরের পালা । কিন্তু সেই মারধোর টা দিচ্ছিল ২-৩ জন । যাদের একটু পরই বাকীরা জানোয়ার পাষাণ বলে থামিয়ে দিল । এরইমধ্যে ধৃত পকেটমার কান্নাকাটি করে তার অভাব অনটন দুঃখ দুর্দশার কাহিনী বয়ান শুরু করে দিয়েছেন ।

মনে হল বাসের কয়েকজন দরদী ব্যক্তির চোখ ভিজে গেল । তাদের হস্তক্ষেপে মেয়েটিকে ওখানেই নামিয়ে দিয়ে বাস তার আপন পথে যাত্রা শুরু করলো । ধরুন ধরা পড়া পকেটমারটি ছেলে । তাহলে ধরা পড়ার কিছুক্ষনের ভেতরই বেচারার মরদেহ মেডিকেল ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হত । এভাবেই পুরুষরা বৈষম্যের শিকার ! চট্টগ্রামের গোলপাহাড় মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত রাস্তাটিকে এখন ওয়ান ওয়েতে রূপান্তর করা হয়েছে ।

জনসাধারণকে ব্যাপারটি মানতে বাধ্য করার জন্য গোলপাহাড় মোড়ে সবসময় একজন ট্র্যাফিক পুলিশ দাড়িয়ে থাকে । । গোলপাহাড় মোড় থেকে হেঁটে জিইসি মোড় যেতে পাঁচ মিনিটই লাগে বড়জোর । সেইদিন দন্ডায়মান ট্র্যাফিক পুলিশ বড়ই দায়িত্ব সচেতন মানুষ । নিয়মমাফিক সামনের বাকি সব রিকশার মত তিনি আমার রিকশাও থামিয়ে দিলেন ।

নেমে হাঁটা ধরব । রিকশার ভাড়া দিতে একটু সাইড করে দাঁড়িয়েছিলাম । ততক্ষণে আরেকটি রিকশার আগমন । যাত্রি হল দুইজন অতি সুদর্শনা মেয়ে । হম ।

দায়িত্ব সচেতন ট্র্যাফিক পুলিশ টিকেই তারা দুইজন অতি বিনয় সহকারে নাকি ঢঙ্গ সহকারে হেলিয়া ঢুলিয়া নাচিয়া হাসিয়া অনুরোধ করিল তাদের রিকশাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য । এবং তিনি ১ মিনিটের বেশী আর ধরে রাখতে পারলেন না ! ছেড়ে দিলেন ! হায়রে অবলা পুরুষ ! আমরা বৈষম্যের শিকার । দেশের যে কোন প্রান্তে যেখানে আপনার কাজটি শেষ করার জন্য লাইন ধরার প্রয়োজন হয় ,সেখানে কয়েকদিন লাইনে দাঁড়ালেই আপনি হাড়ে হাড়ে টের পাবেন বৈষম্য । আপনার চৌদ্ধপুরুষ অসুস্থ, এই কাজটি দ্রুত শেষ করতে না পারলে আপনি স্বজনহারা হয়ে যাবেন । যাই বলুন না কেন আপনাকে লাইন ছাড়া কাজটি করতে দেয়া হবেনা ।

একজন দুইজন রাজী থাকলেও বাকীরা তাদের বীরত্ব প্রমানে উঠেপড়ে লাগবে । কিন্তু একজন মেয়ের বেলায় একজন দুইজন রাজী না থাকলেও বাকীরা তাদের দয়ার শরীর প্রমানে উঠেপড়ে লাগবে । হয়তো মেয়েটি বেশীক্ষণ লাইনে দাঁড়ালে উনারা কাপড় চোপড় নাপাক করে ফেলতে পারেন । আমরা কি বৈষম্যের শিকার না? আপনি আপনার কোন এক ক্লাসমেট বন্ধুর পায়ে পড়ে হয়ত তার থেকে একটি নোট খুঁজছেন । দিলনা সে আপনাকে ।

ভাবখানা এমন,আপনাকে নোট দিলে নিশ্চিত সে পরীক্ষায় ফেল । কিন্তু একই নোটটি একজন মেয়ে ক্লাসমেট খুজল এবং আপনার বন্ধু দিয়ে দিল । তখন তার ভাবখানা এমন এই নোটটা দেয়ার জন্য সে মানুষ খুঁজে পাচ্ছিল না। মেয়েটি খুঁজল, তাই সে দিয়ে দিল । হায়রে ! এবারো কি বলবেন আমরা বৈষম্যের শিকার না? আমি এখানে সামান্য কয়েকটা উদাহরণ দিলাম ।

এধরণের হাজারটা উদাহরণ আপনার চারপাশে আপনি নিজেই পাবেন । যেসব দেখে ছেলে হয়ে জন্মানোর কারনে আপনার আফসুস হতেও পারে । আমি এখানে মেয়েদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। প্রচলিত সমঅধিকারের ধারণা গুলোর বিরুদ্ধেও কিছু বলছিনা । আমি বলছি সেসব পুরুষদের বিরুদ্ধে যারা মেয়ে দেখলেই তলপেটে সুড়সুড়ি অনুভব করেন ।

শুধুমাত্র মেয়েটি একটু সুন্দর এবং আপনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়েছেন বলেই যারা মেয়েটির সাত খুন মাফ করে দেন তাদের বিরুদ্ধে । দৃস্টিভঙ্গি বদলান । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।