আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হে অমুসলিম......শান্তির ধর্মে আপনাকে স্বাগতম।

এ পথ যদি না শেষ হয়,তবে......... ইভোন রেডলি একজন ব্রিটিশ মহিলা সাংবাদিক। আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার মাত্র ক’দিন আগে তিনি ছদ্মবেশে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন। এর পর পরই তিনি তালেবানদের হাতে বন্দি হন। পরবর্তীতে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে হয়ে তিনি ইসলাম বিষয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার বন্দি জীবন এবং ইসলাম গ্রহণের বিবরণভিত্তিক তিনটি সাক্ষাত্কার পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।

দুঃসাহসী ব্রিটিশ মহিলা সাংবাদিক ইভোন রেডলির নামটি ‘ওয়ার অন টেরর’ বা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি নাম। আফগানিস্তানের গগনচুম্বী পর্বতশৃঙ্গকে যিনি নত করেছিলেন তার দুঃসাহসিক মনোবল দ্বারা তিনি রেডলি। জাঁদরেল পশ্চিমা সাংবাদিকরা যখন তালেবান-আলকায়দার স্বর্গরাজ্য আফগানিস্তানের কথা ভেবে আতঙ্কে আঁতকে উঠত এবং নাইন ইলেভেনের পর মার্কিন রণ হুঙ্কারের পাল্টা প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাক-আফগান সীমান্ত জিহাদি আগ্নেয়গিরির সংকেত ঈশান কোণে জমাট বেঁধে উঠছিল, তখন একজন মহিলা হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন রেডলি। কিন্তু তালেবানের অদক্ষ হাতেই ধরাশায়ী হলো ব্রিটিশ সেই সাংবাদিকের নায়কসুলভ ও বীরত্বপূর্ণ সব কৌশল। আফগান বোরকার মধ্যে তালেবানরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেন ভিন্ন জাত, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন চামড়ার এক রমণীকে।

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অবশেষে তার ঠাঁই হলো কারা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। পরে জানা গেল, তিনি এক বিখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক। কিন্তু পরিস্থিতি তালেবানদের বাধ্য করল তাকে পর্যবেক্ষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখতে। রেডলির মুখেই শোনা যাক তার গ্রেফতার, মুক্তি ও ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। মিসরে একান্ত সাক্ষাত্কারে রেডলি ২০০৬ সালে মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত (ডব্লিউএএম ওয়াই)-এর সম্মেলনে বিশেষ অতিথির আমন্ত্রণে রেডলি সেখানে উপস্থিত হলে সাংবাদিক হাসুনা হাম্মাদ সম্মেলনের ফাঁকে নিচের সাক্ষাত্কারটি গ্রহণ করেন।

আপনি কিভাবে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলেন? রেডলি : আমি ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার আগে “সানডে এক্সপ্রেস’’ পত্রিকার পক্ষ থেকে আফগানিস্তানের ইসলামি দলগুলো বিশেষ করে ক্ষমতাসীন তালেবানদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর অর্থাত্ আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে আমি সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ তালেবানের হাতে বেআইনিভাবে আফগানিস্তানে প্রবেশ করার অভিযোগে গ্রেফতার হই। এর পর ১০ দিন আমি তাদের কাছে জিম্মি থাকি। প্রতিটি সময় তাদের হাতে নিহত হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলাম। ষষ্ঠ দিনে হঠাত্ তালেবানের এক শাইখ এসে আমাকে ইসলামে প্রবেশ করার দাওয়াত দিলেন।

আমি বলে দিলাম, এটা সম্ভব নয়। তবে আমাকে মুক্তি দেয়ার শর্তে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, লন্ডন ফিরে গেলে আমি কোরআন নিয়ে গবেষণা করব। আসলে এ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তির সুযোগ বের করা। কেননা, আমি যে কোনো উপায়ে এ সঙ্কট থেকে বের হতে চাচ্ছিলাম। সত্যি বলতে কি, এ পথটি, বলতে পারেন আমার এ কৌশলটি সফল হয়।

অতঃপর তারা আমাকে এবং আমার সঙ্গে অন্যদেরও মুক্তি দিল। মোল্লা ওমর মানবিক কারণে আমাকে মুক্তি দেন। কিন্তু ফিরে আসার পর আমি সিদ্ধান্ত নেই কমিটমেন্ট রক্ষা করব। তালেবানের হাতে বন্দি থাকাকালে আপনার সঙ্গে তাদের ব্যবহার কেমন ছিল? রেডলি : সে সময় আমি তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করেছি এবং অনশন করি। আমি যতই তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করতে থাকি ততই তারা আমার সঙ্গে নম্র ব্যবহার করতে থাকে।

তারা বলত, তুমি আমাদের বোন, আমাদের অতিথি। আমরা চাই তুমি খুব শান্তিতে থাক। মনে মনে ভাবতাম যে, যদি আমি তাদের সঙ্গে নম্রতা প্রদর্শন করি তাহলে তারা আমার সঙ্গে কঠোর ব্যবহারে উদ্ধত হবে। ভেবেছি তারা বিদ্যুতের শক, ধর্ষণ ইত্যাদি মাধ্যমে আমাকে নির্যাতন করবে, যা আমেরিকা মুসলমানদের সঙ্গে গোয়ান্তানামো এবং আবুগারিবের কারাগারে করে আসছে। কিন্তু আমি একজনকেও পেলাম না যে আমাকে হয়রানি করেছে কিংবা আমার দিকে খারাপ দৃষ্টি দিয়েছে।

ইসলাম গ্রহণের পর আপনি কি কোন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন? রেডলি : ইসলাম গ্রহণের পর আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। ব্যক্তিগত কোন কারণে নয় ব্রিটিশ সরকারি বাহিনী আমার ওপর নির্যাতন চালায় শুধু ইসলামের কারণে। তবে আমি ব্লেয়ার সরকারের কাছে সম্মানিত ছিলাম। আমার কাছে এমন সব পত্র আসে যেখানে বলা হয়, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে কিংবা হিজাব পরিধান করবে সে পাশ্চাত্য সমাজে নিজেকে সংঘাতের প্রথম কাতারে নেয়ার শামিল। আর বাস্তবিকই হিজাব পরিধানকারী মহিলারা এ ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার মুখোমুখি।

আপনি কি কোরআনের ভাষায় আরবি শেখার ব্যাপারে কোন চিন্তা-ভাবনা করেছেন? রেডলি : আমি আরবিতে শুধু একটি শব্দই জানি। আর তা হলো, আল-হক (সত্য) এবং এ শব্দটি আমি আমার কথাবার্তা ও আলোচনায় প্রায়ই উল্লেখ করে থাকি। ব্রিটিশ প্রশাসনের ন্যায় আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? রেডলি : আমার দুই বোন, বড় বোন বিশ বছর ধরে এক মুসলিম পরিবারের প্রতিবেশী হওয়ায় আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদে বিচলিত হননি, স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার দ্বিতীয় বোন বিদ্রূপ করে বলেছিল, এবার তুমি আত্মঘাতী হামলার কাজটিও সেরে ফেল। আর আমার আম্মাও বিচলিত হয়ে গির্জায় আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দিলেন।

তিনি স্বভাবতই খুব ধার্মিক। এ বিষয়টি ইসলামের কাছাকছি। আর যখন আমি তাকে ইসলামের সুস্পষ্ট দাওয়াত দিলাম তিনি বললেন, আমার বয়স ৭৯। এ অবস্থায় আমার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। আপনি এখন কোথায় কর্মরত আছেন? রেডলি : ইসলাম গ্রহণের পর আমি বিভিন্ন ইসলামি মিডিয়ায় ইংরেজি ভাষায় অনেক আলোচনা উপস্থাপনা করেছি।

পাশ্চাত্য মিডিয়াতেও ইদানীং লেখালেখি শুরু করেছি। আমার সর্বশেষ প্রবন্ধটি ছিল ‘হিজাব’, যেটি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়। অমুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক বজায় আছে। বর্তমানে আমি আল-জাজিরা ইংলিশ চ্যানেলে কর্মরত রয়েছি। মুক্তির পর আপনি যে ইসলাম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন, তার মধ্যে প্রথম বই/গ্রন্থ কোনটি ছিল? রেডলি : এটি ছিল শহিদ সৈয়দ কুতুব রচিত “মাআলীকিত্ তারীখ”।

এ কিতাবটি পড়ে আমি খুব প্রভাবিত হই। যারা এটা পড়েননি আমি তাদের সবাইকে এটা পড়ার অনুরোধ করবো। বড় দুঃখের বিষয়, আমি যখন মিসর গিয়েছিলাম তখন কোন লাইব্রেরিতে এই কিতাবগুলো পাইনি। উসামা বিন লাদেনের ওপর আমি একটি বই রচনা করেছি। কারণ, তিনি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

উদ্দেশ্য উসামা বিন লাদেনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন নয়। ডেনমার্কের ঘটনার পর মুসলিম ও পাশ্চাত্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার কী মূল্যায়ন? রেডলি : আমাদের শক্তি ঐক্যের মাঝে, যা আমরা পশ্চিমা পণ্য বয়কটের মাধ্যমে লক্ষ্য করেছি। অর্থনৈতিক বয়কট সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এ ক্ষেত্রে আমি যায়নবাদী ইহুদি রাষ্ট্রের সমর্থক সব দেশেরই কোম্পানিগুলোর পণ্য বয়কট করা উচিত বলে মনে করি। আমি তো এটা কল্পনাও করতে পারিনি যে, মুসলমানরা কীভাবে কোকাকোলা পান করে।

তারাতো কোকাকোলা নয়, ফিলিস্তিনি ভাইয়ের রক্ত পান করছে। অর্থনৈতিক বয়কট হলো মত প্রকাশের একটি শান্তিপূর্ণ পথ। পাশ্চাত্যের ইসলামভীতি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী? রেডলি : আমি মনে করি, অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক ও কর্মপন্থা ঠিক করার আগে আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। বিশেষত মুসলিম সমাজে ওই সব লোকেরা যারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে; মিসরের সাংস্কৃতিক মন্ত্রী ফারুক হোসনির মতো লোকেরা। আল্লাহ তার অন্তরকে রোগমুক্ত করুক।

তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। সে তো বুঝতে পারেনি তার এসব বক্তব্য পাশ্চাত্যের মুসলিম নারীদের কত ক্ষতি করেছে। বলুন, আমরা শত্রুর মোকাবিলা কীভাবে করি? সমস্যা তো আমাদের ভিতরেই। কোনো মুসলিম মহিলা কি আপনাতে ইসলাম গ্রহণে প্রভাবিত করেছেন? রেডলি : অনেক মুসলিম আরব মহিলাই, তবে বিশেষ করে যায়নাব আল-গাযযালী (রহ.) এর কথা উল্লেখ করব। তার আত্মজীবনী আমাকে মুগ্ধ করেছে।

সুত্র: আমার দেশ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।