আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[বাশমতী চাউলের বিরিয়ানি + শামসের আলির ভুনা খিচুরী{(মিশন একমপ্লিশড)+(ছবিব্লগ)}]

কয়েকদিন পর পর যদি নতুন নতুন খাওয়ার সন্ধানে আমি না বাইর হই তাইলে আমার মাথা ঝিমঝিম করে, শরীল ম্যাজম্যাজ পরে, জয়েন্টে জয়েন্টে পয়েন্টে পয়েন্টে, গিড়ায় গিড়ায়, সিরায় সিরায় সিস্টেম লস দেখা দেয়(আমিই বুঝি হিরুইণ্চি আর ইয়াবা খোররা ক্যান এমুন ছটফট করে).....কিন্তু আড়াই মাস আগে একটা একসিডেন্ট কইর‌্যা বেকপেইনের প্রবলেমে পড়ছি ....ডাক্তার কইসে শইলের ওজন না কমাইলে ব্যাক পেইন নাকি আমার পিছু ছাড়ব না .... উপায় না দেইখ্যা খাওয়া খাইদ্য কন্ট্রোল করার চেস্টা নিতেছি....আইজকা সকালে নাস্তা কম খাইয়া(ওজন কমাইতে হইবো) থিসিসের কামে ভার্সিটি তে গিয়া দেখি যার কাছে গেসি হেয় আসে নাই....হাতে কিছু সময় বাইচ্যা গেল(বেকার মাইনসের সময় বাচলেও কি আর না বাচলেও কি)....এরমধ্যে এক বন্ধু আইস্যা আমার পাওনা ১০০০ টাকা হাতে দিলো........টাকা আর সময় গুলানরে কি কামে লাগান যায় ভাবতে ভাবতে মনে হইলো কোনো জায়গায় খাইতে যাই না কেন (আনেক্সপেক্টেড ভাবে যদি সময় আর টাকা আমার কাছে আইস্যা ধরা দেয় নি্র্ঘাত খাওয়ার পিছে যাইবো আমার যে কি হপে )....শুরু করলাম পোলাপাইন টোকাইতে শুরু করলাম ...তো কই জামু কই জামু চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে হইলো যে অনেক দিন ধইর‌্যা শামসের আলীর ভুনা খিচুড়ীর নাম শুনতাছি তো মালটা চাইখ্যা দেখার খায়েশ মনে জাগ্রত হইলো....হিন্দীতে একটা কাহাওয়াত আছে যে কাল কারে সো আজ কার, আজ কারে সো আব....আমি আবার প্রবাদ প্রবচন খুব মাইনা চলি যেমন: পেটে খেলে পিঠে সয় শাক দিয়ে মাছ ঢাকা আঙ্গুর ফল টক কত ধানে কত চাল গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ইত্যাদি ইত্যাদি ....তো যেই বন্ধু টাকা দিছে তারে তো নিতে হইবই তাই অরে নিলাম, আরেকটা ছোড ভাই আছে অরেও নিলাম(মটর সাইকেল আছে বইল্যা )...থ্রি ইজ কম্পানি..তিনজনে ভার্সিটির গেট দিয়া বাইর হইতাছি এরমধ্যে একটা ছোড বইন ডাক দিয়া কইলো ভাইয়া কই যাও....আমি কইলাম এইতো একটু ঘুরতে আর খিচুরি খাইতে যাই.....শুইনা চেহারায় এমুন একটা ভাব করলো যার মানে হইলো একলাই যাইবা আমারে নিবা না(আরে তুই দেখস না আমরা তিন জন বাইকে যাইতাছি ) আমি ভ্দ্রতা মারাইয়া কইতে গেলাম আসবা আমাদের সাথে(জানতাম রাজি হইবোনা)....কিন্তু দুস্টু ছেমড়ি রাজি হইয়া গেল পড়লাম নি বিপদে.....আমার বন্ধু কানেকানে আমারে চ বর্গীয় একটা গালি দিয়া কইলো যান নিয়া আসেন রানি ভিক্টোরিয়ারে রে রিকশায় কইরা......মিজাজটা টা খিচরাইয়া মুখটা হাসি হাসি কইরা তিনারে নিয়া রিকশা ঠিক করলাম বংশালের উদ্দেশ্যে(শামসের আলীর ভুনা খিচুরীর দোকান বংশালে).....রিকশায় ছোড বইনের লগে তেনা পেচাইতে পেচাইতে গন্তব্যে যাওয়ার পথে এখটা ব্যানারে চোখ আটকাইয়া গেলো...... ব্যানারটা হইলো এইটা দেইখ্যা মাথায় চিন্তা ঘুরপাক করা শুরু করলো কবে কেমনে কারসাথে এখানে হামলা চালানো যায়..ভাবতে ভাবতেই গন্তব্যে হাজির হইয়া গেলাম...ভিতরটা পুরান ঢাকার অন্যান্য রেস্টুরেন্টের মতন না....ভিতরটা যথেস্ট সাজানো গোছানো...... টেবিলের উপর জলপাইয়ের আচার রাখা যাইহোক মাথা থেকা অন্যসব চিন্তা বাদ দিয়া রাসেলরে(পিচ্চিরে ডাইকা নাম জিগায় লইসি ) খিচুরি অর্ডার দিয়া হাত ধুইয়া বইছি এর মধ্যেই ছোড বইনের একটা আহ্লাদি গলা "ভাঈঈয়্যা এখান্যে ক্যি শুধু খিচুরিঈঈ পাও্যয়া যায়্য" (পাঠক একবিন্দু বানান ভুল লিখি নাই..তাহার আল্হাদী উচ্চারন অনুযায়ি লেখা হইয়াছে মাত্র).....আমার বন্ধুটা কইলো হ্যা কেন কি সমস্যা....তিনি কহিলো ""ভাঈঈয়্যা আমিত্য খিচুরী খাঈনা"" মুখে হাসি লিয়া মনে মনে কইলাম কেন তোমারে যখন আনছি তখন কি হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার কথা কইয়া আনছি নাকি.... ....তুমি এক কাজ কর আমার প্লেট থেকে একটু ট্রাই কর, খিচুরীটা ভালো কিন্তু তিন আঙ্গুলের এক ছিমটি খিচুরী মুখে নিতেই বিলাই চিমটি শইলে ছাইরা দিলে মুখটা যেমুন হয় তেমুন কইরা কইলো .....ইয়াকঃ খাবন্যা ....তাহলে কি খাবা তুমি ....এখান্যে ব্রিয়ানি (বিরিয়ানী) পাও্যয়া যাবে না?? .....এখানে নাই কিন্তু আশে পাশেই পাওয়া যাবে .....তাহলে চলোন্যা ব্রিয়ানি খাই .....এখানে আসছিই খিচুড়ি খেতে, কোনো সমস্যা নাই ১০ মিনিট বস আমরা খেয়ে তোমাকে বিরিয়ানি খাওয়াবো .....আম্যি এক্কা খেত্যে পারবন্যা .....ব্যাপার না আমি তোমাকে কোম্পানি দিবো .....মেন্যি মেনঈঈ থ্যাংকস্ শামসের আলীর খিচুরি যত নাম শুনছি বা ব্যানার দেখছি সেই অনুযায়ি খিচুরিটা তত টেস্টি লাগে নাই এর দুইটা কারন হইতে পারে নাম্বার ১ খিচুরির সাথেসাথে ম্যাডামের আহ্লাদের নিখুত মিশ্রনের ফলে মিজাজে খিচুনি ধরসিলো (যেকোনো অবস্হায় আমার টেস্ট সেন্স সচল থাকে এক মাত্র জ্বর ছাড়া, তাই আমার কাছে এটা অতটা গ্রহনযোগ্য না) নাম্বার টু আমি যেকোনো খিচুড়ীর সাথেই ঘরোয়ার খিচুরীর কম্পেয়ার করি (আমার মতে ঢাকার বেস্ট খিচুড়ী ঘরোয়ার) নিজেরাই দেইখ্যা লন শামসের মিয়ারে কিন্তুক যেনোতেনো লোক ভাইবেন না মিঞারা যাইহোক কোনো মতে খিচুরি গলধঃকরন কইর‌্যা ম্যাডামরে নিয়া তার ব্রিয়ানীর খোজে বাইর হইলাম.....সামনে পরল এমন একটা কাবাবের গাড়ি যেটা দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না ছবি দিলাম গরুর কলিজার কাবাব দেশি মুরগীর ঠ্যাং আর ঝাল আলুর দম গুল্লি কাবাব এই রুটি দিয়া বার্গার বানাইয়া কাবাব খাইতে হয়...মুড ভালা আসিলো না তাই রুটি খাই নাই এইডা তো চিনেনই সবগুলি একসাথে তো এখান থেকা শুধু কলিজি কাবাব আর গুল্লি কাবাব উইথ আলুর দম সিস্টেম কইরা বাইর হইলাম....ম্যাডাম ফুলি আবার একটা নারগিস কাবাব(ডিম কাবাব যার ছবি তুলতে ভুইলা গেসি) নিয়া খাইয়া আমারে উদ্ধার করলেন এর মধ্যে বাইক ওয়ালা ছোড ভাই কইলো ভাই চলেন ম্যাডামরে নিয়া চাংখার পুলে যাইগা রাস্তাও আগাইবো আবার উনারে বিরিয়ানিও খাওয়ানো হইবো......চিন্তা করলাম বুদ্ধি খারাপ না.....যেই কথা সেই কাজ.....কিন্তু এইবার আর আগের ভুল করি নাই ম্যাডামকে বাইকে উঠাইয়া দিয়া আমি আর আমার বন্ধু রিকসা ঠিক কইরা যাত্রা শুরু করিলাম.....একটু দুর পথ অতিক্রম করিয়া বামে চাইয়্যা দেখি কলকাতা বিরিয়ানি হাউস(যেখানে বাসমতি চাউলের কাচ্চি বিরিয়ানী পাওয়া যায়)। দেইখাই হিরুইঞ্চিগোর মতন শইল চুলকানী শুরু হইলো......বুঝলাম পেটে জিনিস না পড়লে চুলকানী কমবো না....নগদে বাইক ওয়ালা ছোট ভাইরে একটা কল দিলাম যে অই তুই যেখানেই থাকস ব্যাক কর...ওরা আসার পরে ম্যাডামরে নিয়া বিরিয়ানি হাউসে ঢুইকা আনোয়ার মামারে(নাম জিগাইয়া লইসি) ডাইকা কাচ্চি দিতে কইলাম দুইটা(যেহেতু ম্যাডামরে কথা দিসিলাম যে উনার খাওয়ার সময় কম্পানী দিমু) ...কাচ্চি দেইখাই বুজছি যে জিনিসটা একটা মাল.. প্রথম নলা মুখে দেওয়ার পরেই মনটা ভইরা গেলো....আসলেই বাসমতি চাইলের বিরিয়ানি....চিকন চিকন চালের ফাকে দিয়া টকটকা টাটকা লাল খাসির মাংস টা উকি মাইরা রইছে, দেইখাই মন ভালো হইয়া গেছে ...।সারাদিনে প্রথম বারের মতন একটা ভালো কিছুর ফিলিং পাইলাম.....পাঠক সময় থাকতে যেমনে পারেন এই দোকান থেকা বিরিয়ানিটা ট্রাই মাইরেন....কারন বাংলাদেশে একবার দোকানের নাম ফুইট্যা গেলে কোয়ালিটি কমাইয়্যা দিয়া কোয়ান্টিটি বাড়ায় দেয় অতি মুনাফার লোভে.....যাইহোক আমি যখন তিন ইন্দ্রিয় দ্বারা কাচ্চির স্বাদ বিচারে মূহ্যমান ঠিক তখনই ম্যাডামের আহ্লাদ মিশ্রিত কন্ঠস্বর কানে আসিলো .....ভাঈঈয়্যা এটার থেকেত্য ঐ খিচুরি টাই্য বেটার ছ্যিলো ......হারামজাদি(মনেমনে) তুমি যতটুকু খেতে পারবা খাও বাকিটা আরেকটা প্লেটে ঢেলে দাও ওরা দুজন ট্রাই করুক(জোরে জোরে) আমার প্লেটের বিরিয়ানী খাইয়া ম্যাডাম যে তার প্লেট থেকে বাকী দুইজনের জন্য আলাদা কইরা রাখসিলো সে অবশিস্ট টুকুও খাইতে হইলো(কারন খিচুরি খাইয়াই বাকি দুইজনের টাঙ্কি ফুলফিল)..এরপর তিন গ্লাস মাথা নস্ট বোরহানি খাইয়া এবং এক গ্লাস করে খাওয়াইয়া দোকান থেকে বাসায় ফিরলাম...আইজকা যা শিখছি তা ইহ জিন্দেগিতে ভুলুম না......আধুনিক ডিজ্জিটাল মাইয়্যা মানুষ নিয়া খাওন খাইতে যাওন আর না..কানে ধইর‌্যা কইলাম বিরিয়ানির ছবি গুলি দেখেন কি অরিজিনাল বাসমতি না?? আরেকটা দেখেন বিরিয়ানির লগে যে চাটনিডা দেয় সেইটার স্বাদও কিন্তু কড়া বোরহানি(বিয়া বাড়ি ছাড়া এমুন টেস্টের বোরহানী খুব কমই খাইছি, আমি বানাইলে অবশ্য আলাদ কথা) ব্যুফেতে গিয়া কেমনে টাকা উসুল করসি??(অভিগ্গতা মুলক পোস্ট)]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।