আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শক্তিশালী ও কার্যকর এসইসি চাই

শেয়ারবাজারে যে লাখ লাখ লোক অর্থ হারিয়ে পথে বসেছে তার মূলে ছিল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ব্যর্থতা। এসইসি বড়দের স্বার্থ ঠিকই রক্ষা করল, তবে তা ক্ষুদে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বেদিতে উৎসর্গ করে। অথচ ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে এসইসি গঠন করা হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। কোম্পানির ডিরেক্টরদের, ইস্যু ম্যানেজারদের এবং ঋণ বিক্রেতাদের স্বার্থ দেখার জন্য বিশ্বের কোথাও এসইসি গঠিত হয়নি। দু-দু’বার শেয়ারবাজারে বিপর্যয় ঘটে গেল, সেই ১৯৯৬-এ এবং ২০১০-এর নভেম্বর-ডিসেম্বরে।

দু’বারই বিপর্যয়টা নেমে এসেছিল লাখ লাখ ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীর ওপর এবং দু’বারই বিপর্যয়ের মূলে ছিল এসইসি’র নীরবতা, ক্ষেত্রবিশেষে বড় প্লেয়ারদের পক্ষে নীরব সহায়তা এবং ওই সংস্থার দুর্নীতি-অদক্ষতা। তবে ব্যক্তির দিক থেকে ২০১০-এর বিপর্যয় অনেক বড়। ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে নীট হিসাবে অর্থ শুধু বাইরে গেছে। নতুন অর্থ আসেনি। এলেও যৎসামান্য এবং যারা ওই যৎসামান্য অর্থ এনেছিল, ২০১১-এর মার্চ থেকে আজতক তারাও তাদের নতুন বিনিয়োগের শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ইতিমধ্যে হারিয়েছে।

এসইসিকে বলা হয় শেয়ারবাজারের অভিভাবক। তবে সেই অভিভাবকের মূল কাজ হল দুটো। এক. উদ্যোক্তা শ্রেণীকে পুঁজি তুলতে সহায়তা করা। তবে এসইসি যেটা অতি মনোযোগ দিয়ে দেখে সেটা হল, সেই পুঁজি যেন অতি চড়ামূল্যে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগকারী তথা ক্রেতাদের কাছে বেচতে না পারে। কিন্তু বাংলাদেশে সত্য হল, এসইসি’র সহযোগিতায় কথিত উদ্যোক্তারা ৩০ টাকার শেয়ারকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছে।

এসব উদ্যোক্তা ওই চড়া মূল্যে শেয়ার বিক্রি করে টাকাগুলোকে শিল্প স্থাপনে এবং কাগজপত্রে দেয় প্রতিশ্রুত মোতাবেক কাজে লাগিয়েছে কিনা, সেটা দেখার ইচ্ছা ও যোগ্যতা কোনটাই এসইসি’র ছিল না। ফলে অনেক উদ্যোক্তা আরও বেশি লাভ করার জন্য অথবা লাভের ষোল আনা পাওয়ার জন্য অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে রুগ্ন শিল্পে রূপান্তরিত করেছে। আর এসইসি ওই কপট ও মিথ্যুক উদ্যোক্তাদের কাজে সহায়তা করেছে ওইসব কোম্পানির শেয়ারকে ওটিসি মানে ওভার দি কাউন্টার মার্কেটে পাঠিয়ে, যে বাজারে আজতক একটি শেয়ারও বেচা-কেনা হয়নি। ওটিসি বাজারে পাঠিয়ে এসইসি কী কর্তব্য শেষ করেছে। যে এসইসি অসৎ উদ্যোক্তাদের থেকে জবাবদিহি আদায় করতে পারে না, সেই এসইসি আমাদের দরকার নেই।

ওইসব উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে অর্থ নিলে রুগ্ন শিল্প দেখিয়ে কি ব্যাংকের ঋণের টাকাগুলো মাফ পেত? অথচ ভাগ্যের পরিহাস, এসইসি’র অনীহা ও অক্ষমতার কারণে আজকে তারা জনগণ থেকে শেয়ার বেচার নামে শত শত কোটি টাকা নিয়ে সাধু সেজেছে, চুটিয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু সেই লাখ লাখ লোক যারা তাদের পুঁজির জোগান দিয়েছে, তাদের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে এসইসি নিশ্চিত করতে পারল না। দ্বিতীয়ত, এসইসি’র মূল কাজ হল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কারণ তারাই হল সবচেয়ে দুর্বল খেলোয়াড়। যারা পুঁজির জোগান দেয় তাদের স্বার্থ বড়, না যারা সুন্দর সুন্দর হিসাব উত্থাপন করে এবং বক্তব্য দিয়ে কোটি কোটি টাকা তাদের থেকে নেয়, তাদের স্বার্থ বড়? আজতক, ব্যর্থতার কারণে এসইসি কি কোন পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করেছে? অথচ সিকিউরিটিজ আইনে তাদের সব ক্ষমতাই দেয়া হয়েছে।

আজকে এসইসি কোন কোন লোককে তাদের দফতরে তলব করে সত্য, তবে তা কি শুধু এটা পাস করানোর জন্য বা কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করার জন্য? এসইসিকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, হিসাবপত্র পরীক্ষা করার জন্য এবং সরেজমিন প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য তাদের উপযুক্ত লোক নেই। কে তাদের বারণ করল উপযুক্ত লোক নিয়োগ দিতে? অর্থ মন্ত্রণালয় তো অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। তাহলে অতি প্রয়োজনীয় অর্থ এসইসিকে বরাদ্দ দিতে বাধা কোথায়? আজ ইত্তেফাক ভবন থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত যারা বাজার বিনাশের বিরুদ্ধে জোগান দেয় তাদের নানা কু-নামে অনেকে আখ্যায়িত করতে পারে। কিন্তু তাদের ব্যথাটা কি বোঝার চেষ্টা করেছেন আপনারা? বলতে পারেন, তারা ৩০ টাকার শেয়ারকে ৩০০ টাকায় কিনল কেন? যারা ৩০০ টাকায় বিক্রয় করতে অনুমতি দিয়েছে, তারা বেশি দোষী, না যারা ৩০০ টাকায় কিনেছে তারা বড় দোষী? লাখ লাখ লোককে আর্থিকভাবে যারা পথে বসিয়েছে, তাদের ব্যাপারে এসইসি’র অবস্থান অতি নরম। এসইসি অতীতেও কার্যকর ছিল না।

আজও কার্যকর বলে মনে হচ্ছে না। আজ শেয়ারবাজার যেন বিরানভূমি। জনগণের দাবির মুখে এসইসি ‘প্রণোদনা’ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। প্রণোদনায় অনেক ভালো উপাদান আছে বটে। তবে আস্থায় একবার চিড় ধরলে সেটাকে আগের অবস্থানে নেয়া দুরূহ।

তবুও আমরা দেখতে চাইব এসইসি প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে কী করে। সময় বেশি নেই, মাত্র ছয় মাস। তাদের ঘোষিত তারিখ থেকে জনগণ ছয় মাস অপেক্ষা করবে। এরপর প্রণোদনার অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো যদি উপেক্ষিত থাকে, তাহলে এসইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অনেক কিছুর জন্য এসইসিকে লায়াবেল বা দায়ী করতে হবে। আবু আহমেদ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.