আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফল প্রেমের মধুর ভাঙ্গন !!!

আমরা সবাই অভিনয় শিল্পী এই রঙ্গমঞ্চের...... বল্গে অনেকদিন ধরে বিভিন্ন প্রেমের কাহিনী পড়ছি। আজ আমি আমর খুব কাছথেকে দেখা একটা প্রেমের সত্যিকার কাহীনি বলব। যদিও প্রেমটা তার শেষ লক্ষ্যে পৌঁচাতে পারবেনা, আমার ধারনা সম্পর্ক টা এখন তার শেষ বিন্দুতে অবস্থান করছে। আর দোয়া রইল তাদের জন্য যেন ঐ শেষ বিন্দু থেকেই আবার শুরু হয়। সম্পর্কটা হচ্ছে আমার বন্ধু অনিক আর অনুপমার।

অনিক এবং অনুপমা দুজনেই বিবিএ শেষ করেছে এই বছরের শুরুর দিকে। বিবিএর ২য় বছরে তাদের প্রেমের গোড়াপত্তন হয়। অনিক ছিল মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আর অনুপমা ছিল উচ্ছবিত্ত শ্রেনীর। তারপর ও তাদের মাঝে খুবই ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। শুরুতে তারা দুজন খুব ভাল বন্ধু ছিল।

অনিক অনুপমার এত ভাল বন্ধু ছিল যে তা রিতিমত সবার চোখে পড়ল। অনুপমার অন্য বন্ধুরা তো অবাকই হত অনিক এর সাথে অনুপমার ব্যবহার দেখে। আর ই ব্যাপার শুধু বন্ধু মহলেই সিমাবদ্ধ ছিল না। স্যারদের নজরেও পড়ল। অনুপমা স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন নাচের , গানের প্রোগ্রামে অংশ নিত।

যার কারনে তাকে অনেকেই চিনত। বিবিএ তে ভর্তি হওয়ার পরও সে ভার্সিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে অনিক ছিল বন্ধু বা শ্রেনীকক্ষ ছাড়া সবার কাছে অপরিচিত মুখ। তাকে ক্লাসের সবাই চিনত, ভাল ছাত্র হিসেবে। স্যারদের কাছেও সে প্রিয় ছাত্র ছিল।

অনুপমার যারা পুরনো বন্ধু ছিল,কলেজের বন্ধু তারা তো এক কথায় বলত "আমরা অন্য এক অনুপমা কে দেখছি , যাকে আমরা চিনতাম সে পুরো ভিন্ন ছিল, হার মানতে যে কখন জানতনা, নিজের জেদ যার কাছে ছিল সবার আগে আজ সেই অনুপমাই নিজের জেদ এর কথা ভুলে গেল, আপনার কথাটাকেই মেনে নিল। "যদি সে এখন যেরকম ব্যবহার করছে সেই রকম ব্যবহার আগে করত তাহলে তার লাইফটা অনেক সুন্দর হত। রিতিমত তাদের সম্পর্ক নিয়ে অনেকে হিংসা করতে শুরু করল। এতক্ষন যা বললাম তা ছিল যদিও আক্ষরিক অথ্যে ভালবাসারই বহিঃপ্রকাশ কিন্তু তখন পর্যন্ত তাদের মাঝে ভালবাসি কথাটা কেউ কাউকে বলেনি। অনিক ছিল অনেকটা বাস্তববাদী একটা ছেলে।

সে খুব ভাল করেই জানে এই সম্পর্ক বেশীদিন টিকবেনা তাই সে অনুপমাকে ভালবাসলেও তা প্রকাশ করতে চায়নি। কারন অনুপমা ছিল সমাজে প্রতিষ্ঠিত আর অনিক এর প্রতিষ্ঠিত হতে এখনও কয়েক বছর লাগবে। ওদিকে অনুপমার বাসায় বিয়ের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিবে বিবিএ শেষ হওয়ার পর। অনুপমার বাবা মা তো নিশ্চয় তাদের মেয়েকে অপ্রতিষ্ঠিত একটা ছেলের হতে তুলে দিতে রাজি হবে না। সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে, আবেগ এর কাছে বিবেক, বাস্তবতা মূল্যহীন।

অনিক এর ক্ষেত্রে ও তাই হল। তবে অনিক ভালবাসার কথা না বলে বলল তুমি যদি আমার জন্য আরও ৩ বছর অপেক্ষা করতে পার তাহলে মনে হয় আমি তোমাকে বিয়ে করার কথা তোমার বাবা মা কে বলতে পারব। অনুপমা ও সারসারি কিছু না বলে বলল, আমি চেষ্টা করব। কিন্তু মনে হয় পারব না। অনিক বলে ঠিক আছে।

তখন অনুপমা বলে ...অনিক তুমি আমার লাইফে এমন একজন যাকে আমি কখনও হারাতে চাইনা পারবান। তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও গভীর হতে লাগল। অনিক যতবার ই অনুপমাকে আই লাভ ইউ বলেছে তাতবার ই শুনতে হয়েছে আই হেইট ইউ। অনুপমার মুখ থেকে শুধু আই লাভ ইউ কথাটাই শোনা হয়নি অনিক এর । দুজন এর মাঝে যেমন ছিল আন্ডাস্ট্যান্ডিং তেমনি ছিল কেয়ারিং।

একটা ভাল সম্পর্ক বলতে যা বুঝায় তার কোন কিছুর কমতি ছিল না তাদের মাঝে। যখন ঝগড়া হয় তা ও সবাইকে হার মানিয়ে দেয়। মনে করবেননা....যেন সবাইকে তাদের জগড়া দেখতে দেয়। নিজেদের মাঝে ই থাকে। বলতে পারেন কুল ওয়ার।

তবে এ সম্পর্ক এতদিন গড়াতে অনুর অনেক অবদান ছিল (অনিক অনুপমা কে আদর করে অনু বলে ডাকত)। অনিক এর ধৈয্য কম ছিল। সে ঝগড়া বেশীদিন পছন্দ করত না। যদি তার নিজের ভুলে ঝডড়া হত তাহলে সে সাথে সাথে সরি বলে দিত। অনুপমার মান ভাঙ্গানোর জন্য চেষ্টা করেই যেত।

অনুপমার রাগ ভাঙ্গানো তো সহজ কাজ ছিল না । তুবুও ট্রাই করত। সফলও হত। আর যদি অনুপমার কারনে হত তাহলে অনিক এর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য যা করার দরকার তা একটু দেরিতে করত। সে যে ভুল করেছিল এইটা বুঝতে তার লেট হত।

তবে কথা কাটাকাটির জন্য সাথে সাথে সরি বলে দিত। এতদিন এর সম্পর্কের মধ্যে অনিক ২-৩ বারই বলেছে আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবনা। ততবারই অনুপমা এগিয়ে এসে সম্পর্ক ঠিক করেছিল। এই ২-৩ বার প্রত্যেকবার ই অনিক এর সাথে চরম ঝগড়া হয়েছিল।

অনুপমার ই দোষ ছিল। আর যখন অনিক ৭-১০ দিন দেখত অনুপমা ঝগড়া ঠিক করছে কি না,যদি না করত অনিক একটা এস এম এস দিয়ে বলত,আমি অপেক্ষা করেছিলাম তুমি ঝগড়াটা মিটিয়ে ফেল কিনা , দেখলাম করছনা। তাই আমি আর পারছিনা । সরি। অনুর তখন একটাই কথা ছিল তুমি আমাকে একটু সময় দিতে ।

তাহলে আমি ঠিক করে ফেলতাম। আর সম্পর্ক ঠিক হওয়ার পর সব দোষ অনিকের হত। কারন সে বেশী দোষ করেছে সম্পর্ক ভাঙ্গারা কথা বলে। অনিক ও তা মেনে নিত। কিন্তু এখন বিষয়টা পুরোটাই উল্টো ....... তাদের ঝগড়া শুরু হয়েছিল ৫-৬ মাস আগে।

ফেইসবুকে ছবি তে কমেন্টস করা নিয়ে। অনু তার বন্ধুরা মিলে ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। অনিকের কোন আপত্তি ছিল না । অনুর কোন কাজেই অনিক নিষেধ করত না। অনু সে কাজটা করতে চাইত না যখন অনি জানে এইটাতে অনিক নিষেধ করতে পারে।

ফেইসবুকে অনুর তার অনেক ছবি আপলোড করেছিল। অনিক কখন তার কোন ছবিতে কমেন্টস করত না। একদি অনু জিগ্গাসা করেছিল কেন কমেন্টস করে না, শুধু লাইক দেয়। অনি বলেছিল তোমার বন্ধুরা যদি অন্য ভাবে নেয়। অনু বলেছিল আমার কোন বন্ধু আমার কোন বিষয়ে কিছু বলবে না।

অনুর সব বন্ধুরাই তার ছবিতে কমেন্টস করে সব সময়ই। অনিক সবার কমেন্টই পড়ে। একদিন অনিক অনুর ২টার পিক এর কমেন্টস ( যা অনুর এক বন্ধু করেছিল , যার সাথে অনিক এর ও ভাল সম্পর্ক ছিল ) একসাথ করে অনুর সাথে ফান করল, এবং নিচে অনুর নামটাও লিখে দিল ( বন্ধুর কমেন্টসটাও ফানি ছিল)। অনুর সাথে অনিক যত ফান করে তা অনুর লাইফে আর কেউ করেন, করতে পারবেও না। আর এখানেই যত বিপত্তি হল।

অনুর এক বন্ধু ( ছেলে ) অনিকের ফান করা পছন্দ করল না । সে সরাসরি অনিকে আউট সাইডার বলল। আর বলল কেন সে অনুর ছবিতে কমেন্টস করল। সে বন্ধু ( রাহুল) অনিক কে চিনত। ভাল করেই চিনত।

অনিক রিপ্লাই করল , আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি .....তুমি আমাকে রিপ্লাই করছ কেন ? তার একটাই কথা আমার ফ্রেন্ড (অনু) কে ছোট করছ কেন ? একটু পরে আরেক ফ্রেন্ড ( রাজিব ) এসে বলে "এই সিজনাল বার্ড" কোথেকে আসল?? রাজিব ও আমাকে চিনত। এই ভাবে কিছুক্ষন ফেইসবুকে ই কথা কাটা কাটি হল। অনিক , অনুকে এস এম এস করে ফেইসবুকে বসতে বলল। কোন রিপ্লাই আসেনি। একটু পর অনিক চ্যাট ওপেন করে দেখে অনু অনলাইনে আছে।

তখন অনিকের মেঝাজ এত খারপ হয়েছিল যে অনু দেখার পর ও কিছু বলে নাই কেন??? এই নিয়ে অনুর সথে অনিক আর তার বন্ধুদের অনেক ঝগড়া হয়ে যায়। ফ্রেন্ডদের কথা অনু , অনিক কে প্রাধান্য বেশী দিবে কেন?? অনু অনিক কে তার বন্ধুদের কাছে সরি বলতে বলে। অনিক বলবে না। এই নিয়ে ৪-৫ দিন ঝগড়া হল। শেষে অনিক বলল ঠিক আছে আমি সরি বলব, তার আগে তাদের সরি বলতে হবে।

তারা সরি বলার পর অনিক সরি বলেদিল। এরপর অনু দুই সাইড কেই কমেন্টস করল যেখানে কাইকেই বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয় নাই। সবছেয়ে মজার বিষয় হল ....সরি বলার পর অনু অনিককে তার ফেইসবুক থেকে ডিলিট করেদিল। তার যেসব বন্ধুর সাথে অনিকে এর ফেইসবুক ফেৃন্ড ছিল তাদেরকে বলল অনিকে ডিলিট করে দিতে। এইবার অনিক মাথা গরম করল না।

ডিলিট কেন করল তাও জানতে চাইল না। এইভাবে চলতেছিল। ধীরে ধীরে অনুর কাছ থেকে জানতে পারল ডিলিট করার কারন। কারন হল অনি চাচ্ছিল না অনিক তার বন্দুদের কোন কাজ দেখে। অনিক ও কিছু বলে নাই।

এই ঘটনা ঘটেছিল ৫মাস আগে। এই ৫মাস কি হল তা আগামী পর্বে বলব। ঠান্ডা মনস্তাস্তিক ঝগড়া কাকে বলে তাই নিয়ে হাজির হব। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।