আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুল্যবোধ+পারস্পরিক শ্রদ্ধা+ একটি বিড়ালের জীবন = একটি (প্রায়) সুখী পরিবার

রিকশাও তেল খায়...আর মানুষ তো মানুষই নতুন ব্লগার, ব্লগের গলি ঘুপচি চেনা, বুঝা খুবি কম হয়েছে। অনেক মত, অনেক বিশ্লেষণ; ভিন্নধর্মী আদর্শবাদীদের অনেক তর্ক বিতর্ক, ঝগড়া, মন্তব্য পড়া হয়েছে। নিজে মন্তব্য করার যোগ্যতা এখনো পাইনি। তাই ভাবলাম মন্তব্যগুলো আর নিজের ভাবনা গুলো জোড়া লাগিয়ে একটা পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করি। বেশি পোস্ট তাড়াতাড়ি লাইসেন্স; যদি মডুরা একটু দয়া দেখায়!! সরকারি-বিরোধী দল, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিষয়ক পোস্টগুলো তো রস নির্যাস করেই চলেছে এবং চলবে।

নতুন ব্লগার তাই ঐ পথে পা বাড়ালামনা। ব্লগের একটি অংশে দেখলাম সিনিয়র ব্লগাররা দুটি দলে ভাগ হয়ে একদম মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ওইখানে আলোচনার বিষয় হচ্ছে গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া কিছু রোমহর্ষক নারী-নির্যাতন এবং তারি ধারাবাহিকতায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দাউ দাউ আগুন জ্বলেছে; ব্লগাররা তাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘিও ঢেলে যাচ্ছেন। তো সেই আগুনে ঝাঁপ দেবার কোনও ইচ্ছা আমার নেই কিন্তু এই শীতে একটু আঁচ গায়ে লাগানোর লোভ হোল খুব। কিভাবে কি হয়েছে, কার দোষ ছিল? এইগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা-সমালোচনা, ঝগড়া হয়েছে।

কারো মতে ‘মেয়ে মানুষ কে পিডানীর উপরে রাখা উচিত’(কট্টর পুরুষবাদী) আবার কারো মতে ‘মেয়েদের সব করতে দেয়া এবং পাশাপাশি হাতের মুঠোয় রাখার কৌশলেরও কথাও উল্লেখ আছে’(সুশীল)। আর পুরুষ ব্লগাররা একে অন্যের মা, বোন, স্ত্রীদের প্রতি এতই কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করেছেন যে, নারী ব্লগাররা আর আলোচনায় ঢুকতে সাহস দেখাননি। আসলে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার কোনটিই একটি সুখী পরিবারে হওয়া সম্ভব না। একটি সুখী পরিবারে কি কি থাকা উচিত এবং কি কি উচিত না, তা নিয়ে আমি একটা সমীকরণ দাঁড় করাবার প্রচেষ্টা নিলাম আর কি! সর্বশেষ যে আলচিত ঘটনাটি হোল জুঁই কে নিয়ে। যেভাবে পড়াশুনা করার কারণে হাতের আঙ্গুল গুলো কেটে ফেলা হোল কোন সুস্থ, বিবাকবান মানুষ কল্পনাতেও ভাবতে পারেনা।

এইটা নিয়ে ব্লগারদের মাঝে কোন তর্ক আশা করা যায়না, কারণ আশা করা যায় আমাদের বিবেক আছে এবং আর আছে মূল্যবোধ। যা ছিলনা জুঁই এর পাষণ্ড স্বামীর। এখন কথা আসে, মূল্যবোধের মাপকাঠি কতটুকু? আমার ঘরের স্ত্রী, বোনদের পর্যাপ্ত সুযোগ, স্বাধীনতা দেওয়া, তাদের চিন্তা ভাবনাকে সম্মান দেয়া তো ‘ঘরোয়া মূল্যবোধ’ এর মাঝে পরে। বাকি থাকে ‘সামাজিক মূল্যবোধ’। এইখানে প্রশ্ন এসে যায় ওইটা আমরা কে কতটুকু করেছি? ফ্ল্যাটবাড়িতে বউ মারলে দুর্নাম হবে, আর বস্তিতে রিক্সাওয়ালা তার বউকে মারতেই পারে! এই হোল আমাদের চিন্তা।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা শহরেই কিছু এলাকা আছে যেগুলো ‘মেথর পট্টি’, ‘মুচি পাড়া’ এরূপ নামে পরিচিত। আমার নানাবাড়ির পাশেও এমন একটা দেখেছি, সন্ধ্যা নামতেই ওইখানে যেন কুরুক্ষেত্র হয়ে যায় এবং যুদ্ধের পরিশেষে নারীকণ্ঠের বিলাপ শোনা যায়। এইটা এমনি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার যে, মা খালারাও কোন সহানুভুতি দূরে থাক, ওইটা নিয়ে হাসাহাসি করে। আমাদের সুশীল ভাইরা কি বলতে পারবেন, কখনো এমন কিছু দেখে ঐখানে উপস্থিত হয়েছেন? ঝগড়ারত পরিবারটির মাঝে কিছুটা মূল্যবোধ দিয়ে এসেছেন? মনে হয়না করছেন। কারণ প্রথমত অন্যের সংসার, আর রিক্সাওয়ালা যদি গালি দেয়, তাহলে এর চেয়ে আর খারাপ কি হতে পারে! তারচেয়ে ব্লগারদের গালি খাওয়া, দেওয়া অনেক ভালো।

অবশেষে আশা করা যায়, রুমানা ম্যাডাম এর সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটছে। ম্যাডাম হাসতে পারার মত সুস্থ হয়েছেন কিনা জানিনা, তবে যেটুকু ঘৃণা বুকে পুষে রেখেছেন স্বামীর প্রতি! ভিতরে নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন সাইদ হাসানের মৃত্যু সংবাদে। (মৃত্যুটি আমার খুবি সন্দেহজনক মনে হয়! মানুষের জান তো অনেক শক্ত। অক্সিজেন, পানি, খাবার পেলে এই বয়সী মানুষ তো এইভাবে মারা যাওয়ার কথা না। মানসিক চাপে মানসিক বৈকল্য দেখা দিতে পারে, কিন্তু মৃত্যু??) তো যে কারণে এত্ত কিছু হয়ে গেল, আমার মতে তা হচ্ছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব।

কথাটা অনেক পুরনো, কিন্তু এই না থাকার কারণটা কি শুধু মানুষের একক চিন্তার ফসল? আমাদের দেশের কয়জন পুরুষ বউকে উচ্চশিক্ষার জন্য একাকি বিদেশে যেতে দেন? প্রগতিশীলরা প্রতিবাদ করবেন জানি, কিন্তু এইটাই বাস্তব। আমার ধারনা আমাদের হাসান সাইদ সাহেবও যথেষ্ট উদার ও প্রগতিবাদী ছিলেন। এই জন্যই প্রাথমিক শ্রদ্ধা দেখিয়ে ছিলেন, স্ত্রীকে বাহিরে যেতে দিয়েছিলেন। অন্তত এক বছর পুরনো ছবি গুলো তারি প্রমাণ দেয়। আর যদি অত্যাচারিত হয়েও যদি রুমানা ম্যাডাম এমন হাসি মুখে ছবি তোলেন, তাহলে আমার মনে ঢাবির কোনও শিক্ষিকার বদলে ঐ দরিদ্র রিক্সাওয়ালার বউ এর মুখটিই ভেসে উঠবে।

সময়ের কালে হাসান সাহেবের মাঝে শ্রদ্ধার বদলে হীনমন্যতা বাসা বাঁধে, উচ্চ শিক্ষিতা বউ এর কাছে নিজেকে ছোট মনে হয় এবং স্ত্রীর উদ্দাম প্রবাস জীবনের খবর শুনে সব শ্রদ্ধা বিসর্জন দিয়ে তার মাঝে ক্রোধ দানা বাঁধে। এইক্ষেত্রে রুমানা ম্যাডামের দোষ হোল, তিনি তার বিবাহিত জীবনকে শ্রদ্ধা দেখাননি। ব্যাপারটা এত সহজ নয় যে, হলিউড এর মুভি’র মত ‘আই অ্যাম সরি’ বলে ব্রেকআপ হয়ে গেল। সত্য কে স্বীকার করা ভাল। মানুষ মাত্রই ভুল করে, পাপ করে।

আমাদের বাঙালি মেয়েদের অনেকে বাহিরে গিয়ে কি করে তা ফেসবুক এর অনেক প্রফাইলে দেখা যায়। হয়তো আইডি টা ফেক, কিন্তু ওইটা যে বাঙালি তাতে তো সন্দেহ নাই। পুরুষ নারী বলে কথা নেই পরস্পরকে এবং সম্পর্ককে অবশ্যই মুল্য দিতে হবে। আমাদের অসংখ্য নারী তার প্রবাসী স্বামীর জন্য এই বলে দোয়া করে যে, ‘আল্লাহ, বিদেশী ডাইনিদের থেকে আমার স্বামীকে হেফাজত করো’। কাজেই প্রবাস জীবনের প্রতি মানুষের সন্দেহটা রয়েই যাবে।

এইটার বাহিরেও সব পেশার প্রতি সব মানুষের সমান সায় আসেনা মন থেকে। যখন দেখা যায় মিডিয়া তে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য মডেল বিন্দুকে স্ক্রিন টেস্ট দেওয়া লাগে, প্রতিষ্ঠিত হয়ে মডেল নওশীন নিজের স্বামী সন্তানকে অস্বীকার করে তখন কয়জন পারবেন বউকে মিডিয়ার লাইনে দিতে? একটা অনেক পুরনো প্রবাদ ‘সংসারে সুখের জন্য বাসর রাতেই বিড়াল মার’। এই প্রবাদটি অনেক পুরুষবাদী, নারীকে শিখানোর কথা বলা হলেও পুরুষের শিক্ষার জন্য নারী কি করবে তা বলা হয়নি কোথাও। নেয়ামুল করিম এ স্বামী বশীকরণের কিছু দোয়া আছে আজ-কালের নারীরা তা প্রয়োগ করেন কিনা জানিনা। আর বিড়ালও কেউ কখনো মেরেছেন বলে শুনিনি।

তবে হ্যাঁ কথাটি রুপক হিসেবে ধরে স্বামী স্ত্রী দুই জনই হয়তো প্রথমেই তাদের চাহিদা, ভাবনা পরস্পরকে জানাতে পারেন। সব সময় সব কিছু ছাড় দেওয়া সম্ভব না, তাই যেইটা পাল্টাতে পারবেননা বা সহ্য করতে পারবেননা, আগেই বলে দিয়েন। ভাইজানদের বলি, ‘প্রথমে তাদের কথা শুনি, আমার গুলো ধীরে ধীরে পরে জানাবো’, তাহলে আর বলা হবেনা। দুই দিনের মাথায় দেখবেন হাজার জ্যাম পেরিয়ে সন্ধ্যা ৭ টায় ঘরে পৌঁছে, বাবা মা ছাড়া পৃথক সংসারে রাতে বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখছেন!! হিন্দি সিরিয়াল অনেক খারাপ; ‘সন্দেহ, পরকিয়া’ ধারনা গুলো আরও পাকাপোক্ত হয়। কিন্তু একটা ভালো জিনিসও কিন্তু আছে, তা হোল বৃহৎ সংসার।

বড় সংসার ছাড়া সিরিয়ালের ঝগড়াগুলো জমেনা। কিন্তু আমাদের মেয়েরা বিয়ের পর পারলে বাসর রাতটাই নিজের ‘আলাদা সংসার’ এ করতে চায়। যেকোনো উপস্থাপনাই একটা ভালো কেইস স্টাডি ছাড়া ভালো হয়না, তাই বিড়াল মারার উপরে আমি একটা দিচ্ছি। কেইস স্টাডি’র কেইস সম্পরকে ভালোমতো জানতে হয়। আমার কেইসের ভিক্টিম হোল সাইদ ইফতেখার আহমেদ (বাপ্পি) জন্মঃ ২৯শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ মৃত্যুঃ ১৭ই আগস্ট ২০১১ শিক্ষা জীবনঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পেশা জীবনঃ ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ, যমুনা ব্যাংক কখনো বাপ্পি’র জীবন-সময় লিখতে পারবো, তা ভাবিনি।

ঐদিন রাতে বাপ্পি’র মৃত্যু হয়, প্রথমে অপমৃত্যু এবং পরে তার মা’র চাপে হত্যা মামলা দেওয়া হয়। অভিযুক্ত করা হয় তার স্ত্রী মারিয়া ছন্দা কে। উল্লেখ্য দীর্ঘ ১০ বছর প্রেম করে তাদের বিয়ে হয় এবং ঐ সময় তাদের ৬ মাস বয়সী একটি মেয়ে ছিল। এই বিষয়ে ছন্দার পক্ষের দাবী যে বাপ্পি আত্মহত্যা করেছে। এখন এর উপর দুইটা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরলাম, দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এবং দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশিত সংবাদ দুটির মাঝে কি কোন বৈষম্য চোখে পরে? প্রথমটি সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা।

কিন্তু তাদের রিপোর্টার কি কারণে সত্য গোপন করলো?? পরের খবরটি থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, এটি একটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। মাথার পিছন থেকে আঘাত করা হয় তাকে আসলে আমাদের চিন্তা ভাবনা অনেক কুৎসিত। পত্রিকায় চাপাতির আঘাতে জুঁই এর আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হওয়া কল্পনা করে শিউরে উঠতে ভালবাসি। কিন্তু জোয়ান-মর্দ পুরুষের বউ এর হাতে নিহত হওয়াটা খুব একটা আমেজ দেয়না। প্রথম আলো এইটা খুব ভালো বুঝে, তাই দায়সারা লিখেই ক্ষান্ত হয়।

অনেক নারীবাদী তারা, নারী নির্যাতন বিষয়ক সেমিনার, ঘটনা তারা ফলাও করে ছাপায়। অনেক কুৎসিত, দুশ্চরিত্রের নারী তাদের খবরের পাতায় প্রগতিশীল, নারী সমাজের আদর্শরূপে আখ্যায়িত হয়। কিন্তু ঠিকমত হাইলাইটে আসেনা বলে বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলে [বাপ্পি’র ২ বোন রোড এক্সিডেন্টে প্রাণ হারায়] হারানোর আহাজারি উপেক্ষিত হয়। বাপ্পি’র বন্ধুরা কেউই ব্যাপারটা মেনে নেয়নি, যদিও ছন্দাও একই স্কুলের(মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর), তাদেরও বন্ধু। ছেলে মেয়ে সবাই একত্রে প্রতিবাদ জানায়, মানব বন্ধন করে।

কিন্তু তখন তো পত্রিকাওয়ালাদের চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, কোথাও আসেনি ঐ খবর। স্কুলের বন্ধুরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতা বাপ্পি’র শ্বশুরের ক্ষমতার দাপটে পোস্ট-মরটেম রিপোর্ট রাতারাতি পাল্টে যায়। জেল থেকে বেরিয়ে ছন্দা এখন নিয়মিত ফেসবুকে স্ট্যাটাস আর ছবি আপলোড দেয়, হায়রে আইন! হায়রে মিডিয়া! যাই হোক মূল পোস্ট থেকে অনেকদূর সরে গেছি। তবে ২ টা উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমটা প্রিয় বন্ধুর হত্যা ঘটনা মানুষের সাথে শেয়ার করা এবং দ্বিতীয়টি হোল, প্রথমেই একটা সমীকরণ দিয়েছিলাম মুল্যবোধ+পারস্পরিক শ্রদ্ধা+ একটি বিড়ালের জীবন = একটি (প্রায়) সুখী পরিবার এই সমীকরণটি শুদ্ধ করার প্রয়াসে, মুল্যবোধ+পারস্পরিক শ্রদ্ধা +একটি বিড়ালের জীবন - তথাকথিত নারীবাদী পত্রিকা = একটি সুখী পরিবার পরিশেষে আমি সুশীল না, কিন্তু কুশীল বললে মাইন্ড খাই।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।